![]() |
সর্বোচ্চ ঈশ্বর মালিক তাউস এর প্রতিকৃতি ও বিভিন্ন ইয়াজিদি চিহ্ন। |
প্রারম্ভে ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন সফেদ মুক্তো, তার সর্বোত্তম বহুমূল্য সত্ত্বা থেকে। তিনি আরও সৃষ্টি করলেন অঙ্গার নামক একটি পাখি। সফেদ মুক্তোটিকে তিনি পাখিটির পিঠে রাখলেন, এবং সেখানে বাস করতে থাকলেন চল্লিশ হাজার বছর। প্রথম দিন, রবিবার, ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন মালিক আযাযেল, এবং তিনিই হলেন মালিক তাউস, সকলের প্রধান। সোমবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক দারদেল, এবং তিনিই শেখ হাসান। মঙ্গলবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক এস্রাফেল, এবং তিনিই শেখ শামস-আদ-দিন। বুধবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক মিয়াএল, এবং তিনিই শেখ আবু বকর। বৃহস্পতিবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক আজরেইল, এবং তিনিই সাজাদ-আদ-দিন। শুক্রবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক এম্মানেল, এবং তিনিই নাসির-আদ-দিন। শনিবার তিনি সৃষ্টি করলেন মালিক নুরেল, এবং তিনিই ফাহর-আদ-দিন। এবং তিনি মালিক তাউসকে তাদের সকলের উপর শাসনকর্তা করলেন।
তারপর ঈশ্বর তৈরী করলেন সাত
বেহেশত,
পৃথিবী, সূর্য এবং চন্দ্রের গঠন। কিন্তু ফাহর-আদ-দিন সৃষ্টি করলেন
মানুষ এবং প্রাণী, পাখি
এবং পশু। তিনি
তাদের সকলকে তার জামার পকেটে রাখলেন এবং ফেরেশতা পরিবেষ্টিত মুক্তো থেকে বাহিরে
আসলেন। তখন
তিনি মুক্তোর দিকে উচ্চঃস্বরে চিৎকার করলেন। অতঃপর সফেদ মুক্তোটি ভেঙে চার টুকরো হয়ে গেলো, এবং এটির মধ্যস্থিত জল বের হয়ে
সমুদ্রে পরিণত হলো। পৃথিবী
গোল ছিলো এবং আলাদা ছিলো না। তখন তিনি সৃষ্টি করলেন জিব্রাএলকে এবং পাখির প্রতিকৃতিকে। তিনি জিব্রাএলকে প্রেরণ করলেন চারটি
কোনা ঠিক করতে। তিনি
একটি জলযানও তৈরী করলেন এবং সেখানে অবস্থান করলেন ত্রিশ হাজার বছর। তারপর তিনি আসলেন এবং লালিশ পর্বতে
বাস করতে থাকলেন। তখন
তিনি পৃথিবীর জন্য কাঁদলেন এবং সমুদ্র সঙ্কুচিত হলো এবং ভূমি প্রকাশিত হলো, কিন্তু এটি নড়তে শুরু করলো। এই সময় তিনি জিব্রাএলকে নির্দেশ
দিলেন সফেদ মুক্তোর দুইটি খন্ড নিয়ে আসতে, একটিকে তিনি স্থাপন করলেন পৃথিবীর নিচে, অন্যটি স্থাপন করলেন বেহেশতের দরজায়। তিনি তখন সেখানে স্থাপন করলেন সূর্য
এবং চন্দ্র,
সফেদ মুক্তোর টুকরো টুকরো
ভগ্নাংশ থেকে সৃষ্টি করলেন তারকারাজি; যাদের তিনি বেহেশতে ঝুলিয়ে দিলেন গহনা হিসেবে। পৃথিবীর গহনা হিসেবে তিনি আরো
সৃষ্টি করলেন ফল-বহনকারী বৃক্ষ এবং ঝোপঝাড় এবং পর্বতসমূহ। তিনি আচ্ছাদনের উপর রাজত্ব সৃষ্টি
করলেন।
তখন মহান ঈশ্বর বললেন- ‘হে ফেরেশতাগণ, আমি আদম এবং ইভকে সৃষ্টি করবো, এবং আদমের সত্ত্বা থেকে সৃষ্টি করবো
শাহিদ বিন জের কে এবং তার মাধ্যমে পৃথিবীতে শুরু হবে একটি আলাদা সমাজের, ওইটা আযাযেলের, ওইটাই মালিক তাউসের, যেটা ইয়াজিদিদের অংশ।’ তারপর তিনি সিরিয়াদেশ থেকে শেখ আদি
বিন মুসাফিরকে পাঠালেন, এবং
তিনি আসলেন এবং বাস করতে থাকলেন লালিশ পর্বতে। তখন ঈশ্বর নেমে আসলেন কালো পর্বতে। চিৎকার করতে থাকলেন, তিনি সৃষ্টি করেছেন ত্রিশ হাজার
মালিক, এবং তাদের ভাগ করেছেন তিনটি ভাগে। তারা তাকে আরাধনা করেছে চল্লিশ
হাজার বছর। যখন
তিনি তাদের মালিক তাউসের কাছে পাঠিয়েছেন, তারা তার সাথে বেহেশতে আরোহন করেছে। এই সময় প্রভু নেমে আসলেন পবিত্র
ভূমিতে,
এবং জিব্রাএলকে নির্দেশ
দিলেন, পৃথিবী সৃষ্টির চারটি উপাদানই তার
কাছে নিয়ে আসতে; মাটি, বাতাস, আগুন এবং জল। তিনি সৃষ্টি করলেন এবং তার নিজস্ব
সত্ত্বার শক্তি এর মধ্যে দিলেন এবং এটার নাম রাখলেন আদম।
তখন তিনি জিব্রাএলকে
নির্দেশ দিলেন বেহেশতে আদমের সহচর হওয়ার জন্য, এবং তাকে বলতে বললেন যে- ‘সে সমস্ত গাছ থেকেই খেতে পারবে, পারবেনা কেবল গম।’ এখানে আদম একশত বছর ছিলো। অতঃপর মালিক তাউস ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘কিভাবে আদম বংশবৃদ্ধি করবে এবং তার
উত্তরসূরী তৈরী করবে, যদি
তাকে শষ্য খেতে নিষেধ করা হয়?’ ঈশ্বর
জবাব দিলেন- ‘আমি
এই সমস্ত বিষয় তোমার হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’ অতঃপর মালিক তাউস আদমের নিকট গেলেন এবং বললেন- ‘তুমি কি শষ্য খেয়েছো?’ সে জবাব দিলো- ‘না। ঈশ্বর আমাকে নিষেধ করেছেন।’ মালিক তাউস জবাব দিলেন এবং বললেন- ‘শষ্য খাও এবং এর মধ্যেই তোমার সমস্ত
মঙ্গল নিহিত।’ তখন
আদম শষ্য ভক্ষণ করলো এবং সাথেসাথেই তার পেট স্ফীত হতে শুরু করলো। কিন্তু মালিক তাউস তাকে বাগানে ছেড়ে
দিলেন এবং সঙ্গ পরিত্যাগ করে বেহেশতে উর্দ্ধোত্তিত হলেন। কিন্তু আদমের সমস্যা হচ্ছিলো। কারন তার পেট স্ফীত হচ্ছিলো, কিন্তু তার কোনো বহির্গমন ছিলো না। অতঃপর ঈশ্বর তার নিকট একটি পাখি
পাঠালেন,
যেনো সে তার মলদ্বারে ঠোকর
দিয়ে একটি বহির্গমন পথ তৈরী করতে পারে, এবং আদম পরিত্রান পায়।
তারপর জিব্রাএল আদম থেকে
একশত বছর দূরে থাকলেন। এবং
আদম দুঃখিত হলো এবং কাঁদতে থাকলো। তখন ঈশ্বর জিব্রাএলকে নির্দেশ দিলেন, আদমের বাম কাঁধের নিচ থেকে ইভকে সৃষ্টি করতে। ইভ এবং সমস্ত প্রাণীদের সৃষ্টি করার
পর এটা অতিক্রমের নিকটবর্তী হলো। আদম এবং ইভ এই প্রশ্নে পরস্পর ঝগড়া করতে থাকলো যে কার কাছ থেকে
মানবজাতি সর্বপ্রথম বিকশিত হবে। প্রত্যেকেই আশা করতে থাকলো সেই মানবজাতির একমাত্র পূর্বসূরী হবে। যে ঘটনার পর্যবেক্ষণে তাদের এই
ঝগড়ার সূত্রপাত সেটা হলো, প্রাণীদের
মধ্যে পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়েই তাদের নিজস্ব প্রজাতির বংশবিস্তারের উপাদান। দীর্ঘ আলোচনার পর আদম এবং ইভ সম্মত
হলো এই- প্রত্যেকে তাদের বীজ একটি পাত্রে রাখবে, এটি বন্ধ করবে, এবং নিজস্ব
সীল দিয়ে আলাদা মোহর এটে দিবে। এবং নয় মাস অপেক্ষা করবে। অপেক্ষার কাল পূর্ণ হবার পর যখন তারা পাত্রগুলো খুললো, আদমের পাত্রে তারা দুইটি শিশু পেলো, পুরুষ এবং স্ত্রী। এরপর এই দুইজন থেকেই আমাদের অংশ, ইয়াজিদিরা অবতীর্ন হলো। ইভের পাত্রে তারা কিছুই পেলো না, কেবল দূর্গন্ধ ছড়ানো পঁচা কীট ছাড়া। এবং ঈশ্বর আদমের জন্য দুগ্ধবোঁটা
তৈরী করে দিলেন যেনো সে তার পাত্রের শিশুদের বাহিরেই প্রতিপালন করতে পারে। এটাই হলো কারন, কেনো পুরুষ জাতির দুগ্ধবোঁটা আছে।
এরপর আদম ইভের কাছে গেলো
এবং সে দুইটি সন্তান জন্ম দিলো, পুরুষ
এবং স্ত্রী। এবং
তাদের মধ্য থেকে ইহুদী, খ্রিস্টিয়ান, মুসলিম এবং অন্যান্য জাতি এবং অংশরা
অবতীর্ন হলো। কিন্তু
আমাদের প্রথম পিতারা হলেন- শেথ, নোয়াহ
এবং এনোখ;
যারা ন্যায়নিষ্ঠ পাপমুক্ত, যারা কেবলমাত্র আদম থেকে অবতীর্ন।
এটা চলে যাবার পর একজন
পুরুষ এবং তার স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের আরম্ভ হলো। স্ত্রীলোকটি পুরুষলোকটিকে তার
স্বামী হিসেবে অস্বীকার করাই দ্বন্দ্বের কারন। পুরুষলোকটি স্ত্রীলোকটিকে তার
স্ত্রী হিসেবে দাবী করা পরিত্যাগ করেনি। যাই হোক, এই
দুইয়ের দ্বন্দ্বের মীমাংসা হয়েছিলো, আমাদের অংশের একজন ন্যায়পরায়ন লোকের মাধ্যমে। যিনি আদেশ জারি করেছিলেন, প্রত্যেক বিয়ের অনুষ্ঠানে, অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ড্রাম এবং
বাঁশি অবশ্যই বাঁজাতে হবে, যেনো
একজন পুরুষলোক এবং একজন স্ত্রীলোকের বিবাহ বৈধভাবে সম্পন্ন হয়।
তারপর মালিক তাউস নিচে
পৃথিবীতে নেমে এলেন আমাদের অংশের জন্য, প্রাচীন আশিরিয়ার রাজাদের পাশাপাশি, আমাদের জন্য একদা সৃষ্টি করলেন এবং নিয়োগ দিলেন রাজাদের। নিসরোখ, যিনি নাসির-আদ-দিন; কামুশ, যিনি মালিক ফাহর-আদ-দিন; এবং আরতামিস, যিনি মালিক শামস-আদ-দিন। তারপর আমাদের ছিলো দুইজন রাজা, শাপুর প্রথম এবং দ্বিতীয়, যারা শাসন করেছিলো একশত পঞ্চাশ বছর; এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের
আমীরেরা তাদের বীজ থেকেই অবতীর্ণ। কিন্তু আমরা চারজন রাজাকে ঘৃণা করি।
পৃথিবীতে খ্রিস্ট আসার
পূর্বে আমাদের ধর্ম ছিলো পৌত্তলিকতা। আমাদের মধ্যে রাজা ছিলেন রাজা আহাব। এবং আহাবের ঈশ্বরের নাম ছিলো
বেলজেবাব। এখনকার
দিনে আমরা তাকে ডাকি পির বাব। ব্যবিলনে আমাদের একজন রাজা ছিলেন, যার নাম ছিলো বাখত নাসের; অপরজন ছিলো পারস্যে, যার নাম ছিলো আহুর। এবং অন্য আরেকজন ছিলেন কনস্ট্যান্টিপোলে, যার নাম ছিলো এগ্রিকুলাস। ইহুদি, খ্রিস্টিয়ান, মুসলিম এবং এমনকি পারসিকরা আমাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু
তারা আমাদের পরাভূত করতে ব্যর্থ হয়, কারন তাদের বিরুদ্ধে আমরা দেখিয়েছিলাম প্রভুর সক্ষমতা। তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন প্রথম
এবং শেষ বিজ্ঞান। এবং
তার শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটি হলো-
বেহেশত এবং পৃথিবীর পূর্বে, ঈশ্বর সমুদ্রে অবস্থান করতেন, যেমনটা আমরা তোমাদের পূর্বে বলেছি। তিনি তৈরী করেছিলেন একটি জলযান এবং
ভ্রমন করছিলেন- কুনসিনিয়াতোফ সমুদ্রে, যেনো তিনি নিজে নিজেই আনন্দ করতে পারেন। তারপর তিনি সৃষ্টি করেন সফেদ মুক্তো
এবং তার উপর রাজত্ব করেন চল্লিশ বছর। তারপর তিনি মুক্তোর উপর রাগ হন এবং একে আঘাত করেন, এবং তিনি বিষ্মিত হন, এর কান্না থেকে পর্বতসমগ্রকে তৈরি
হতে দেখে। পর্বতসমগ্র
নিজস্ব মহিমায় বিকশিত হয় এবং বেহেশত তার ধোঁয়ায় পূর্ণ হয়। তখন ঈশ্বর বেহেশতে উদিত হন, এটাকে সঙ্কুচিত করেন এবং এটাকে
প্রতিষ্ঠিত করেন কোনো খুঁটি ছাড়াই। তারপর তিনি ভূমিকে বন্ধনমুক্ত করেন এবং হাতে কলম নেন, তার সমগ্র সৃষ্টির বয়ান লেখার জন্য।
প্রারম্ভে তিনি তার নিজস্ব
সত্ত্বা এবং নিজের আলো থেকে সৃষ্টি করেন ছয়জন ঈশ্বর। এবং তাদের সৃষ্টি যেনো এক আলো থাকে
অন্য আলোর সৃষ্টি। এবং
ঈশ্বর বললেন- 'এখন
আমি উচ্চস্থানগুলো সৃষ্টি করেছি, তোমাদের
মধ্যে একজন সেখানে যাও এবং সেখানে কিছু সৃষ্টি করো।' অতঃপর দ্বিতীয় ঈশ্বর সেখানে উদিত
হলেন এবং সৃষ্টি করলেন সূর্য। তৃতীয়জন চন্দ্র, চতুর্থজন
বেহেশতের গম্বুজ, পঞ্চমজন
সকালবেলার তারকা, ষষ্ঠজন
বেহেশত এবং সপ্তমজন দোজখ। তারপর
তারা সৃষ্টি করেছেন আদম এবং ইভ, যেমনটা
আমরা তোমাদের পূর্বে বলেছি।
এবং জেনে রাখো, নোয়াহের বন্যার পাশাপাশি এই
পৃথিবীতে আরও একটি বন্যা হয়েছিলো। এরপর আমাদের অংশ, ইয়াজিদিরা
অবতীর্ণ হলো নওমি থেকে, যিনি
একজন সম্মানিত ব্যাক্তি, শান্তির
রাজা। আমরা তাকে ডাকি মালিক মিরন। অন্য অংশরা অবতীর্ণ হলো হাম থেকে, যে তার পিতাকে অবজ্ঞা করতো। জাহাজটি নিশ্চল হয় আইন-সিফনি নামক
গ্রামের নিকটে, মসুল
থেকে পাঁচ পারাসাং দূরে। প্রথম
বন্যার কারন ছিলো আমরা ভিন্ন বাকিদের ছলনা; ইহুদি, খ্রিস্টিয়ান, মুসলিম এবং অন্যান্যরা, যারা আদম এবং ইভ থেকে অবতীর্ণ
হয়েছিলো। অপরদিকে
আমরা, কেবলমাত্র আদম থেকেই অবতীর্ণ হয়েছি, যা ইতিমধ্যেই বিবৃত। দ্বিতীয় বন্যা এসেছিলো আমাদের, ইয়াজিদিদের উপর। জল বাড়তে শুরু করলো এবং জলযান চলতে
আরম্ভ করলো। এটি
সিনজার পর্বতের কাছাকাছি এসে জলমগ্ন চড়ায় আক্রান্ত হলো এবং একটি পাথরখণ্ডে বিদ্ধ
হলো। একটি সাপ নিজেকে পিঠার মতো পাকিয়ে
নিলো এবং গর্ত বন্ধ করলো। তারপর
জলযানটি চলতে শুরু করলো এবং জুদি পর্বতে এসে নিশ্চল হলো।
তারপর সাপেদের প্রজাতিরা
সংখ্যায় বেড়ে গেলো এবং মানুষ এবং প্রাণীদের কামড়াতে শুরু করলো। শেষ পর্যন্ত তারা ধরা পরলো এবং
তাদের পুড়িয়ে ফেলা হলো, এবং
তাদের ছাই থেকে সৃষ্টি করা হলো পতঙ্গসমূহ। বন্যার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সাত হাজার বছর। প্রত্যেক হাজার বছরে সাতজন ঈশ্বরের
একজন বিধান,
সংবিধান এবং আইন প্রতিষ্ঠা
করার জন্য অবতীর্ণ হন এবং তারপর পুনরায় ফিরে যান তার অধিবাসে। এখন যেমন, তিনি আমাদের মধ্যে বাস করছেন, যেনো আমরা প্রত্যেক প্রকার পবিত্র
ভূমির সন্ধান পাই। এই
শেষ সময়ে ঈশ্বর আমাদের মাঝে বেশি সময় যাবত বাস করছেন; অন্যান্য ঈশ্বরদের চেয়ে, যারা তার পূর্বে এসেছিলেন। তিনি তার সন্তদের নিশ্চিত করেন। তিনি কুর্দি ভাষায় কথা বলেন। এমনকি তিনি ইশমাইলিয়দের নবী
মহাম্মদকেও আলোকিত করেন, যার
মুয়াবিয়া নামক একজন অনুগত ছিলো। যখন ঈশ্বর দেখলেন মহাম্মদ তার উপর আর ন্যায়নিষ্ঠ নেই, তিনি তাকে মাথাব্যাথা দ্বারা পীড়িত
করলেন। তখন
নবী তার অনুগতকে বললেন মাথা মুণ্ডন করে দেয়ার জন্য, কারন মুয়াবিয়া জানত কিভাবে মুণ্ডন করতে হয়। সে তার কর্তাকে তড়িঘড়ি করে মুণ্ডন
করে এবং সেখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো। ফলস্বরুপ সে তার মাথা কেটে ফেলে এবং রক্তাক্ত করে। এবং ভয় পায় যে রক্ত মাটিতে পতিত হবে, তাই মুয়াবিয়া সেটা জিহ্বা দিয়ে চুষে
নেয়। অতঃপর মহাম্মদ জিজ্ঞাসা করে- ‘মুয়াবিয়া, তুমি কি করছো?’ সে জবাব দেয়- ‘আমি আপনার রক্ত আমার জিহ্বায় ধারন
করেছি, কারন আমি ভয় পেয়েছিলাম তা ভূমিতে
পতিত হবে।’ তখন
মহাম্মদ তাকে বললো- ‘তুমি
পাপ করলে,
হে মুয়াবিয়া; তুমি তোমার জন্য একটি জাতিকে
নির্দিষ্ট করে নিবে, তুমি
আমার অংশকে অস্বীকার করবে।’ মুয়াবিয়া উত্তর দিলো এবং বললো- ‘তাহলে আমি এই পৃথিবীতে প্রবেশ করবোনা। আমি বিয়ে করবো না।’
কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর
ঈশ্বর মুয়াবিয়ার নিকট একটি বিছে পাঠান, যা তাকে কামড়ায়; তার
মুখে বিষক্রিয়ার ছাপ ফুটে উঠে। ডাক্তাররা তাকে মৃত্যুর পূর্বে বিয়ে করার জন্য বলেন। এটা শুনে, তিনি সম্মতি দেন। তারা তার জন্য আশি বছর বয়স্কা একজন
বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে আসেন, যেনো
সে কোনো শিশুর জন্ম দিতে না পারে। মুয়াবিয়া তার স্ত্রীকে জানতো; এবং সে সকালবেলা পঁচিশ বছর বয়সী কোনো পূর্ণ যুবতীর মতো হয়ে গেলো, মহান ঈশ্বরের ক্ষমতাবলে। এবং সে সন্তানসম্ভবা হলো এবং জন্ম
দিলো আমাদের ঈশ্বর ইয়াজিদকে। কিন্তু বিদেশী সুত্রে এই ঘটনাকে অস্বীকার করা হয়, বলা হয় আমাদের ঈশ্বর এসেছেন বেহেশত
থেকে; মহান ঈশ্বর কর্তৃক ঘৃণিত এবং
বিতাড়িত। এই
কারনে তারা তাকে তিরস্কার করে। এই কারনে তারা পাপ করে, পথভ্রষ্ট হয়। কিন্তু আমরা ইয়াজিদিরা; এটা বিশ্বাস করি না, কারন আমরা জানি যে তিনি পূর্বোল্লিখিত সাতজন ঈশ্বরের একজন। আমরা জানি তার ব্যাক্তিরূপ এবং তার
প্রতিকৃতিরূপ। এটি
একটি মোরগের আকার, যা
তিনি ধারন করেন। আমাদের
মধ্যে কেউ তার নাম উচ্চারন করার অধিকার রাখে না, বা যা কিছু তার নামের উচ্চারনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেমন- এইতেন, আইতেন, আর, আত এবং এই রকম আরও। না আমরা উচ্চারন করতে পারবো মালন বা লানত বা নাল বা অন্যান্য শব্দ, এই একই রকম আওয়াজের। তার সম্মানের জন্য এই সমস্তই আমাদের
জন্য নিষিদ্ধ। একই
সাথে হাস বাদ দেয়া হলো। আমরা
এটা খাই না,
কারন এটার উচ্চারন আমাদের
নবীপত্নি হাসিয়ার মতো। মাছ
নিষিদ্ধ,
নবী যোনাহের সম্মানে। অনুরূপভাবে হরিন, কারন হরিন আমাদের চারজন নবীর একজনের
পবিত্র মেষ। ময়ূর
নিষিদ্ধ আমাদের শেখ এবং তার শিষ্যদের জন্য, আমাদের মালিক তাউসের উদ্দেশ্যে। একই সাথে লাউ বাদ দেয়া হলো। দাঁড়িয়ে থাকা জল অতিক্রম করা নিষেধ; অথবা জনগণের রীতি অনুযায়ী বসে পোষাক
পরিবর্তন করা অথবা বসে পায়খানায় যাওয়া অথবা বসে গোসল করাও নিষেধ। যাই হোক, এর বিরুদ্ধে যে যাবে সেই ধর্মদ্রোহী। এখন অন্যান্য অংশরা- ইহুদি, খ্রিস্টিয়ান, মুসলিম এবং অন্যরা, এই সব বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়; কারন তারা মালিক তাউসকে অপছন্দ করে। অতঃপর, তিনি না তাদের শিক্ষা দেন, না তাদের নিকটবর্তী হন। কিন্তু তিনি আমাদের মধ্যে অবস্থান
করেন; আমাদের প্রদান করেন তার মতবাদ, বিধান এবং ঐতিহ্য; উত্তরাধিকারের মতো তার সমস্ত কিছু, যেমন প্রদান করেন পিতা পুত্রকে। তারপর মালিক তাউস ফিরে যান বেহেশতে।
সাতজন ঈশ্বরের
একজন তৈরি করেন জয়ঝান্ডা এবং সেগুলো জ্ঞানী শোলোমোনকে প্রদান করেন। তার মৃত্যুর পর
আমাদের রাজারা সেগুলো গ্রহন করেন। এবং যখন আমাদের ঈশ্বর, অমার্জিত ইয়াজিদ
জন্মগ্রহণ করেন, পবিত্র নিষ্ঠার সাথে তিনি জয়ঝান্ডাগুলো গ্রহন করেন এবং আমাদের
অংশের নিকট সম্প্রদান করেন। উপরুন্তু, তিনি কুর্দি ভাষায় দুইটি গান বিন্যস্ত করেন
যা জয়ঝান্ডা প্রদান অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়; যেগুলো অতি প্রাচীন এবং সুগ্রহনযোগ্য।
গানের মর্মার্থ হচ্ছে এই রকম- ঈর্ষান্বিত ঈশ্বরের প্রতি হালেলুইয়া।
যখন তারা এগুলো
গাইবে, তারা জয়ঝান্ডার আগে যাবে খঞ্জনী এবং বাঁশি সহ। জয়ঝান্ডাগুলো আমাদের আমিরদের
সাথে থাকবে, যারা বসে আছেন ইয়াজিদের সিংহাসনে। যখন এগুলো দেয়া হবে, কাওয়ালরা জড়ো হবে
আমিরের সাথে, এবং মহান প্রধান, শেখের সাথে; যিনি শেখ নাসির-আদ-দিনের প্রতিনিধি;
তিনিই নিসরোখ, প্রাচীন আশিরিয়ার দেবতা। তারা জয়ঝান্ডাগুলো পরিদর্শন করবে। তারপর
তারা জয়ঝান্ডা প্রদান করবে, এটির নির্দিষ্টস্থানের একজন কাওয়ালের তত্ত্বাবধানে।
একজন হালাতানিয়া’তে, একটি
আলেপ্পোতে, একটি রাশিয়াতে এবং একটি সিনজারে। জয়ঝান্ডাগুলো চারজন কাওয়ালকে দেয়া হবে
চুক্তির ভিত্তিতে। তাদের পাঠানোর পূর্বে, তাদের নিয়ে যাওয়া হবে শেখ আদির কবরে,
যেখানে তাদের গ্রহণ করা হবে গান এবং নাচের দ্বারা। এরপর প্রত্যেক চুক্তিভুক্ত, শেখ
আদির কবর থেকে নিয়ে নিবে ধূলার বোঝা। তারা এগুলো ছোটো বলের মতো করবে, প্রত্যেকটি
বাদামের আকারে এবং এগুলো বহন করবে জয়ঝান্ডার পাশাপাশি; তাদের জন্য দেয়া হবে
আশীর্বাদস্বরূপ। যখন সে কোনো শহরে পৌঁছাবে, সে তার পূর্বে একজন ক্রন্দনকারীকে
পাঠাবে যেনো কাওয়াল এবং তার জয়ঝান্ডা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে গ্রহণ করতে লোকজনকে
প্রস্তুত করতে পারে। প্রত্যেকে উত্তম জামা পরিধান করে বাহিরে আসবে, বহন করবে ধূপ।
মহিলারা চিৎকার করবে একসাথে গাইবে আনন্দপূর্ণ গান। কাওয়াল লোকজনের দ্বারা আপ্যায়িত
হবে, সেখানে সে থামবে। বাকীরা তাকে প্রদান করবে রৌপ্যনির্মিত উপহার, প্রত্যেকে
তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী।
এই চারটি
জয়ঝান্ডা ছাড়াও, আরও তিনটি আছে, সব মিলিয়ে সাত। ওই তিনটি পবিত্র স্থানে রাখা আছে
সুস্থতার উদ্দেশ্যে। যাই হোক, তাদের মধ্যে দুইটি আছে শেখ আদির সাথে, এবং তৃতীয়টি
আছে বাহাজানিয়ে গ্রামে, যা কিনা মসুল থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বে। প্রতি চার মাস পরপর
ওই কাওয়ালরা ভ্রমণ করবে। তাদের মধ্যে একজন অবশ্যই ভ্রমণ করবে আমিরের প্রদেশ। তারা
ভ্রমণ করবে নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে, প্রত্যেক বছর আলাদা। প্রতিবার বেরিয়ে যাওয়ার
আগে, ভ্রমণকারী অবশ্যই নিজেকে পরিষ্কার করে নিবে সুম্মাক দ্বারা তৈরি অম্লজল দ্বারা
এবং নিজেকে লেপে নিবে তৈল দ্বারা। সে অবশ্যই কক্ষে থাকা প্রতিটি প্রতিমার সামনে
বাতিদান করবে। এটাই হচ্ছে জয়ঝান্ডা অধিকারে থাকার বিষয়ে আইন।
আমাদের নতুন
বছরের প্রথম দিনকে বলা হবে- সারস্লিয়ে অর্থাৎ বছরের শুরু। এটা আসবে এপ্রিলের প্রথম
সপ্তাহের বুধবারে। এই দিনে প্রত্যেক পরিবারে অবশ্যই থাকবে মাংস। ধনবানরা অবশ্যই
হত্যা করবে ভেড়া অথবা ষাঁড়; গরীবেরা অবশ্যই হত্যা করবে মুরগী অথবে অন্য কিছু।
ওইগুলো রান্না হবে রাতে, সকালটি বুধবার, নববর্ষের দিন। দিবসের বিরতির পর এই খাবার
হবে আশীর্বাদপূর্ণ। বছরের প্রথম দিনে কবরগুলোতে ভিক্ষে দিতে হবে, যেখানে মৃতদের
আত্মারা শুয়ে আছে।
এখন মেয়েরা, বড়
এবং ছোট, ফুলের মাঠে একত্রিত হবে লাল রঙের প্রত্যেক জাতের ফুল সংগ্রহ করার জন্য।
তারা এগুলো গুচ্ছাকারে তৈরি করবে এবং তারপর তিনদিন রেখে দিবে। তারা সেগুলো দরজায়
ঝুলিয়ে রাখবে, ঘরের জীবিত লোকেদের ঈশ্বরে আনুগত্যের প্রতীক স্বরূপ। সকালবেলা সমস্ত
দরজা লালপদ্ম দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে। কিন্তু মহিলারা গরীব এবং দুস্থলোকেদের
খাওয়াবে, যারা অতিক্রম করবে এবং যাদের খাবার নেই। কিন্তু কাওয়ালদের জন্য; তারা
শেখের কবরের চারপাশে ঘুরবে, খঞ্জনী বাজাবে এবং কুর্দি ভাষায় গান গাইবে। এই রকম
করার জন্য তারা অর্থগ্রহণে স্বত্ববান হবে। পূর্বোল্লিখিত সারস্লিয়ের দিনে আনন্দের
কোনো বাদ্য বাজানো যাবে না। কারন ঈশ্বর তার সিংহাসনে বসে থাকেন এবং বৎসরের জন্য
নিয়তি নির্ধারণ করেন। এবং সমস্ত জ্ঞানীদের নির্দেশ দেন তার নিকট আসার জন্য। এবং যখন
তিনি তাদেরকে বলেন, তিনি সঙ্গীত এবং প্রার্থনার সাথে পৃথিবীতে আসতে চান; তারা জেগে
উঠেন এবং তার উপর আনন্দ করেন এবং প্রত্যেকে এই উল্লাসের দিনে ভিড় করেন। তখন ঈশ্বর
তার নিজস্ব সীল দিয়ে মতাদের মোহর এঁটে দেন। এবং মহান ঈশ্বর এই মোহরাঙ্কিত
সিদ্ধান্ত, যে ঈশ্বর নিচে আসেন তার কাছে দেন। উপরন্তু, তিনি; তার নিজস্ব ইচ্ছা
অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা তাকে প্রদান করেন। অভুক্ত থাকা এবং প্রার্থনা করার চেয়ে
ভাল কাজ করা এবং উদার দানশীলতাকে ঈশ্বর পছন্দ করেন। অভুক্ত থাকার চেয়ে উত্তম
যেকোনো প্রতিমার আরাধনা করা; যেমন- সাজাদ-আদ-দিন অথবা শেখ শামস-আদ-দিনের। কিছু
সাধারণ লোক চল্লিশ দিনের অভুক্তির শেষে একজন চাককে ভোজনোৎসবে আমন্ত্রন করে, সেটা
গ্রীষ্মেই হোক বা শীতে। যদি সে চাক বলে, এই আতিথেয়তা ছিল জয়ঝান্ডার প্রতি
ভিক্ষেস্বরূপ, সে তার অভুক্তি থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। যখন এটা অতিবাহিত হবে, তখন
বাৎসরিক খাজনাসংগ্রাহকরা তাকে খুঁজে পাবে এবং সে তার খাজনা পুরোপুরি পরিশোধ করে
নি; তারা তাকে অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আঘাত করবে এবং কখনো মৃত্যু পর্যন্ত। জনগণ
চাকদের অর্থ প্রদান করবে রোমান সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য, এবং এটাই এই অংশকে
বৎসরের মানুষের ক্রোধ থেকে বাঁচাবে।
প্রত্যেক
শুক্রবার প্রতিমার সামনে নৈবেদ্য হিসেবে উপহারের ডালা দিতে হবে। এই সময়, একজন সেবক
কোনো চাকের বাড়ির ছাদ থেকে জনগণকে উচ্চস্বরে ডাকবে। বলবে, এটা দৈববাণী ঘোষণাকারীর
পক্ষ থেকে ভোজনোৎসবের ডাক। সবাই ভক্তি এবং সম্মানের সাথে শুনবে, এবং এটা শোনার পর,
প্রত্যেকে ভূমিতে এবং পাথরে চুম্বন করবে; যেটা সে করবে স্নেহ সহ।
এটা আমাদের আইন
যে কোনো কাওয়াল তার চেহারায় ক্ষুর স্পর্শ করাবে না। বিবাহের ব্যাপারে আমাদের আইন
এই যে, বিবাহের সময় একটি পাউরুটি নেয়া হবে কোনো চাকের বাড়ি থেকে এবং এটি বর এবং
কনের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে; প্রত্যেকে অর্ধেক খাবে। যাই হোক, আশীর্বাদের রুটির
পরিবর্তে তারা শেখ আদির কবরের ধূলাও খেতে পারবে। এপ্রিল মাসে বিবাহ নিষিদ্ধ, কারন
এটি বছরের প্রথম মাস। যাই হোক, এই বিধান, কাওয়ালদের জন্য প্রযোজ্য নয়, তারা এই
মাসে বিবাহ করতে পারবে। সাধারণ লোকেরা অনুমতি পাবেনা কোনো চাকের কন্যাকে বিবাহ
করার জন্য। প্রত্যেকে তার নিজস্ব বর্ণ থেকে স্ত্রী বাছাই করবে। কিন্তু আমাদের আমির
স্ত্রী বাছাই করতে পারবেন, যাকে তার পছন্দ হবে তাকে। একজন সাধারণ লোক বিবাহ করতে
পারবে, দশ থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত; সে একজন মহিলার পর আরেকজন মহিলাকে স্ত্রী
হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে, এক বছরকাল ব্যবধানের পর। বরের বাড়ি যাত্রার প্রাক্কালে
যতোগুলো প্রতিমাপূর্ণ মন্দির অতিক্রম করতে হয়, কনে তার সবগুলোই পরিদর্শন করবে;
এমনকি সে যদি কোনো খ্রিস্টিয়ান গির্জাও অতিক্রম করে, সে অবশ্যই একই রকম পরিদর্শন
করবে। বরের বাড়িতে পৌঁছানোর পর, বর অবশ্যই তাকে ছোটো কোনো পাথর দিয়ে আঘাত করবে, সে
অবশ্যই তার কর্তৃত্বের অধীনে, এটা বোঝানোর জন্য। উপরন্তু, একটি পাউরুটি তার মাথার
উপর ভাঙা হবে যেনো সে অবশ্যই গরীব এবং অভাবগ্রস্থদের ভালোবাসে। কোনো ইয়াজিদি রাতে
তার স্ত্রীর সাথে ঘুমাতে পারবেনা, যার পরদিন বুধবার এবং যার পরদিন শুক্রবার। যে এই
প্রত্যাদেশের সাথে সংঘাতপূর্ণ কোনো কাজ করবে, সেই ধর্মদ্রোহী। যদি কোনো ব্যক্তি
চুরি করে নিয়ে যায়, তার প্রতিবেশীর স্ত্রী, অথবা তার সাবেক স্ত্রী, অথবা তার সাবেক
স্ত্রীর বোন বা মা; সে পণ দিতে বাধিত হবে না। কারন সে তার হাতের লুণ্ঠিত বস্তু।
কন্যারা পিতার সম্পদের উত্তরাধিকার হতে পারবে না। একজন যুবতী মেয়েকে বিক্রয় করা
যেতে পারে, যেমন এক একর ভূমি বিক্রয় করা যায়। যদি সে বিবাহিত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন
করে, তখন সে অবশ্যই তার নিজেকে মুক্ত করবে; তার এবং তার হাতের শ্রম থেকে উপার্জিত
অর্থ, তার পিতাকে পরিশোধ করার মাধ্যমে।
সমাপ্ত।।
পাদটীকা
মালিক তাউস ইয়াজিদিদের
সরবোচ্চ ঈশ্বরের নাম মালিক তাউস। ইয়াজিদিরা তার আরাধনা করে ময়ূররূপে। তার আরেক নাম
আযাযেল। ইহুদী, খ্রিস্টিয়ান এবং মুসলিম লোককথা অনুযায়ী ঈশ্বরের নির্দেশ অমান্যকারী
দেবদূত বা ফেরেশতার নাম আজাজিল। সে আদমকে পাপ করতে প্ররোচিত করে বিধায় ঈশ্বর তাকে
স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেন। তারপর সে শয়তানের সাক্ষাৎ প্রকাশ হিসেবে মানবজাতিকে
স্থায়ীভাবে পথভ্রষ্ট করার দ্বায়িত্ব নেয়। নামের মিল থাকায় ইহুদী, খ্রিস্টিয়ান এবং মুসলিমরা
ইয়াজিদিদের শয়তানের উপাসক মনে করে। গবেষকদের মতে, আযাযেল শব্দের উৎপত্তি আরবি ‘আযিয’ এবং হিব্রু ‘এল’ শব্দের
সমন্বয়ে। আযিয শব্দের অর্থ ‘ক্ষমতা ও গৌরব’ এবং এল শব্দের অর্থ ‘প্রভু’। অর্থাৎ প্রভুর ক্ষমতা ও গৌরব। তবে ইয়াজিদিরা সাধারণত
ঈশ্বরকে আযাযেল বা মালিক তাউস কোনো নামেই ডাকতে চায় না। তারা ঈশ্বরের উপর কোনো গুণ
ও আরোপ করতে চায় না। ঈশ্বরকে তারা মালিক বা প্রভু ডাকে।
শেখ আদি বিন মুসাফির
ইয়াজিদি ধর্মের প্রবক্তা। জন্ম ৪৬৭ হিজরি সন মোতাবেক ১০৭২ যিশুসনে বর্তমান
লেবাননের বেক্কা উপত্যকায়। মৃত্যু ৫৫৭ হিজরি সন মোতাবেক ১১৬২ যিশুসনে। জীবনের
অধিকাংশ সময় বাগদাদে অতিবাহিত করেন। সূফিবাদে একনিষ্ঠ এই সাধক হাসান আল বসরি,
আব্দুল কাদের জিলানি, মনসুর আল হাল্লাজ, ইমাম আল গাজ্জালি প্রমুখ সূফি দ্বারা
প্রভাবিত হন এবং জীবনের শেষ সময়ে কুর্দিস্তানের লালিশ পর্বতে বাস করতে থাকেন এবং
এখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এখনও তার কবর সেখানে আছে এবং ইয়াজিদিদের মতে শেখ আদির কবর
পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জায়গা, শেখ আদির কবরের মাটি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র মাটি। ইয়াজিদিরা
তাকে মালিক তাউসের পুনর্জন্ম বলে মনে করে।
লালিশ পর্বত ইরাকের
কুর্দিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পর্বতশ্রেণী। ইয়াজিদিদের মূল আবাসস্থল এই
পর্বতশ্রেণীর আশপাশ জুড়েই। ইয়াজিদিদের নিকট এই পাহাড় পবিত্র। এর অপর নাম কালো
পাহাড়।
শেথ কোরআন অনুযায়ী
আদমের অন্যতম পুত্র হযরত শীষ।
নোয়াহ কোরআন অনুযায়ী
হযরত নুহ।
এনোখ বাইবেল
অনুযায়ী হনোক, কোরআন অনুযায়ী হযরত ইদ্রিস।
নিসরোখ প্রাচীন
আশিরিয়ার কৃষি দেবতা।
কামুশ প্রাচীন
মিশরীয় ফারাও। তিনি সপ্তদশ রাজবংশের শেষ ফারাও। তার রাজত্বকাল ১৫৫৫ থেকে ১৫৫০
যিশুপূর্বসন।
শাপুর, প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রাচীন ইরানের দুইজন সাসানিয় সম্রাট। প্রথমজন আরদাশির
পুত্র শাপুর, রাজত্বকাল ২৪০ থেকে ২৭০ যিশুসন। দ্বিতীয়জন আদুর নার্সেহ পুত্র শাপুর,
রাজত্বকাল ৩০৯ থেকে ৩৭০ যিশুসন।
আরতামিস প্রাচীন গ্রীক
দেবী আরতেমিস। তিনি কুমারীত্ব, শিশুজন্ম, বন্যতা, বন্যপ্রাণী এবং শিকারের দেবী।
আহাব প্রাচীন
ইসরায়েল রাজ্যের সপ্তম রাজা। রাজত্বকাল ৮৮৫ থেকে ৮৫০ যিশুপূর্বসন।
বেলজেবাব ইহুদী ঐতিহ্য
অনুযায়ী শয়তানের অপর নাম। ক্যাথলিক খ্রিস্টিয়ান ঐতিহ্য অনুযায়ী নরকের সাত যুবরাজের
একজন। ইয়াজিদিদের নিকট পির বাব বলে পরিচিত।
এগ্রিকুলাস
গ্নেউস জুলিয়াস এগ্রিকুলাস, রোমান সেনাপতি। জন্ম- ৪০ যিশুসন, মৃত্যু- ৯৩ যিশুসন।
কনস্ট্যান্টিপোল
ঐতিহ্যবাহী শহর। বর্তমানে ইস্তানবুল নামে তুরস্কের বৃহত্তম শহর। প্রাচীন পূর্ব
রোমান সাম্রাজ্য এবং অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী। শহর হিসেবে গোড়াপত্তন হয় ৩৩০
যিশুসনে।
বাখত নাসের ব্যবিলনের
ক্যালডিয় সম্রাট, নেবুখাদ নেজার। রাজত্বকাল ৬০৫ থেকে ৫৬২ যিশুপূর্বসন।
আহুর পারসিক ধর্মের
সরবোচ্চ ঈশ্বর আহুর মাজদা। প্রাক-ইসলাম যুগে প্রাচীন ইরানের রাজধর্ম ছিলো পারসিক
ধর্ম।
নওমি ইয়াজিদি
ধর্মমতে নোয়াহ (নুহ) এর চতুর্থ সন্তান, হাম, শাম, যাফেথ এর পাশাপাশি। গবেষকদের মতে
শাম বা যাফেথ এর অন্য নাম। ইয়াজিদিরা তাকে ডাকে মালিক মিরন অর্থাৎ মির দের রাজা।
হাম নোয়াহের
অবাধ্য পুত্র।
মসুল বর্তমান
ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
আইন সিফনি ইয়াযিদি
অধুষ্যিত জেলা। বর্তমানে ইরাকের কুর্দিস্তানের দহুক প্রদেশের অন্তর্গত।
সিনজার পর্বত সিনজার
জেলায় অবস্থিত পর্বত। ইয়াজিদিদের নিকট পবিত্র।
পারাসাং প্রাচীন
ইরানীয় দুরুত্ব পরিমাপের একক। বর্তমানে ফারসি ভাষায় এর অপভ্রংশ ফারসাখ। ১ পারাসাং
= ১০ কি. মি. প্রায়।
জুদি পর্বত তুর্কী
কুর্দিস্তানের শিরনাক প্রদেশে অবস্থিত পর্বতশ্রেণী। নোয়াহের জাহাজ এই পর্বতে এসে
থেমেছিলো বলে, বাইবেল এবং কোরআনের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। ইয়াজিদিদের দ্বিতীয়
জলযানটিও এই পর্বতে এসে থেমেছিলো বলে ইয়াজিদি জনশ্রুতি আছে।
সিনজার ইরাকের নিনেভে
প্রদেশে অবস্থিত ইয়াজিদি অধুষ্যিত জেলা।
আলেপ্পো বর্তমান
সিরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর। আলেপ্পো প্রদেশের রাজধানী।
সুম্মাক আরবি শব্দ।
আক্ষরিক অর্থ- লাল। তবে ৩৫ টি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদকে একত্রে সুম্মাক বলা হয়। তেল,
সুগন্ধী, ঔষধ এবং রঙ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায়
উৎপাদিত হয়।
বাহাজানিয়ে গ্রাম
বর্তমানে বাহজানি শহর। ইরাকের নিনেভে প্রদেশে অবস্থিত।
হালাতানিয়ে
বর্তমানে হালাতিয়া নামে তুরস্কের দিয়ারবাকির প্রদেশে অবস্থিত শহর।
সারস্লিয়ে অর্থাৎ
বছরের প্রথম দিন।
ইয়াজিদ ইয়াজিদ বিন
মুয়াবিয়া। উমাইয়া রাজবংশের দ্বিতীয় খলিফা। রাজত্বকাল ৬৮০ থেকে ৬৮৩ যিশুসন।
মুয়াবিয়া মুয়াবিয়া বিন
আবু সুফিয়ান। উমাইয়া রাজবংশের প্রথম খলিফা। রাজত্বকাল ৬৬১ থেকে ৬৮০ যিশুসন।
ইশমাইলিয় ইব্রাহিম
পুত্র ইশমাইল এর বংশধর।
শাহিদ বিন জের
ইয়াজিদি লোককথা অনুযায়ী আদমের অন্যতম সন্তান। কুর্দি ‘জের’ শব্দের অর্থ
পাত্র। অর্থাৎ আদমের যে সন্তানকে পাত্রে পাওয়া গিয়েছিলো। ইয়াজিদিদের মতে আদম পুত্র
শাহিদ বিন জের থেকে ইয়াজিদি বংশের সূত্রপাত।
কাওয়াল ইয়াজিদি বর্ণ
চাক ইয়াজিদি বর্ণ
ASADHARON UDYOG.
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Delete