অংশ ১
১. আহুর মাজদাকে বলেন জরথুস্ত্র- হে আহুর মাজদা, হে সর্ব্বোচ্চ মঙ্গলকারী সত্ত্বা, হে মহাজগতের স্রষ্টা, হে পবিত্র জন; আমি জরথুস্ত্র, কে ছিলো আমার পূর্বে প্রথম নশ্বর, যার সাথে তুমি, আহুর মাজদা, কথা বলেছো? কে সে প্রথম, যাকে তুমি শিক্ষা দিয়েছো, আহুর মাজদার আইন, জরথুস্ত্রের আইন?
২. আহুর মাজদা বললেন- হে পবিত্র জরথুস্ত্র, সেই মহান মেষপালক হলো, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা। হে জরথুস্ত্র, সে ছিলো তোমার পূর্বে প্রথম নশ্বর, যার সাথে আমি, আহুর মাজদা কথা বলেছি। যাকে আমি শিক্ষা দিয়েছি আমার, আহুর মাজদার আইন, জরথুস্ত্রের আইন।
৩. হে জরথুস্ত্র, আমি, আহুর মাজদা, তাকে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, তুমি আমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারী হও। এবং হে জরথুস্ত্র, তার উত্তরে, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা বললো- তোমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারী হওয়ার মতো যোগ্যতা, আমার এখনো নেই।
৪. হে জরথুস্ত্র, তখন আমি, আহুর মাজদা, তাকে বললাম- তুমি শুধু আমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারীই নও, তুমি আমার পৃথিবীকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আমার জগতের প্রসার ঘটাবে, আমার পৃথিবীকে আরো পরিপুষ্ট করবে, শাসন করবে এবং দেখে রাখবে।
৫. হে জরথুস্ত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা তখন বললো- তোমার নির্দেশে, আমি পারবো। তোমার পৃথিবীকে আরো সমৃদ্ধ করতে, তোমার জগতের প্রসার ঘটাতে। তোমার নির্দেশে, আমি পারবো, তোমার পৃথিবীকে আরো পরিপুষ্ট করতে, শাসন করতে এবং দেখে রাখতে। তাই আমাকে অবশ্যই হতে হবে, একজন রাজা। না ঠান্ডা বাতাস, না গরম বাতাস, না রোগ, না মৃত্যু।
৬. যিমা বললো- যদিও আমি নিজেই এখনো আইন শিখিনি এবং কাউকে শিখাইওনি। এখনো আমি নই বিশ্বস্ত এবং পবিত্র। আমাকে তুমি পবিত্র করো।
৭. তখন আমি, আহুর মাজদা, তাকে তার রাজত্বের প্রমানস্বরূপ, দুটি নিদর্শন দিলাম। একটি স্বর্ণের আংটি এবং একটি স্বর্ণখচিত ছোরা। যেনো সে রাজকীয় শাসনের চিহ্ন বহন করতে পারে।
৮. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে তিনশত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
৯. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১০. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১১. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
১২. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে ছয়শত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
১৩. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১৪. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১৫. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
১৬. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে নয়শত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
১৭. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১৮. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১৯. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে তিন-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
অংশ ২
২০. সৃষ্টিকর্তা, আহুর মাজদা, যিনি নিজেই তিনি, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, আহ্বান করলেন, সমাবেশের, সমস্ত স্বর্গীয় দেবতাদের সাথে নিয়ে। এবং নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, যিনি পবিত্র মেষপালক, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, আহ্বান করলেন, সমাবেশের, সমস্ত কল্যানময় নশ্বরদের সাথে নিয়ে।
২১. এই সমাবেশে, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, তিনি আসলেন, তার সমস্ত স্বর্গীয় দেবতাদের সাথে নিয়ে, আহুর মাজদা, যিনি নিজেই তিনি। এবং এই সমাবেশে, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, তিনিও আসলেন, তার সমস্ত কল্যানময় নশ্বরদের সাথে নিয়ে, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, যিনি পবিত্র মেষপালক।
২২. অতঃপর আহুর মাজদা, যিমাকে বললেন- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবীর উপর মারাত্মক শীত পতিত হতে যাচ্ছে, যে শীত বয়ে নিয়ে আসবে, হিংস্র ও দূষিত হিমপ্রবাহ। এবং পৃথিবীর উপর শীত পতিত হতে যাচ্ছে, যেনো পৃথিবী পুরু বরফের স্তরে ঢেকে যায়। এমনকি পর্বতের সর্ব্বোচ্চ চূড়াও এক আরেদ্বি পরিমান ঢেকে যাবে।
২৩. এবং সেখানে তিন ধরনের পশু লোপ পাবে। বন্য পরিবেশে বাস করে যে সমস্ত পশু, পর্বতের চূড়ায় বাস করে যে সমস্ত পশু, এমনকি উপত্যকার অন্তঃস্থলে বাস করে যে সমস্ত পশু।
২৪. শীতের পূর্বে, যেসব জমি পূর্ণ থাকতো গবাদীপশুর জন্য, সবুজ ঘাসে, সেসব জমি, গলিত বরফের বিরামহীন জলপ্রবাহে ভেসে যাবে। পৃথিবীর যে অঞ্চলগুলোকে মনে হতো সুখী এবং সমৃদ্ধ, সে অঞ্চলগুলো পরিনত হবে ধ্বংসস্তুপে।
২৫. অতঃপর তুমি তৈরী করবে, একটি বেড়াযুক্ত নৌকা, যা চারপাশে সমান আকৃতির হবে এবং যার প্রত্যেক পার্শ্ব হবে, দুই হথ্রা লম্বা। এবং সেখানে তুমি সাথে নেবে, ভেড়া এবং গরুর প্রতিনিধি, এবং একই সাথে মানুষের, কুকুরের, পাখির এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার প্রতিনিধি। অতঃপর সেই দুই হথ্রা লম্বা, বেড়াযুক্ত নৌকাটি হবে, মানুষের জন্য আবাস এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের জন্য খোঁয়াড়।
২৬. সেখানে থাকবে, এক হথ্রা লম্বা, জমিয়ে রাখা পানির জন্য স্থান, যেনো সেখানে পাখিরা অবস্থান করতে পারে। তাদের চিরসবুজ প্রকৃতি সহ, যেনো তারা কখনো খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ না হয়। এবং তুমি একই সাথে প্রতিষ্ঠা করবে এটা, যেনো তা বসবাসের উপযুক্ত হয়। সেখানে থাকবে বারান্দা সহ ঘর, খোলা অঙ্গন এবং সমাবেশের স্থান।
২৭. অতঃপর সেখানে থাকবে, পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে থাকবে, সমস্ত প্রজাতির গবাদীপশুর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট।
২৮. অতঃপর সেখানে থাকবে, প্রত্যেক প্রজাতির গাছের প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে থাকবে প্রত্যেক প্রজাতির ফলের প্রতিনিধি; যারা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং গন্ধে অতুলনীয়। প্রত্যেক প্রজাতির প্রতিনিধি তুমি নেবে, দুজন করে, যেনো তারা অফুরন্ত হয়ে উঠতে পারে, যেনো তারা দীর্ঘসময় নৌকায় বসবাসরত মানুষের সাথে অবস্থান করতে পারে।
২৯. সেখানে থাকবেনা কোনো কুঁজো। কোনো স্ফীতোদর ব্যক্তি সেখানে থাকবেনা। থাকবেনা কোনো শারিরীকভাবে অক্ষম, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ এবং দরিদ্র ব্যক্তি। থাকবেনা কোনো মিথ্যা, অনর্থ এবং ঈর্ষা। থাকবেনা দন্তব্যসন এবং কুষ্ঠরোগী। সেখানে এমন কোনো মরনশীল থাকবেনা, যাকে আহরি মান আঘাত করতে পারে।
৩০. সেখানে, বৃহত্তম অংশে তুমি তৈরী করবে নয়টি সড়ক, মাঝারি অংশে ছয়টি সড়ক এবং ক্ষুদ্রতম অংশে তিনটি সড়ক। বৃহত্তম অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, এক হাজার পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি। মাঝারি অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, ছয়শত এবং ক্ষুদ্রতম অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, তিনশত। এবং সেই বেড়াযুক্ত নৌকার দরজা বন্ধ করা হবে স্বর্ণের আংটি দ্বারা এবং জানালারা নিজেরাই হবে উজ্জ্বল আলোকিত।
৩১. অতঃপর যিমা তার নিজেকেই জিজ্ঞাসা করলো- কিভাবে আমি তৈরী করবো এমন বেড়াযুক্ত নৌকা, যা তৈরী করতে আহুর মাজদা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন? এবং আহুর মাজদা যিমাকে বললেন- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, তুমি তোমার গোড়ালি দিয়ে আঘাত করো মাটিকে, আর তাকে চাপ দিয়ে ভাঙো। পিষে তাল বানানো মাটির দলা যেমন কুমোরের কথা শোনে, তেমনি মাটি তোমার কথা শুনবে।
৩২. এবং যিমা তেমনটি করলো, যেমনটি আহুর মাজদা ইচ্ছা করেছিলেন। সে তার গোড়ালি দিয়ে আঘাত করলো মাটিকে, আর তাকে চাপ দিয়ে ভাঙলো। পিষে তাল বানানো মাটির দলা যেমন কুমোরের কথা শোনে, তেমনি মাটি তার কথা শুনলো।
৩৩. এবং যিমা তৈরী করলো, একটি বেড়াযুক্ত নৌকা, যা চারপাশে সমান আকৃতির হলো এবং যার প্রত্যেক পার্শ্ব হলো, দুই হথ্রা লম্বা। এবং সেখানে সে সাথে নিলো, ভেড়া এবং গরুর প্রতিনিধি, এবং একই সাথে মানুষের, কুকুরের, পাখির এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার প্রতিনিধি। অতঃপর সেই দুই হথ্রা লম্বা, বেড়াযুক্ত নৌকাটি হলো, মানুষের জন্য আবাস এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের জন্য খোঁয়াড়।
৩৪. সেখানে সে তৈরী করলো, এক হথ্রা লম্বা, জমিয়ে রাখা পানির জন্য স্থান, যেনো সেখানে পাখিরা অবস্থান করতে পারে। তাদের চিরসবুজ প্রকৃতি সহ, যেনো তারা কখনো খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ না হয়। এবং সে একই সাথে, প্রতিষ্ঠা করলো এটা, যেনো তা বসবাসের উপযুক্ত হয়। সেখানে ছিলো বারান্দা সহ ঘর, খোলা অঙ্গন এবং সমাবেশের স্থান।
৩৫. সেখানে সে নিলো, পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে সে নিলো, সমস্ত প্রজাতির গবাদীপশুর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট।
৩৬. সেখানে সে নিলো, প্রত্যেক প্রজাতির গাছের প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে সে নিলো প্রত্যেক প্রজাতির ফলের প্রতিনিধি; যারা ছিলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং গন্ধে অতুলনীয়। প্রত্যেক প্রজাতির প্রতিনিধি সে নিলো, দুজন করে, যেনো তারা অফুরন্ত হয়ে উঠতে পারে, যেনো তারা দীর্ঘসময় নৌকায় বসবাসরত মানুষের সাথে অবস্থান করতে পারে।
৩৭. সেখানে ছিলোনা কোনো কুঁজো। কোনো স্ফীতোদর ব্যক্তি সেখানে ছিলোনা। ছিলোনা কোনো শারিরীকভাবে অক্ষম, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ এবং দরিদ্র ব্যক্তি। ছিলোনা কোনো মিথ্যা, অনর্থ এবং ঈর্ষা। ছিলোনা দন্তব্যসন এবং কুষ্ঠরোগী। সেখানে এমন কোনো মরনশীল ছিলোনা, যাকে আহরি মান আঘাত করতে পারে।
৩৮. এবং সেখানে, বৃহত্তম অংশে সে তৈরী করলো নয়টি সড়ক, মাঝারি অংশে ছয়টি সড়ক এবং ক্ষুদ্রতম অংশে তিনটি সড়ক। বৃহত্তম অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, এক হাজার পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি। মাঝারি অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, ছয়শত এবং ক্ষুদ্রতম অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, তিনশত। এবং সেই বেড়াযুক্ত নৌকার দরজা সে বন্ধ করলো স্বর্ণের আংটি দ্বারা এবং জানালারা নিজেরাই হলো উজ্জ্বল আলোকিত।
৩৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাটি কোন আলোয় আলোকিত ছিলো?
৪০. আহুর মাজদা বললেন- সেখানে ছিলো, প্রকাশিত আলো এবং অপ্রকাশিত আলো। সেখানে ছিলো তারকা, চন্দ্র এবং সূর্য, যে একাই বারবার উদীত হয় এবং অস্ত যায়, এবং সেখানে একটি বছর যেনো একটি দিন।
৪১. সেখানে চল্লিশ বছরে জন্ম নেয়, একজোড়া মানুষ, একজন পুরুষ এবং একজন নারী। এবং সেখানে জোড়ায় জোড়ায় জন্ম নেয়, গবাদীপশু এবং অন্যরা। এবং যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাতে, মানুষ কাটাচ্ছিলো সর্ব্বোচ্চ সুখের দিন।
৪২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাতে, তোমার আইন, মাজদার আইন, কে নিয়ে যেতো? আহুর মাজদা বললেন- হে পবিত্র জরথুস্ত্র, সেটা ছিলো কার্শিপ্তা পাখি।
৪৩. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; সেখানে কে ছিলো শাসনকর্তা? আহুর মাজদা বললেন- হে জরথুস্ত্র, সে ছিলো উর্ভাতাদ-সারা। এবং তুমি নিজে, হে পবিত্র জরথুস্ত্র।
[ পাদটীকা সংযুক্তি
পদ ১০... আর্মাইতি... আহুর মাজদার অনুগত ছয়জন পবিত্র দেবতাদের একজন।
পদ ২২... আরেদ্বী... অর্থাৎ এক বিতাস্তি এবং দুই আঙুল পরিমান। এক বিতাস্তি হলো বারো আঙুল। অর্থাৎ এক আরেদ্বী সমান চৌদ্দ আঙুল পরিমান।
পদ ২৫... হথ্রা... এক হথ্রা সমান প্রায় এক ইংলিশ মাইল।]
No comments:
Post a Comment