কসোভো
ইউরোপের বলকান অঞ্চলে অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম- প্রিস্টিনা। কসোভো ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০০৮ যিশুসনে সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতা
ঘোষনা করে। তবে মূলত ১৯৯২ যিশুসন থেকেই কসোভো
কার্যত স্বাধীন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাষ্ট্রই
সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
কসোভো
অঞ্চলে প্রথম মানববসতির নিদর্শন পাওয়া যায় ব্রৌঞ্জ যুগে। সেখানে তখন বাস করতো থ্রেসিয়, কেল্টিক এবং ইল্লিরিয়
বিভিন্ন উপজাতিরা। ইতিহাসে প্রথমবার এখানে রাজ্য গড়ে তোলে ইল্লিরিয়রা, যিশুপূর্ব
প্রায় ৪০০ সনে। সেই রাজ্য রোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায় ১৬৮ যিশুপূর্বসনে।
রোমানরা এই অঞ্চলের নাম দেয়- ইল্লিরিসাম। কসোভো অঞ্চল ইল্লিরিসাম নামে রোমান
সাম্রাজ্যের ডালমাশিয়া প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয়। ৮৩৯ যিশুসনে এই অঞ্চল বুলগেরিয়
সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায়। তখন এই অঞ্চলে পূর্ব-স্লাভিয় উপজাতিরা বসতি স্থাপন করা
শুরু করে এবং খ্রিস্টিয়ান ধর্মও প্রবেশ করে। সেখান থেকে ১০১৮ যিশুসনে এই অঞ্চল চলে
যায় বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের দখলে। ১১৮০ যিশুসনে পূর্ব-স্লাভিয় উপজাতিরা ‘সার্বিয়
সাম্রাজ্য’ গঠন করলে কসোভো অঞ্চল সেখানে যুক্ত হয়। তখন কসোভো নামে একক কোনো অঞ্চল
ছিলো না। প্রিজরেন, জাকোভে, পেজ, মিত্রোভিচে নামে আলাদা আলাদা ঐতিহাসিক নগরী ও
তৎসংলগ্ন বসতি ছিলো। ‘কসোভোর মাঠ’ নামে একটি সমতল ভূমির নামে পরবর্তীতে এই অঞ্চলের
নামকরন করা হয় কসোভো।
১৪৫৫ যিশুসনে এই অঞ্চল অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায়। তখন
এটা রুমেলিয়া বিলায়েত (প্রদেশ) এর অংশ ছিলো। অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনকালে কসোভো
অঞ্চলে আলবেনিয় জাতির বসতি স্থাপন শুরু হয় এবং একই সাথে ইসলাম ধর্মও প্রবেশ করে। ১৮৬৪
যিশুসনে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘কসোভো’ নামে বিলায়েত গঠন করা হয়। কসোভো বিলায়েতের
আয়তন বর্তমান কসোভোর আয়তনের প্রায় তিনগুন ছিলো। পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্য ইউরোপ
ভূখণ্ডে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পরলে, সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় বিলায়েতগুলো একে একে স্বাধীন
হয়ে যায়। কসোভো বিলায়েতের পূর্ব পাশে সার্বিয়া রাজ্য এবং পশ্চিম পাশে মন্টেনেগ্রো
রাজ্য, স্বাধীন হয়ে যায়। ১৯১৩ যিশুসনের প্রথম বলকান যুদ্ধে, অটোমান সাম্রাজ্যের
পরাজয় হলে, কসোভো বিলায়েত, সার্বিয়া রাজ্য এবং মন্টেনেগ্রো রাজ্য ভাগাভাগি করে
নেয়। বিলায়েতের পূর্ব অংশ পরে সার্বিয়া রাজ্যের ভাগে এবং পশ্চিম অংশ পরে
মন্টেনেগ্রো রাজ্যের ভাগে। ১৯১৮ যিশুসনের ডিসেম্বরের ১ তারিখে ‘সার্ব-ক্রোট এবং
স্লোভেনদের রাজ্য’ প্রতিষ্ঠিত হলে, সার্বিয়া রাজ্য এবং মন্টেনেগ্রো রাজ্য তাদের
কসোভো অঞ্চল সহ রাজ্যে যোগদান করে। ‘সার্ব-ক্রোট এবং স্লোভেনদের রাজ্য’ই পরবর্তীতে
‘যুগোস্লাভ রাজ্য’ নামে পরিচিতি লাভ করে। কসোভোর জাতিগত আলবেনিয়রা হয়ে পরে
সংখ্যালঘু।
১৯৪৫ যিশুসনে যুগোস্লাভিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘কসোভো’ বর্তমান
আয়তনের আকারে জানুয়ারি ৩১, ১৯৪৬ যিশুসনে, সার্বিয়া প্রজাতন্ত্রের ‘স্বায়ত্বশাসিত
প্রদেশ’ হিসেবে ‘যুগোস্লাভ ফেডারেশনে’ যুক্ত হয়। যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের
ক্রান্তিকালে ‘কসোভো স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ’ ফেডারেশনের বাকী ৬ প্রজাতন্ত্রের সমান
মর্যাদা দাবী করে। কসোভোর গণপরিষদ, ১৯৯০ যিশুসনের ২ জুলাই নিজেকে যুগোস্লাভিয়া
ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষনা করে। ‘সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র’ এর
বিরোধীতা করে এবং কসোভোতে গৃহযুদ্ধের উপক্রম হয়। ১৯৯২ যিশুসনের মে মাসে কসোভোর
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ইব্রাহিম রগুভা ‘কসোভো প্রজাতন্ত্রের’ রাষ্ট্রপতি
হিসেবে নির্বাচিত হন এবং কসোভো প্রজাতন্ত্র নিজেকে সার্বিয়া থেকে স্বাধীন ঘোষনা
করে। যুগোস্লাভিয়ার বাকী প্রজাতন্ত্রগুলোতেও তখন স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। ১৯৯২
যিশুসনের মে মাসেই কসোভো রাষ্ট্র কার্যত স্বাধীন হয়ে পরে। কসোভোকে প্রজাতন্ত্র
হিসেবে একমাত্র আলবেনিয়া স্বীকৃতি প্রদান করে। যুগোস্লাভিয়ার বাকী প্রজাতন্ত্রগুলো
স্বাধীন হয়ে গেলে, সার্বিয়া কসোভোর দিকে মনোযোগ দেয়। ১৯৯৪ যিশসনে কসোভোতে
সার্ব-সেনারা প্রবেশ করে, যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ ঠেকাতে কসোভোতে, ন্যাটো এবং
জাতিসংঘ প্রবেশ করে। ১৯৯৯ যিশুসনের ১০ জুন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সার্ব-সেনারা কসোভো অঞ্চল জাতিসংঘের
তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দিয়ে ফেরত যায়। সার্বিয়া এবং রাশিয়া কখনোই কসোভোকে সার্বভৌম
রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয় নি। সার্বিয়া এখন পর্যন্ত কসোভোকে তার অধীনস্ত প্রদেশ
‘কসোভো ও মেতোহিজা’ মনে করে।
সর্বশেষ, ২০০৮ যিশুসনের ১৭
ফেব্রুয়ারি, ন্যাটো, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে কসোভোর
গণপরিষদ সার্বভৌম ‘কসোভো প্রজাতন্ত্র’ এর স্বাধীনতা ঘোষনা করে। জুন ২৩, ২০১৫ এর
হিসাব মোতাবেক, জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত ১৯৩ টি রাষ্ট্রের ১০৮ টি রাষ্ট্র কসোভোকে সার্বভৌম
রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভূগোল ও পরিবেশঃ
কসোভো
ইউরোপ মহাদেশের বলকান অঞ্চলে অবস্থিত সম্পূর্ন ভূমিবেস্টিত একটি রাষ্ট্র। এর আয়তন ১০,৯০৮ বর্গ কিলোমিটার। এর দক্ষিন-পশ্চিম দিকে আলবেনিয়া, দক্ষিন-পূর্ব দিকে মেসিডোনিয়া, পশ্চিম দিকে মন্টেনেগ্রো এবং উত্তর
ও পূর্ব দিকে সার্বিয়া। কসোভোর সবচেয়ে বেশি ভূমি-সংযোগ সার্বিয়ার সাথে। প্রয়োজনে কসোভো আলবেনিয়ার সমুদ্র-বন্দর ব্যবহার করে।
কসোভো
এবং মেতোহিজার দুটি প্রধান সমতলভূমি ছাড়া, বাকী পুরো কসোভোই পাহাড়ী অঞ্চল। আবহাওয়া মূলত ভূমধ্যসাগরীয় ঠান্ডা-প্রধান। কসোভোর আয়তনের প্রায় ৩৯% বনভূমি।
কসোভোর
সর্বোচ্চ বিন্দু- দেরাভিচা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৬৫৬ মিটার বা ৮,৭১৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বৃহত্তম নদী- ‘শ্বেত ড্রিন’ নদী। এছাড়া প্রধান নদীগুলোর মধ্যে আছে- সিটানিসা, ইবার এবং দক্ষিণ মোরাভা। বৃহত্তম হ্রদ- ‘গাজিভোদা হ্রদ’। এছাড়া প্রধান হ্রদ্গুলোর মধ্যে আছে- রাদোনিক হ্রদ, বাটলাভা হ্রদ, বাদোভস হ্রদ ইত্যাদি। পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় কসোভোতে প্রচুর
জলপ্রপাতের অবস্থান। এর মধ্যে ‘মিরুশা জলপ্রপাত-গুচ্ছ’ সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন-আকর্ষন।
কসোভোতে
প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে রৌপ্য, নিকেল, তামা, সীসা, দস্তা, লোহা, কোবাল্ট, এবং বক্সাইটের প্রচুর পরিমানে মজুত রয়েছে।
জনসংখ্যাঃ
২০১১
যিশুসনের আদমশুমারী অনুযায়ী কসোভোর মোট জনসংখ্যা- ১৭,৩৯,৮২৫ জন। কসোভোর সংখ্যাগুরু অধিবাসী মূলত জাতিগত আলবেনিয়। এরা জনসংখ্যার প্রায় ৯২.৯%। এছাড়া জনসংখ্যার বাকী জনগোষ্ঠীরা
হলো-
১.৫% সার্ব, ১.৬% বসনিয়, ১.১% তুর্কী, ০.৯% আশকালি, ০.৬% গোরানিয়, ০.৬% কপ্টিক, ০.৪% রোমানি এবং ০.৩% অন্যান্য।
কসোভোর
ধর্মগুলোর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ধর্ম ইসলাম। তারা জনসংখ্যার ৯৫.৬%। তারপর
খ্রিস্টিয়ান, ৩.৬৯%। এছাড়া ধর্মহীন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আছে, ০.৭১%।
কসোভোর
দাপ্তরিক ভাষা দুইটি- আলবেনিয় ও সার্ব। এছাড়া সংখ্যালঘুদের ভাষা হিসেবে বসনিয়,
তুর্কী, গোরানিয় এবং রোমানি ভাষা স্বীকৃত।
২০১১
যিশুসনের আদমশুমারী মোতাবেক, কসোভোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৫৯
জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৬৪%। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১.৩ বছর। সাক্ষরতার হার ৯৩%।
সরকার ও রাজনীতিঃ
কসোভো
প্রধানমন্ত্রী-শাসিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র প্রধান- রাষ্ট্রপতি,
তার হাতে কিছু পরিমান ক্ষমতা থাকে। প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। কসোভোর গণপরিষদের
নাম- এসেম্বলি অব কসোভো। ‘এসেম্বলি অব কসোভো’ এক কক্ষ বিশিষ্ঠ এবং ১২০ আসন সংবলিত।
কসোভোর গণপরিষদে সংখ্যালঘুদের জন্য ২০ টি আসন সংরক্ষিত রাখা আছে। এর মধ্যে ১০ টি
আসন সার্বদের জন্য সংরক্ষিত। ৩ টি আসন বসনিয়দের জন্য, ২ টি আসন তুর্কীদের জন্য।
এবং ১ টি করে আসন- গোরানিয়, রোমানি, আশকালি, কপ্টিক এবং অন্যান্যদের জন্য বরাদ্দ।
কসোভোর
রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল- ‘ডেমোক্রেটিক লীগ অব কসোভো’।
১৯৯০ যিশুসনের ‘কসোভো প্রজাতন্ত্র’ গঠনে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয় দলটি।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা কসোভোর স্বাধীনতার প্রবাদ পুরুষ ইব্রাহিম রগুভা। এছাড়া কসোভোর স্বাধীনতা আন্দোলনের
সময়,
‘কসোভো
লিবারেশন আর্মি- কেএলএ’ নামে গেরিলা সংগঠন গড়ে ওঠে। বর্তমানে দুইটি রাজনৈতিক দল,
কসোভো লিবারেশন আর্মির দুইজন কমান্ডারের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে। একটি ‘ডেমোক্রেটিক
পার্টি অব কসোভো’ এবং অপরটি ‘অ্যালায়েন্স ফর দ্যা ফিউচার অব কসোভো’। এছাড়া কসোভোর
গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইনিশিয়েটিভ ফর কসোভো,
ভেটেভেনডোসজে- সেলফ ডিটারমিনেশন, লিবারেল পার্টি অব কসোভো ইত্যাদি। বড় দুই দল,
ডেমোক্রেটিক লীগ অব কসোভো এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কসোভোর জোট সরকার, বর্তমানে
কসোভোর ক্ষমতায়।
সংস্কৃতিঃ
কসোভোর
সংস্কৃতি মূলত আলবেনিয় সংস্কৃতি। তবে তাতে সার্ব সংস্কৃতির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া ছোটো নৃগোষ্ঠীগুলোর নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-সাহিত্য লক্ষণীয়। বর্তমান কসোভো
সরকার প্রত্যেক নৃগোষ্ঠীকে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার অধিকার দিতে আগ্রহী। সাহিত্য-চর্চা ও গণমাধ্যম গুলোতে, আলবেনিয় ও সার্ব দুই
ভাষারই ব্যবহার করা হয় ।
অর্থনীতিঃ
কসোভোর
মুদ্রার নাম ‘ইউরো’। কিন্তু কসোভো ‘ইউরো জোন’ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। ইউরোপ
অঞ্চলের একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো প্রচলনের পর থেকেই কসোভো ইউরো ব্যবহার করা করে
আসছে। তার আগে কসোভো ‘জার্মান মার্ক’ ব্যবহার করতো। ১৯৯৯ যিশুসনে সার্ব দিনারের
পরিবর্তে জার্মান মার্ক প্রচলন করা হয়।
সাবেক
যুগোস্লাভিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে কসোভোর অর্থনীতি ছিলো সবচেয়ে দুর্বল। ১৯৯২
যিশুসনে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই অর্থনীতি পুনোরোদ্ধারে মনোনিবেশ করে কসোভো।
কসোভোর অর্থনীতির সর্ববৃহৎ খাত, খনিজ পদার্থ থেকে আয়। তারপর কৃষি এবং পর্যটন।
কসোভোর খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সীসা, তামা, দস্তা, রূপা, লোহা, নিকেল এবং
বক্সাইটের মজুত ।
কসোভো
খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়। খাদ্য সামগ্রী এবং মাংস তাই কসোভোর প্রথম স্থানে থাকা
আমদানী পণ্য ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও
আইনগত অবস্থানঃ
কসোভো
যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৯২ যিশুসনের ২৫ মে।
কিন্তু তখন কসোভোকে আলবেনিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃতি দেয় নি। আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে কসোভোর গণপরিষদ আবারো স্বাধীনতা ঘোষণা করে, ফেব্রুয়ারি ১৭,
২০০৮ যিশুসনে। জুন ২৩, ২০১৫ এর হিসাব মোতাবেক জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে
১০৮ টি রাষ্ট্র কসোভোকে সার্বভৌম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের ২৮ টি
রাষ্ট্রের ২৩ টিই কসোভোকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সার্বিয়া
কখনোই কসোভোকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয় নি। একমাত্র ‘রাশিয়ার’
ভেটো-ক্ষমতাই কসোভোর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার পেছনে প্রধান বাঁধা।
প্রশাসনিক বিভাগঃ
কসোভো
রাষ্ট্র ৭ টি জেলায় (আলবেনিয় ভাষায় ‘রাইয়ুন’ বা সার্ব ভাষায় ‘ওকরুযি’) বিভক্ত। জেলাগুলো
হলো- মিত্রোভিচে, প্রিস্টিনা, ফেরিযাজ, পেজে, জিলান, জাকোভে এবং প্রিজরেন।
জেলাগুলো মূলত কসোভোর ঐতিহাসিক অঞ্চলগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। জেলাগুলোকে আবার ভাগ
করা হয়েছে নগরে (আলবেনিয় ভাষায় ‘কমুনা’ বা সার্ব ভাষায় ‘অপ্সতিনা’)। কসোভোকে মোট ৩৮ টি নগরে ভাগ
করা হয়েছে। নগর গুলোই কসোভোর মূল প্রশাসনিক বিভাগ। নগর গুলোকে আবার পৌর বসতি
(মিউনিসিপাল সেটেলমেন্ট) এবং গ্রামে ভাগ করে হয়েছে। নগরগুলো হলো- মিত্রোভিচে
জেলায়- মিত্রোভিচে, উত্তর মিত্রোভিচে, স্কেনদেরাজ, ভুশত্রি, লেপোসাভিক, যুবিন পটক
এবং যেভেচেন; প্রিস্টিনা জেলায়- প্রিস্টিনা, পডুজেভে, অবিলিক, লিপজান, নভো বেরদে,
ফুশে কসোভো, গ্রাসানিচা এবং গ্লোগক; ফেরিযাজ জেলায়- ফেরিযাজ, হানি ই এলেযিত,
কাচানিক, শ্তিমে এবং শ্তের্পচে; পেজে জেলায়- পেজে, ইস্তক এবং ক্লিনা; জিলান জেলায়-
জিলান, ক্লোকত, কামেনিচা, রানিলুগ, ভিতিনা এবং পারতেশ; জাকোভে জেলায়- জাকোভে,
দেকান, রাহোভেচ এবং জুনিক; প্রিজরেন জেলায়- প্রিজরেন, দ্রাগাশ, মালিশেভা, মামুশা
এবং সুহারেকে।
রাষ্ট্রপতিগণের তালিকাঃ
নাম
|
ক্ষমতাকাল
|
টিপ্পনী
|
ইব্রাহিম
রগুভা
|
মে ২৫,
১৯৯২- জানুয়ারি ০১, ২০০৬
|
ফেব্রুয়ারি
০১, ২০০০ থেকে মার্চ ০৪, ২০০২; রাষ্ট্রপতি পদ ছিলোনা।
|
নেখহাত দাচি
|
জানুয়ারি
০১, ২০০৬- ফেব্রুয়ারি ১০, ২০০৬
|
ভারপ্রাপ্ত।
|
ফাতমির
সেজদিউ
|
ফেব্রুয়ারি ১০,
২০০৬- সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০
|
|
জাকুপ
ক্রাসনিকি
|
সেপ্টেম্বর
২৭, ২০১০- ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১
|
১ম দফা। ভারপ্রাপ্ত।
|
বেহগেত
পাচোল্লি
|
ফেব্রুয়ারি
২২, ২০১১- এপ্রিল ০৪, ২০১১
|
|
জাকুপ
ক্রাসনিকি
|
এপ্রিল ০৪,
২০১১- এপ্রিল ০৭, ২০১১
|
২য় দফা।
ভারপ্রাপ্ত।
|
আতিফেতে
জাহজাগা
|
এপ্রিল ০৭,
২০১১- এপ্রিল ০৭, ২০১৬
|
|
হাশিম থাচি
|
এপ্রিল ০৭,
২০১৬- চলছে...
|
প্রধানমন্ত্রীগণের তালিকাঃ
নাম
|
ক্ষমতাকাল
|
টিপ্পনী
|
বুজার
বুকোশি
|
মে ২৫,
১৯৯২- ফেব্রুয়ারি ০১, ২০০০
|
ফেব্রুয়ারি
০১, ২০০০ থেকে মার্চ ০৪, ২০০২; প্রধানমন্ত্রী পদ ছিলোনা।
|
বাজরাম
রেখেপি
|
মার্চ ০৪,
২০০২- ডিসেম্বর ০৩, ২০০৪
|
|
রামুশ
হারাদিনাজ
|
ডিসেম্বর
০৩, ২০০৪- মার্চ ০৮, ২০০৫
|
|
আদম সালিহাজ
|
মার্চ ০৮,
২০০৫- মার্চ ১৫, ২০০৫
|
ভারপ্রাপ্ত।
|
বাজরাম
কুসুমি
|
মার্চ ১৫,
২০০৫- মার্চ ১০, ২০০৬
|
|
আগিম সেকু
|
মার্চ ১০,
২০০৬- জানুয়ারি ০৯, ২০০৮
|
|
হাসিম থাচি
|
জানুয়ারি
০৯, ২০০৮- ডিসেম্বর ০৯, ২০১৪
|
|
ইসা মুসতাফা
|
ডিসেম্বর
০৯, ২০১৪- চলছে...
|
তড়িৎ সহায়িকাঃ
সাংবিধানিক নামঃ কসোভো
প্রজাতন্ত্র (রিপাবলিকা এ কসোভেস [আলবেনিয়]; রিপাবলিকা কসোভো [সার্ব])।
অবস্থানঃ বলকান অঞ্চল,
ইউরোপ মহাদেশ।
রাজধানীঃ প্রিস্টিনা।
আয়তনঃ ১০,৯০৮ বর্গ
কিলোমিটার (৪,২১২ বর্গ মাইল)।
জনসংখ্যাঃ ১৭,৩৯,৮২৫ জন
(২০১১ আদমশুমারী)।
জনসংখ্যার ঘনত্বঃ ২২০ জন,
বর্গ কিলোমিটার প্রতি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারঃ ০.৬৮%
(২০১৫ হিসাব)।
মুদ্রাঃ ইউরো।
ভাষাঃ আলবেনিয় ও সার্ব
(দাপ্তরিক), বসনিয়, তুর্কী, গোরানিয় এবং রোমানি।
নৃগোষ্ঠীঃ ৯২.৯% আলবেনিয়,
১.৫% সার্ব, ১.৬% বসনিয়, ১.১% তুর্কী, ০.৯% আশকালি, ০.৬% গোরানিয়, ০.৫% কপ্টিক, ০.৪%
রোমানি এবং ০.৩% অন্যান্য ।
ধর্মঃ ৯৫.৬% মুসলিম, ৩.৬৯%
খ্রিস্টিয়ান এবং ০.৭১% ধর্মহীন ও অন্যান্য।
সাক্ষরতার হারঃ ৯৩% (২০১১
হিসাব)।
জিডিপিঃ ১৬.৯৩ বিলিয়ন
মার্কিন ডলার (পিপিপি, ২০১৪ হিসাব)।
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাঃ মে
২৫, ১৯৯২ [একমাত্র আলবেনিয়া স্বীকৃত]; ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০০৮ [আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
স্বীকৃত] (সার্বিয়া থেকে)।
জাতীয় বীরঃ ইব্রাহিম
রগুভা, কসোভোর জাতির জনক।
জাতীয় সঙ্গীতঃ ইউরোপা
(ইউরোপ)।
আইনসভাঃ এসেম্বলি অব কসোভো
(১২০ আসন)।
সরকারের ধরনঃ
প্রধানমন্ত্রীশাসিত গণতন্ত্র।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিঃ জুন
২৩, ২০১৫ মোতাবেক জাতিসংঘভূক্ত ১০৮ টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রধান প্রধান নগরঃ প্রিজরেন,
মিত্রোভিচে, ফেরিযাজ, জাকোভে, পেজে, জিলান, গ্লোগক, লিপজান, সুহারেকে, রাহোভেচ,
পডুজেভে, স্কেনদেরাজ এবং ভুশত্রি।
সর্বোচ্চ বিন্দুঃ দেরাভিচে
পর্বত (২,৬৫৬ মিটার/৮,৭১৪ ফুট)।
সময় স্থানঃ জিএমটি +১।
No comments:
Post a Comment