22 January 2017

মৌলিক চাহিদা কোথা থেকে এলো?

আমার আব্বা বিড়াল পালেন। বেশিরভাগ সময় তারা, খেলে, দৌড়াদৌড়ি করে, রেস্ট নেয়, ঘুমায়। ক্ষুধা লাগলে রান্নাঘরে আসে, মিউ মিউ ডাকে। এইটা প্রাণী হিসেবে প্রাণীকুলের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যে তাদের ক্ষুধা লাগবে। ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য তাদের খাদ্য গ্রহণ করা লাগবে। খাদ্য গ্রহণ করা ছাড়া শরীরের জৈবিক কার্যক্রম ব্যহত হবে। প্রাণের সত্তা টিকিয়ে রাখতে হলে তাই খাদ্য গ্রহন জরুরি। 'খাদ্য' তাই মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে প্রথম।
তারপর প্রাণ খুঁজে আশ্রয়। ঝড়-বৃষ্টি থেকে আশ্রয়, অন্ধকার থেকে আশ্রয়। অপর প্রাণীর কাছ থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়, শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আশ্রয়, দিনশেষে মাথা গোঁজার ঠাই। আশ্রয় বা 'বাসস্থান' তাই মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।
তারপর প্রাণীকুল রোগে-শোকে পতিত হয়। ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগ, অঞ্চল পরিবর্তনজনিত রোগ। আঘাতজনিত রোগ, পরজীবীঘটিত রোগ। রোগমুক্তির কারণ বের করতে না পারায়, পূর্বে বহু জাতি সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। তাই রোগ বা আঘাত থেকে মুক্তি বা 'চিকিৎসা' মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে তৃতীয়।
প্রাণীকুলের মৌলিক চাহিদার তালিকা এখানে শেষ হতে পারতো। কিন্তু অন্যান্য প্রাণী থেকে মানবজাতি এক ধাপ এগিয়ে থাকায়, তাদের জন্য তালিকা এখানে শেষ হয় না। অন্যান্য প্রাণী থেকে প্রাকৃতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং মানবজাতির মধ্যে লজ্জার অনুভূতি তৈরী হওয়ায় তাদের প্রয়োজন হয় আবরণের। আবরণ বা 'বস্ত্র' মানবজাতির চতুর্থ মৌলিক চাহিদা।
অন্যান্য প্রাণীকুল থেকে নিজেদের আলাদা করার জন্য এবং সঞ্চিত জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তর করার জন্য মানবজাতি কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। লেখা, আঁকা, সুর, গল্প-গাঁথা, প্রশিক্ষণ সেই অবলম্বন প্রক্রিয়ার অংশ। এই প্রক্রিয়াগুলোকে একসাথে বলা হয় শিক্ষা। যেন সবকিছু নতুন করে শিখতে না হয় তাই 'শিক্ষা' মানবজাতির পঞ্চম মৌলিক চাহিদা।
মৌলিক চাহিদাঃ দায়িত্বের পরিধি
খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বস্ত্র ও শিক্ষা; মানুষের এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করায় সবার দায়িত্ব আছে। একজন কৃষকের দায়িত্ব খাদ্য ফলানো, একজন বস্ত্র-শ্রমিকের দায়িত্ব বস্ত্র বোনা। একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব চিকিৎসা দেয়া, একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষা দেয়া। মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব এগুলোর যোগান নিশ্চিত করা এবং বন্টন ও ব্যবস্থাপনা সংহত করা। চাহিদাগুলোর উৎপাদন বেশি হলেও লাভ নেই যদি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকে। মানুষের সমাজ এখন অনেক বড়। এতো বড় সমাজে সব মানুষের পক্ষে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা তখনই সম্ভব যখন সেগুলোর সুষ্ঠু বন্টন হবে।
মৌলিক চাহিদাঃ কার অধিকার, কার কর্তব্য?
মানবজাতির অংশ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের অধিকার, সে তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। আর এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই মানুষের একসাথে থাকা। একসাথে থাকতে থাকতেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা। আর সভ্যতার সিঁড়ি বেয়ে আধুনিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রযন্ত্র আর সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য তাই মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। এমনিতেই রাষ্ট্রগুলোর কৃত্তিম সীমানার কারণে মানবজাতি যথেষ্ট বিভ্রান্ত আর বিব্রত। এর মধ্যে যদি এমন হয় যে কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্র বা কোনো নির্দিষ্ট সরকার তার মানুষদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাহলে সে রাষ্ট্র বা সে সরকার দিয়ে মানুষ কি করবে? রাষ্ট্র বা সরকার যদি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে সে রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো দরকার নেই।
মৌলিক চাহিদায় সংযুক্তি
কখনো কখনো মানবজাতি হিংসা ও অহংকারে পতিত হয়ে যুদ্ধ বা দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। কখনো মানবজাতি অতিরিক্ত বুদ্ধির বশীভূত হয়ে গাছ ও পাহাড় কাটে, খাল-নদী ও বনভূমি ধ্বংস করে। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। আবার কখনো বুদ্ধিহীনতার ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ন করে। পরিকল্পনাহীন রাস্তাঘাট, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা ও পানিনিষ্কাশনের ফলে মানুষ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মানবসৃষ্ট এইসব কারণে মানবজাতি সহ অন্যান্য প্রাণীকুলের যথেষ্ট ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়েছে। তাই আমরা মনে করি খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বস্ত্র ও শিক্ষার পাশাপাশি 'স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা' প্রাণীকুলের অন্যতম মৌলিক চাহিদা।

No comments:

Post a Comment