27 August 2017

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ছাই চাপা অঙ্গার

ওয়ান্স আপন এ টাইম দেয়ার ওয়াজ এ ভিসি নেমড আনোয়ার। তো একবার কি হইলো তার আমলে এম এইচ হলে পুলিশ গেলো। ছিনতাই মামলার আসামী জনৈক নাহিদকে ধরতে। দুই তিন রুম খোজার পর ছাত্ররা জিজ্ঞাসা করলো- আপনারা কোন নাহিদরে খোঁজেন? এম এইচ হলে তো প্রচুর নাহিদ। পুলিশ জানেনা তারা কোন নাহিদরে খোঁজে? ছাত্ররা পুলিশদের দৌড়ানি দিলো। পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার পর প্রক্টর মহাশয় আসলেন। ছাত্ররা প্রক্টরকে জিজ্ঞাসা করলো- হলে পুলিশ কেনো স্যার? ক্যাম্পাসে পুলিশ কেনো? প্রক্টর বললো- ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন তাতো আমি জানিনা। ছাত্ররা জানতো প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকে না। ছাত্ররা বললো- আপনি জানেন না, তাহলে আপনার প্রক্টর থাকার দরকার কি? এই প্রক্টর দিয়া আমরা কি করবো? পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রোভিসি আসলো। ছাত্ররা এম এইচ হলের গেট আটকে প্রোভিসি আর তার সাথে আসা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত(!) করলো। ছাত্ররা জবাব চাইতে গেলে ভিসি তার বাসা থেকে তার পরিবার সহ ঢাকায় পলায়ন করলো। ছাত্ররা ভিসির বাসভবন ভেঙে ভুতের বাড়ি বানিয়ে ফেললো। তার সোফার কুশন, তোষক, বালিশ এনে জড়ো করে ভিসির বাসার সামনের মাঠে আগুন ধরিয়ে দিলো। এমন কোনো লাইট, জানালা আর কাচের জিনিশ ছিলো না যেটা ভাঙা পরে নাই। মাননীয় ভিসি সেইযে ঢাকা গেলেন, আর আসলেন না। ঢাকা থেকেই পদত্যাগ করলেন। মিডিয়ার সামনে কান্নাকাটি করলেন- জাহাঙ্গীরনগর এর ভিসি হওয়াই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
আর এখনকার মাননীয় ভিসি, জাহাঙ্গীরনগরের সাত রাজার ধন, সাভার উপজেলাবাসীর নয়নের মনি, পৃথিবীর একমাত্র এবং কেবলমাত্র এবং শুধুমাত্র নারী ভিসি, নারী অধিকারের প্রবক্তা, নারী অধিকারের সুউচ্চ কণ্ঠস্বর, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ভিসুভিয়াস, প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম মাত্র ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, ৭২ জনের বিরুদ্ধে শোকজ দিয়েছেন। এই ১২৮ জন তারই ছাত্রছাত্রী, যারা তার ইগোর কাছে কোরবানি হয়ে গেলো। ছাত্ররা প্রশাসন আর শিক্ষকদের রাজনীতির শিকার হয়ে গেলো। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো বড় জুলুমের ঘটনা ঘটে নাই। এর পরে আর ঘটে কিনা সন্দেহ। এখানে ছাত্রদের দোষ কি? তারা মৃত সহপাঠীদের জানাজা ক্যাম্পাসে পড়াতে চেয়েছিলো, তারা এক্সিডেন্টের জায়গায় রোডব্রেকার আর ফুট ওভারব্রিজ চেয়েছিলো। ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি চালালে তারাতো আপনার বাসার দেয়াল টপকে ঢুকবেই। আপনিতো ছাত্রছাত্রীদের স্বাগতম জানানোর জন্য দরজা খুলে রাখেননি। আর দেয়াল টপকে ঢুকলেই বা কি? আপনার বাসায় তো সোনা-হীরার কারখানা নাই, নাকি আছে? যাই হোক, ছাত্ররা অনশনে বসলো। আপনি প্রোভিসি পাঠিয়ে সেটা ভাঙালেন। পরে আবার বললেন- এটা প্রোভিসির ব্যক্তিগত মতামত ছিলো। আপনি আবার বেয়াদবি করলেন। আপনি আবার ফাইজলামি করলেন। মাননীয় ভিসি আনোয়ার ভিসির ঘটনা থেকে দ্রুত শিক্ষা নেন।
মনে রাখবেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রছাত্রীরা ছাইচাপা অঙ্গার। বাহির থেকে ঠাণ্ডা মনে হয়। ভেতরে হাত দিয়ে লাড়াচাড়া করলে হাত পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। মাননীয় ফারজানা ইসলাম আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন।

21 August 2017

আজটেক প্রার্থনা ৩ঃ ত্‌লালক এর প্রার্থনা



১। মেহিকোতে দেবতা আবির্ভূত হন; তার ঝাণ্ডা সবদিকে উদঘাটিত হয়, এবং কেউ বিলাপ করে না।
২। আমি, দেবতা, ফিরে আসি আবার; রক্তার্ঘ্যের প্রাচুর্যের স্থানে আমি আবার ফিরে আসি; সেখানে যখন দিন পুরাতন হয়, আমি আরোহণ করি দেবতা হিসেবে।
৩। তোমার কাজ যেনো কোনো অভিজাত জাদুকর; যথার্থরূপে তুমি তোমার নিজেকে তৈরী করো আমাদের মাংস থেকে; তুমি তোমার নিজেকে তৈরী করো, এবং কে তোমার মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখে?
৪। বস্তুতপক্ষে যে আমার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করে, আমার কাছে সে তার নিজেকে ভালো হিসেবে পাবে না। আমার পিতারা বাঘ এবং সাপের মাথা দিয়ে তাকে গ্রহণ করবে।
৫। ত্‌লালকায়, তৃণশ্যামল ঘরে, তারা গোলা দিয়ে খেলে, তারা নিক্ষেপ করে নলখাগড়া।
৬। সম্মুখপানে যাও, সম্মুখপানে যাও যেখানে মেঘেরা প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পরে, যেখানে ঘন কুয়াশা তৈরী করে ত্‌লালকের মেঘাচ্ছন্ন ঘর
৭। সেখানে শক্তিশালী কণ্ঠ এবং উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন আমাকে জাগ্রত করে।
৮। আমাকে খুঁজতে তোমরা সেখানে যাও, আমার শব্দ খুঁজতে যা আমি বলি; যখন আমি জেগে উঠি, ভয়ঙ্কর একজন, এবং উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করো।
৯। চার বছর পরপর তারা অবশ্যই সেখানে যাবে; পরিচিত না হোক, চিহ্নিত না হোক, তারা অবশ্যই চমৎকার সুদৃশ্য ঘরে অবরোহণ করবে, তারা নিজেদের একত্রিত করবে এবং উপদেশাবলী জানবে।
১০। সম্মুখপানে যাও, সম্মুখপানে যাও যেখানে মেঘেরা প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পরে, যেখানে ঘন কুয়াশা তৈরী করে ত্‌লালকের মেঘাচ্ছন্ন ঘর।

টিপ্পনী

মেহিকো
          মেহিকো, প্রচলিত বাংলায় মেক্সিকো। বর্তমানে উত্তর আমেরিকার মহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে এবং গুয়েতেমালা এবং বেলিজ এর উত্তরের রাষ্ট্রটিই মেক্সিকো। এর পূর্ব পাশে মেহিকো উপসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। মেহিকোর রাজধানীর নাম মেহিকো সিটি। মেহিকো আজটেকদের প্রাচীন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার। 
মেহিকোর জাতীয় প্রতীক। 
          মেহিকো শব্দটি আজটেকদের ভাষা নাহুয়াত্‌ল থেকে এসেছে। এর মূল শব্দবন্ধটি হলো মেহত্‌লি+কো। ‘মেহত্‌লি’ আজটেকদের প্রধান দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলির আরেকটি নাম। ‘কো’ মানে শহর। অর্থাৎ মেহিকো শব্দের মানে ‘হুইটসিলোপোশ্তলির শহর’। আজটেকদের সময় এই শহরের নাম ছিলো মেহিকো-তেনোশতিত্‌লান। আজটেকরা নিজেদের সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ‘তেহকোকো হ্রদের’ মাঝখানে, প্রথম যে শহরটি গড়ে তুলেছিলো তার নাম ছিলো ‘তেনোশতিত্‌লান’। পরবর্তীতে স্প্যানিয়ার্ডরা তেনোশতিত্‌লানকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে মেহিকো সিটি। তেনোশতিত্‌লান হচ্ছে মেহিকো সিটির হৃৎপিণ্ড। মেহিকো সিটিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ‘মেহিকো’ রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।  
          আজটেক ঐতিহ্য এখনো মেহিকানরা ধরে রেখেছে। স্প্যানিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হওার পরই মেহিকানরা তাদের পতাকায় আজটেক দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলির একটা প্রতীক বসায়। এই প্রতীক একই সাথে মেহিকানদের জাতীয় প্রতীক। প্রতীকে একটি ঈগল পাখি একটি ক্যাকটাস গাছের উপর দাঁড়িয়ে। ঈগলের মুখে একটি সাপ। এখানে ঈগল দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলির প্রতীক, ক্যাকটাস গাছটি তেনোশতিত্‌লান শহর এবং সাপ জ্ঞানের দেবতা কুয়েতজালকোয়াত্‌ল এর প্রতীক।

দেবতা
          দেবতা ত্‌লালক। আজটেকদের অন্যতম প্রধান দেবতা। ত্‌লালক বৃষ্টি, বজ্র, পানি, কৃষি, উর্বরতা, পাহাড়, ঝর্না এবং গুহার দেবতা। দেবতা ত্‌লালক, দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলির মতোই গুরুত্বপূর্ন দেবতা। তেনোশতিত্‌লান শহরে আজটেকদের প্রধান মন্দিরে দুইজন দেবতার আরাধনা করা হতো। একজন হুইটসিলোপোশ্তলি, আরেকজন ত্‌লালক।

রক্তার্ঘ্যের প্রাচুর্যের স্থান
          যে স্থানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নরবলি দেয়া হতো। তেনোশতিত্‌লান শহরের প্রধান মন্দির। নাহুয়াত্‌ল ভাষায় ‘উইই তেওকাল্লি’ বা স্প্যানিশ ভাষায় ‘তেমপ্লো মায়োর’। সেখানে প্রধানত দুইজন দেবতার উদ্দেশ্যে নরবলী দেয়া হতো। একজন হুইটসিলোপোশ্তলি এবং অপরজন ত্‌লালক। দুইজন দেবতার উদ্দেশ্যে দেয়া নরবলীর সময়কাল আলাদা ছিলো।
তেনোশতিত্‌লান শহরের 'উইই তেওকাল্লি' বা প্রধান মন্দির।
পাশাপাশি দুইটি মন্দির একসাথে। একটি হুইটসিলোপোশ্তলির এবং অপরটি ত্‌লালকের। 


ত্‌লালকা
          দেবতা ত্‌লালকের বাসস্থান। জীবিতদের জন্য পৃথিবীর স্বর্গ, মৃতদের জন্য স্বর্গে যাবার আগের ধাপ। ‘ত্‌লালক পাহাড়ে’ অবস্থিত ত্‌লালকের মন্দিরকেই ত্‌লালকা বলা হয়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সমস্ত আজটেকদের জন্য এই মন্দির পরিদর্শন অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ন বলে বিবেচিত হতো।
ত্‌লালকায় দেবতার আশীর্বাদপুষ্ট আত্মারা স্বর্গে যাচ্ছে।


ত্‌লালকের মেঘাচ্ছন্ন ঘর

          ত্‌লালক পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,১২০ মিটার বা ১৩,৫১৭ ফুট উচ্চতায় মেহিকোর নবম উচ্চতম পাহাড়। আজটেকদের কাছে অতি পবিত্র পাহাড়। মৃত্যুর পর আত্মারা এই পাহাড়ে একত্রিত হতে থাকে। প্রতি চার বছর পরপর মৃতের আত্মীয়স্বজনেরা এই পাহাড়ে একত্রিত হয় এবং দেবতা ত্‌লালকের উদ্দেশ্যে স্তুতি গায় এবং বলি দেয়। দেবতা সন্তুষ্ট হলে মৃতের আত্মা স্বর্গে গমনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। প্রতি চার বছর পরপর দেবতা ত্‌লালক এবং মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণে আজটেকরা মিলিত হতো ত্‌লালকের উৎসবে।  

18 August 2017

আজটেক প্রার্থনা ২ঃ হুইটস্নাহুয়াক এর যুদ্ধসঙ্গীত

কি! হো! অস্ত্রাবাসে আমার কাজ রাখা আছে; আমি কোনো মরনশীলের কতা শুনি না, কেউ আমাকে লজ্জিত করতে পারে না; আমি এরকম কিছু জানি না, আমিই ত্রাস, এর বাদে আমি কিছু জানি না যেখানে যুদ্ধ আছে সেখানে আমি আছি, অস্ত্রাবাসে আমার রেখে দেয়া কাজ কথা বলে কেউ আমার সন্তানদের অমঙ্গল করতে পারবে না
দক্ষিণ থেকে আসে আমাদের অলঙ্কার, এটা বিবিধ রঙে রঙিন যেনো ঈগলের আচ্ছাদন
হো হো! দুগুণ পোশাকে যুবকদের প্রাচুর্য; পালকে সজ্জিতরা, আমার বন্দী আমি তাদের পরিত্যাগ করি, আমি তাদের পরিত্যাগ করি, আমার বন্দীরা পালকে সজ্জিত থাকে
হো! হুইটস্নাহুয়াকের যুবকেরা, পালকে সজ্জিত যারা, তারাই আমার বন্দী আমি তাদের পরিত্যাগ করি, আমি তাদের পরিত্যাগ করি, পালকে সজ্জিতরা, আমার বন্দী
দক্ষিণ থেকে আগত যুবকেরা, পালকে সজ্জিতরা, আমার বন্দী; আমি তাদের পরিত্যাগ করি, আমি তাদের পরিত্যাগ করি, পালকে সজ্জিতরা, আমার বন্দী
দেবতা প্রবেশ করেন, হুইটস্নাহুয়াক, উদাহরণ হিসেবে তিনি অবতীর্ন হন, তিনি সম্মুখপানে উদ্ভাসিত হন, তিনি সম্মুখপানে উদ্ভাসিত হন, উদাহরণ হিসেবে অবতীর্ন হতে থাকেন
আমাদের মতো অলঙ্কৃত কিন্তু প্রবেশ করেন দেবতার মতো উদাহরণ হিসেবে তিনি অবতীর্ন হন, তিনি সম্মুখপানে উদ্ভাসিত হন, তিনি সম্মুখপানে উদ্ভাসিত হন, উদাহরণ হিসেবে অবতীর্ন হতে থাকেন

টিপ্পনী

দক্ষিণ থেকে আসে
          দক্ষিণ থেকে আসেন হুইটস্নাহুয়াক নিজে হুইটস্নাহুয়াক শব্দের মানেদক্ষিণ থেকে আগত
হুইটস্নাহুয়াক
          হুইটস্নাহুয়াক দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলির ভাই এবং প্রধানতম শত্রু। হুইটসিলোপোশ্তলির জন্মের সময় হুইটস্নাহুয়াক তাকে মারতে চায়, এমনকি তাদের মাকেও মারতে চায়। কিন্তু হুইটসিলোপোশ্তলি মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়ে নিজেকে এবং মাকে হুইটস্নাহুয়াকের হাত থেকে রক্ষা করেনজীবন বাঁচাতে হুইটস্নাহুয়াক দক্ষিণ দিকের তারকায় পলায়ন করে। মেহিকোর দক্ষিণ দিকের চারশ তারকাই তার বাসস্থান। সৃষ্টির শুরু থেকেই হুইটসিলোপোশ্তলির সাথে হুইটস্নাহুয়াকের দ্বন্দ্ব। হুইটস্নাহুয়াক পৃথিবীতে অশান্তি আর খারাপ কাজের মূল কারন। শেষ সময়ে দেবতা হুইটসিলোপোশ্তলি তাকে বধ করবেন এবং বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।
          আজটেকদের শত্রুজাতি এবং আজটেকদের হাতে বন্দী লোকেদের হুইটস্নাহুয়াকের লোক বলে গন্য করা হতো। মানববলির ঠিক আগে, বন্দীদের হুইটস্নাহুয়াকের এই সঙ্গীত গাইতে গাইতে বেদীর দিকে এগিয়ে যেতে হতো। কখনো কখনো বন্দীদের সুযোগ দেয়া হতো। স্বাধীন আজটেক পুরুষদের সাথে তাদের প্রাণঘাতী দ্বৈতযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হতো। দ্বৈতযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও বন্দীদের এই সঙ্গীত গাইতে হতো।

* আজটেকরা এই সঙ্গীত ব্যবহার না করলেও, আজটেক প্রার্থনার প্রাথমিক সংকলক ‘বেরনার্দিনো দে রিবেইরা দে সাহাগুন’ এটাকে গুরুত্বের বিচারে ২য় অবস্থানে রেখেছেন।  

2 August 2017

আজটেক প্রার্থনা ১ঃ হুইটসিলোপোশ্‌তলি এর প্রার্থনা

১। হুইটসিলোপোশ্‌তলি সারিতে প্রথম, কেউ নয়, কেউ নয় তার মতো; আমি কি তার গান (তার প্রশংসা) গাইবো না যে এগিয়ে আসে আমার পূর্বপুরুষের পোশাকে; আমি উজ্জ্বল হই, আমি ঝলমল করি।
২। সে মিহতেকাদের নিকট আতঙ্ক; সে একাই ধ্বংস করে দেয় পিশা-হুয়াস্তেকাদের, সে তাদের উপর জয়ী হয়।
৩। তীর-নিক্ষেপকারী শহরের জন্য একটি উদাহরণ, যেনো সে তার কাজ শুরু করে দেয়। যে যুদ্ধক্ষেত্রে নির্দেশ প্রদান করে তাকে বলা হয় আমার দেবতার প্রতিনিধি।
৪। যখন সে সজোরে চিৎকার করে সে প্রবর্তন করে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক, স্বর্গীয় তীর-নিক্ষেপকারী, দেবতা নিজেই নিজেকে বদলে নেন যুদ্ধসাজে, স্বর্গীয় তীর-নিক্ষেপকারী, দেবতা নিজেই নিজেকে বদলে নেন যুদ্ধসাজে।
৫। আমানতেকা, নিজেদের একত্রিত করো আমার সাথে, একসঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে, তোমার শত্রুদের মুখোমুখি, নিজেদের একত্রিত করো আমার সাথে।
৬। পিপিতেকা, নিজেদের একত্রিত করো আমার সাথে, একসঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে, তোমার শত্রুদের মুখোমুখি, নিজেদের একত্রিত করো আমার সাথে।

টিপ্পনী

হুইটসিলোপোশ্‌তলি
          হুইটসিলোপোশ্‌তলি আজটেকদের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা। সমস্ত আজটেক জনপদেই তার অর্চনার প্রচলন ছিলো। তিনি যুদ্ধ এবং একইসাথে সূর্যের দেবতা। আজটেকরা যে নরবলি দিতো তা সাধারণত তার সম্মানেই দেয়া হতো। আজটেক লোককথা অনুসারে, পৃথিবীর আদি দেবতা দুইজন, ‘তোনাসাসিহুয়াতল’ এবং ‘তোনাসাতেসুতলি’। এই দুইজনের চার সন্তান। চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোটো হুইটসিলোপোশ্‌তলি। তিনি ও তার বাকী ভাইয়েরা পিতামাতার নির্দেশে এই মহাজগৎ সৃষ্টি করেন। প্রথমে হুইটসিলোপোশ্‌তলি যুদ্ধের দেবতা হিসেবে পূজিত হন। ক্রমে তিনি আজটেক সভ্যতায় সূর্যের দেবতা হিসেবেও আরাধনা পেতে শুরু করেন। আজটেকরা মনে করতো একমাত্র হুইটসিলোপোশ্‌তলিই তাদের যুদ্ধে জয় এনে দিতে পারেন। আজটেকদের বিজিত এলাকা যতো সম্প্রসারিত হতে থাকে ততোই ছড়িয়ে যেতে থাকেন হুইটসিলোপোশ্‌তলি। স্প্যানিশরা আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত হুইটসিলোপোশ্‌তলি পূজিত হতেন মেহিকো (মেক্সিকো) ও গুয়েতেমালার আটলান্টিক উপকূল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত। তার বাম হাতে আগুনের সাপ ‘হিউহকোয়াতল’ আর ডান হাতে স্বর্গীয় আয়না। তার মাথায় শোভা পেতো হামিংবার্ডের নীল আর সবুজ পালক, পরনে থাকতো স্বর্ননির্মিত পোশাক।  
মিহতেকা
          মিহতেকাতল এর বহুবচন। মিহতেকাপান এর অধিবাসীদের বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহৃত হতো। মিহতেকাপান প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী আজটেকদের শত্রুশহর।
পিশা-হুয়াস্তেকা
          হুয়াস্তেকা জাতি। হুয়াস্তেকারা ‘মায়া’ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তারা মেহিকো উপসাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বাস করতো। আজটেকদের শত্রুজাতি।
তীর-নিক্ষেপকারী
          তীর-নিক্ষেপকারী, দেবতা হুইটসিলোপোশ্‌তলি নিজেই। তিনি তার হাতে থাকা আগুনের সাপ ‘হিউহকোয়াতল’ শত্রুদের দিকে নিক্ষেপ করেন।
আমানতেকা
          আমান্‌তলান অঞ্চলের অধিবাসী। আজটেকদের মিত্রভাবাপন্ন।
পিপিতেকা
            অনির্ধারিত কোনো অঞ্চলের মিত্রভাবাপন্ন জাতির নাম। স্থান নির্ধারন করা যায়নি।