8 March 2021

তুরস্কের ইতিহাস ও রাজনীতি। পর্ব ৬। সেলজুক রুম সালতানাত

সুলাইমান বিন কুতালমিশের পিতা কুতালমিশ বিন আরসালান ছিলেন সেলজুক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা তুঘরিল বের চাচাতো ভাই। সেলজুক সাম্রাজ্যের বিস্তারে কুতালমিশের অসামান্য ভূমিকা। সেলজুক সিংহাসন অধিকারের প্রশ্নে তিনি আল্প আরসালানের বিরোধিতা করেন এবং পরাজিত হন। তার ছেলে সুলাইমান বাইজেন্টাইন বিদ্রোহীদের সাথে মিলে আনাতোলিয়ায় অবস্থান নেন। ১০৭৭ সালে সুলাইমান নিকেয়া শহরকে রাজধানী করে সেলজুক রুম সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১০৮৬ সালে সিরিয়ার সেলজুক আমিরের অধীনে থাকা আলেপ্পো দখল করতে গেলে মারা যান। তার ছেলে কিলিজ আরসালান সুলতান মালিক শাহের বন্দী হিসেবে ইস্ফাহান চলে যান।

১০৮১ সালে সেলজুক রুম সালতানাত ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য
১০৯২ সালে মালিক শাহের মৃত্যু হলে কিলিজ আরসালান মুক্ত হন এবং নিকেয়া ফিরে এসে পিতার রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। ১০৯৭ সালে ক্রুসেডার সৈন্যরা রাজধানী নিকেয়া অবরোধ করে। কিলিজ তখন পাশের দানিশমন্দ রাজ্যের সাথে যুদ্ধরত ছিলেন। সেখান থেকে এসে নিকেয়ায় ক্রুসেডারদের মুখোমুখি হন। ক্রুসেডাররা আনাতোলিয়া ও জেরুজালেম অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অবরোধ পরিচালনা করে। জেরুজালেম অঞ্চলে তারা ভূমধ্যসাগরের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি ক্রুসেডার রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হলেও, আনাতোলিয়ায় খুব একটা সাফল্য পায় নি।

কিলিজ আরসালানের পর সেলজুক রুম সালতানাতের ক্ষমতায় আসেন তার পুত্র মালিক শাহ (১১১০-১১১৬), তারপর আসেন রুকনউদ্দিন মাসুদ (১১১৬-১১৫৬)। মালিক শাহ ক্ষমতায় বসে প্রশাসনিক অযোগ্যতার পরিচয় দিলেও সুলতান মাসুদ সফলভাবে রাজ্যপরিচালনা করেন। তার সময়ে শুরু হয় ২য় ক্রুসেড।

ক্রুসেডারদের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যসমূহ
(এডেসা, এন্টিওক, ত্রিপোলি ও জেরুজালেম)

ক্রুসেড মূলত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হারানো গৌরব ও পরাজিত অঞ্চল দখলের জন্য পরিচালিত বেশ কয়েকটি যুদ্ধের সামস্টিক নাম। তখনকার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির বিভিন্ন রাজ্য (পোপের রাজ্য, ভেনিস, জেনোয়া, লোম্বার্ডি ইত্যাদি); এমনকি সুদূর ইংল্যান্ড থেকেও সৈন্যরা ক্রুসেডে অংশ নিতে আসতো। বেশ কয়েকটি অভিযান-অবরোধে ক্রুসেডাররা সফল হলে জেরুজালেম ও লেবাননে খ্রিস্টিয়ান রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

সেলজুক রুম সালতানাতের প্রায় প্রত্যেক সুলতানকেই ক্রুসেডারদের মোকাবিলা করতে হয়। সুলতান মাসুদের পর সালতানাতের ক্ষমতায় আসেন সুলতান কিলিজ আরসালান ২য় (১১৫৬-১১৯২)। এরপর গিয়াসউদ্দিন কায়খসরু (১১৯২-১১৯৬), রুকনউদ্দিন সুলাইমান (১১৯৬-১২০৪), কিলিজ আরসালান ৩য় (১২০৪-১২০৫) এবং ২য় দফায় গিয়াসউদ্দিন কায়খসরু (১২০৫-১২১১)।

১১৯০ সালে সেলজুক রুম সালতানাত

এসময় সেলজুক রুম সালতানাতের উপর বাইজেন্টাইন প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বাইজেন্টাইনদের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক করতে গিয়ে অনেক সুলতানই গ্রীক স্ত্রী গ্রহন করে। গ্রীক স্ত্রীদের পুত্ররা আবার সুলতান হয়। আনাতোলিয়ার অনেক গ্রীক ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। এভাবে তুর্ক ও গ্রীক জাতির মিশ্রন ঘটতে থাকে এসময়ে।

সিংহাসনের জন্য সেলজুক রুমের যুবরাজদের সংঘাত একদিকে, আরেকদিকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সালতানাতকে দুর্বল করতে থাকে। গিয়াসউদ্দিন কায়খসরুর পর রুমের ক্ষমতায় আসেন ইজ্জউদ্দিন কায়কাউস (১২১১-১২২০), আলাউদ্দিন কাউকোবাদ (১২২০-১২৩৭), কায়খসরু ২য় (১২৩৭-১২৪৬)।

সেলজুক রুম সালতানাতের পতাকা
এরই মধ্যে পশ্চিমদিকে শুরু হয় মঙ্গোলদের আক্রমন। মঙ্গোলদের আক্রমনে সেলজুক রুম সালতানাত স্বাধীন রাজ্য হিসেবে তার মর্যাদা হারায়। মঙ্গোলদের করদ রাজ্য হিসেবে আরো কিছুদিন সালতানাত টিকে থাকলেও, ক্ষমতার রাজনীতিতে সুলতান তার গুরুত্ব হারায়। এসময় আনাতোলিয়ার মঙ্গোল সেনাপতিরা ঠিক করে দিতো কে হবে রুমের সুলতান। একই সময়ে ২-৩ জনকে সহ-সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসানোর নজিরও আছে।

১২৪৩ সালের কোসেদাগের যুদ্ধে সেলজুক রুম মুখোমুখি হয় মঙ্গোলদের। যুদ্ধে মঙ্গোল যুদ্ধকৌশলের কাছে পরাজিত হয় সুলতানের বাহিনী, সুলতান আংকারায় পলায়ন করেন। রাজ্যের পক্ষে ভিজিয়ার (প্রধানমন্ত্রী) মঙ্গোল সেনাপতির সাথে চুক্তি করেন। সেই চুক্তিতে সেলজুক রুম সালতানাত মঙ্গোলদের করদ রাজ্যে পরিনত হয়। সুলতানের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে আসে। সালতানাতের প্রভাব রাজধানী কোনিয়ার আশপাশে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।

সেলজুক রুম রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও, তুর্করা তখনো তাদের ঐতিহ্যবাহী বেইলিক (গোত্রভিত্তিক বেদের অধীনস্ত প্রিন্সিপালিটি ব ক্ষুদ্ররাজ্য) প্রথা পরিত্যাগ করেনি। রাজ্যের ভেতরে এবং বাহিরে বেশ কিছু বেইলিক তখন অস্তিত্বশীল ছিলো। কোসেদাগের যুদ্ধে সুলতানের পরাজয় অনেক তুর্কি গোত্র মেনে নিতে পারেনি। তারা এই যুদ্ধের পর তাদের নিজেদের এলাকায় আলাদা বেইলিক প্রতিষ্ঠা করে।

একদিকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য অপরদিকে মঙ্গোল সাম্রাজ্য। মাঝখানে পতনোন্মুখ সেলজুক রুম সাম্রাজ্য। অনেক বেইলিক তখন একলা বা যুথবদ্ধভাবে মঙ্গোলদের প্রতিহত করতে চাইতো। আবার অনেক বেইলিকের মধ্যেই কোনো সদ্ভাব ছিলো না, নিজেরাও দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকতো। নিজেদের অঞ্চল ও পশুচারণভূমি নিশ্চিত করা গেলেই তারা পাশের বেইলিকে আক্রমনের প্রস্তুতি নিতো।

ক্ষমতার স্থান কখনো শূন্য থাকে না। সেলজুক রুম সাম্রাজ্যের শূন্যস্থান পূরণ করে আনাতোলিয়ার বেইলিকগুলো।

তুরস্কের ইতিহাস ও রাজনীতি। পর্ব ৫। আনাতোলিয়ার মঞ্চে বাইজেন্টাইন থেকে সেলজুক


মুসলিম বিশ্বে ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য আবার তার শক্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য বলকান ফ্রন্টে সাম্রাজ্য বিস্তার করে তারপর আনাতোলিয়ার দক্ষিণে মনোযোগ দেয়। সম্রাট নিকেফোরাস ২য় ফোকাস (৯৬৩-৯৬৯) বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হারানো গৌরব ফিরে পেতে সচেষ্ট হন। তিনি আলেপ্পো ও ক্রিট দখল করে নেন। তার উত্তরসূরী সম্রাট জন জিমিসকেস (৯৬৯-৯৭৬) দামেস্ক, বৈরুত, আক্রে, সিডন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বন্দর দখল করে নেন। তারপর সম্রাট বাসিল ২য় (৯৭৬-১০২৫) বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ক্ষমতাকে আরো সুসংহত করেন। সম্রাট বাসিল ২য় কে শেষ শক্তিশালো বাইজেন্টাইন সম্রাট বলা চলে।

১০২৫ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য 

এদিকে মুসলিম বিশ্বে অন্তর্কোন্দল ও বহিঃআক্রমন চললেও ইরাক ও মিসরের শহরগুলো বাইজেন্টাইন আক্রমন থেকে নিরাপদ থাকে। মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতা এক হাত থেকে আরেক হাতে যেতে যেতে শেষপর্যন্ত সেলজুকদের হাতে পৌছায়। ১০৪০ এর মধ্যেই সেলজুকরা মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেলজুকরা বাগদাদ কেন্দ্রীক রাজনীতি করলেও তাদের রাজধানী থাকে বর্তমান নিশাপুর ও রে শহর। এসময় নামমাত্র ক্ষমতা আব্বাসিয় খলিফার হাতে থাকে।

১০৪৮ সালে রাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও সেলজুক সাম্রাজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ঐ বছরের কাপেত্রুর যুদ্ধে সেলজুকরা জয়লাভ করলে সীমান্তের কিছু বাইজেন্টাইন এলাকা তাদের হস্তগত হয়। এরপর ১০৬৭ সালে সেলজুকরা কাইসারি (সিজারিয়া) ও ১০৬৯ সালে কোনিয়া (আইকোনিয়াম), দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বাইজেন্টাইন শহর দখল করে নেয়। বাইজেন্টাইনরা হারানো শহর পুনর্দখল করতে চেষ্টা করতে থাকে। ১০৭১ সালের মাঞ্জিকার্তের যুদ্ধে বাইজেন্টাইনদের পরাজয় আনাতোলিয়ায় তাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে ফেলে। মাঞ্জিকার্তের যুদ্ধ আনাতোলিয়ার পরবর্তী ইতিহাস তৈরীতে ভূমিকা রাখে।

সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান ১০৭১ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে শান্তিচুক্তি করতে চান। এক সীমান্তে শান্তিচুক্তি করে তিনি চেয়েছিলেন অপর সীমান্তে ফাতেমিয় খিলাফতের অধিকারে থাকা সিরিয় শহর আলেপ্পো আক্রমন করবেন। তিনি যখন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আলেপ্পোর দিকে রওনা দেন তখন বাইজেন্টাইন সম্রাট রোমানস ৪র্থ মাঞ্জিকার্তের দিকে আসতে থাকেন। সম্রাট রোমানস ভেবেছিলেন আল্প আরসালান যখন আলেপ্পো অবরোধের ব্যস্ত থাকবেন, তখন তিনি মাঞ্জিকার্ত সংলগ্ন পূর্ব আনাতোলিয়া অধিকার করবেন।

কিন্তু আল্প আরসালানের কাছে খবর আসে, সম্রাট রোমানস মাঞ্জিকার্তের দিকে যাচ্ছেন। তিনি দ্রুত আলেপ্পো থেকে তার সৈন্য সরিয়ে মাঞ্জিকার্তের দিকে রওনা দেন। সম্রাট রোমানস আল্প আরসালানের এই সিদ্ধান্তের খবর তখনও পাননি। ১০৭১ সালে ২৬ আগস্ট বেইজেন্টাইন-সেলজুক দুই পক্ষ মুখোমুখী হয়। যুদ্ধে সম্রাট রোমানসের পক্ষে ছিলো ৪০-৫০ হাজার সৈন্য এবং সুলতান আল্প আরসালানের ছিলো ২০-৩০ হাজার সৈন্য। যুদ্ধ শুরুর আগে সুলতানের পক্ষ থেকে আবারো শান্তিচুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হয়। সম্রাট রোমানস শান্তিচুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানান। সুলতান আল্প আরসালান কাফনের সাদা কাপড় পরে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হন। যুদ্ধে পরাজয়ের পর সম্রাট রোমানসকে হাজির করা হলে আল্প আরসালানের সাথে তার কথোপকথন নিয়ে কিংবদন্তী তৈরী হয়।

রক্ত ও কাদামাখা বিদ্ধস্ত সম্রাটকে আল্প আরসালানের সামনে আনলে তিনি প্রথমে বিশ্বাস করতে চান নি, এটাই সম্রাট রোমানস। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হলে, তিনি জিজ্ঞাসা করেন-

আমি যদি আপনার সামনে বন্দী হিসেবে হাজির হতাম, আপনি কি করতেন?

হয়তো হত্যা করতাম, অথবা কন্সট্যান্টিনোপোলের রাস্তায় আপনাকে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতাম।

আমার শাস্তি এরচেয়ে অনেক ভারী। আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং মুক্ত করলাম।

এরপর সুলতান সম্রাটকে বিপুল পরিমান উপহার সহ মুক্তি দেন। তাকে সসম্মানে কন্সট্যান্টিনোপোল পৌছে দেয়ার জন্য ২জন আমির ও ১ হাজার সৈন্যকে নির্দেশ দেন। যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে সুলতান আল্প আরসালান ১৫ লক্ষ স্বর্ন্মুদ্রা দাবী করেন। সমগ্র পূর্ব আনাতোলিয়ার অধিকার সুলতানের হাতে আসে এবং দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ইতিহাসে মাঞ্জিকার্তের যুদ্ধের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। শুরু হয় সম্রাট রোমানসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ১০৭১ সালেই সম্রাট রোমানস মৃত্যুবরণ করলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে। পূর্ব ও মধ্য আনাতোলিয়ার গ্রীকরা পশ্চিম দিকে সরে যেতে থাকে। সেলজুকদের হাত থেকে বাইজেন্টাইন জমি পুনরোদ্ধারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ১ম ক্রুসেড।

ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সেলজুক সাম্রাজ্যেও শুরু হয় গৃহবিবাদ। সুলতান মালিক শাহের (১০৭২-১০৯২) সময়ে সেলজুক সাম্রাজ্য তার সর্বোচ্চ সীমান পৌছায়। পশ্চিমে আফগানিস্তান-তুর্কমেনিস্তান থেকে পুর্বে আনাতোলিয়া। মালিক শাহের মৃত্যুর পর সেলজুক সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায়। আনাতোলিয়ার ক্ষমতায় আসেন কিলিজ আরসালান। কিলিজ আরসালানের পিতা সুলাইমান বিন কুতালমিশ সেলজুক রুম সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা।

6 March 2021

তুরস্কের ইতিহাস ও রাজনীতি। পর্ব ৪। মুখোমুখি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও মুসলিম খিলাফত

৬১০ খ্রিস্টাব্দে মহানবী আরব বেদুইনদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। মহানবী আরবের যে এলাকায় ধর্মপ্রচার শুরু করেন তাকে বলা হতো হেজাজ। পশ্চিমে লোহিত সাগর আর পূর্বে আরবের দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমি। এরমধ্যে হেজাজে কিছু শহর গড়ে উঠলেও আরব বেদুইনদের সমাজব্যাবস্থা ছিলো গোত্রভিত্তিক। আরব উপদ্বীপের উত্তরদিকে তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি সাম্রাজ্য- পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য (বাইজেন্টাইন) ও সাসানিয় সাম্রাজ্য (পারস্য)।

উপদ্বীপের উত্তরে আরব ক্রিস্টিয়ানদের দুইটি রাজ্য ছিলো। একটি হলো ঘাসানিদ রাজ্য, এটি বাইজেন্টাইনদের করদ রাজ্য ছিলো। ঘাসানিদদের রাজধানী ছিলো- জাবিয়াহ (বর্তমানে তেল জাবিয়াহ, সিরিয়ার গোলান মালভূমির কাছে অবস্থিত)। আরেকটি হলো লাখমিদ রাজ্য, এটি সাসানিয় সাম্রাজ্যের করদ ছিলো। এদের রাজধানী ছিলো- আল হিরা (বর্তমান ইরাকের কুফা নগরী)। আরেকটি রাজ্য ছিলো মধ্য আরবের মরুভূমি জুড়ে- কিন্দাহ রাজ্য।

মহানবীর গোত্র ছিলো কুরাইশ। কুরাইশ হেজাজের অন্যতম প্রধান গোত্র ছিলো। হেজাজের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ছিলো আরবদের তীর্থস্থান- মক্কা, তুলনামূলক সবুজ শহর ইয়াস্রিব (মদিনা) এবং কুরাইশ গোত্রের প্রশাসনিক দপ্তর- তাইফ। মহানবীর ইসলাম ধর্ম প্রচার তার নিজের গোত্র কুরাইশরা ভালোভাবে গ্রহন করেনি। ফলশ্রুতিতে মহানবী তার অল্প কিছু অনুসারী নিয়ে ৬২২ সালে ইয়াস্রিব হিজরত করেন।

৬০০ সালে আরব উপদ্বীপ

মহানবী যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন তখন আরব উপদ্বীপ ধর্ম বিষয়ে বহুধাবিভক্ত। বহুইশ্বরবাদী আরব লোকায়ত ধর্ম বেশি থাকলেও, ইহুদি, খ্রিস্টিয়ান, জরথুস্ত্রবাদী, মানিবাদি এবং হানাফি (আব্রাহামিক একেশ্বরবাদী) বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমান ছিলো। মহানবী ইয়াস্রিবে (মদিনা) বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে নিয়ে একটি রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড়া করানোর চেষ্টা করেন। হেজাজ ও মধ্য আরবের অনেক গোত্র এই রাজ্যব্যবস্থার সমর্থন করে, ফলত সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে। ৬৩০ সালে মুসলমানরা মক্কা ও তাইফ অধিকার করে।

মদিনাকেন্দ্রীক মুসলিম রাজ্যের সাথে ঘাসানিদ রাজ্য সংঘর্ষে জড়ায় মুতার যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা তাদের করদ রাজ্য ঘাসানিদদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই খালিদ বিন ওয়ালিদ কুশলী সেনাপতি হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমান করেন। মুসলিমরা সরাসরি বাইজেন্টাইনদের মুখোমুখি হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধে।

৬৩২ সালে মহানবীর মৃত্যু হলে আবু বকরের হাতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। এই খিলাফতকে বলা হয় রাশিদিন খিলাফত। রাশিদিন খিলাফত টিকে থাকে ৬৬১ সাল পর্যন্ত। রাশিদিন খিলাফতের সময় সাম্রাজ্য বিস্তার আরো জোরদার হয়। পারস্য এবং বাইজেন্টাইন উভয় সাম্রাজে যুগপৎভাবে আক্রমন করা হয়। রাশিদিন খিলাফতের সীমান্তে থাকা বাইজেন্টাইন অঞ্চল- সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও ফিলিস্তিনে মুসলিমরা প্রবেশ করে।

মুসলিম সাম্রাজ্যের বিকাশ 
[গাঢ় লাল- মহানবীর সময়কাল, হালকা লাল- রাশিদিন খিলাফত, গাঢ় হলুদ- উমাইয়া খিলাফত]
খলিফা আবু বকর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে চারটি আলাদা দিক থেকে আক্রমন করার জন্য চারজন সেনাপতি প্রেরণ করেন- আবু উবাইদাহ, আমর ইবনুল আস, ইয়াজিদ বিন আবু সুফিয়ান এবং শুরহাবিল বিন হাসানা। খলিফা উমরের সময়ে বাইজেন্টাইন অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত হন আবু উবাইদাহ। আর আবু উবাইদাহের মিলিটারি কাউন্সিলের প্রধান পরামর্শক হন খালিদ বিন ওয়ালিদ। সেনাপতি আবু উবাইদাহ ধীর কিন্তু সর্বাত্মক আক্রমনে বিশ্বাস করতেন।

৬৩৭ সালে সেনাপতি আবু উবাইদাহ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ আনাতোলিয়া প্রবেশ করেন, বাইজেন্টাইনদের মুখোমুখি হন লৌহসেতুর যুদ্ধে। যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয়। আনাতোলিয়ার বিজিত অঞ্চল রাশিদিন খিলাফতের সিরিয়া প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয়। ৬৩৯ সালে সিরিয়া প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান। মুয়াবিয়ার সময়ে আনাতোলিয়ায় আক্রমন জারি থাকে।

৬৩৭-৩৮ সালে রাশিদিন খিলাফতের আনাতোলিয়া জয়
বিজিত বাইজেন্টাইন এলাকার লেবানন এবং ফিলিস্তিনের পাশাপাশি মুসলিমরা পায় ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের সুযোগ। এসময় সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া মুসলিমদের প্রথম নৌবাহিনী গঠন করেন। নৌপথে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহর আক্রমনের পরিকল্পনা করা হয়। এরকম একটি পরিকল্পনা নৌপথে বাইজেন্টাইন সাইপ্রাস আক্রমন খলিফা উমর অনুমোদন দেননি। কিন্তু খলিফা উসমান মুয়াবিয়ার পরিকল্পনা পাশ করেন। ফলে মুসলিমরা জল ও স্থল দুইভাবেই বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য আক্রমন করতে থাকে।

একেএকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হাতছাড়া হয় সম্পূর্ণ আফ্রিকা অঞ্চল, ভুমধ্যসাগরের গুরুত্বপূর্ণ গ্রীক দ্বীপ- সাইপ্রাস, ক্রিট, রোডস, ইতালির সিসিলি। ভূমধ্যসাগরে খিলাফতের নৌবাহিনী ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। স্থলপথেও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে অবরোধ চালু থাকে।

৬৫৪ সালে মুসলিম বাহিনী প্রথম বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপোল অবরোধ করে। জল ও স্থল দুইদিকেই অবরোধ করে। কিন্তু অবরোধ ব্যর্থ হয়। এরপর আরো একবার অবরোধের চেষ্টা করা হয় ৬৬৯ সালে। সেবারও ব্যর্থ হয়। এরপর করা হয় ৬৭৪-৬৭৮ সালে। ৬৬১ সালে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। খলিফা মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান অবরোধ নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নিজের ছেলে ইয়াজিদকে পাঠান।

মুয়াবিয়া সিরিয়ার গভর্নর থাকাকালীন সময়ে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কিছু সংস্কার করেন। তার সময়ে সিরিয়া প্রদেশ একটি বহুভাষাভিত্তিক জনপদে পরিণত হয়। সিরিয়া উর্বর জনপদ ও কর্মমুখর বন্দরের জন্য বিখ্যাত ছিলো। ক্ষমতাসীন আরবরা ছাড়াও সাম্রাজ্যের আফ্রিকা ও পারস্য অঞ্চলের লোকেরা এখানে বসতি স্থাপন করে। এছাড়া বিভিন্ন ভাগের খ্রিস্টিয়ান, ইহুদি, সাবিয়ান, কপ্টিক, ক্যালদিয়, আসিরিয়, গ্রীক, স্প্যানিশ, কাতালান ও ভেনিসিয়রা সিরিয়া প্রদেশে বসতি স্থাপন করে। প্রশাসনিক কাজে উমাইয়া খিলাফত প্রশাসন মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে বিভাজন করতেন না। ফলে অনেক যোগ্য অমুসলিম খিলাফতের অধীনে সরকারী দায়িত্ব পালন করতে থাকে।

বারবার অবরোধের পরও কন্সট্যান্টিনোপোলের পতন হয়নি, তবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য চারপাশ থেকে সংকুচিত হয়ে আসে। একসময়কার পরাশক্তি পরিণত হয় আনাতোলিয়া ও বলকানের আঞ্চলিক রাজ্যে। এদিকে রাশিদিন খিলাফতের সময়েই খিলাফত সাম্রাজ্য তৎকালীন দুই পরাশক্তিকে পরাস্ত করে নিজেই পরাশক্তি হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু নিজেদের অন্তর্কোন্দল ও ক্ষমতার পালাবদলের কারণে খিলাফতের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।

রাশিদিন খিলাফতের শেষদিকে মুসলিমরা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরে। খলিফা উসমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারকে কেন্দ্র করে একপক্ষে খলিফা আলী ও অপরপক্ষে সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া ও মহানবীর স্ত্রী আয়শা যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ৬৬১ সালে মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু উমাইয়ারা খুব বেশি দিন শাসন করতে পারেনি। উমাইয়াদের উৎখাত করে ৭৫০ সালে আব্বাসিয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। বাগদাদ-কেন্দ্রীক আব্বাসিয় খিলাফতের পতন ঘটে ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের হাতে।

আব্বাসিয় খিলাফতের ভাঙন ও পতন
সুবিস্তৃত খিলাফত পরিচালনার জন্যে সাম্রাজ্যকে প্রদেশে ভাগ করা হয়। কিন্তু তুলনামূলক দুর্বল খলিফাদের রাজত্বকালে প্রাদেশিক শাসনকর্তারা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। খলিফা তখন একটি আলঙ্কারিক উপাধিতে পরিণত হয়, কার্যত প্রশাসনিক ক্ষমতা খলিফাদের হাত থেকে আঞ্চলিক বিদ্রোহী নেতা বা প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের হাতে হস্তান্তরিত হতে থাকে। শেষসময়ে খলিফার হাতে থাকে কেবল রাজধানী বাগদাদ শহর ও হারামাইন অঞ্চল (হেজাজ- মক্কা ও মদিনাকে একত্রে হারামাইন বলা হয়)। খিলাফতের আইনত অধীনস্ত অঞ্চলের রাজাদের জন্য খলিফার দরবারে নতুন পদবি তৈরী করা হয়- আমির আল-উমারা বা আমিরদের আমির।

আব্বাসিয় খিলাফতের আইনত অধীন কিন্তু কার্যত স্বাধীন সাম্রাজ্যসমূহ

অঞ্চল

সাম্রাজ্য

মাগরিব (বর্তমান মরোক্কো)

ইদ্রিসিয় (৭৮৮-৯৭৪)

আলমোরাভিয় (১০৪০-১১৪৭)

আলমোহাদ (১১২০-১২৬৯)

মারিনিয় ও ওয়াত্তাসিয় (১৪৭২-১৫৫৪)

আফ্রিকা (বর্তমান তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও লিবিয়া)

আঘলাবিয় (৮০০-৯০৯)

ফাতেমিয় খিলাফত (৯০৯-৯৭৩)

যিরিয় (৯৭৩-১১৪৮)

আলমোহাদ (১১৪৮-১২২৯)

মিসর ও ফিলিস্তিন

তুলুনিয় (৮৬৮-৯০৫)

ইখশিদিয় (৯৩৫-৯৬৯)

ফাতেমিয় খিলাফত (৯০৯-১১৭১)

আইয়ুবিইয় (১১৭১-১২৫০)

আল জাজিরা (বর্তমান সিরিয়া ও ইরাক)

হামদানিয় (৮৯০-১০০৪)

মারওয়ানিয় (৯৯০-১০৮৫) ও উকাইলিয় (৯৯০-১০৯৬)

সেলজুক (১০৩৪-১১৯৪)

মঙ্গোল সাম্রাজ্য (১২৩১-১৩৩৫)

খুজেস্তান ও ফার্স (বর্তমান দক্ষিণ ও পশ্চিম ইরান)

বুয়িদ (৯৩৪-১০৫৫)

সেলজুক (১০৩৪-১১৯৪)

মঙ্গোল সাম্রাজ্য (১২৩১-১৩৩৫)

 

খোরাসান (বর্তমান পূর্ব ইরান, আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান)

তাহিরিয় (৮২১-৮৭৩) ও সাফারিয়ান (৮৭৩-৯০৩)

সামানিয় (৯০৩-৯৯৫) ও গজনবীয় (৯৯৫-১০৩৮)

ঘুরিয় (১০১১-১২১৫) ও সেলজুক (১০৩৮-১১৯৪)

খরেজম (১০৭৭-১২৩১)

ট্রান্সওক্সিয়ানা (বর্তমান মধ্য এশিয়া)

সামানিয় (৮১৯-৯৯৯)

কারাখানিদ (৮৪০-১২১২)

খরেজম (১০৭৭-১২৩১)

মঙ্গোল সাম্রাজ্য (১২৩১-১৩৩৫)

৭১৮ সাল থেকে ৮৬৩ সাল পর্যন্ত খিলাফত ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমানা মোটামোটি স্থিতিশীল থাকে। ৮৬৩ সাল থেকে আব্বাসিয় খিলাফতের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য আবার তার পুরোনো গৌরব ফিরে পাবার চেষ্টা করে। ইউরোপের বলকান অঞ্চলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য কিছু পুরোনো অঞ্চল দখলে নিতে সক্ষম হয়। বাইজেন্টাইন সীমান্তে আব্বাসিয় বেশ কয়েকটি অভিযান বিফল হয়। ৮৬৩ সাল থেকে ১০৬৪ পর্যন্ত বাইজেন্টাইন-আব্বাসিয় সীমান্ত অস্থিতিশীল থাকলেও, সীমানা অপরিবর্তিত থাকে।

আব্বাসিয় খিলাফতের পতনের যুগে খোরাসানে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকে সেলজুকরা। সেলজুক সাম্রাজ্য ওগুজ তুর্ক গোত্রের সাম্রাজ্য। ১০৩৭ সালে খোরাসান অঞ্চলের নিশাপুর শহরকে রাজধানী করে তুঘরিল বে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তুর্করা তখনো যাযাবর পশুপালনকারী জাতি। পূর্বদিকে মঙ্গোলদের চাপে তারা ক্রমশ পশ্চিমদিকে সরে আসতে থাকে।

১০৮০ সালে সেলজুক সাম্রাজ্য

১০৫৫ সালে আব্বাসিয় খিলাফত বুয়িদ সাম্রাজ্যের আয়ত্ত্বাধীন থাকে। বুয়িদদের পরাজিত করে ১০৫৬-৫৭ সালে ফাতেমিয় খিলাফত বাগদাদের অধিকার নেয়ার চেষ্টা করে। আব্বাসিয় খলিফা, সেলজুক সুলতান তুঘরিল বের সাহায্য প্রার্থনা করলে, রাজধানীতে সেলজুকরা প্রবেশ করে। আব্বাসিয় খিলাফতের রাজধানী চলে যায় সেলজুকদের প্রভাবে। আব্বাসিয়-বাইজেন্টাইন সীমান্তে সেলজুক সাম্রাজ্যের অধীনে ওঘুজ তুর্করা বসতি স্থাপন করতে থাকে। সেলজুকদের সাথে বাইজেন্টাইন সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে। ১০৭১ সালে মাঞ্জিকার্তের যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে আনাতোলিয়ার ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রবেশ করে সেলজুক সাম্রাজ্য।