2 January 2016

পবিত্র জেন্দাবেস্তা- প্রথম খন্ড ভেন্দিদাদ- চতুর্থ অধ্যায়



ফারগার্দ ৪

চুক্তি ও নিষ্ঠুরতা
অংশ ১
১. ঋণ করা কোনো বস্তু যখন ফেরত চাওয়া হয়, যদি তা ফেরত না দেয়া হয়, তাহলে সেটা যেনো কোনো মানুষের সম্পদ হরণ করা হলো। প্রত্যেক দিন এবং প্রত্যেক রাতের জন্য তার জবাব দিতে হবে, যতোদিন তার প্রতিবেশীর সম্পত্তি, তার নিজের কাছে, নিজের মতো থাকবে।
অংশ ২ক
২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; হে আহুর মাজদা, এখানে কতো সংখ্যক চুক্তি আছে? আহুর মাজদা বললেন- তারা সংখ্যায় ছয়। প্রথমটি মৌখিক চুক্তি, দ্বিতীয়টি লিখিত চুক্তি, তৃতীয় চুক্তিটি একটি ভেড়ার মূল্যের সমান, চতুর্থ চুক্তিটি একটি ষাড়ের মূল্যের সমান, পঞ্চম চুক্তিটি একটি মানুষের মূল্যের সমান এবং ষষ্ঠ চুক্তিটি একটি জমির মূল্যের সমান। জমিটি উত্তম এবং একজন বিশ্বাষীর জমি।
অংশ ২খ
৩. যদি কোনো ব্যক্তি মৌখিক চুক্তি করে এবং তা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়; সে তা পরিশোধ করবে, লিখিত চুক্তি দ্বারা। সে নতিস্বীকার করে বন্ধক রাখবে, লিখিত চুক্তি।
৪. লিখিত চুক্তি পরিশোধ করবে, ভেড়া-সমমূল্যের চুক্তি দ্বারা। সে নতিস্বীকার করে বন্ধক রাখবে, ভেড়া-সমমূল্যের চুক্তি। ভেড়া-সমমূল্যের চুক্তি পরিশোধ করবে, ষাড়-সমমূল্যের চুক্তি দ্বারা। সে নতিস্বীকার করে বন্ধক রাখবে, ষাড়-সমমূল্যের চুক্তি। ষাড়-সমমূল্যের চুক্তি পরিশোধ করবে, মানুষ-সমমূল্যের চুক্তি দ্বারা। সে নতিস্বীকার করে বন্ধক রাখবে, মানুষ-সমমূল্যের চুক্তি। মানুষ-সমমূল্যের চুক্তি পরিশোধ করবে, জমি-সমমূল্যের চুক্তি দ্বারা। সে নতিস্বীকার করে বন্ধক রাখবে, জমি-সমমূল্যের চুক্তি।
অংশ ২গ
৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি মৌখিক চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, তিনশত বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি লিখিত চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, ছয়শত বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
৭. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি ভেড়া-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, সাতশত বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
৮. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি ষাড়-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, আটশত বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি মানুষ-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, নয়শত বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
১০. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি জমি-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার পাপের সাথে কতোজন জড়িত হয়? আহুর মাজদা বললেন- তার পাপ, তার নবম উত্তর পুরুষ পর্যন্ত দায়ী করে, এক হাজার বৎসরের প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
অংশ ২ঘ
১১. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি মৌখিক চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে তিনশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে তিনশত চাবুকের বাড়ি।
১২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি লিখিত চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ছয়শত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ছয়শত চাবুকের বাড়ি।
১৩. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি ভেড়া-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সাতশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সাতশত চাবুকের বাড়ি।
১৪. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি ষাড়-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে আটশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে আটশত চাবুকের বাড়ি।
১৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি মানুষ-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নয়শত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নয়শত চাবুকের বাড়ি।
১৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি জমি-সমমূল্যের চুক্তি ভঙ্গ করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে এক হাজার চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে এক হাজার চাবুকের বাড়ি।
অংশ ৩ক
১৭. যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে আঘাত করতে উদ্যত হয়, তবে সে একজন আগেরেপ্তা। যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে আঘাত করতে এগিয়ে যায়, তবে সে একজন আভাও-ইরিস্তা। যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে আঘাত করে, তবে সে একজন আরেদুশ। পরপর পাঁচ বার আরেদুশে দুষ্ট হলে, সে একজন পেশোয়তানু।
১৮. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি আগেরেপ্তায় দুষ্ট হয়, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পাঁচ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পাঁচ চাবুকের বাড়ি। দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দশ চাবুকের বাড়ি। তৃতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি।
১৯. চতুর্থ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি। পঞ্চম বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি। ষষ্ঠ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ষাট চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ষাট চাবুকের বাড়ি। সপ্তম বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
২০. যদি কোনো ব্যক্তি, অষ্টম বারের মতো আগেরেপ্তায় দুষ্ট হয়, পূর্ববর্তী আগেরেপ্তাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
২১. যদি কোনো ব্যক্তি, আগেরেপ্তায় দুষ্ট হয় এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
২২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি আভাও-ইরিস্তায় দুষ্ট হয়, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দশ চাবুকের বাড়ি। দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি।
২৩. তৃতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি। চতুর্থ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি। পঞ্চম বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি। ষষ্ঠ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
২৪. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, সপ্তম বারের মতো আভাও-ইরিস্তায় দুষ্ট হয়, পূর্ববর্তী আভাও-ইরিস্তাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
২৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, আভাও-ইরিস্তায় দুষ্ট হয় এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
২৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি আরেদুশে দুষ্ট হয়, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পনের চাবুকের বাড়ি।
২৭. দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি। তৃতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি। চতুর্থ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি। পঞ্চম বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
২৮. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, ষষ্ঠ বারের মতো আরেদুশে দুষ্ট হয়, পূর্ববর্তী আরেদুশগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
২৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, আরেদুশে দুষ্ট হয় এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩০. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রনাপূর্ণ আঘাত করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত?
৩১. আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে ত্রিশ চাবুকের বাড়ি। দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি। তৃতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি। চতুর্থ বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
৩২. যদি কোনো ব্যক্তি, পঞ্চম বারের মতো এই ঘটনা ঘটায়, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩৩. যদি কোনো ব্যক্তি, এই ঘটনা ঘটায় এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩৪. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে রক্ত বের করার জন্য আঘাত করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পঞ্চাশ চাবুকের বাড়ি। দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি। তৃতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
৩৫. যদি কোনো ব্যক্তি, চতুর্থ বারের মতো এই ঘটনা ঘটায়, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে রক্ত বের করার জন্য আঘাত করে এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩৭. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে হাড় ভাঙার জন্য আঘাত করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সত্তর চাবুকের বাড়ি। দ্বিতীয় বারের সময়, আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
৩৮. যদি কোনো ব্যক্তি, তৃতীয় বারের মতো এই ঘটনা ঘটায়, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৩৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে হাড় ভাঙার জন্য আঘাত করে এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৪০. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য আঘাত করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে নব্বই চাবুকের বাড়ি।
৪১. যদি কোনো ব্যক্তি, এই ঘটনা ঘটায়, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করেই, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৪২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য আঘাত করে এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে অগ্রাহ্য করে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- সে একজন পেশোয়তানু। আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে দুইশত চাবুকের বাড়ি।
৪৩. এবং তারা সেই সময় থেকে শুরু করে হাটতে পারবে, পবিত্রতার রাস্তার উপরে, পবিত্রতার বাক্যের উপরে এবং পবিত্রতার আদেশের উপরে।
অংশ ২ঙ
৪৪. যদি একই বিশ্বাষের ব্যক্তিরা, বন্ধুই হোক কিংবা ভাই, পরস্পর কোনো চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, যে একজন অপরজনকে প্রদান করবে; কোনো বস্তু অথবা স্ত্রীলোক, অথবা জ্ঞান; যার বস্তু নেয়ার কথা, তাকে তার বস্তু নিতে দাও। যার স্ত্রীলোক নেয়ার কথা, তাকে তার প্রতিশ্রুত স্ত্রীলোকের সাথে বিয়ে দাও। যার জ্ঞান নেয়ার কথা, তাকে পবিত্র বাক্য সহ জ্ঞান শিক্ষা দাও।
৪৫. সে শিক্ষা গ্রহন করবে, দিনের প্রথম অংশ থেকে শুরু করে শেষ অংশ পর্যন্ত, রাতের প্রথম অংশ থেকে শুরু করে শেষ অংশ পর্যন্ত, যেনো তার মন জ্ঞানে পূর্ণ হয় এবং তার পবিত্রতার আলোকিত অংশ শক্তিশালী হয়। সুতরাং সে মাথা নত করবে, ধন্যবাদ দিবে এবং দেবতাদের নিকট প্রার্থনা করবে; যেনো তার জ্ঞান আরো বৃদ্ধি পায়। সে বিশ্রাম নিবে, দিনের মধ্যবর্তী অংশে এবং রাতের মধ্যবর্তী অংশে, এবং সেটা সে অব্যহত রাখবে, যতোক্ষণ না পর্যন্ত সে সমস্তই বলতে পারবে, যেমনটা তার শিক্ষক তাকে শিখিয়েছেন।
অংশ ৩খ
৪৬. শপথ জলের এবং আগুনের আলোকচ্ছটার, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র; যদি কেউ তার প্রতিবেশীর নিকট থেকে পশু বা পোষাক চুরি করে থাকে, তাহলে তাকে তা অস্বীকার করতে পারার মতো সাহসী হতে দিও না।
৪৭. বস্তুত, আমি তোমাকে বলি, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র; যে ব্যক্তির স্ত্রী আছে সে, যে নিঃসন্তান তার নিকট থেকে দূরবর্তী। যে ব্যক্তির বাড়ি আছে সে, যে গৃহহীন তার নিকট থেকে দূরবর্তী। যে ব্যক্তির সন্তান আছে সে, যে নিঃসন্তান তার নিকট থেকে দূরবর্তী। যে ব্যক্তি ধনী সে, যার সম্পদ নেই তার নিকট থেকে দূরবর্তী।
৪৮. এবং দুই ব্যক্তির মধ্যে, সে নিজেকে মাংসে পূর্ণ করে, যে নিজেকে বহুমান্যের শুভসত্ত্বায় পূর্ণ করে। তার চেয়ে বেশি, যে করে না। বর্তমানই সব, কিন্তু তা মৃত। পূর্ববর্তীজন এগিয়ে থাকে, এক আসপারেনার মূল্যের সমপরিমান, একটি ভেড়ার মূল্যের সমপরিমান, একটি ষাড়ের মূল্যের সমপরিমান, একজন মানুষের মূল্যের সমপরিমান।
৪৯. এটি সেই ব্যক্তি, যে সংগ্রাম করে অস্ত-বিধৌতের আক্রমনের বিরুদ্ধে। যে সংগ্রাম করে ইশুস-হ্থাখতোর আক্রমনের বিরুদ্ধে। যে সংগ্রাম করে শীতের অশুভ শক্তিদের বিরুদ্ধে, পাতলা কাপড় পরিধান করে। যে সংগ্রাম করে অসৎ প্রজাপীড়ক শাসকের বিরুদ্ধে এবং আঘাত করে তার মাথায়। এটি সেই ব্যক্তি, যে সংগ্রাম করে অ-ঐশ্বরিক আশেমৌঘার বিরুদ্ধে, যে কখনোই খাদ্যগ্রহণ করে না।
(সংযুক্ত) ... প্রথম যখন কেউ শপথ ভঙ্গ করে, তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার এই কাজ করার জন্য অপেক্ষা করার পূর্বেই।
৫০. সেখানে, নরকে, এই কাজের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত, তা পৃথিবীর যে কোনো শাস্তির চেয়ে বহুগুণে কঠিন। সেখানে পিতলের ছুরি দ্বারা, তার নশ্বর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে। তখন সেটা আরো অধিক খারাপ হবে, হবে না?
৫১. সেখানে, নরকে, এই কাজের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত, তা পৃথিবীর যে কোনো শাস্তির চেয়ে বহুগুণে কঠিন। সেখানে পিতলের পেরেক তার নশ্বর শরীরের নখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হবে। তখন সেটা আরো অধিক খারাপ হবে, হবে না?
৫২. সেখানে, নরকে, এই কাজের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত, তা পৃথিবীর যে কোনো শাস্তির চেয়ে বহুগুণে কঠিন। সেখানে তার নশ্বর শরীরকে, মাথা সামনে বাড়িয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ফেলে দেয়া হবে, একশত মানুষের সমান উঁচু এমন স্থান থেকে। তখন সেটা আরো অধিক খারাপ হবে, হবে না?
৫৩. সেখানে, নরকে, এই কাজের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত, তা পৃথিবীর যে কোনো শাস্তির চেয়ে বহুগুণে কঠিন। সেখানে তার নশ্বর শরীরকে, জোরপূর্বক শূলে চড়ানো হবে। তখন সেটা আরো অধিক খারাপ হবে, হবে না?
৫৪. সেখানে, নরকে, এই কাজের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত, তা পৃথিবীর যে কোনো শাস্তির চেয়ে বহুগুণে কঠিন। তাকে শাস্তি দেয়া হবে- যে শপথ ভঙ্গ হয়ে গেছে, সে শপথ ভঙ্গ নিয়ে রসিকতা করার জন্য। যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে মিথ্যা বলে, তাকে সম্মুখীন করা হবে, রাশ্নুর সামনে; উপচে পরা সোনালী পাথর এবং সত্যজ্ঞ জলের সাথে। তাকে শাস্তি দেয়া হবে- মিথ্রার সাথে মিথ্যা বলার জন্য।
৫৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কেউ জ্ঞাতসারে মিথ্যা বলে, যাকে সম্মুখীন করা হলো, রাশ্নুর সামনে; উপচে পরা সোনালী পাথর এবং সত্যজ্ঞ জলের সাথে; এবং যে মিথ্যা বললো, মিথ্রার সাথে; তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে সাতশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে সাতশত চাবুকের বাড়ি।
[পাদটীকা সংযুক্তি
পদ ৪৮... বহুমান্য... শুভচিন্তার দেবতা, গবাদিপশুর প্রতিপালক।
পদ ৪৮... আসপারেনা... দিরহাম।
পদ ৪৯... অস্ত-বিধৌত... অস্থিচূর্ণকারী, অশুভ দেবতা। প্রত্যেকটি জীবিত প্রাণীর ঘাড়ে যে মৃত্যুর ফাঁস পরিয়ে রাখে।
পদ ৪৯... ইশুস-হ্থাখতো... মৃত্যুর স্বতশ্চল শর।
পদ ৪৯... আশেমৌঘা... মানুষের শুভচিন্তায় বিশৃঙ্খলা ঘটায় যে অশুভ দেবতা।
পদ ৫৪... রাশ্নু... সত্যের দেবতা।
পদ ৫৪... মিথ্রা... স্বর্গীয় আলোর দেবতা। ঈশ্বর আহুর মাজদার প্রধান সহকারী দেবতা।]

পবিত্র জেন্দাবেস্তা- প্রথম খন্ড ভেন্দিদাদ- তৃতীয় অধ্যায়



ফারগার্দ ৩

পৃথিবী
অংশ ১
১. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সুখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে একজন বিশ্বাষী সামনে এগিয়ে যায়। হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, সে তার সাথে রাখে পবিত্র কাঠ, সে তার সাথে রাখে বারেশ্মা, সে তার সাথে রাখে পবিত্র মাংস, সে তার সাথে রাখে পবিত্র হামানদিস্তা। সে ভালোবাসার সাথে মান্য করে বিধান, এবং এমনভাবে প্রার্থনা করে, যা দুর থেকেও শোনা যায়; মিথ্রার নিকটে, যিনি মহান মেষপালকদের প্রভু এবং রামা হ্বস্ত্রার নিকটে।
২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে একজন বিশ্বাষী প্রতিষ্ঠা করে তার ঘর, যেখানে পুরোহিতদের প্রবেশাধিকার থাকে। যেখানে অবস্থান করে তার গবাদিপশু, তার স্ত্রী, তার সন্তানেরা এবং তার গবাদিপশুর পাল।
৩. এবং তারপর সেখানে তার গবাদিপশু সমৃদ্ধি লাভ করে, পবিত্রতা সমৃদ্ধি লাভ করে, গবাদিপশুর খাদ্য সমৃদ্ধি লাভ করে, কুকুর সমৃদ্ধি লাভ করে, স্ত্রী সমৃদ্ধি লাভ করে, সন্তানেরা সমৃদ্ধি লাভ করে, আগুন সমৃদ্ধি লাভ করে এবং জীবনের প্রত্যেকটি অনুগ্রহ সমৃদ্ধি লাভ করে।
৪. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ সুখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে একজন বিশ্বাষী চাষাবাদ করে শষ্য, ঘাস এবং ফলাদি। হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, আমি শুষ্ক জমিকে করি আর্দ্র এবং আর্দ্র জমিকে করি শুষ্ক।
৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে চতুর্থ সর্বোচ্চ সুখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, পশু এবং পাখিদের দল-পাল এবং ঝাঁক।
৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে পঞ্চম সর্বোচ্চ সুখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে পশু এবং পাখিদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা, নিষ্কাশন করে তাদের বর্জ্য।
অংশ ২
৭. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে সর্বোচ্চ যন্ত্রনাপূর্ণ দুঃখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- আরেজুরার ঘাড় হচ্ছে সে স্থান, যে নরকের গর্ত থেকে অগণিত শয়তান বেপরোয়া ভাবে অগ্রধাবন করে।
৮. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ যন্ত্রনাপূর্ণ দুঃখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে কুকুরের এবং মানুষের মৃতদেহকে সমাহিত করা হয়।
৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ যন্ত্রনাপূর্ণ দুঃখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে বেশিরভাগ দাখমা দাড়িয়ে থাকে, যেখানে মানুষের মৃতদেহ জমিয়ে রাখা হয়।
১০. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে চতুর্থ সর্বোচ্চ যন্ত্রনাপূর্ণ দুঃখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে গর্তে বসবাস করে আহরি মানের বেশিরভাগ সৃষ্টি।
১১. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে পঞ্চম সর্বোচ্চ যন্ত্রনাপূর্ণ দুঃখের স্থান কোথায়? আহুর মাজদা বললেন- সে স্থানে, যেখানে শত্রুর হাতে বিশ্বাষীরা নিহত হয়। এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পশুর পালের মতো আঘাত করে করে তাড়িয়ে নেয়া হয়। হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, তাদের বন্দী করা হয়, শুষ্ক এবং ধূলিমলিন পথে তারা চিৎকার করে বিলাপ করে ওঠে।
অংশ ৩
১২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে সর্বোচ্চ আনন্দে আনন্দিত কে? আহুর মাজদা বললেন- সে ব্যক্তি, যে মাটি খুঁড়ে বের করে, কুকুর এবং মানুষের মৃতদেহ।
১৩. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আনন্দে আনন্দিত কে? আহুর মাজদা বললেন- সে ব্যক্তি, যে ধ্বংস করে বেশিরভাগ দাখমা, যেখানে মানুষের মৃতদেহ জমিয়ে রাখা হয়।
১৪. একলা কাউকে একটি মৃতদেহ বহন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ একলা একটি মৃতদেহ বহন করে, তবে নাসু, তাকে দূষিত করতে, বেপরোয়া ভাবে অগ্রধাবন করে; মৃতের নাক থেকে, চোখ থেকে, জিহ্বা থেকে, চোয়াল থেকে, যৌনাঙ্গ থেকে এবং অন্যান্য প্রত্যঙ্গ থেকে। এই নরক, এই নাসু, তার উপর পতিত হয়, তাকে বিবর্ণ করতে, এমনকি শেষ নখটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত। এবং সে অপবিত্র থাকে সেই সময় থেকে শুরু করে, সবসময়ের এবং সবসময়ের জন্য।
১৫. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যে কেউ একলা একটি মৃতদেহ বহন করলো, তার স্থান কোথায় হবে? আহুর মাজদা বললেন- তার স্থান হবে এই পৃথিবীতে, যেখানে থাকবে সামান্য জল এবং সামান্যতম গাছপালা। যেখানে ভূমি হবে পরিষ্কার এবং শুষ্ক; এবং সেখানে খুব কম যাবে পশু এবং পাখিদের দল, পাল এবং ঝাঁক। এবং কম যাবে আহুর মাজদার সন্তান- আগুন, কম যাবে উৎসর্গীকৃত বারেশ্মাগুচ্ছ এবং কম যাবে বিশ্বাষীরা।
১৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; আগুন থেকে কতো দূরে? জল থেকে কতো দূরে? উৎসর্গীকৃত বারেশ্মাগুচ্ছ থেকে কতো দূরে? বিশ্বাষীদের কাছ থেকে কতো দূরে?
১৭. আহুর মাজদা বললেন- আগুন থেকে ত্রিশ পদক্ষেপ দূরে, জল থেকে ত্রিশ পদক্ষেপ দূরে, উৎসর্গীকৃত বারেশ্মাগুচ্ছ থেকে ত্রিশ পদক্ষেপ দূরে, বিশ্বাষীদের কাছ থেকে তিন পদক্ষেপ দূরে।
১৮. সে স্থানে, মাজদার পূজারীরা অপবিত্রদের জন্য নির্মান করবে, আর্মেশ্ত-গাহ। এবং সেখানে তাদেরকে রাখা হবে, খাবার সহ; সেখানে তাদেরকে রাখা হবে, কাপড় সহ। তাদের খাবার হবে অতি সাধারন এবং কাপড় হবে ব্যবহারের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত।
১৯. ঔ খাবার তাদের দেয়া হবে, যেনো তারা বেঁচে থাকে এবং ঔ কাপড় তাদের দেয়া হবে, যেনো তারা বেঁচে থাকে। যেনো তারা বেঁচে থাকে পঞ্চাশ, ষাট বা সত্তর বৎসর পর্যন্ত।
২০. এবং যখন তার বয়স হবে পঞ্চাশ, ষাট বা সত্তর বৎসর, তখন আহুর মাজদার পূজারীরা একজন শক্তিশালী, তেজস্বী এবং দক্ষ লোককে আদেশ দিবেন, যেনো তার শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানো হয় এবং তার ধর থেকে মস্তক আলাদা করা হয়।
২১. এবং পর্বতের শীর্ষদেশ থেকে, তারা তার মৃতদেহ প্রদান করবে, আহুর মাজদার সৃষ্টি, শবখোর প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে লোভী, লোভী দাঁড়কাককে। এবং বলতে থাকবে এই বাক্য- ‘এই ব্যক্তি এখানে অনুতপ্ত। তার সমস্ত অসৎ চিন্তা, বাক্য এবং চুক্তির জন্য। যদি তার আর কোনো অসৎ চিন্তা থেকে থাকে, তাহলে তাকে তার অনুশোচনার জন্য ক্ষমা করা হোক। যদি তার আর কোনো অসৎ চিন্তা না থেকে থাকে, তাহলে তাকে তার পাপ থেকে মুক্তি দেয়া হোক। সবসময়ের এবং সবসময়ের জন্য।’
২২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবী তৃতীয় সর্বোচ্চ আনন্দে আনন্দিত কে? আহুর মাজদা বললেন- সে ব্যক্তি, যে অতিক্রম করতে পারে, আহরি মানের সৃষ্ট ফাঁদ।
২৩. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে চতুর্থ সর্বোচ্চ আনন্দে আনন্দিত কে? আহুর মাজদা বললেন- সে ব্যক্তি, যে চাষ করে শষ্য, ঘাস এবং ফল। হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, আমি শুষ্ক ভূমিকে করি জলে সিক্ত এবং সিক্ত ভূমিকে করি শুষ্ক।
২৪. ভূমি অসুখী থাকে, যখন সে পতিত থাকে, বপনকারীর অভাবে। এবং সে আশা করে একজন কৃষক। একজন যৌবনবতী সন্তানহীন তরুণীর মতো, যেমন সে আশা করে স্বামী।
২৫. যে ব্যক্তি, পৃথিবীকে চাষ করে, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, তার ডান ও বাম বাহু দ্বারা, তার বাম ও ডান বাহু দ্বারা; সে এমনভাবে তাকে চাষযোগ্য করে তোলে, যেমন তার বিছানায় অবস্থান করছে তার প্রিয়তমা। এবং প্রিয়তমা যেমন সন্তান প্রদানের জন্য উৎসুক হয়ে থাকে, তেমনি সেও দিতে চায় ফলফলাদি।
২৬. যে ব্যক্তি, পৃথিবীকে চাষ করে, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, তার ডান ও বাম বাহু দ্বারা, তার বাম ও ডান বাহু দ্বারা;
২৭. তার প্রতি পৃথিবী বলে- হে মানুষ, যে আমাকে চাষ করে, ডান ও বাম বাহু দ্বারা, বাম ও ডান বাহু দ্বারা, যে আমার কাছে আসে এবং রুটি চেয়ে নেয়, আমি তার দ্বায়িত্ব নিই এবং তাকে সবসময় খাবার যোগান দেই এবং তাতে আমার শষ্যের প্রাচুর্য প্রকাশিত হয়।
২৮. যে ব্যক্তি, পৃথিবীকে চাষ করে না, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, তার ডান ও বাম বাহু দ্বারা, তার বাম ও ডান বাহু দ্বারা;
২৯. তার প্রতি পৃথিবী বলে- হে মানুষ, যে আমাকে চাষ করে না, ডান ও বাম বাহু দ্বারা, বাম ও ডান বাহু দ্বারা, যে আমার কাছে আসে আগন্তুকের মতো এবং রুটি চেয়ে নিতে চায়, আমি তাকে ফেরত পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্থ হই না। এবং তাকে ফেরত পাঠাই, সম্পদের প্রাচুর্য আছে এমন কারো কাছে।
৩০. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; খাবারের ব্যাপারে আহুর মাজদার আইন কোনটি? আহুর মাজদা বললেন- সেটি হচ্ছে, জমিতে শষ্যের বীজ বপন করা, বারবার এবং বারবার, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র।
৩১. সে, যে বপন করে শষ্য, বপন করে পবিত্রতা। সে আহুর মাজদার আইনকে উচ্চতাসহ বৃদ্ধি করে। সে আহুর মাজদার আইনকে শক্তিশালী করে, যেমন শক্তিশালী হয়, শত আরাধনায়, সহস্র নৈবেদ্যে এবং অযুত উৎসর্গে।
৩২. যখন শষ্য বপন করা হয়, অশুভ শক্তিরা সতর্ক হয়। যখন শষ্যেরা গজিয়ে ওঠে, অশুভ শক্তিদের হৃদয় দুর্বল হতে থাকে। যখন শষ্যেরা পূর্ণাঙ্গ হয়, অশুভ শক্তিরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তারা সে বাড়িতে অবস্থান করেনা, তারা বিতাড়িত হয়, যে বাড়িতে শষ্যের গোলা থাকে। এটি যেনো লাল গরম লোহা, তাদের গলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়, যেখানে শষ্যের চাষাবাদ হয়।
৩৩. তখন পূজারীরা লোকেদের বলবে, এই পবিত্র বাক্য- ‘খাদ্যগ্রহন করা ছাড়া, কেউ শক্তি পায় না; পবিত্রতার কাজের জন্য, চাষাবাদের জন্য এবং সন্তান গ্রহনের জন্য। খাদ্যগ্রহনের পর, প্রত্যেক বস্তুগত সৃষ্টি বেঁচে থাকে, খাদ্যগ্রহন না করলে তারা মৃত্যুবরন করে।’
৩৪. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; পৃথিবীতে পঞ্চম সর্বোচ্চ আনন্দে আনন্দিত কে? আহুর মাজদা বললেন- সে ব্যক্তি, যে চাষ করে পৃথিবী। হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, এবং সেখান থেকে সে দান করে বিশ্বাষীদের, দয়া সহ এবং সততা সহ।
৩৫. যে চাষ করে পৃথিবী, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, এবং সেখান থেকে সে দান করে না বিশ্বাষীদের, দয়া সহ এবং সততা সহ; নিশ্চয় পতিত হবে, পৃথিবীর গভীরে অন্ধকারে। পতিত হবে গভীর দুঃখ এবং শোকের জগতে, যেটি চিরবিষন্ন এলাকা। এবং নিশ্চয় সে পতিত হবে, তার নরকের বাড়িতে।
অংশ ৪
৩৬. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, মাটিতে সমাহিত করে, কুকুরের মৃতদেহ অথবা মানুষের মৃতদেহ, এবং সে যদি তা অর্ধ-বৎসরের মধ্যে মাটি থেকে না তোলে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে পাঁচশত চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে পাঁচশত চাবুকের বাড়ি।
৩৭. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, মাটিতে সমাহিত করে, কুকুরের মৃতদেহ অথবা মানুষের মৃতদেহ, এবং সে যদি তা এক বৎসরের মধ্যে মাটি থেকে না তোলে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? আহুর মাজদা বললেন- আস্পাহে-অস্ত্রের মাধ্যমে এক হাজার চাবুকের বাড়ি এবং স্রাওশা-করনের মাধ্যমে এক হাজার চাবুকের বাড়ি।
৩৮. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি কোনো ব্যক্তি, মাটিতে সমাহিত করে, কুকুরের মৃতদেহ অথবা মানুষের মৃতদেহ, এবং সে যদি তা দুই বৎসরের মধ্যে মাটি থেকে না তোলে, তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত? তার জন্য কি প্রায়শ্চিত্ত নির্ধারিত? এটা থেকে বিশোধিত হওয়ার প্রক্রিয়া কি?
৩৯. আহুর মাজদা বললেন- তার জন্য এমন কিছু নেই, যাতে তা পূরন হতে পারে। তার জন্য কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই। এটা থেকে বিশোধিত হওয়ার কোনো প্রক্রিয়াও নেই। এটা এমন একটি পাপ, যার কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই, সবসময়ের জন্য এবং সবসময়ের জন্য।
৪০. কখন এরকমটা হবে? -এরকম হবে তখন, যখন পাপী, আহুর মাজদার আইনের কোনো শিক্ষক, অথবা তা শিক্ষা পেয়েছে, এমন কেউ এরকমটা করবে। কিন্তু যদি সে আহুর মাজদার আইনের শিক্ষক না হয় অথবা এমন কেউ, যে সেই শিক্ষা পায় নি, আহুর মাজদার আইন তার কাছ থেকে সেই পাপ নিয়ে নিবে। যদি সে পাপ স্বীকার করে, পাপ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাপ থেকে নিজেকে নিষিদ্ধ মনে করে।
৪১. বস্তুত, হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, আহুর মাজদার আইন হচ্ছে, যে তার ঘটে যাওয়া সমস্ত পাপ স্বীকার করে; তাকে তার পাপ থেকে সরিয়ে নেয়া, তার পাপ লাঘব করা। তার বিশ্বাষভঙ্গের পাপ লাঘব করা হয়, তার বিশ্বাষীদের হত্যা করার পাপ লাঘব করা হয়, তার মৃতদেহ সমাহিত করার পাপ লাঘব করা হয়। লাঘব করা হয় এমন সব পাপ, যার কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই। লাঘব করা হয় সব সর্বোচ্চ শাস্তির পাপ। লাঘব করা হয় এমন সব পাপ, যা পাপ হতে পারতো।
৪২. হে স্পিতামা জরথুস্ত্র, একই সাথে আহুর মাজদার আইন বিশ্বাষীদের বিশোধন করে, সমস্ত অসৎ চিন্তা, বাক্য এবং চুক্তি থেকে। যেমন করে দ্রুতগামী পরাক্রমশালী বাতাস বিশোধন করে থাকে সমতলভূমি। সুতরাং সমস্ত চুক্তি হোক. ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য এবং আহুর মাজদার আইনে যা পাপ, হে জরথুস্ত্র, তা থেকে পূর্ণ প্রায়শ্চিত্তের জন্য।
[পাদটীকা সংযুক্তি
পদ ১... বারেশ্মা... ডালিম, খেজুর বা তেঁতুল গাছের পাতাসহ কচি ডালের গুচ্ছ।
পদ ১... রামা হ্বস্ত্রা... গবাদীপশুদের উত্তম পালক প্রদানকারী দেবতা।
পদ ৭... আরেজুরার ঘাড়... নরকের প্রবেশপথের পাহাড়ের উপত্যকা। আহরি মানের সমস্ত মন্দসৃষ্টির জন্মস্থান।
পদ ৯... দাখমা... মৌনস্তম্ভ। পারসিক ধর্মমতে যেখানে মানুষের মৃতদেহ অন্যান্য মাংসাশী জীবদের জন্য জমিয়ে রাখা হয়।
পদ ১৪... নাসু... মৃতদেহকে দূষিত করার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত অশুভ দেবতা।
পদ ৩৬... আস্পাহে-অস্ত্র... ঘোড়ার লেজ থেকে প্রস্তুত চাবুক।
পদ ৩৬... স্রাওশা-করন... তিনটি আস্পাহে-অস্ত্রের সমন্বয়ে প্রস্তুত চাবুক।
পদ ৪২... বিশ্বাষী... অর্থাৎ পারসিক ধর্মে বিশ্বাষী, আহুর মাজদার আইনে বিশ্বাষী, জরথুস্ত্রের আইনে বিশ্বাষী।]

পবিত্র জেন্দাবেস্তা- প্রথম খন্ড ভেন্দিদাদ- দ্বিতীয় অধ্যায়



ফারগার্দ ২

যিমা
অংশ ১
১. আহুর মাজদাকে বলেন জরথুস্ত্র- হে আহুর মাজদা, হে সর্ব্বোচ্চ মঙ্গলকারী সত্ত্বা, হে মহাজগতের স্রষ্টা, হে পবিত্র জন; আমি জরথুস্ত্র, কে ছিলো আমার পূর্বে প্রথম নশ্বর, যার সাথে তুমি, আহুর মাজদা, কথা বলেছো? কে সে প্রথম, যাকে তুমি শিক্ষা দিয়েছো, আহুর মাজদার আইন, জরথুস্ত্রের আইন?
২. আহুর মাজদা বললেন- হে পবিত্র জরথুস্ত্র, সেই মহান মেষপালক হলো, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা। হে জরথুস্ত্র, সে ছিলো তোমার পূর্বে প্রথম নশ্বর, যার সাথে আমি, আহুর মাজদা কথা বলেছি। যাকে আমি শিক্ষা দিয়েছি আমার, আহুর মাজদার আইন, জরথুস্ত্রের আইন।
৩. হে জরথুস্ত্র, আমি, আহুর মাজদা, তাকে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, তুমি আমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারী হও। এবং হে জরথুস্ত্র, তার উত্তরে, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা বললো- তোমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারী হওয়ার মতো যোগ্যতা, আমার এখনো নেই।
৪. হে জরথুস্ত্র, তখন আমি, আহুর মাজদা, তাকে বললাম- তুমি শুধু আমার আইনের প্রচারকারী এবং বহনকারীই নও, তুমি আমার পৃথিবীকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আমার জগতের প্রসার ঘটাবে, আমার পৃথিবীকে আরো পরিপুষ্ট করবে, শাসন করবে এবং দেখে রাখবে।
৫. হে জরথুস্ত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা তখন বললো- তোমার নির্দেশে, আমি পারবো। তোমার পৃথিবীকে আরো সমৃদ্ধ করতে, তোমার জগতের প্রসার ঘটাতে। তোমার নির্দেশে, আমি পারবো, তোমার পৃথিবীকে আরো পরিপুষ্ট করতে, শাসন করতে এবং দেখে রাখতে। তাই আমাকে অবশ্যই হতে হবে, একজন রাজা। না ঠান্ডা বাতাস, না গরম বাতাস, না রোগ, না মৃত্যু।
৬. যিমা বললো- যদিও আমি নিজেই এখনো আইন শিখিনি এবং কাউকে শিখাইওনি। এখনো আমি নই বিশ্বস্ত এবং পবিত্র। আমাকে তুমি পবিত্র করো।
৭. তখন আমি, আহুর মাজদা, তাকে তার রাজত্বের প্রমানস্বরূপ, দুটি নিদর্শন দিলাম। একটি স্বর্ণের আংটি এবং একটি স্বর্ণখচিত ছোরা। যেনো সে রাজকীয় শাসনের চিহ্ন বহন করতে পারে।
৮. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে তিনশত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
৯. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১০. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১১. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
১২. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে ছয়শত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
১৩. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১৪. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১৫. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
১৬. অতঃপর যিমার রাজত্বের অধীনে নয়শত শীত পার হওয়ার পর, পৃথিবী তার শূণ্যস্থান পূরণ করলো; প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা; সাথে ছিলো মানুষ, কুকুর এবং পাখি এবং আরো সাথে ছিলো, রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটা। এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য, আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ থাকলো না।
১৭. তখন আমি নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমাকে সাবধান করে বললাম- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে তার প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের দ্বারা। এবং সে আরো পূর্ণ হয়েছে মানুষ, কুকুর, পাখি এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার দ্বারা। এবং সেখানে আর কোনো স্থান অবশিষ্ঠ নেই প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকের জন্য এবং মানুষের জন্য।
১৮. তখন যিমা সামনে এগুলো, দক্ষিণ অভিমুখে, উজ্জ্বল স্থানের খোঁজে। সে সূর্যের সাথে দেখা করলো, এবং পৃথিবীকে তার আংটি দ্বারা আঘাত করলো এবং ছুরি দ্বারা ছিদ্র করলো এবং সে তখন বলতে থাকলো- হে জগতের প্রতিভা, আর্মাইতি, দয়া করো, দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করো পৃথিবীকে, প্রকাশিত করো এবং প্রসারিত করো, এবং ধারন করো প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের এবং মানুষদের।
১৯. এবং যিমা পৃথিবীকে আগের চেয়ে তিন-তৃতীয়াংশ বৃহৎ করে বাড়িয়ে নিলো, যেনো সেখানে প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেরা এবং মানুষেরা থাকতে পারে। এমনটা হয়েছিলো তার ইচ্ছা অনুযায়ী, যেমনটা তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
অংশ ২
২০. সৃষ্টিকর্তা, আহুর মাজদা, যিনি নিজেই তিনি, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, আহ্বান করলেন, সমাবেশের, সমস্ত স্বর্গীয় দেবতাদের সাথে নিয়ে। এবং নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, যিনি পবিত্র মেষপালক, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, আহ্বান করলেন, সমাবেশের, সমস্ত কল্যানময় নশ্বরদের সাথে নিয়ে।
২১. এই সমাবেশে, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, তিনি আসলেন, তার সমস্ত স্বর্গীয় দেবতাদের সাথে নিয়ে, আহুর মাজদা, যিনি নিজেই তিনি। এবং এই সমাবেশে, পবিত্র আরাখেজ নদীর নিকটে, উদিত সূর্যের দূরবর্তী ভূমিতে, তিনিও আসলেন, তার সমস্ত কল্যানময় নশ্বরদের সাথে নিয়ে, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, যিনি পবিত্র মেষপালক।
২২. অতঃপর আহুর মাজদা, যিমাকে বললেন- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, পৃথিবীর উপর মারাত্মক শীত পতিত হতে যাচ্ছে, যে শীত বয়ে নিয়ে আসবে, হিংস্র ও দূষিত হিমপ্রবাহ। এবং পৃথিবীর উপর শীত পতিত হতে যাচ্ছে, যেনো পৃথিবী পুরু বরফের স্তরে ঢেকে যায়। এমনকি পর্বতের সর্ব্বোচ্চ চূড়াও এক আরেদ্বি পরিমান ঢেকে যাবে।
২৩. এবং সেখানে তিন ধরনের পশু লোপ পাবে। বন্য পরিবেশে বাস করে যে সমস্ত পশু, পর্বতের চূড়ায় বাস করে যে সমস্ত পশু, এমনকি উপত্যকার অন্তঃস্থলে বাস করে যে সমস্ত পশু।
২৪. শীতের পূর্বে, যেসব জমি পূর্ণ থাকতো গবাদীপশুর জন্য, সবুজ ঘাসে, সেসব জমি, গলিত বরফের বিরামহীন জলপ্রবাহে ভেসে যাবে। পৃথিবীর যে অঞ্চলগুলোকে মনে হতো সুখী এবং সমৃদ্ধ, সে অঞ্চলগুলো পরিনত হবে ধ্বংসস্তুপে।
২৫. অতঃপর তুমি তৈরী করবে, একটি বেড়াযুক্ত নৌকা, যা চারপাশে সমান আকৃতির হবে এবং যার প্রত্যেক পার্শ্ব হবে, দুই হথ্রা লম্বা। এবং সেখানে তুমি সাথে নেবে, ভেড়া এবং গরুর প্রতিনিধি, এবং একই সাথে মানুষের, কুকুরের, পাখির এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার প্রতিনিধি। অতঃপর সেই দুই হথ্রা লম্বা, বেড়াযুক্ত নৌকাটি হবে, মানুষের জন্য আবাস এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের জন্য খোঁয়াড়।
২৬. সেখানে থাকবে, এক হথ্রা লম্বা, জমিয়ে রাখা পানির জন্য স্থান, যেনো সেখানে পাখিরা অবস্থান করতে পারে। তাদের চিরসবুজ প্রকৃতি সহ, যেনো তারা কখনো খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ না হয়। এবং তুমি একই সাথে প্রতিষ্ঠা করবে এটা, যেনো তা বসবাসের উপযুক্ত হয়। সেখানে থাকবে বারান্দা সহ ঘর, খোলা অঙ্গন এবং সমাবেশের স্থান।
২৭. অতঃপর সেখানে থাকবে, পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে থাকবে, সমস্ত প্রজাতির গবাদীপশুর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট।
২৮. অতঃপর সেখানে থাকবে, প্রত্যেক প্রজাতির গাছের প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা হবে অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে থাকবে প্রত্যেক প্রজাতির ফলের প্রতিনিধি; যারা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং গন্ধে অতুলনীয়। প্রত্যেক প্রজাতির প্রতিনিধি তুমি নেবে, দুজন করে, যেনো তারা অফুরন্ত হয়ে উঠতে পারে, যেনো তারা দীর্ঘসময় নৌকায় বসবাসরত মানুষের সাথে অবস্থান করতে পারে।
২৯. সেখানে থাকবেনা কোনো কুঁজো। কোনো স্ফীতোদর ব্যক্তি সেখানে থাকবেনা। থাকবেনা কোনো শারিরীকভাবে অক্ষম, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ এবং দরিদ্র ব্যক্তি। থাকবেনা কোনো মিথ্যা, অনর্থ এবং ঈর্ষা। থাকবেনা দন্তব্যসন এবং কুষ্ঠরোগী। সেখানে এমন কোনো মরনশীল থাকবেনা, যাকে আহরি মান আঘাত করতে পারে।
৩০. সেখানে, বৃহত্তম অংশে তুমি তৈরী করবে নয়টি সড়ক, মাঝারি অংশে ছয়টি সড়ক এবং ক্ষুদ্রতম অংশে তিনটি সড়ক। বৃহত্তম অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, এক হাজার পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি। মাঝারি অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, ছয়শত এবং ক্ষুদ্রতম অংশের প্রতিটি সড়ক যেনো বহন করতে পারে, তিনশত। এবং সেই বেড়াযুক্ত নৌকার দরজা বন্ধ করা হবে স্বর্ণের আংটি দ্বারা এবং জানালারা নিজেরাই হবে উজ্জ্বল আলোকিত।
৩১. অতঃপর যিমা তার নিজেকেই জিজ্ঞাসা করলো- কিভাবে আমি তৈরী করবো এমন বেড়াযুক্ত নৌকা, যা তৈরী করতে আহুর মাজদা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন? এবং আহুর মাজদা যিমাকে বললেন- হে ভিভানঘাটের পুত্র, নির্মল ন্যায়মূর্ত যিমা, তুমি তোমার গোড়ালি দিয়ে আঘাত করো মাটিকে, আর তাকে চাপ দিয়ে ভাঙো। পিষে তাল বানানো মাটির দলা যেমন কুমোরের কথা শোনে, তেমনি মাটি তোমার কথা শুনবে।
৩২. এবং যিমা তেমনটি করলো, যেমনটি আহুর মাজদা ইচ্ছা করেছিলেন। সে তার গোড়ালি দিয়ে আঘাত করলো মাটিকে, আর তাকে চাপ দিয়ে ভাঙলো। পিষে তাল বানানো মাটির দলা যেমন কুমোরের কথা শোনে, তেমনি মাটি তার কথা শুনলো।
৩৩. এবং যিমা তৈরী করলো, একটি বেড়াযুক্ত নৌকা, যা চারপাশে সমান আকৃতির হলো এবং যার প্রত্যেক পার্শ্ব হলো, দুই হথ্রা লম্বা। এবং সেখানে সে সাথে নিলো, ভেড়া এবং গরুর প্রতিনিধি, এবং একই সাথে মানুষের, কুকুরের, পাখির এবং রক্তবর্ণ আগুনের আলোকচ্ছটার প্রতিনিধি। অতঃপর সেই দুই হথ্রা লম্বা, বেড়াযুক্ত নৌকাটি হলো, মানুষের জন্য আবাস এবং প্রাণীদের দল-পাল এবং ঝাঁকেদের জন্য খোঁয়াড়।
৩৪. সেখানে সে তৈরী করলো, এক হথ্রা লম্বা, জমিয়ে রাখা পানির জন্য স্থান, যেনো সেখানে পাখিরা অবস্থান করতে পারে। তাদের চিরসবুজ প্রকৃতি সহ, যেনো তারা কখনো খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ না হয়। এবং সে একই সাথে, প্রতিষ্ঠা করলো এটা, যেনো তা বসবাসের উপযুক্ত হয়। সেখানে ছিলো বারান্দা সহ ঘর, খোলা অঙ্গন এবং সমাবেশের স্থান।
৩৫. সেখানে সে নিলো, পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে সে নিলো, সমস্ত প্রজাতির গবাদীপশুর প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট।
৩৬. সেখানে সে নিলো, প্রত্যেক প্রজাতির গাছের প্রতিনিধি; পৃথিবীতে যারা ছিলো অসাধারন, চমৎকার এবং সর্বোৎকৃষ্ট। এবং সেখানে সে নিলো প্রত্যেক প্রজাতির ফলের প্রতিনিধি; যারা ছিলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং গন্ধে অতুলনীয়। প্রত্যেক প্রজাতির প্রতিনিধি সে নিলো, দুজন করে, যেনো তারা অফুরন্ত হয়ে উঠতে পারে, যেনো তারা দীর্ঘসময় নৌকায় বসবাসরত মানুষের সাথে অবস্থান করতে পারে।
৩৭. সেখানে ছিলোনা কোনো কুঁজো। কোনো স্ফীতোদর ব্যক্তি সেখানে ছিলোনা। ছিলোনা কোনো শারিরীকভাবে অক্ষম, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ এবং দরিদ্র ব্যক্তি। ছিলোনা কোনো মিথ্যা, অনর্থ এবং ঈর্ষা। ছিলোনা দন্তব্যসন এবং কুষ্ঠরোগী। সেখানে এমন কোনো মরনশীল ছিলোনা, যাকে আহরি মান আঘাত করতে পারে।
৩৮. এবং সেখানে, বৃহত্তম অংশে সে তৈরী করলো নয়টি সড়ক, মাঝারি অংশে ছয়টি সড়ক এবং ক্ষুদ্রতম অংশে তিনটি সড়ক। বৃহত্তম অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, এক হাজার পুরুষ এবং নারীর প্রতিনিধি। মাঝারি অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, ছয়শত এবং ক্ষুদ্রতম অংশের প্রতিটি সড়কে সে রাখলো, তিনশত। এবং সেই বেড়াযুক্ত নৌকার দরজা সে বন্ধ করলো স্বর্ণের আংটি দ্বারা এবং জানালারা নিজেরাই হলো উজ্জ্বল আলোকিত।
৩৯. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাটি কোন আলোয় আলোকিত ছিলো?
৪০. আহুর মাজদা বললেন- সেখানে ছিলো, প্রকাশিত আলো এবং অপ্রকাশিত আলো। সেখানে ছিলো তারকা, চন্দ্র এবং সূর্য, যে একাই বারবার উদীত হয় এবং অস্ত যায়, এবং সেখানে একটি বছর যেনো একটি দিন।
৪১. সেখানে চল্লিশ বছরে জন্ম নেয়, একজোড়া মানুষ, একজন পুরুষ এবং একজন নারী। এবং সেখানে জোড়ায় জোড়ায় জন্ম নেয়, গবাদীপশু এবং অন্যরা। এবং যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাতে, মানুষ কাটাচ্ছিলো সর্ব্বোচ্চ সুখের দিন।
৪২. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যিমা নির্মিত বেড়াযুক্ত নৌকাতে, তোমার আইন, মাজদার আইন, কে নিয়ে যেতো? আহুর মাজদা বললেন- হে পবিত্র জরথুস্ত্র, সেটা ছিলো কার্শিপ্তা পাখি।
৪৩. হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; সেখানে কে ছিলো শাসনকর্তা? আহুর মাজদা বললেন- হে জরথুস্ত্র, সে ছিলো উর্ভাতাদ-সারা। এবং তুমি নিজে, হে পবিত্র জরথুস্ত্র।
[ পাদটীকা সংযুক্তি
পদ ১০... আর্মাইতি... আহুর মাজদার অনুগত ছয়জন পবিত্র দেবতাদের একজন।
পদ ২২... আরেদ্বী... অর্থাৎ এক বিতাস্তি এবং দুই আঙুল পরিমান। এক বিতাস্তি হলো বারো আঙুল। অর্থাৎ এক আরেদ্বী সমান চৌদ্দ আঙুল পরিমান।
পদ ২৫... হথ্রা... এক হথ্রা সমান প্রায় এক ইংলিশ মাইল।]