28 September 2017

রাষ্ট্র কেন স্বাধীন হবে?

কুর্দিস্তান ও ইরাকের মানচিত্র 
রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার আগে আপনি যদি তার ভবিষ্যৎ এর প্রশ্ন করেন তাহলে কিছু আপত্তি তৈরী হয়। যে সব প্রশ্ন উত্থাপনের কারনে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বিলম্বিত হতে পারে, তাই নিয়ে এখানে আলোচনা করা যেতে পারে।

টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটিঃ
রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই সাধারণত প্রথম যে দোহাইটি দেখান, তা হলো টেরিটোরিয়াল এন্টেগ্রিটি। এই দোহাই দিলে আসলে পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই স্বাধীন হতে পারবে না। রাষ্ট্র একটি অতি-আধুনিক ধারণা। এই ধারণা আরো কিছু গালভরা ধারণা আমদানী করে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত আর সবচেয়ে অস্পষ্ট ধারণা হলো- 'টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি'

যেমন বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন পাকিস্তানের টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি নষ্ট হয়। বা আমেরিকা যখন স্বাধীন হয়, তখন বৃটিশ সাম্রাজ্যের টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি নষ্ট হয়। কোনো অঞ্চলের স্বাধীনতার সময় যদি টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটির দোহাই তোলা হয়, তাহলে তা সবসময় পরাধীন বা স্বাধীনতাকামী জনতার বিপক্ষে যায়। টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি ঠিক রাখতে হলে কোনো দেশেরই আসলে স্বাধীন হওয়া উচিত না।
কাতালোনিয়ার পতাকা
ঠিক একই রকম, কুর্দিস্তানের ক্ষেত্রে ইরাকের বা কাতালোনিয়ার ক্ষেত্রে স্পেনের টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি নষ্ট হবে, যদি কুর্দিস্তান বা কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অনেকে মাতৃরাষ্ট্রের ক্ষমতাবলয়ের ভেতরেই দরকষাকষি করে, ইন্টেগ্রিটি নষ্ট না করে স্বাধীনতা লাভের কথা বলেন। কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব একটা প্রক্রিয়া। এই ঘটনা ঘটানোর জন্য যে পরিমান আন্তর্জাতিক প্রেসার তৈরী করতে হয়, অনেক স্বাধীনতাকামী অঞ্চল তা করতে সক্ষম নয়। এইরকম একবার সম্ভব হয়েছিলো পূর্ব তিমুরের বেলায়। ইন্দোনেশিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতো প্রেসার দিয়েছিলো যে ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়। একই ঘটনা কুর্দিস্তান বা কাতালোনিয়ার ক্ষেত্রে ঘটবে এমনটা আশা করা যায় না।
কুর্দিস্তানের পতাকা
এই ক্ষেত্রে পুরো দেশে গণভোট নেয়াও একটি আকাশকুসুম কল্পনা। পুরো ইরাক কখনোই কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার ব্যাপারে একমত হবে না। বা পুরো স্পেন কখনোই কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা দিতে চাইবেনা। স্বাধীনতাকামী নির্দিষ্ট অঞ্চলেই তাই গণভোট নেয়া হয়ে থাক। যেমন সম্প্রতি কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার ব্যাপারে গণভোট হয়ে গেলো। বা কিছুদিন পরই কাতালোনিয়াতে গণভোট। ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার ব্যাপারে এইরকম একটি গণভোট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।
স্কটল্যান্ডের পতাকা
সংখ্যালঘু তত্ত্বঃ
সংখ্যালঘুর ধারণাই একটি ঔপনিবেশবাদী ধারণা। এই ধারণা আধুনিক কোনো রাষ্ট্রের সাথেই সঙ্গতিপূর্ন নয়। কিন্তু তবু এই তত্ত্ব আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে চর্চিত হয়ে থাকে কারন রাষ্ট্রের বেশিরভাগ জনগণই ঔপনিবেশিক শিক্ষাদীক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি। রাষ্ট্রগুলোও তাদের পুরাতন ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হওয়ার পথে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে নি। এই দায়ভার স্বাধীনতার নয়।

ইরাকে কুর্দিরা সংখ্যালঘু হিসেবে দীর্ঘদিন নির্যাতিত হয়ে আসছিলো। স্বাধীনতার যৌক্তিক এবং ধারাবাহিক দাবীর প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে তারা স্বায়ত্তশাসন পায়। ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি এলাকাগুলোয় তথাকথিত ছোট সংখ্যালঘুরা ইরাকের শাসনের চেয়ে বেশি সুখে ছিলো। কুর্দিস্তানে সংখ্যালঘুরা মূলত ক্যালডিয় খ্রিস্টান, ইয়াজিদি, ইয়ারসানি এবং বাহাই। এছাড়া কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে গেলে আরবরাও সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। কিন্তু কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার পেছনে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে এই তথাকথিত সংখ্যালঘুরা। ক্যালডিয়রা আলাদা স্বাধীনতা কমিশন গঠন করেছে। এমনকি কুর্দি এলাকার আরবরাও স্বাধীনতার পক্ষে বিপুল পরিমানে সাড়া দিয়েছে।

কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার যৌক্তিক দাবীতে কেনো সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নির্বিশেষে হ্যা ভোট দিলো? কারন ইরাক বহুদিন ধরে তার নাগরিকদের রক্ষা করতে অক্ষম। সাদ্দাম হোসেনের সময়ে সুন্নিদের দ্বারা শিয়া আর কুর্দিরা নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে। আমেরিকান ইরাকে শিয়া কর্তৃক সুন্নি আর কুর্দিরা হয়েছে নিষ্পেষিত। বাকী অতি-সংখ্যালঘুদের কথা তো যতোটুকু গণমাধ্যমে এসেছে, ততটুকুই। সর্বশেষ আইসিসের আক্রমণে পর্যদুস্ত ইরাকি বাহিনী কুর্দি আর সুন্নি এলাকাগুলো নিজেরাই ছেড়ে রেখে চলে এসেছে। ইরাকের অন্যতম প্রধান শহরগুলো যেমন মসুল, রামাদি, ফালুজা, কিরকুক, হিত ইত্যাদি আইসিস দখল করেছে বিনা বাধায়। কুর্দিদের পেশমারগা বাহিনী সম্প্রতি কিরকুক, মসুল আইসিসের হাত থেকে উদ্ধার করেছে। নিজেদের এলাকা যেহেতু কুর্দিরা নিজেরাই দেখে রাখতে পারছে তাই রাষ্ট্র হিসেবে ইরাকের কি দরকার?!

নতুন রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু থাকবে কিনা বা সেখানে সংখ্যালঘুদের কি অবস্থা হবে বা নতুন রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের কিভাবে ট্রিট করা হবে এসবের উপর ‘স্বাধীনতা’ নির্ভর করে না। রাষ্ট্র যদি কল্যাণকামী হয়ে উঠে সংখ্যালঘু তত্ত্ব সেখানে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পরে। রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ এ কল্যাণকামী হবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব না। যেসমস্ত ধ্রুবকের কারনে রাষ্ট্র কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে উঠে সেসমস্ত উপাদান নতুন রাষ্ট্রে মজুত আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মানব প্রজাতির মৌলিক সমস্যাঃ
প্রজাতি হিসেবে মানবজাতির একটি মৌলিক সমস্যা ‘আমরা এবং তোমরা’। মানুষ নিজেদের খুব সহজেই আলাদা করে ফেলতে পছন্দ করে। আমার মতো যারা তারা ‘আমরা’ আর বাকীরা ‘তোমরা’। ইরাকের ক্ষেত্রে এই আমরা-তোমরা বেশ প্রবল। এখানে তিনটি বড় গ্রুপ সক্রিয়। শিয়া, সুন্নি, কুর্দি। যদি এই তিনটি জাতিকেই আলাদা রাখা হয় তবু সংকটের সমাধান হবে না। কারন তখন শিয়া, সুন্নি, কুর্দি থেকে নতুন নতুন আমরা-তোমরা গজাবে। সুন্নিরা ভাগ হয়ে যাবে মালেকি, হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি গ্রুপে। শিয়ারা ভাগ হয়ে যাবে যায়েদি, জাফরি, ইসমাইলিয়া গ্রুপে। কুর্দিরা ভাগ হয়ে যাবে সোরানি, গোরানি, বখতিয়ারি গ্রুপে। এটা মানবজাতির মূলগত সমস্যা। এই সমস্যা কখনোই একটি জাতির স্বাধীনতা কামনার অন্তরায় হতে পারে না। যদি দুইজন মানুষের জন্য একটা দেশ করা হয় সেখানেও দুইটা দল থাকবে। একজন সংখ্যাগুরু ক্ষমতাসীন দল, অপরজন সংখ্যালঘু বিরোধীদল।


এইসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও স্বাধীনতাকামী অঞ্চলের স্বাধীনতা চাওয়াটাকে অস্বীকার করা যাবে না। টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি, সংখ্যালঘু, অধিকার, মানবাধিকার, কি পারবে কি পারবে না, তলা বিহীন ঝুড়ি ইত্যাদি বায়বীয় টার্ম ব্যবহার করে স্বাধীনতার মৌলিক দাবীকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। 

18 September 2017

মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কিত মিথ


১ম মিথ:
মহাত্মা গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীর স্বামীকে দত্তক নিয়েছিলেন।
মিথের উৎপত্তি: সাধারণ জনগন।
মিথের শিকার: সেসমস্ত অবুঝ হৃদয় যারা গুগলে সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়াতেও যেতে পারে না।
মিথের ভাষ্য: জওহারলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু একবার ফিরোজ জাহাঙ্গীর খান নামক একজনের প্রেমে পরলেন, তাকে বিয়ে করতে চাইলেন। জওহারলাল নেহেরু এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। ইন্দিরা আর ফিরোজ, মহাত্মা গান্ধীর শরণাপন্ন হলেন। মহাত্মা গান্ধী জওহরলাল নেহেরুকে ডেকে বললেন- তুমি কি আমার ছেলের সাথে ইন্দিরার বিয়ে দেবে? ফিরোজই আমার ছেলে। আজ থেলে সে ফিরোজ গান্ধী। তারপর জওহরলাল নেহেরু রাজি হলেন। ফিরোজের সাথে ইন্দিরার বিয়ে হলো। ইন্দিরা হয়ে গেলেন ইন্দিরা গান্ধী।
মিথের সমাধান: ফিরোজ জাহাঙ্গীর কখনোই খান ছিলেন না। তার নাম 'ফিরোজ জাহাঙ্গীর গান্ধী'। তার পিতার নাম 'ফারেদুন জাহাঙ্গীর গান্ধী'। তারা কখনোই মুসলমান ছিলেন না। তারা ধর্মে পারসিক (পারসিকরা দ্বিঈশ্বরবাদী, প্রাচীন ইরানের রাজধর্ম)। গান্ধী একটি গুজরাটি বংশনাম। মহাত্মা গান্ধী ফিরোজ গান্ধীকে দত্তক নেন নাই। ইন্দিরার নামের সাথে গান্ধী লেগেছে, ফিরোজ গান্ধীর গান্ধী থেকে।
মহাত্মা গান্ধী ন্যাংটা হয়ে তরুণী মেয়েদের সাথে শুয়ে থাকতেন।
মিথের উৎপত্তি: আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ {বিজেপির আধ্যাত্মিক শাখা}) এবং বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি {আরএসএস এর রাজনৈতিক শাখা})।
মিথের শিকার: ভারতীয় ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনগণ।
মিথের ভাষ্য: মহাত্মা গান্ধী জীবনের শেষ সময়ে ব্রহ্মচারী হয়ে যান। তিনি একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন, 'তলস্তয় আশ্রম' নামে। সেখানে নানান ধরনের অনৈতিক কাজ হতো। বুড়ো মহাত্মা গান্ধী ভুলিয়েভালিয়ে তরুণী মেয়েদের সাথে ন্যাংটা হয়ে শুয়ে থাকতেন। এছাড়াও শেষসময়ে তিনি কিছুটা 'গে' হয়ে গিয়েছিলেন।
মিথের সমাধান: যে লোক জীবনের মাঝবয়স থেকেই ন্যাংটি পরে থাকতেন, শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে ন্যাংটি পরতেন, ভারতের ভাইসরয় থেকে শুরু করে মেথরের সাথে দেখা করতেন ন্যাংটি পরে, এমনকি ইংল্যান্ডের রাজার সাথে দেখা করে এসেছেন ন্যাংটি পরে, তার ন্যাংটা হওয়ার কি দরকার? যে তরুণী মেয়েদের তার সাথে থাকার কথা বলা হয় তারা তার নাতনী। মহাত্মা গান্ধীর শেষ বয়সে সেবাশুশ্রূষা নেয়ার জন্য অন্যের সাহায্য দরকার হয়ে পরে। তার দুই নাতনী সবসময় তার সাথে থাকতেন। এটাকেই অস্ত্র বানিয়েছে আরএসএস ও বিজেপি।
জৈন ধর্মের প্রবর্তক 'মহাবীর বর্ধমান' দিগম্বর (পুরোপুরি ন্যাংটা) থাকতেন। একসময় তিনি তার শিষ্য পরিবেষ্টিত অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। শুয়ে শুয়ে তিনি বলেন- 'যেনো দিগম্বর আমি শুয়ে থাকি মাতা ধরণীর গায়।' এই লাইনটাকে আরএসএস আর বিজেপি হাতে পেলে মহাবীরকে প্রথমে তারা ধর্ষণকারী বানাতো। তারপর সেখানে আসতো ইনসেস্ট। তারপর তাকে বানানো হত ধর্ষকামী, মর্ষকামী, গে, শিশুগামী, উভগামী, উভচর, কুমির, ডাইনোসর প্রভৃতি প্রভৃতি। মহাবীর বর্ধমানের সৌভাগ্য যে তিনি আরএসএস আর বিজেপির হাতে পরেন নাই।

15 September 2017

একজন মুসলমান হিসেবে আপনার কি করনীয়

একজন মানুষকে মুসলমান হওয়ার জন্য আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস করা লাগে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস করা মুসলমান হওয়ার শেষ কথা নয়, বরং প্রথম কথা। অর্থাৎ প্রথমে আপনি আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে মুসলমান হলেন। একজন মুসলমান হওয়ার জন্য এর সাথে যুক্ত হবে আরো নানা বিষয়। যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে আপনি কখনোই নিজেকে ভালো মুসলমান দাবী করতে পারবেন না।

প্রথম করণীয়:
আশপাশ পরিষ্কার রাখা। একজন মুসলমান হিসেবে কেবল নিজেকে পরিষ্কার রাখলে হবে না। এমনকি নিজের রুম বা বাসা পরিষ্কার রাখলেও হবে না। আশপাশ বলতে নিজের এলাকা, রাস্তাঘাট সবই বুঝাবে। যে যার জায়গা থেকে আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। এ বিষয়ে মহানবীর একটা কথা আমরা সবাই জানি। 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।' এই পরিচ্ছন্নতা মুসলমানদের জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে।

কি পরিষ্কার রাখবেন?
নিজেকে এবং নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজ ঘরবাড়ির আশপাশ, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখাও মুসলমানের দায়িত্ব। অপরের অসুবিধা হয়, দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন জায়গায় ময়লা ফেলা উচিত নয়। ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা উচিত। সে নির্দিষ্ট জায়গা যেনো আবার রাস্তার মাঝখানে বা একদম রাস্তার পাশেই না হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে মুসলমান দাবী করে, অথচ তারা ময়লা ফেলে রাস্তার পাশে বা রাস্তার মাঝখানে। প্রয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা দেয়ার জন্য।

দ্বিতীয় করণীয়:
অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। একজন মুসলমানকে অবশ্যই অন্যায়েত প্রতিবাদ করতে হবে। এক সাহাবী একবার মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলো- 'আমাদের সামনে যদি কখনো অন্যায় হয়, আমরা কি করবো?' মহানবী বললেন-'তোমরা হস্তক্ষেপ করে সে অন্যায় রুখে দিবে।' -'যদি আমাদের হস্তক্ষেপ করার সামর্থ্য না থাকে?' -'তাহলে তোমরা মৌখিকভাবে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।' -'যদি আমাদের মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করার সামর্থ্য না থাকে?' -'তবে সে অন্যায়কে মন থেকে ঘৃণা করবে।' অন্যায়ের বিষয়ে এটাই হচ্ছে মহানবীর স্টেটমেন্ট।

অন্যায় কি?
কিছু অন্যায় সব জায়গায় অন্যায়। যেমন- খুন করা, ধর্ষন করা, পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। আর কিছু অন্যায় ক্ষেত্রভেদে গুরু-লঘু হয়। যেমন- দুর্নীতি করা, কাজ দ্রুত করে দেয়ার বিনিময়ে উপহার নেয়া, অপরের কষ্ট হয় এমন কাজ করা ইত্যাদি।

কিছু বিষয় আছে যেগুলো অন্যায় না। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অতি আবেগের বশীভূত হয়ে সেগুলোকে অন্যায় মনে করেন। যেমন- শিরক করা অর্থাৎ আল্লাহ একা নন আরো অনেক দেবতা আছেন এমন মনে করা বা আল্লাহ নাই এমন মনে করা বা পৃথিবীতে আল্লাহর দরকার নাই এমন মনে করা বা আল্লাহ আছেন কি নাই এই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা। কে মুসলমান হলো আর কে মুসলমান হলো না, কে সহি মুসলমান হলো আর কে সহি মুসলমান হলো না, এই বিষয়ক সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। কোনো মানুষকে তিনি এই বিচারের ভার দেন নি। তাই মুসলমানদের নিজেদের নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। তসলিমা নাসরিন কি করলো, কে নাস্তিক হলো, কাকে কিভাবে ইসলামের সহি লাইনে আনতে হবে এমন দায়িত্ব আল্লাহ কাউকে দেননি। যেসমস্ত অন্যায় প্রকাশ্য, তা থেকে মুসলমানদের বেচে চলতে বলা হয়েছে।

তৃতীয় করণীয়:
ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ দেয়া। ধন্যবাদ দেয়ার জন্য কোনো মেধা খরচ করা লাগে না, কোনো অর্থ বা শারীরিক শ্রম হয় না। কিন্তু ধন্যবাদ দেয়ার মাধ্যমে ভালো কাজের মূল্যায়ন করা হয়ে যায়। কেউ আপনার উপকার করলো বা অপকার করলো না বা কোনো সেবা দিলো, আপনি তাৎক্ষণিকভাবে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ, জাযাকাল্লাহ ইত্যাদি সবগুলোই ধন্যবাদসূচক আরবি বিশেষণ।

ধন্যবাদের উদাহরণ:
ধন্যবাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে জাপানি জাতি। তারা তাদের বাচ্চাদের স্কুল কার্যক্রম শুরু করার আগেই ধন্যবাদ দেয়া শেখায়। আমার এক শিক্ষক জাপান ঘুরে এসে বলেছিলেন, 'আচার আচরণ দেখলে জাপানিদেরকেই মুসলমান বলে মনে হয়। শুধু আল্লাহ আর রসুলে বিশ্বাস করলেই তারা মুসলমান হয়ে যেতো।' আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম- 'তারা কি করে?' আমার শিক্ষক বলেছিলেন- 'তারা প্রচুর ধন্যবাদ দেয়।'