15 September 2017

একজন মুসলমান হিসেবে আপনার কি করনীয়

একজন মানুষকে মুসলমান হওয়ার জন্য আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস করা লাগে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস করা মুসলমান হওয়ার শেষ কথা নয়, বরং প্রথম কথা। অর্থাৎ প্রথমে আপনি আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে মুসলমান হলেন। একজন মুসলমান হওয়ার জন্য এর সাথে যুক্ত হবে আরো নানা বিষয়। যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে আপনি কখনোই নিজেকে ভালো মুসলমান দাবী করতে পারবেন না।

প্রথম করণীয়:
আশপাশ পরিষ্কার রাখা। একজন মুসলমান হিসেবে কেবল নিজেকে পরিষ্কার রাখলে হবে না। এমনকি নিজের রুম বা বাসা পরিষ্কার রাখলেও হবে না। আশপাশ বলতে নিজের এলাকা, রাস্তাঘাট সবই বুঝাবে। যে যার জায়গা থেকে আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। এ বিষয়ে মহানবীর একটা কথা আমরা সবাই জানি। 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।' এই পরিচ্ছন্নতা মুসলমানদের জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে।

কি পরিষ্কার রাখবেন?
নিজেকে এবং নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজ ঘরবাড়ির আশপাশ, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখাও মুসলমানের দায়িত্ব। অপরের অসুবিধা হয়, দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন জায়গায় ময়লা ফেলা উচিত নয়। ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা উচিত। সে নির্দিষ্ট জায়গা যেনো আবার রাস্তার মাঝখানে বা একদম রাস্তার পাশেই না হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে মুসলমান দাবী করে, অথচ তারা ময়লা ফেলে রাস্তার পাশে বা রাস্তার মাঝখানে। প্রয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা দেয়ার জন্য।

দ্বিতীয় করণীয়:
অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। একজন মুসলমানকে অবশ্যই অন্যায়েত প্রতিবাদ করতে হবে। এক সাহাবী একবার মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলো- 'আমাদের সামনে যদি কখনো অন্যায় হয়, আমরা কি করবো?' মহানবী বললেন-'তোমরা হস্তক্ষেপ করে সে অন্যায় রুখে দিবে।' -'যদি আমাদের হস্তক্ষেপ করার সামর্থ্য না থাকে?' -'তাহলে তোমরা মৌখিকভাবে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।' -'যদি আমাদের মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করার সামর্থ্য না থাকে?' -'তবে সে অন্যায়কে মন থেকে ঘৃণা করবে।' অন্যায়ের বিষয়ে এটাই হচ্ছে মহানবীর স্টেটমেন্ট।

অন্যায় কি?
কিছু অন্যায় সব জায়গায় অন্যায়। যেমন- খুন করা, ধর্ষন করা, পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। আর কিছু অন্যায় ক্ষেত্রভেদে গুরু-লঘু হয়। যেমন- দুর্নীতি করা, কাজ দ্রুত করে দেয়ার বিনিময়ে উপহার নেয়া, অপরের কষ্ট হয় এমন কাজ করা ইত্যাদি।

কিছু বিষয় আছে যেগুলো অন্যায় না। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অতি আবেগের বশীভূত হয়ে সেগুলোকে অন্যায় মনে করেন। যেমন- শিরক করা অর্থাৎ আল্লাহ একা নন আরো অনেক দেবতা আছেন এমন মনে করা বা আল্লাহ নাই এমন মনে করা বা পৃথিবীতে আল্লাহর দরকার নাই এমন মনে করা বা আল্লাহ আছেন কি নাই এই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা। কে মুসলমান হলো আর কে মুসলমান হলো না, কে সহি মুসলমান হলো আর কে সহি মুসলমান হলো না, এই বিষয়ক সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। কোনো মানুষকে তিনি এই বিচারের ভার দেন নি। তাই মুসলমানদের নিজেদের নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। তসলিমা নাসরিন কি করলো, কে নাস্তিক হলো, কাকে কিভাবে ইসলামের সহি লাইনে আনতে হবে এমন দায়িত্ব আল্লাহ কাউকে দেননি। যেসমস্ত অন্যায় প্রকাশ্য, তা থেকে মুসলমানদের বেচে চলতে বলা হয়েছে।

তৃতীয় করণীয়:
ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ দেয়া। ধন্যবাদ দেয়ার জন্য কোনো মেধা খরচ করা লাগে না, কোনো অর্থ বা শারীরিক শ্রম হয় না। কিন্তু ধন্যবাদ দেয়ার মাধ্যমে ভালো কাজের মূল্যায়ন করা হয়ে যায়। কেউ আপনার উপকার করলো বা অপকার করলো না বা কোনো সেবা দিলো, আপনি তাৎক্ষণিকভাবে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ, জাযাকাল্লাহ ইত্যাদি সবগুলোই ধন্যবাদসূচক আরবি বিশেষণ।

ধন্যবাদের উদাহরণ:
ধন্যবাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে জাপানি জাতি। তারা তাদের বাচ্চাদের স্কুল কার্যক্রম শুরু করার আগেই ধন্যবাদ দেয়া শেখায়। আমার এক শিক্ষক জাপান ঘুরে এসে বলেছিলেন, 'আচার আচরণ দেখলে জাপানিদেরকেই মুসলমান বলে মনে হয়। শুধু আল্লাহ আর রসুলে বিশ্বাস করলেই তারা মুসলমান হয়ে যেতো।' আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম- 'তারা কি করে?' আমার শিক্ষক বলেছিলেন- 'তারা প্রচুর ধন্যবাদ দেয়।'

No comments:

Post a Comment