17 August 2018

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিচ্যুতি অথবা বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়




গতলেখায় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজকে বলতে চাই বঙ্গবন্ধুর নিজের আদর্শবিচ্যুতির কথা। বঙ্গবন্ধু নিজে যে আদর্শে পরিচালিত হয়েছিলেন ১৯৪০ থেকে ১৯৭১, সুদীর্ঘ ৩১ বছর; সেই আদর্শ তিনি নিজেই লঙ্ঘন করেন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চারটি মূল স্তম্ভ- অন্যায়ের সাথে আপোষহীনতা, সত্যবাদীতা, জনগণের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত রাখা এবং সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখা। ১৯৭২ সালে ক্ষমতাগ্রহণের পর এই চারটি মূলস্তম্ভ থেকে দূরে সরে যান বঙ্গবন্ধু। তিনি অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে শুরু করেন। যে স্বপ্ন দেখে বাঙ্গালীরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে সে স্বপ্ন হয়ে যায় অলীক কল্পনা। যে কাজগুলো দেশে ফিরেই করা দরকার ছিলো সেগুলো তিনি করেন নি।
দেশে ফিরেই একটি জাতীয় সরকার গঠন করে দেশকে একতাবদ্ধ করার প্রয়োজন ছিলো। এই প্রয়োজন তিনি এমন সময় উপলব্ধি করেন যখন সময় ফুরিয়ে এসেছে। দেশ স্বাধীন হলেও মানুষের মুক্তি দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো। সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অতিবিপ্লবী অংশটি বের হয়ে গিয়ে গঠন করে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল)। জাসদ সেই সময় ত্রাসের রাজত্বকায়েম করে। জাসদকে মোকাবেলা করা আর নিজের ক্ষমতাকে পোক্ত করার জন্য তিনি গঠন করেন রক্ষীবাহিনী। এই জাসদ আর রক্ষীবাহিনীর মাঝখানে পরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ জনগণ। অথচ বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বেশি ভাবা উচিত ছিলো জনগণের কথা।
যে সত্যবাদীতা বঙ্গবন্ধুর ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিলো স্বাধীনতার পর তার জায়গা নিয়ে নেয় আত্মম্ভরিতা আর স্বেচ্ছাচার। এসময় তিনি মানুষ চিনতে ভুল করেন। তিনি কে দেশপ্রেমিক আর কে চাটুকার তার পার্থক্য করতে ব্যর্থ হন। তিনি কোনটা প্রশংসা আর কোনটা মোসাহেবী তা আলাদা করতে ব্যর্থ হন। এর দায় তাকে নিজের আর নিজের পরিবারের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। মোসাহেবের দল বঙ্গবন্ধুর লাশের উপর দিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় বসে আর বিবৃতি দেয়- ফেরাউনের পতন হয়েছে। মানুষ চিনতে ভুল না করলে দেশ আরো এগিয়ে যেতে পারতো।
১৯৭৩-৭৪ এই সালগুলোতে বেশকয়েকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হয়। দেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। একটি নতুন দেশের জন্য দুর্ভিক্ষ সামাল দেয়া খুব ভয়াবহ ব্যপার যদি সেই দেশে প্রবল দুর্নীতি উপস্থিত থাকে। যেই বঙ্গবন্ধু গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুড়ে লোকেদের খোঁজখবর নিয়েছেন, সেই বঙ্গবন্ধু দুর্ভিক্ষের খবর জানতে নির্ভর করেন মোসাহেব আর দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিকদের উপর।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন দেখা থেকেও দূরে সরে যান। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুকে এসময় চিহ্নিত করা হয়- স্বৈরতান্ত্রিক, কতিপয়তান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক, গোষ্ঠীতান্ত্রিক ইত্যাদি অভিধায়। তিনি একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন এসময়। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কমিয়ে আনা, রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীর সমমর্যাদায় বসানো, বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন, দেশপ্রেমিক নেতাদের চিনতে ব্যর্থ হওয়া, জনগণের চাহিদা বুঝতে না পারা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে মদদ দেয়া এসবই মূল কারণ।
অন্যায় ছাড়া কোনো সমাজ নাই। কিন্তু মানুষ অন্যায়ের বিচার চায়। বিচার না থাকা অথবা একেকজনের জন্য একেকরকম বিচার থাকাই বিচারহীনতা। বিচারের প্রশ্নে সেসময় বঙ্গবন্ধু পক্ষপাতদুষ্ট আচরন করেন। যে কারণে পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে বেশকিছু ‘বিপথগামী তরুণ’ তৈরী হয়। তরুণরা নিজেরা বিপথগামী হয়নি, তাদের বিপথগামী করা হয়েছে। তরুণদের বিপথগামী করার সমসংখ্যাক দায় বঙ্গবন্ধুরও।
তরুণদের রাগিয়ে দিয়ে যেকোনো কাজ উদ্ধার করা বেশ সহজ। এইসমস্ত ক্ষেপাটে তরুণেরা বিদেশী কিছু গোয়েন্দাসংস্থার উস্কানি পায়। মদদ পাওয়ার মতো সিনিয়র অফিসাররা এই ক্ষোভে আরো ঘি ঢেলে দেয়। ফলাফল বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুর নিজের যতোটুকু দায় ততোটুকু দায় বিপথগামী তরুণদের। এবং এই দায়ের আরেক হিস্যা বিদেশী স্বার্থবাদী কিছু বিচ্ছিন্ন লোক আর বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার।
যারা বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অকালমৃত্যু নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন বা পুরো বাঙ্গালী জাতিকে বেঈমান বলে দোষারোপ করেন তাদের আরো বিস্তাড়িত ভেবে কথা বলার জন্য অনুরোধ করবো। ইতিহাস আপনার আবেগ দিয়ে চলে না। ইতিহাস কয়েকটা ঘটনা ছাড়া আর কিছুই না। এক ঘটনা, তার ফলশ্রুতিতে আরেক ঘটনা, এভাবেই ইতিহাস সামনের দিকে এগোয়।
ইতিহাস তার নিজের মতো আগাবে। পেছনে যা গিয়েছে তা গত হয়েছে। এখন আমাদের সময় সামনে তাকানোর। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা এখন কোনো অলীক কল্পনা নয়। যেদিন আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করবো জাতি হিসেবে আমরা অনন্য, সেদিন থেকেই আমাদের উন্নতি শুরু হবে। সেদিন থেকেই আমরা নিজের গর্ব করে বলতে পারবো- আমরা বাঙ্গালী, আমরা বাংলাদেশী।

16 August 2018

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলতে আমরা কি বুঝি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তার সারা জীবন। সারা জীবনে তার কর্মই তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধু প্রথম জেলে যান চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের অধিকার রক্ষায় করা একটি আন্দোলন থেকে। এই আন্দোলন করার কারণে তাকে জরিমানা করা হয়, তার ছাত্রত্বও বাতিল হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান, কারন তিনি জানেন তিনি হকের পথে আছেন, তিনি সঠিক বিষয়ে আন্দোলন করছেন। জেল-জরিমানা-ছাত্রত্ব বাতিল তাকে টলাতে পারেনি, এই কারণেই তিনি আপোষহীন নেতা। অন্যায়ের সাথে কোনো আপোষ নাই, এমনকি যদি জেল হয়, জরিমানা হয়। এমনকি যদি ছাত্রত্বও বাতিল করা হয়। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ১৯৪৮ সালে কেড়ে নেয়া ছাত্রত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ফেরত দেয় ২০১০ সালে। ছাত্রত্ব চলে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু অসম্মানিত হন নাই, বরং অসম্মানিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কারণ তারা ন্যায়ের পথে থাকতে পারে নাই।
রাজনীতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর গুরু। সোহরাওয়ার্দীর সাথে তিনি গ্রামবাংলা ঘুড়ে বেড়ান, জনগণকে সচেতন করেন। কোনো এক কারণে মতবিরোধ দেখা দিলে সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করেন- 'তুমি কে?' বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন- 'আমি যদি কিছু না হই, তাহলে আপনি কে?' বঙ্গবন্ধু সভাস্থল ত্যাগ করে চলে আসেন। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। নেতাকে সত্য বলতে পারার মতো সৎসাহস থাকাটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এখনকার নেতারা ভুলে গেছেন কর্মীরা আছে বলেই তিনি নেতা। কর্মীরাও নিজেদের অবস্থান ভুলে গেছে। তারা মনে করে নেতাকে খুশি রাখতে পারলেই সব ঠিক। কিছু সাময়িক ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে চুপ থাকেন, নেতার ভুল ধরিয়ে দেন না।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালে, প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন ১৯৪০ সালে, মৃত্যুবরন করেন ১৯৭৫ সালে। পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) আমলের বেশিরভাগ সময় তিনি জেলে কাটান। জেলে যাওয়ার কারণগুলো হলো- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, দুর্ভিক্ষবিরোধী আন্দোলন, বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন। এর কোনোটাই তার নিজের স্বার্থের জন্য নয়, জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এটাই। নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের আর দেশের লোকেদের জন্য কাজ করে যাওয়াই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, এর জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় জেল খাটাও কোনো বিষয় না।
বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোসময় স্বপ্ন দেখেছেন একটি সোনার বাংলার। সোনার বাংলা হবে, এই ভেবে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছিলেন। আবার মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন। প্রথমে স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলেন, পরে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এর সবই একটি সোনার বাংলায় তার দেশের লোকেরা থাকবে সেই স্বপ্নের প্রতিফলন। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। নির্দিষ্ট একটি স্বপ্নের দিকে নিরন্তর ছুটে চলাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধু যদি তার স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন থেকে মাঝপথে বিচ্যুত হতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়তো আরো বিলম্বিত হতো। বঙ্গবন্ধু হয়তো যুদ্ধের মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন নাই, কিন্তু জনগণকে একটা স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ঠিকই দেখাতে পেরেছিলেন।
এখন আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মুক্তি আসে নাই। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এখনো সফল হতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর দল বা তার উত্তরসূরিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বোঝাপড়া না থাকা বা সেটা অনুশীলন না করা এখন একটা স্বাভাবিক বিষয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলতে তারা কিছুই বুঝেনা, অথবা কেবল 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ' এই শব্দ ব্যবহার করাকে তারা ফ্যাশন মনে করে। অথচ বাংলাদেশের সোনার বাংলা হয়ে ওঠার সব উপাদান এখানেই মজুত আছে, অভাব কেবল সদিচ্ছার আর স্বপ্ন দেখার।

11 August 2018

আন্দোলন ও প্রতিপক্ষ

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শুনলাম। আত্মঘাতী বক্তব্য। তারে কেউ বোঝাইছে নাকি এইরকম ভুলভাল সে নিজেই বুজছে আল্লাহ মালুম। নিরাপদ সড়কের মতো একটা যৌক্তিক আর নির্বিরোধী আন্দোলনকে তারা ঠেইলা সরকার বিরোধী আন্দোলনের দিকে নিয়া যাইতেছে, এইটা তারা বুঝতেছেনা। ছাত্রদের বোঝানোর দ্বায়িত্ব দেয়া হইছে কোমলমতি ছাত্রলীগের হাতে। এতো কোমল ছাত্রলীগ কি আন্দোলনকারী ছাত্রদের বুঝাইয়া ঘরে ফেরাবে নাকি মারামারি কইরা আরো বেশি পরিমাণ লোকরে এই আন্দোলনের সাথে ইনভল্ভ করবে, কি মনে হয় আপনার?
যে দেশে কোনো কিছুই ঠিক নাই সেই দেশে নিরাপদ রাস্তার জন্য আন্দোলন ও কি করা যাবে না? শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংকের রিজার্ভ সংকট, কয়লা-পাথর-সোনা সব জায়গায় ঘাপলা বাজায়া রাখছেন। যারাই টুকটাক বিরোধীতা করার চেষ্টা করছে তাদেরকেই বিএনপি-জামাত ট্যাগ দিতেছেন। সরকারের বিরোধীতা করলেই কি সে বিএনপি-জামাত। এছাড়া কি লোক নাই দেশে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোকের সাথে সরকার বা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নাই। তারা দুইবেলা খাবার চায়, নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করতে চায়, বাইচা ঘরে ফিরতে চায়- যে ঘরে তার জন্য তার আপনজন অপেক্ষা কইরা আছে।
গতকাল(৪ঠা আগস্ট, ২০১৮) খুন-ধর্ষন হয় নাই বইলা যারা আন্দোলনের উপর ছাত্রলীগের আক্রমনকে জাস্টিফাই করতে চাচ্ছিলেন, এইটা কইরা তাদের কি উপকার হবে আমি জানিনা। আরে, নিরাপদ রাস্তাতো আপনার জন্যও দরকার। নাকী আপনি ছাত্রলীগ করেন বইলা আপনার এক্সিডেন্ট হবে না? আবার এমন না যে খুন-ধর্ষন হইলে তার বিচার হইতো দেশে। এর আগে তনুর ধর্ষনে আপনি কোন পক্ষে ছিলেন? তনুর ধর্ষনের বিচার হয় নাই। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের রায় দিল, এই আন্দোলনের ফাকে। যদিও এইটা লোকজনের চোখ এড়ায়া গেলো, কিন্তু আপনারা জানেন আপনারা অন্যায় করতেছেন।
বঙ্গবন্ধু নিয়া বড়বড় কথা বলেন আপনেরা। কই আপনাদের কাজেকামে তো বঙ্গবন্ধু প্রকাশ পায় না। নাকি আপনারা মুখেই চেতনার ব্যবসা করেন, মনোযোগ দিয়া কখনো পড়েন নাই। মারামারি বাদ দিয়া সময় নিয়া একটু পইড়া দেইখেন, বঙ্গবন্ধু কি বলছেন? বঙ্গবন্ধু আপনাদের ব্যাপারেও বলছেন, আপনাদের এখনকার সময় নিয়া তিনি ভবিষ্যৎবাণী কইরা গেছেন। জুলুম-নির্যাতন কইরা যে টিকা থাকা যায় না, এইটা আপনারা যখন বুঝবেন তখন দেরী হইয়া যাবে। আপনারা শুধুশুধু জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাইয়েন না।
লোকেদের বিএনপির উপর ভরসা নাই বইলাই তারা আজ জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হইছে। সবচেয়ে বড় কথা স্বাধীনতাবিরোধী দল জামাতকে তারা এখনো ছাড়ে নাই। আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চোর তারেক জিয়া এই দলের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এবং জনগণ এইটাও জানে যে বিএনপি দল হিসেবে জনগণের স্বার্থ রক্ষা না কইরা তাদের নেত্রীর বাড়িঘর নিয়া আন্দোলন করতে বেশি পছন্দ করে।
এমতাবস্থায়, জনগণকে আপনাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবেন না। যতটুকু গঠনমূলক পরিবর্তন করা যায় করুন। সৎ চিন্তা করুন। জনগণের পালস বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণ নিরাপদ সড়ক চায়, নিরাপদ দেশ চায়, আইনের শাসন চায়, জুলুম-নির্যাতনের প্রতিরোধ চায়, জনগণ শান্তিতে থাকতে চায়।

10 August 2018

আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক। এপ্রিল ২০১৮ এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ। ব্যবহারকারীদের বিশাল একটা অংশের বয়স ১৫-৪০।
ইতিমধ্যে ফেসবুক বাংলাদেশের একটি বিকল্প সংবাদ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো (প্রিন্ট এবং অনলাইন) মিথ্যাচারিতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সত্য খবর পরিবেশনে অনীহা এবং ভয়, সরকারী সেন্সর এবং পর্যাপ্ত জবাবদিহিতার অভাবে ফেসবুক হয়ে উঠছে বিকল্প সংবাদ মাধ্যম। তবে বড় প্লাটফর্ম হওয়ায় এইখানে গুজব ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান। ব্যবহারকারীদের খবর এবং গুজবের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতে হবে এবং গুজব যেনো না ছড়ায় তার খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া এখন ফেসবুক বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। একটি ভালো বিরোধী দলের অভাবে বাংলাদেশের সংসদ এবং রাজপথ যখন স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বৈরাচারের উর্বর ময়দান, তখন ফেসবুকই লোকজনের ভরসার জায়গা। এইখানে লোকজন সমালোচনা করে, নিন্দা করে, একটা কাজ আরো কিভাবে ভালো হতে পারতো তার আলোচনা করে। বেফাঁস কিছু বললে হাসাহাসি করে, ট্রল করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা যখন কেড়ে নেয়া হচ্ছে তখন ফেসবুকই মত প্রকাশের প্লাটফর্ম হয়ে উঠছে। কিছু ৫৭ ধারাটারা আছে। তবে এগুলা এখন আর লোকে মানে না।
মতপ্রকাশের জায়গা হিসেবে ফেসবুক একটা খোলা মাঠের মতো। এইখানে সবাই যে যার মত দেন। এইখানে আপনি সচেতনতা তৈরী করতে পারেন। কোনো চলমান অন্যায়ের মধ্যে জনমত তৈরী করতে পারেন। আপনার পক্ষের-বিপক্ষের যুক্তি-তর্ক সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এইখানে কে চুপ থেকে নিজের ধান্ধায় আছে তা বের করতে পারেন। এইখানে কে দলকানা, কে গোষ্ঠীস্বার্থে বিভোর, কে আধুনিক সুবিধাবাদী-রাজাকার তা চিহ্নিত করতে পারেন।
সৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে আপনি ফেসবুক থেকেও ভালো আউটপুট বের করতে পারেন। নিজে সৎ আন্দোলনে যোগদান করুন, অপরকে যোগদান করতে উৎসাহিত করুন। আপনার অবস্থান পরিষ্কার করুন। কারা দলকানা এবং জনগণের শত্রু তাদের চিনে রাখুন।
সামনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ গঠনের আন্দোলনে অংশগ্রহন করুন।

9 August 2018

শাহজাহান খানরা কেন কখনো ক্ষমতা ছাড়ে না?


পরিবহন খাত প্রতিদিন সোনার ডিম দেমা হাঁসের মতো একটা খাত। প্রতিদিন সোনার ডিম দেয় এরকম একটা হাঁসের মালিকানা কেউ ছেড়ে দেয় না। আমার সাথে একজন পরিবহন শ্রমিকের কথা হয়েছিলো এই বিষয়টা নিয়ে। তিনি চন্দ্রা থেকে চিটাগাং রোডের একটা বাসের কন্ট্রাক্টার। তার বাসের রুট- চন্দ্রা> বাইপাইল> সাভার> গাবতলী> ফার্মগেট> মৌচাক> শনির আখড়া> চিটাগাং রোড। সারাদিনে তাকে বেশ কয়েকটা স্টপেজে টাকা দেয়া লাগে। এর মধ্যে বাইপাইলে ৪০০ টাকা, গাবতলীতে ৪০০ টাকা, মৌচাকে ২৫০ টাকা, শনির আখড়ায় ৪০০ টাকা, মাতুয়াইলে ৪০০ টাকা দেয়া লাগে। প্রতিদিন এই বাসকে চান্দা দেয়া লাগে প্রায় ১৮৫০ টাকা (পুলিশের চান্দা আর কোম্পানির টিকেট চেকারদের ১০ টাকা বাদে)। বাসের রুট, টাইপ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সমস্ত বাসকেই চান্দা দেয়া লাগে প্রায় ১৫০০-৩০০০ টাকা। এই টাকাগুলা কই যায়?
এই টাকাগুলা লোকাল্গুন্ডাদের মাধ্যমে তোলা হয়। তারপর সেটা কোনো লোকাল এমপি বা নেতার পকেটে যায়। নেতার মধ্যে প্রধানত যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ (বা বিএনপির সময় পড়ুন দল), ওয়ার্ড কমিশনার উল্লেখযোগ্য। এই টাকার ফ্লো একদম নিচ থেকে শুরু করে একদম উপর পর্যন্ত প্রবাহমান। একটা সরল অংক- ধরেন ঢাকায় বাস চলে ১ লাখ, প্রতিদিনের চান্দা গড়ে ২,০০০ টাকা। তাইলে কতো টাকা হয়? ২০ কোটি টাকা। আমার কাছ থেকে হয়তো ১০ টাকা বেশি নিতেছে। কিন্তু দিনশেষে টাকাটা ২০ কোটি। এইটাকার ভাগ কে কে পায়? এই সিন্ডিকেটের পিছনে কে কে আছে? কারা এই চান্দার টাকার উচ্ছিষ্টভোগী?
বাসের এই টাকাটা কোথা থেকে আসে। আসে আমার –আপনার পকেট থেকেই। আমাকে-আপনাকে সিটিং এর নামে, বাসের ভাড়া বাড়ছে নামে এই টাকাটা দেয়া লাগে। এই টাকা না দিলে বাস রুটে চলতে পারবেনা। অথচ সেবার নামে কিচ্ছু বাড়ে নাই। একদম কিচ্ছু না। না ঢাকায় জ্যাম কমছে, না বাস স্টপেজ হইছে, না বাসে ফ্রি ওয়াইফাই বা এসি বা জ্যামে বসে পড়ার জন্য পত্রিকা! এমনকি সিটিং সার্ভিসের নামে সবচেয়ে বড় প্রতারনার জাল তৈরী করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। না হয় সিটিং, না দেয় সার্ভিস! কি বিচিত্র! আপনার পকেট থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা বের হওয়া মানে মাসে ১০*৩০= ৩০০ টাকা আপনার সিস্টেম লস। আর এই সামান্য সিস্টেম লসের মাসিক আউটপুট ২০ কোটি*৩০= ৬০০ কোটি টাকা।
পরিবহন খাত থেকে হয়তো মাসে ৬০০ কোটি টাকা শাহজাহান খান ইনকাম করেন না। এর ১% ও যদি খান, তাহলে ৬ কোটি টাকা। কোন ব্যবসা মাসে আপনাকে ৬ কোটি টাকা দেবে? যাস্ট ফর নাথিং, একদম কিচ্ছু না করার জন্য এই টাকাটা দিচ্ছি আমরা। কাদের দিচ্ছি এই টাকাটা? যাদের আমাদের নিয়া কোনো চিন্তা নাই। যারা আমাদের নেতা হইয়া বইসা আছেন তাদের। যারা নিজেদের আর নিজের বৌ-বাচ্চা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না তাদের।
এই প্রসেসের ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা আর একই সাথে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকেরা। সাধারণ জনগণ মাঝেমাঝে ফেসবুকে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করেন। কিন্তু শ্রমিকের পক্ষে বলার জন্য কেউ নাই। এমনকি তারা নিজেরাও না। তারা টাকা তুলে আর দিয়ে দেয়। ঐ কন্ট্রাক্টার আমাকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন- ঐ খাচ্চর লোকগুলার লেইগা ট্যাকা তুলতে ভালো লাগে না মামা। কিন্তু কি করুম প্যাটের ধান্দা...
সবাই সবার ধান্ধায় আছে। সাধারণ জনগনের ধান্ধা হওয়া উচিত, আমরা আর এই সিস্টেম লসের অংশ হবো না। শ্রমিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা সমাধান না। এই সিস্টেমের মূলে আঘাত করতে হবে আমাদের। এই নৈরাজ্যের মূলে আঘাত করলেই দূর্নীতির একটা বৃহৎ খুঁটিতে টান পরবে, বিশ্বাস করেন। আমাদের সবাই দূর্নীতির কারনে দেশের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। সবাই এটাকে নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন বা এটাই সিস্টেম হয়ে গেছে বলে মনে করেছেন। এখন সময় যুগ বদলের, এখন সময় নতুন দিনের। আমাদের বাচ্চারা আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শেখাচ্ছে। আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা এখন আর কোনো অপরাধ নয়।