16 August 2018

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলতে আমরা কি বুঝি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তার সারা জীবন। সারা জীবনে তার কর্মই তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধু প্রথম জেলে যান চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের অধিকার রক্ষায় করা একটি আন্দোলন থেকে। এই আন্দোলন করার কারণে তাকে জরিমানা করা হয়, তার ছাত্রত্বও বাতিল হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান, কারন তিনি জানেন তিনি হকের পথে আছেন, তিনি সঠিক বিষয়ে আন্দোলন করছেন। জেল-জরিমানা-ছাত্রত্ব বাতিল তাকে টলাতে পারেনি, এই কারণেই তিনি আপোষহীন নেতা। অন্যায়ের সাথে কোনো আপোষ নাই, এমনকি যদি জেল হয়, জরিমানা হয়। এমনকি যদি ছাত্রত্বও বাতিল করা হয়। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ১৯৪৮ সালে কেড়ে নেয়া ছাত্রত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ফেরত দেয় ২০১০ সালে। ছাত্রত্ব চলে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু অসম্মানিত হন নাই, বরং অসম্মানিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কারণ তারা ন্যায়ের পথে থাকতে পারে নাই।
রাজনীতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর গুরু। সোহরাওয়ার্দীর সাথে তিনি গ্রামবাংলা ঘুড়ে বেড়ান, জনগণকে সচেতন করেন। কোনো এক কারণে মতবিরোধ দেখা দিলে সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করেন- 'তুমি কে?' বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন- 'আমি যদি কিছু না হই, তাহলে আপনি কে?' বঙ্গবন্ধু সভাস্থল ত্যাগ করে চলে আসেন। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। নেতাকে সত্য বলতে পারার মতো সৎসাহস থাকাটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এখনকার নেতারা ভুলে গেছেন কর্মীরা আছে বলেই তিনি নেতা। কর্মীরাও নিজেদের অবস্থান ভুলে গেছে। তারা মনে করে নেতাকে খুশি রাখতে পারলেই সব ঠিক। কিছু সাময়িক ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে চুপ থাকেন, নেতার ভুল ধরিয়ে দেন না।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালে, প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন ১৯৪০ সালে, মৃত্যুবরন করেন ১৯৭৫ সালে। পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) আমলের বেশিরভাগ সময় তিনি জেলে কাটান। জেলে যাওয়ার কারণগুলো হলো- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, দুর্ভিক্ষবিরোধী আন্দোলন, বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন। এর কোনোটাই তার নিজের স্বার্থের জন্য নয়, জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এটাই। নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের আর দেশের লোকেদের জন্য কাজ করে যাওয়াই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, এর জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় জেল খাটাও কোনো বিষয় না।
বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোসময় স্বপ্ন দেখেছেন একটি সোনার বাংলার। সোনার বাংলা হবে, এই ভেবে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছিলেন। আবার মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন। প্রথমে স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলেন, পরে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এর সবই একটি সোনার বাংলায় তার দেশের লোকেরা থাকবে সেই স্বপ্নের প্রতিফলন। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। নির্দিষ্ট একটি স্বপ্নের দিকে নিরন্তর ছুটে চলাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধু যদি তার স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন থেকে মাঝপথে বিচ্যুত হতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়তো আরো বিলম্বিত হতো। বঙ্গবন্ধু হয়তো যুদ্ধের মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন নাই, কিন্তু জনগণকে একটা স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ঠিকই দেখাতে পেরেছিলেন।
এখন আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মুক্তি আসে নাই। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এখনো সফল হতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর দল বা তার উত্তরসূরিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বোঝাপড়া না থাকা বা সেটা অনুশীলন না করা এখন একটা স্বাভাবিক বিষয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলতে তারা কিছুই বুঝেনা, অথবা কেবল 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ' এই শব্দ ব্যবহার করাকে তারা ফ্যাশন মনে করে। অথচ বাংলাদেশের সোনার বাংলা হয়ে ওঠার সব উপাদান এখানেই মজুত আছে, অভাব কেবল সদিচ্ছার আর স্বপ্ন দেখার।

No comments:

Post a Comment