করোনার এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে আমরা জানি না। কিন্তু অর্থনীতি যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সব খুলে দেয়া হলো। খুলে দেয়ার আগে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যা জনতাবিরোধী এবং পুজিপতিবান্ধব। মানে ধনীকে আরো ধনী করো, গরীবকে আরো গরিব, এই মতাদর্শ থেকে রাষ্ট্র সরে আসেনি।
গণপরিবহন খোলা হলো। সেখানে যে দুইদিন পর থেকেই আর কেউ সামাজিক দুরত্ব মানবেনা সেটা সবাই বুঝতে পারছি। সেটা সম্ভব ও না। এতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে, গণপরিবহনের ঘাটতি সবসময়ই ছিলো। আর এসমস্ত গণপরিবহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কতোটা উদাসীন তাও সবাই জানেন। নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবহন ব্যবস্থা আর গাদাগাদি করে নেয়া যাত্রী থেকে করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পরবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গণপরিবহনে প্রনোদনা দিতে ব্যর্থ সরকার, যুক্তিহীনভাবে ভাড়া বাড়ালো। ৩ মাস গণপরিবহন কামাই করতে পারে নি বলে আগামি ৩ বছর কামাইয়ের পথ উন্মুক্ত করলো। এখানে লাভ কার, লস কার? যে মধ্যবিত্ত জনতা গত ৩ মাস সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছে, সে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করবে। আর শাহজাহান খান গংরা সারা বছর ধরে তোলা শ্রমিক কল্যান চাদার টাকায় আরাম-আয়েশ করবে।
শ্রমিকের কল্যানের নামে তোলা সেই চাদার টাকা কই? গণপরিবহনে সরকারী প্রনোদনা কই? অথচ এই বৃদ্ধিকৃত ভাড়া কিন্তু শ্রমিক-ড্রাইভাররা পাবে না। পাবে মালিকপক্ষ এবং চাদাবাজ সিন্ডিকেটের লোকেরা। আর একবার এই ভাড়া বেড়ে গেলে, আর কখনো কমবে না। সব স্বাভাবিক হয়ে গেলেও এই ৩ মাস না কামাইয়ের ক্ষত সাড়বে না শাহজাহান গংদের।
সাধারণ যাত্রীর লাভ হচ্ছে না, শ্রমিকের লাভ হচ্ছে না, এমন সিদ্ধান্ত সরকার কিভাবে নেয়? এই সরকারের না মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন করার কথা। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার! ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে দিতেই নিজের শক্তি-স্বামর্থ ক্ষয় করে ফেলছে সরকার। কোন কোন সিদ্ধান্ত জনতার স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেটাও বুঝতে পারছে না।
এরপর আসে উবার, পাঠাও বন্ধ রাখার মতো গনবিরোধী প্রস্তাব। আচ্ছা গণপরিবহন, যেখানে করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা, সেটা খুলে দেয়া হলো; এই সার্ভিসগুলো কি দোষ করলো? আর এসব উবার, পাঠাও বা এরকম সার্ভিস যারা দিয়ে থাকেন, তারা তো সমাজের মধ্যবিত্ত অংশই। সার্ভিস দিয়ে তারা কিছু পয়সা কামাই করে সংসার চালান। এদের সংখ্যাও নিতান্ত কম না। এসব সার্ভিসদাতাদের অর্থনীতির কথা কে চিন্তা করে দেবে?
করোনা আসার পর আমরা যেমন বুঝতে পেরেছি আমাদের স্বাস্থ্যখাত ঠিক কতোটা দুর্নীতি কবলিত, ঠিক তেমন এবার আমরা বুঝতে পারবো আমাদের পরিবহন খাত কতোটা লুটপাট কবলিত। এই দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে দেশ পেছাতে পেছাতে জাহান্নামে পরিণত হয়েছে।
আমাদের সকলের বাস এই জাহান্নামে। সবাই এই জাহান্নাম ছেড়ে যেতে চাইছে। শিকদার ভাইদের দেখেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশের থাই এম্বাসি, থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ এম্বাসি, এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ সব কেমন ম্যানেজ করে ফেললো। অথচ এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কেউ কিছু জানে না। মোর্শেদ খান স্ত্রীকে নিয়ে পুরো প্লেন ভাড়া করে পালালো। এদের সক্ষমতা আছে, এই দেশ ছেড়ে পালানোর, এরা পালিয়েছে।
আবার লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশী গুলি খেয়ে মরলো। এরাও একটা ভালো জীবনের আশায়, একটু ভালো কাজ আর বেশি টাকা কামাই করার আশায় বিদেশে যেতে চাইছিলো। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি শিকদার ব্রাদার্স আর মোর্শেদ খানদের মতো দুর্নীতিবাজ আর লুটপাটকারী না হলে, বিদেশগমন খুব কঠিন। বাংলাদেশের জনতাবিরোধী সরকার জনতাকে দেখে রাখার জন্য, জনতার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ক্ষমতায় বসে নি। সরকার ক্ষমতায় বসে আছে যেনো দুর্নীতিবাজ আর লুটপাটকারীরা একটা সুশীতল ছায়ায় বসে দুর্নীতি আর লুটপাট করে যেতে পারে।
এবং এই দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। দুয়েকদিন পরপর স্যাম্পল আকারে গ্রেফতার করা হয়। কাদের গ্রেফতার করা হয় জানেন, কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুলদের মতো ভয়ংকর সব অপরাধীদের। তাদের অপরাধ কি? তারা মন্ত্রীদের নিয়ে কার্টুন আকে, তারা সেই কার্টুন শেয়ার দেয়, তারা কোথায় কতো দুর্নীতি হয়েছে সেটা নিয়ে ৩ মিনিটের ভিডিও বানায়। কি ভয়ংকর!
অন্যায় সহ্য করাও অন্যায়। এটা ভেবে অনেকে চুপ থাকেন যে মুজিবকন্যা ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু মুজিবকন্যা ক্ষমতায় থাকার সময়েই যদি দুর্নীতি-লুটপাট হয়, জনতা বিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়, তখন কি করবেন?! ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, তাদের কারো অধিকার নাই, বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার, তাদের অধিকার নাই জনতা বিরোধী এইসব সিদ্ধান্ত নেয়ার, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার।
যদি ৫ মিনিট সময় পান, ভাবুন, আপনার বাচ্চাকে আপনি কেমন বাংলাদেশ দিয়ে যেতে চান। কারণ আগামীর বাংলাদেশ, জনতার বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশ- দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত, মুক্ত জনতার বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment