15 June 2020

দৈনন্দিন আলাপ ৩৭


সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম সাহেবের রুহের মাগফেরাত কামনা করাকে কেন্দ্র করে জাতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। যেকোনো ইস্যুতে আসলে এমনটা হয়। কিন্তু বিভিন্ন ভাগে ভাগ হওয়ার আগে কয়েকটা বিষয় ভেবে নিতে পারলে ভালো হয়।

একটা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাত জাতিকে উপহার দেয়ার পেছনে নাসিম সাহেবের অবদান ছিলো। তবে সে একাই এর পেছনে দায়ী না। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রায় সকল সচিব ও কর্মকর্তারা এর জন্য দায়ী। নাসিম সাহেবের আগের ও পরের সকল স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর জন্য দায়ী। দুর্নীতিবাজ সচিবদের নিয়োগ ও পদোন্নতি যারা দিয়েছে তারা দায়ী।

কে কার চেয়ে বেশি দায়ী এটা ইতিহাস ঠিক করবে। কিন্তু সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নাসিম সাহেব ইতিহাসের দায় এড়াতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। মারা যাওয়ার পর নাসিম সাহেবকে নিয়ে কথা বললে আপনার রাগ-ক্ষোভ প্রশমিত হতে পারে ঠিক, কাজের কাজ কিছু হবে না।

তাই যারা মারা যাওয়ার পর আপনি এভাবে রাগ-ক্ষোভ দেখাবেন, তারা জীবিত থাকতে থাকতেই কথা বলুন, যেনো তাদের কান পর্যন্ত কথা পৌঁছায়। যেনো জীবিত থাকতে থাকতেই তারা তাদের ধ্বংস করে ফেলা সিস্টেমের কারণে আফসোস করে।

এসময় আপনি চুপ করে থাকলে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা মনে করবে, এই জাতির সাথে দুর্নীতি করা ঠিকই আছে। যে জাতি এরকম মুহুর্তে চুপ করে থাকে দুর্নীতিতো তাদের সাথেই হবে। দুই-একজনকে জেলে নিয়ে ভয় দেখিয়ে তারা প্রমান করার চেষ্টা করবে এ জাতি ওর্থলেস- রেস্পেক্টলেস।

জাতি ওর্থলেস না। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা যেখানে গুচ্ছে থাকে, আপনি সেখানে একলা। আপনার এই একলা একলা চর্চা তাদের শক্তি যোগায়। তারা জানে আপনি কতোদূর কি করতে পারবেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে যৌথভাবে আওয়াজ তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।

এরমধ্যে একটা ধর্ষণের খবর দেখলাম। একটা নাইনে পড়া বাচ্চা মেয়ে, হীরামনি। বাবা ক্যান্সারের রোগী, মা বাবার সাথে ঢাকায় হাসপাতালে, মেয়ে বাড়িতে একলা। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের এতো অবক্ষয় ঘটেছে যে আমাদের মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ না, বাসে-ট্রেনে নিরাপদ না, একলা কোথায় যেতে আসতে নিরাপদ না, বাসার ভেতরেও নিরাপদ না।

বেশ কয়েকজন অপরাধীদের ক্রসফায়ার চাচ্ছেন। ক্রসফায়ার তারা চাচ্ছেন রাগ-ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে। দেশে আইনের শাসনের অভাব, অপরাধীদের অর্থ ও ক্ষমতার বলে শাস্তি থেকে বের হয়ে আসার প্রবণতা এবং একের পর এক ধর্ষণ আমাদের এমন দাবী করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ক্রসফায়ার কোনো সমাধান না।

কারণ আপনারা জানেন, ক্রসফায়ারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় কতোটা ব্যবহার করা হয়। দেশে যে আইনের শাসন নাই, ক্রসফায়ার তার একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ। দাবী হওয়া উচিত- ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর খুনের আপরাধীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। কেউ যদি অর্থ ও ক্ষমতার মাধ্যমে এটা সেটেল করতে আসে, তাকেও বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।

কিন্তু বিচার করতে আমাদের এতো দেরী হয়ে যায় যে এর মধ্যে আর কয়টা ধর্ষন হবে কেউ জানে না। আর সেই বিচারে অপরাধীদের শাস্তি হবে না, তারা গোপনে বের হয়ে যাবে, বা ঘুষ দিয়ে বা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে, বিচারকে প্রভাবিত করবে। আগের উদাহরণগুলো আমাদের এই ভয় দিয়েছে। সাগর-রুনি, তনুর অপরাধীদের আজও চিহ্নিত করা যায় নি। বিশ্বজিৎকে কেউ খুন করেনি। কি একটা কথা আছে না, বিচার দেরী করে হলে আর বিচার থাকেনা, বেগুনভর্তা হয়ে যায়।

এসব অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে। অধিকারের আওয়াজ তুলতে হবে যেনো আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারি। সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আমরা সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ নির্মান করতে পারবো।

আগামীর বাংলাদেশ- জনতার বাংলাদেশ।
আগামীর বাংলাদেশ- দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত, আধুনিক ও কল্যানকামী বাংলাদেশ।

জয় জনতা।

No comments:

Post a Comment