একটি কাজ শুরু
করার পূর্বেই আমাদের মনে প্রথম যে প্রশ্নটি আসে, সেটি হলো- এটি কেনো জরুরি? একটি
নতুন কাজ শুরু করতে হলে, আমাদের প্রশ্ন শুনতে হয়, এটি কেনো জরুরি? স্বভাবতই আমাদের
উত্তর দিতে হয়। আমরা চাই বা না চাই উত্তর দেই। উত্তর অন্যব্যক্তির পছন্দ না হলে,
তিনি আমাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন, আমরা যেটা করতে চাই বা করছি, সেটা কেনো
অজরুরি। তাই জরুরিয়ত প্রসঙ্গে আমরা দুটি প্রশ্ন করতে চাই এবং প্রসঙ্গত কিছু আলোচনা
করতে চাই। এক, জরুরি বলতে আমরা কি বুঝি? দুই, উল্লেখিত জরুরি কেনো জরুরি? সাধারণত
বাংলা ভাষায় জরুরি বলতে বোঝানো হয়, গুরুত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা বা
অবস্থানকে। কার কাছে? এটা নির্ভর করে পুরোপুরি ব্যক্তির উপর।
সামাজিক তর্কগুলো
থেকে এটা দেখা যায় যে, সামাজিক ঘটনাগুলো নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। কোনো কাজ বা
ঘটনার সম্পূর্নতা বা অসম্পূর্নতার পেছনের কার্যকারণ ব্যক্তি। ব্যক্তির ইচ্ছাতেই
কর্ম বা চিন্তা সাধিত হয় বা ব্যক্তির ইচ্ছাতেই কর্ম বা চিন্তা নিষ্ফল বসে থাকে বা
বিশ্রাম নেয়। কারো কথায় সেটা প্রভাবিত হলেও, ‘কর্ম’ পুরোপুরি ব্যক্তির নিজস্ব
আওতাধীন। সেখানে অন্য ব্যক্তির প্রবেশাধিকার কেবলমাত্র সামাজিক উপাত্ত হিসেবেই
বর্তমান। যেহেতু ব্যক্তি সমাজে অবস্থান করে, তাই সামাজিক উপাত্ত সে শুনতে
নৈতিকভাবে বাধ্য কিন্তু মানতে নয়। উপরোক্ত আলোচনায় এটি কিছুটা হলেও প্রতিভাসিত যে,
ব্যক্তি হলো জরুরিয়তের আধার। অর্থাৎ জরুরি বলতে আমরা তাই বুঝবো, যা নির্দিষ্ট
জরুরিয়ত প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে জরুরি। ব্যক্তিভেদে জরুরিয়তের ভিন্নতা
থাকতে পারে। মনুষ্যপ্রজাতি হিসেবে, অন্যান্য প্রাণেদের মতো কিছু নির্দিষ্ট কাজ
আমরা করতে বাধ্য, আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে। এই স্বার্থগুলোও অবস্থান করে আমাদের
ব্যক্তিতে। যেমন- ক্ষুধা, নিদ্রা, বিশ্রাম, যৌনতা ইত্যাদি। তেমনি ব্যক্তিতে
অবস্থিত নয় কিন্তু মনুষ্যপ্রজাতির টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়, এমন বিষয়ে আমরা পিছিয়ে। যেমন- সমতা, যূথবদ্ধতা,
অযুদ্ধাবস্থা ইত্যাদি। অর্থাৎ একদম মৌলিক জরুরি জায়গাগুলো পর্যন্ত ব্যক্তির উপর
নির্ভরশীল।
ব্যক্তি জরুরি বলতে যা বুঝবে তাই জরুরি। সেটা অর্থনৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে।
অর্থনৈতিকভাবে, যেমন- এই কাজে আমার অর্থনৈতিক লাভ হবে কিনা? সেটা কি পরিমানে? বা
লোকসান হবে কিনা? সেটা কি পরিমানে? কাজটা করলে আমার কি থাকবে? ইত্যাদি।
সামাজিকভাবে, যেমন- এই কাজে আমার সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়বে কিনা? সমাজ এটা কিভাবে
নেবে? আমি কি সমাজের চোখে ভালো হবো নাকি খারাপ হবো? সমাজ আমার বক্তব্য শুনবে কিনা?
ইত্যাদি। আবার সেটা বিভিন্ন কাঠামোতে। চিন্তার কাঠামোতে বা পারিবারিক কাঠামোতে বা
রাষ্ট্রিক কাঠামোতে। চিন্তার কাঠামোতে, যেমন- এটা করলে আমার চিন্তায় কোনো পরিবর্তন
আসবে কিনা? আমার চিন্তা আরো মৌলিক হবে কিনা? চিন্তায় আমার কোনো অবস্থান থাকবে
কিনা? লোকের কাছে আমি জ্ঞানী হবো কিনা? ইত্যাদি। পারিবারিক কাঠামোতে, যেমন-
পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে কিনা? পরিবারের উপর কোনো প্রভাব পরবে কিনা? ইত্যাদি।
রাষ্ট্রিক কাঠামোতে, যেমন- রাষ্ট্র এটা কিভাবে নেবে? এটা রাষ্ট্রের সাথে
সাংঘার্ষিক কিনা? রাষ্ট্র এতে উপকৃত হবে কিনা? ইত্যাদি। যেহেতু ব্যক্তিই হলেন
জরুরিয়তের আধার, সেহেতু জরুরি বলতে আমরা তাই বুঝবো, যা নির্দিষ্ট জরুরিয়ত প্রসঙ্গে
নির্দিষ্ট ব্যক্তি বুঝে থাকেন। অর্থাৎ ব্যক্তির নিকট যা জরুরি, তাই ‘জরুরি’। এবং
জরুরি এইজন্য জরুরি, যেনো ব্যক্তি মানসিকভাবে কোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত না হন।
ব্যক্তি যেনো প্রয়োজনীয় কাঠামোতে নিজের অবস্থান দৃঢ়ভাবে দেখতে পারেন। ব্যক্তি যেনো
কখনোই নিজের উপর দোষ না চাপান। সেজন্য পূর্বেই ভেবে দেখা প্রয়োজন, এটা তার জন্য
কেনো জরুরি? তা সে যে ভাবেই ভাবুন না কেনো? ব্যক্তি প্রধানত নিজকেই প্রাধান্য দেন
এবং সামগ্রিকতা তার সাপেক্ষেই আবর্তিত এবং উল্লেখিত। তাই জরুরিয়ত সম্পর্কে সচেতন
হওয়া ব্যক্তির একান্ত জরুরি।
১৭.০৭.২০১২
গুহা, গেরুয়া,
সাভার
No comments:
Post a Comment