27 July 2017

ফেইলিওর ইজ দ্যা পিলার অব সাকসেস

প্রতিবছর ম্যাট্রিক-ইন্টারের রেজাল্ট দেয় আর আমার নিজের রেজাল্টের কথা মনে পরে যায়। আমার ম্যাট্রিক বা ইন্টার কোনোটাতেই এপ্লাস বা গোল্ডেন এপ্লাস ছিলো না। তখন অবশ্য এখনকার মতো এপ্লাস এতো সহজলভ্যও ছিলো না। আমার রেজাল্টের ইতিহাস আমার ফেইলের ইতিহাস। প্রতি বছর ফেইল করতাম আর নিজেকে নিজে বলতাম, ফেইলিওর ইজ দ্যা পিলার অব সাকসেস।
আমার জীবনে প্রথম ফেইল ক্লাস সিক্সে। সিক্সে আমি ফেইল করি কৃষি শিক্ষায়। যতোদূর মনে পরে কৃষি শিক্ষা পরীক্ষায় আমি কুমিরের লেজ খাঁজ কাটা খাঁজ কাটা টাইপ এন্সার দিয়েছিলাম। আমার অংক শিক্ষক জলিল স্যার আমাকে একটা চড় দিয়ে বলেছিলেন, 'ব্যাটা কৃষি শিক্ষায় কেউ ফেইল করে?!' তারপর ক্লাস সেভেনে আমি আর কৃষি শিক্ষায় ফেইল করলাম না। ক্লাস সেভেনে আমি ফেইল করলাম, সমাজ বিজ্ঞানে। স্যার এ বছর আমাকে মারলেন না। হতাশ চোখে তাকালেন। বললেন, ' ব্যাটা, সমাজ বিজ্ঞানে কেউ ফেইল করে!'
ক্লাস এইটে আমি বুঝতে পারলাম কোন কোন বিষয়ে ফেইল করা যাবে, আর কোন কোন বিষয়ে যাবে না। ক্লাস এইটে আমি ফেইল করলাম সাধারণ বিজ্ঞান আর গণিতে। ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান শাখায় যাওয়ার জন্য এই দুই বিষয়ে পাস করা খুব জরুরি ছিলো। পাস করতে পারি নাই বিধায় আমাকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় যেতে হলো। বিজ্ঞানে কিছুটা উন্নতি করলেও গণিতে পিলার জমানো অব্যাহত ছিলো।
ক্লাস নাইন আর টেন দুই বছরে মোট ছয় সেমিস্টার। এর মধ্যে নাইনের ফাইনাল সেমিস্টার বাদে বাকি পাঁচটিতেই আমি গণিতে ফেইল করি, এমনকি টেস্ট পরীক্ষাতেও। ক্লাস টেনের শেষে টেস্ট পরীক্ষায় আমি গণিতে এন্সার করি ৯৬, পাই ১৭। মারাত্মক ফলবিপর্যয়। বিশেষ বিবেচনায় আমাকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে দেয়া হলো। ম্যাট্রিকে আমি গণিতে এন্সার করলাম ৭৬। বাসায় আসার পর আমাকে ঐকিক নিয়মে অংক করতে দেয়া হলো। 'কেউ একজন অংকে ৯৬ এন্সার করে পায় ১৭। সে ৭৬ এন্সার করে পায় কতো?'
এরপর ইন্টার। ইন্টারে শখ করে পরিসংখ্যান নিলাম। সেই শখ গলায় কাঁটা হয়ে বিধে রইলো, ফার্স্ট ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ারে। দুই বছরের ইন্টারে কলেজের কোনো পরীক্ষায় আমি পরিসংখ্যানে পাস করতে পারি নাই। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে পেলাম ২৮। সেটাকে ৩৩ করতে আমার শিক্ষকদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। টেস্ট পরীক্ষায় পেলাম ২৭। কলেজ থেকে গার্জিয়ান ডাকানো হলো। আম্মা আমার পক্ষ থেকে দায়-দায়িত্ব নিলেন। কলেজ আমার ইন্টার পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে রাজি হলো।
আব্বা আমারে জিজ্ঞাসা করলেন, 'কি ব্যাপার, তুমি বছর বছর ফেইল করো কেন?' আমি আব্বারে বললাম, 'আব্বা, ফেইলিওর ইজ দ্যা পিলার অব সাকসেস।' আব্বা বললেন, 'তাইলে তো তোমার অনেক গুলা পিলার হইলো।'
দি এন্ড।

22 July 2017

পবিত্র জেন্দাবেস্তা- প্রথম খণ্ড ভেন্দিদাদ- পঞ্চম অধ্যায়- ১-৫ অংশ

ফারগার্দ ৫

অংশ ১ক

১। উপত্যকার গভীরে একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলোএকটি পাখি পর্বতের চূড়া থেকে উড়ে গিয়ে উপত্যকার গভীরে নিচে নেমে গেলো। এবং সেখানে সে মৃতব্যক্তির শব খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলো। তারপর সে উড়ে চলে এলো উপত্যকার গভীর থেকে পর্বতের চূড়াতে। সে সেখানে গাছ থেকে গাছে ঘুরে বেড়াবে, শক্ত কাঠের গাছ থেকে নরম কাঠের গাছে। এবং সে সেই গাছগুলোর উপর বমি করবে, উৎপন্ন করবে বর্জ্য। যেখানে থাকবে মৃতব্যক্তির শরীরের অংশ।
২। এখন, এখানে একজন মানুষ আসলো, উপত্যকার গভীর থেকে পর্বতের চূড়াতে। সে সেইসব গাছগুলোর কাছে আসলো, যেখানে পাখি বসেছিলো। সেই গাছ থেকে মানুষ কাঠ সংগ্রহ করে আগুন জ্বালানোর জন্য। মানুষ সেই গাছ ফেলে, সেই গাছ কাটে, সেই গাছকে কাঠের গুঁড়িতে ভাগ করে এবং তারপর সে সেখান থেকে জ্বালে আগুন; আগুন, আহুর মাজদার সন্তান। তার জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত?
৩। আহুর মাজদা বললেন- সেখানে কোনো পাপ নেই, সেই ব্যক্তির জন্য যে মৃত, যে গৃহীত হবে কুকুরের দ্বারা, পাখির দ্বারা, নেকড়ের দ্বারা, বাতাসের দ্বারা বা মাছির দ্বারা।
৪। সেইজন্য সেখানে পাপ হবে, সেইসব ব্যক্তির যারা এই মৃতব্যক্তির জন্য অপরাধী; সেই মৃতব্যক্তি যে গৃহীত হয়েছে কুকুরের দ্বারা, পাখির দ্বারা, নেকড়ের দ্বারা, বাতাসের দ্বারা বা মাছির দ্বারা। কতো শীঘ্র, আমার সৃষ্টিজগত পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, এইসব মৃতব্যক্তির অপরাধে অপরাধীর দ্বারা; যারা পবিত্রতার বাইরে, যাদের আত্মা কাঁদবে এবং বিলাপ করবে। কারন, অগণিত সত্ত্বা মাটির উপরিভাগেই মৃত্যুবরণ করে।

অংশ ১খ

৫। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; এখানে একজন ব্যক্তি শষ্যের জমিতে জল দিচ্ছে। জল তার জমিতে প্রবাহিত হলো, আবারো প্রবাহিত হলো, তৃতীয়বার প্রবাহিত হলো, চতুর্থবারও প্রবাহিত হলো। এবং চতুর্থ বারের সময়, একটি কুকুর বা একটি শেয়াল বা একটি নেকড়ে; একটি মৃতদেহ সাথে করে নিয়ে এলো, সেই জলপ্রবাহিত জমির উপর। সেই ব্যক্তির জন্য কি শাস্তি নির্ধারিত?
৬। আহুর মাজদা বললেন- সেখানে কোনো পাপ নেই, সেই ব্যক্তির জন্য যে মৃত, যে গৃহীত হবে কুকুরের দ্বারা, পাখির দ্বারা, নেকড়ের দ্বারা, বাতাসের দ্বারা বা মাছির দ্বারা।
৭। সেইজন্য সেখানে পাপ হবে, সেইসব ব্যক্তির যারা এই মৃতব্যক্তির জন্য অপরাধী; সেই মৃতব্যক্তি যে গৃহীত হয়েছে কুকুরের দ্বারা, পাখির দ্বারা, নেকড়ের দ্বারা, বাতাসের দ্বারা বা মাছির দ্বারা। কতো শীঘ্র, আমার সৃষ্টিজগত পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, এইসব মৃতব্যক্তির অপরাধে অপরাধীর দ্বারা; যারা পবিত্রতার বাইরে, যাদের আত্মা কাঁদবে এবং বিলাপ করবে। কারন, অগণিত সত্ত্বা মাটির উপরিভাগেই মৃত্যুবরণ করে।

অংশ ২ক

৮। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; জল হত্যা করে কি?
আহুর মাজদা বললেন- জল কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে না। অস্ত-বিধৌত তার ঘাড়ে ফাঁস বাঁধে এবং বায়ু তাকে বহন করে। তারপর তাকে বন্যা গ্রহণ করে, বন্যা তাকে নিচে নিয়ে যায়, বন্যা তাকে কূলে নিক্ষেপ করে। সেখানে সে পাখিদের খাবার হয়, এবং নিয়তি তাকে নিয়ে যায় এখানে এবং নিয়ে যায় সেখানে।

অংশ ২খ

৯। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; আগুন হত্যা করে কি?
আহুর মাজদা বললেন- আগুন কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে না। অস্ত-বিধৌত তার ঘাড়ে ফাঁস বাঁধে এবং বায়ু তাকে বহন করে। আগুন তাকে পোড়ায়, তার জীবন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এবং তারপর নিয়তি তাকে নিয়ে যায় এখানে এবং নিয়ে যায় সেখানে।

অংশ ৩

১০। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; যদি গ্রীষ্ম অতীত হয় এবং শীত আসে, আহুর মাজদার পূজারীরা তখন কি করবে?
আহুর মাহদা বললেন- প্রত্যেক বাড়িতে এবং প্রত্যেক নগরে তারা তৈরী করবে, তিনটি করে মৃতদের জন্য ঘর।
১১। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; মৃতদের জন্য ঘরগুলো কতো বড় হবে?
আহুর মাজদা বললেন- যথেষ্ট পরিমান বড়, যেনো তা খুলিতে আঘাত না করে, বা পায়ে আঘাত না করে, বা একজন ব্যক্তির হাতে আঘাত না করে যদি কোনো ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়ায়, বা তার পা সোজা করে, বা তার হাত বিস্তৃত করে আর এমনটাই হলো, মৃতদের জন্য ঘরের ব্যাপারে আইন
১২ এবং তারা সেখানে রাখবে প্রাণহীন মৃতদেহ, দুই রাতের জন্য, বা তিন রাতের জন্য, বা এক মাসের জন্য; যতক্ষণ না পর্যন্ত পাখিরা উড়তে শুরু করে, গুল্মেরা গজাতে শুরু করে, বন্যারা বইতে শুরু করে এবং বাতাস শুকনো হতে শুরু করে যতক্ষণ না পর্যন্ত শীত অতীত হয়
১৩ এবং যখন পাখিরা উড়তে শুরু করবে, গুল্মেরা গজাতে শুরু করবে, বন্যারা বইতে শুরু করবে এবং বাতাস শুকনো হতে শুরু করবে; যখন শীত অতীত হবে, তখন মাজদার পূজারীরা, মৃতদেহ দাখমায় শুইয়ে দিয়ে আসবে, যেনো তার চোখ সূর্যের দিকে থাকে।
১৪। যদি মাজদার পূজারীরা ব্যর্থ হয়, এক বছরের মধ্যে, মৃতদেহ দাখমায় শুইয়ে দিতে, যেনো তার চোখ সূর্যের দিকে থাকে; তবে তারা কোনো বিশ্বাসীকে হত্যার অপরাধে অপরাধীর মতো, একই অপরাধে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না মৃতদেহ বৃষ্টিতে না ধোয়, যতক্ষণ না দাখমা বৃষ্টিতে না ধোয়, যতক্ষণ না অপরিচ্ছন্ন বিষয়াদি বৃষ্টিতে না ধোয় এবং যতক্ষণ না পাখি সে মৃতদেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

অংশ ৪

১৫। হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; এটা কি সত্য যে তুমি, আহুর মাজদা, বাতাস এবং মেঘেদের সাথে পাঠাও জলকে, ভৌরুকশা সমুদ্র থেকে?
১৬। তুমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করো মৃতদেহের উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য? তুমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করো দাখমার উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য? তুমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করো সমস্ত অপবিত্র বিষয়াদির উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য? তুমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করো হাড়ের উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য? এবং তুমি, আহুর মাজদা, তাদের ফিরিয়ে নাও, অদেখা কোথাও? তুমি, আহুর মাজদা, তাদের ফিরিয়ে নাও, পূতিকা সাগরে?
১৭। আহুর মাজদা বললেন- এই ঘটনাটি এইরকমই, যেমনটি তুমি বললে, হে ন্যায়পরায়ণ জরথুস্ত্র আমি, আহুর মাজদা, বাতাস এবং মেঘেদের সাথে পাঠিয়েছি জলকে, ভৌরুকশা সমুদ্র থেকে
১৮ আমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করেছি মৃতদেহের উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য আমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করেছি দাখমার উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য আমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করেছি সমস্ত অপবিত্র বিষয়াদির উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য আমি, আহুর মাজদা, তাদের তৈরী করেছি হাড়ের উপর প্রবাহিত হওয়ার জন্য তারপর, আমি, আহুর মাজদা, তাদের ফিরিয়ে নিয়েছি, অদেখা কোথাও আমি, আহুর মাজদা, তাদের ফিরিয়ে নিয়েছি, পূতিকা সাগরে
১৯ সেখানে জলেরা অবস্থান করে ফোটার জন্য তারা পূতিকা সাগরের অভ্যন্তরে ফোটে এবং যখন তারা পূত হয়, পূতিকা সাগর থেকে তারা চলে আসে ভৌরুকশা সমুদ্রে, হারভিস্পতোখম অভিমুখে যেখানে জন্মায় প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের, সমস্ত বীজ তারা জন্মায় শতে, হাজারে, বা শত হাজারে
২০ আমি, আহুর মাজদা, পৃথিবীতে বৃষ্টি দেই, যেনো জন্মায় উদ্ভিদ যেনো বিশ্বাসীরা সেখানে পায়, খাদ্য এবং উপকারী গাভীরা সেখানে পায়, খাদ্য যেনো খাদ্য গ্রহণ করে, বিশ্বাসীরা বেঁচে থাকে এবং খাদ্য গ্রহণ করে, উপকারী গাভীরা

অংশ ৫

২১ এটি, সমস্ত বিষয়াদির চেয়ে সর্বোত্তম; এটি, সমস্ত বিষয়াদির চেয়ে সবচেয়ে আনন্দদায়ক; যেমনটা তুমি বলে থাকো, হে ন্যায়পরায়ণ জরথুস্ত্র
পবিত্র আহুর মাজদা, পবিত্র জরথুস্ত্রের সাথে, আনন্দিত হন, এই বাক্যের দ্বারা-
পবিত্রতা মানুষের জন্য, তার পরবর্তী জীবনের জন্য, যা সর্বোৎকৃষ্ট উত্তম; যে পবিত্রতা অর্জন করা হয় মাজদার আইনের মাধ্যমে; তার জন্য, যে তার নিজেকে বিশোধন করে সৎ চিন্তা, সৎ বাক্য এবং সৎ চুক্তির মাধ্যমে
২২ হে মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হে পবিত্রজন; এই আইন, অশুভশক্তি-ধ্বংসকারী জরথুস্ত্রের এই আইন; কোন কোন মহানত্ব, উত্তমত্ব এবং ন্যায্যতার কারনে আর অন্য সব বাচন থেকে মহান, উত্তম এবং ন্যায্য?
২৩ আহুর মাজদা বললেন- যেমন ভৌরুকশা সমুদ্রের বন্যা, অন্যসব বন্যার চেয়ে উপরে; তেমনি এই আইন, অশুভশক্তি-ধ্বংসকারী জরথুস্ত্রের এই আইন, অন্য সব বাচন থেকে মহান, উত্তম এবং ন্যায্য
২৪ যেমন কোনো বিশাল স্রোত দ্রুত প্রবাহিত হয়, সরু কোনো ছোট নদীর চেয়ে; তেমনি এই আইন, অশুভশক্তি-ধ্বংসকারী জরথুস্ত্রের এই আইন, অন্য সব বাচন থেকে মহান, উত্তম এবং ন্যায্য
যেমন কোনো সুউচ্চ বিশাল বৃক্ষ ছায়াদান করে, তার নিচে থাকা গুল্মদের; সে ছায়াদানকারী সুউচ্চ বৃক্ষের মতো এই আইন, অশুভশক্তি-ধ্বংসকারী জরথুস্ত্রের এই আইন, অন্য সব বাচন থেকে উচ্চতর মহান, উত্তম এবং ন্যায্য
২৫ যেমন পৃথিবীর চেয়ে স্বর্গ উচ্চে অবস্থিত, এবং চারপাশে ঘিরে থাকে; তেমনি এই আইন, অশুভশক্তি-ধ্বংসকারী মাজদার এই আইন, অন্য সব বাচন থেকে উচ্চে অবস্থিত
২৬ অতঃপর, রাতু তার জন্য আবেদন করবে, স্রাওশা-ভারেজ তার জন্য ক্রন্দন করবে যা সে চিন্তা করেছে, যা চিন্তা করা তার উচিত হয়নি; অথবা যা সে চিন্তা করেনি, যা চিন্তা করা তার উচিত ছিলো যা সে বলছে, যা বলা তার উচিত হয় নি; অথবা যা সে বলেনি, যা বলা তার উচিত ছিলো যা সে করেছে, যা করা তার উচিত হয়নি; অথবা যা সে করেনি, যা করা তার উচিত ছিলো রাতু তার প্রাপ্য শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখে যদি তার আর কোনো অসৎ চিন্তা না থেকে থাকে, তাহলে তাকে অনুশোচনার জন্য ক্ষমা করা হোক যদি তার আর কোনো অসৎ চিন্তা না থেকে থাকে, তাহলে তাকে তার পাপ থেকে মুক্তি দেয়া হোক সবসময়ের এবং সবসময়ের জন্য


[পাদটীকা সংযুক্তি

পদ ৮অস্তবিধৌতচতুর্থ অধ্যায়, পাদটীকা- পদ ৪৯ দ্রষ্টব্য
পদ ১৩... দাখমা... তৃতীয় অধ্যায়, পাদটীকা- পদ ৯ দ্রষ্টব্য।
পদ ১৫... ভৌরুকশা সমুদ্র... অর্থাৎ মেঘেদের সমুদ্র। পারসিক ধর্মমতে, বৃষ্টি হয়ে জল পৃথিবীতে নেমে আসার আগে, এখানে জমা হয়।
পদ ১৬... পূতিকা সাগর... অর্থাৎ পবিত্র সাগর। পারসিক ধর্মমতে, জল প্রথমে অদেখা কোথাও চলে যায়। সেখান থেকে যায় পূতিকা সাগরে। সেখানে জল পবিত্র হয়। তারপর জল যায় ভৌরুকশা সমুদ্রে।
পদ ১৯... হারভিস্পতোখমঅর্থাৎ সমস্ত বীজের গাছ। ‘...ভৌরুকশা সমুদ্রের মধ্যখানে, যে গাছে সমস্ত প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ জন্মায়। সেখানে থাকে স্বর্গীয় পাখি- সিনাম্রু। ওই গাছে বসে সে। যখন সে গাছ থেকে উড়ে যায়, সেখানে জন্মায় হাজার নতুন ডাল। আবার যখন সে গাছে অবতরণ করে, হাজার ডাল সেখান থেকে ভেঙে যায়। হাজার ডালের বীজ যত্রতত্র ছড়িয়ে পরেবৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টি-দেবতা, তিস্ত্রা, সেগুলো পৃথিবীতে নামিয়ে নিয়ে আসেন।’ (আবেস্তান ব্যাখ্যা গ্রন্থ- ‘বুনদাহিস’ থেকে)
পদ ২৬... রাতু... বর্তমানে বলা হয়, দাস্তুর। অর্থাৎ পুরোহিত বিচারক। পারসিক ধর্মে যে পুরোহিত বিচারকের ভূমিকাও পালন করেন তাকে রাতু বা দাস্তুর বলা হয়। একজন রাতু পারসিক সমাজের আধ্যাত্মিক প্রধান। ‘...রাতু প্রাপ্য শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ ক্ষমা করে দিলে, ঈশ্বর পুরোটাই ক্ষমা করে দেন।’ (পহ্লবী ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘সাদ্দার’ থেকে)
পদ ২৬... স্রাওশা-ভারেজ... শাস্তি প্রদানের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত পুরোহিত।] 

20 July 2017

সংজ্ঞায়ন কেনো জরুরি?

যা আমরা জানি বা জানতে চাই, বুঝি বা বুঝতে চাই; জানা এবং বোঝার আগে সেই বিষয়ের উপর একটা প্রাথমিক ধারণা আমরা নিই। এই প্রাথমিক ধারণাটিই সংজ্ঞায়ন। তাই যে কোনো জানা বা বোঝার বিষয় স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয় সংজ্ঞায়ন থেকে এবং এর পরেই আমরা ধারণাটির গভীরে যেতে পারি। যদিও সংজ্ঞায়নের কিছু স্বাভাবিক ত্রুটি বর্তমান। যেমন- একটি বস্তু হিসেবে মোম।

মোম বিষয়ে আমাদের প্রথম প্রশ্ন হবে- মোম কি? মোমকে আমরা সংজ্ঞায়িত করবো এভাবে যে, মোম কাঁচামোম থেকে তৈরী একটি বস্তু যার প্রধান কাজ আলোক প্রদান। এই ত্রুটিপূর্ন সংজ্ঞা আমাদের মনে মোমের কোনো প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে ব্যর্থ হবে যদিনা পূর্বেই আমাদের মধ্যে মোমের কোনো মানসিক কাঠামো তৈরী না হয়ে থাকে।

তারপর মোমের মানসিক কাঠামো নির্মানের জন্য আমাদের প্রশ্ন- মোমের রং? উত্তর হবে, সাধারণত সাদা; তবে লাল, নীল বা অন্যান্য বিভিন্ন রঙে রঙিনও হতে পারে। এর আকৃতি?- লম্বাকৃতি; তবে লম্বাকৃতিই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, যেকোনো আকৃতিরই হতে পারে। এর আকার?- যেহেতু বস্তু তাই নির্দিষ্ট আকার আছে। তবে সেই নির্দিষ্ট আকারের বাহিরে আরো বহু নির্দিষ্ট আকারের মোম হওয়া খুবসম্ভব। এর কাজ?- আলোক প্রদান। এছাড়া শোভাবর্ধন ও আনুষ্ঠানিকতা পালনও হতে পারে। এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে থাকলে আমরা দেখতে পাই, মোমের ব্যাপারে আমরা নির্দিষ্ট কোনো ধারণাতেই মূলত পৌছাই না।

তারপরো যেহেতু আমাদের অবশ্যই জানতে হবে মোম কি, সেহেতু আমরা মোমের ব্যাপারে সাদামাটা সিদ্ধান্তে পৌছাই। এবং সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই একক ব্যক্তিতে অবস্থিত। মোম বললে আমার মানসিক কাঠামোতে যে প্রতিচ্ছবি আমি দেখি, অন্যে তা না ও দেখতে পারে। মোম বলতে আমি কেমন মোমকে জানবো, এটা নির্ভর করে আমার মানসিক কাঠামোতে মোমের নির্মানের উপর।

অর্থাৎ জানা বা বোঝার ব্যাপারটি পুরোপুরি ব্যক্তির মানসিক কাঠামোতে নির্দিষ্ট নির্মানের উপর নির্ভরশীল এবং সেই নির্মান অন্য কোনো নির্মান হতে প্রভাবিত হয়ে থাকলেও তারা আলাদা। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিতে নির্মানের পরিকাঠামো স্বতন্ত্র। তাই বলা বাহুল্য, সংজ্ঞায়ন কখনোই সামাজিক নয়। নির্দিষ্ট বস্তুকে আমরা সেভাবেই চিনে থাকি, যেভাবে নির্দিষ্ট ধারণাকারী ব্যক্তি আমাদের চিনিয়ে থাকেন। আর তাই গভীর ধারণায় পৌঁছানোর পূর্বে সংজ্ঞায়নের দিকে মনোযোগ দেয়া ব্যক্তির একান্ত আবশ্যক।

২৫.০৭.২০১২

গেরুয়া, সাভার, ঢাকা 

18 July 2017

সুইসাইড করার সহজ উপায়



'জন্মিলে মরিতে হয়' জীবনের এই হলো প্রতিপাদ্য বিষয়। এই বিষয়টাই মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনের অন্যতম সত্য। জন্মের সাথে সাথে প্রাণীর জন্য এই সত্যটি কার্যকর হয়ে যায়। অনেকে এই সত্যটিকে মানতে চাননা। তারা দীর্ঘ জীবন বাঁচতে চান। তারা দীর্ঘ রোগশোকে ভোগার পর বৃদ্ধবয়সে ধুকেধুকে মরতে চান। আর যারা চালাক, যারা জীবনমুখী চিন্তা করেন, যারা ইতিমধ্যে জীবনের সত্যটিকে উপলব্ধি করে ফেলেছেন, তারা দ্রুত মরতে চান। দ্রুত এবং নিজের ইচ্ছামতো সময়ে মৃত্যুবরণ করার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার নামই হলো সুইসাইড বা আত্মহত্যা।

সুইসাইড কেন করবো:
যে কোনো কারনে সুইসাইড করা যায়। আসলে সুইসাইড করার জন্য যেকোনো কারন হলেই হয়। 'কারন' প্রয়োজনীয় নয়, সুইসাইড করার জন্য দরকার সুইসাইড করবো এরকম একটি প্রতিজ্ঞার। পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করা একটা কারন হতে পারে। বাবা বা মা বকা দিয়েছে বা অপমান করেছে। বাবা আগামী মাসের মধ্যেই মোটরবাইক কিনে দিতে রাজী হয়নি। যাকে ভালোবাসেন সে সাড়া দেয়নি। প্রেমিক বা প্রেমিকা আর আপনার সাথে প্রেম করবেন না বলে জানিয়েছেন। বা নিজেদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে ভুল বোঝাবোঝি বা ঝগড়া। স্বামী বা স্ত্রী অপর কারো প্রতি আসক্ত বা অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িত। কর্মক্ষেত্রে বস এতো কঠিন করে ঝাড়ি দিয়েছে যে এ জীবন রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ ও সুদের বোঝা। ব্যবসায় লস। ইত্যাদি নানা কারন হতে পারে আপনার সুইসাইডের।

সুইসাইড কিভাবে করবো:
সুইসাইড করার বেশ কিছু প্রচলিত পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় হলো গলায় দড়ি দেয়া, বিষ খাওয়া, কীটনাশক খাওয়া, চলতি বাস-ট্রাক বা ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পরা, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ শিরা কেটে ফেলা, পানিতে পরে যাওয়া (যারা সাতার জানেন না তাদের জন্য) ইত্যাদি। অনেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করাকে লজ্জাকর মনে করেন। তারা মনে করেন এভাবে সুইসাইড করবে স্ত্রীজাতির সদস্যরা। আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনি সুইসাইড করতে যাচ্ছেন, যুদ্ধজয় করতে নয়। আর সুইসাইডের ক্ষেত্রে কোনটা স্ত্রীজাতির কোনটা পুরুষজাতির এটা বিবেচ্য নয়। সুইসাইড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো কিনা সেটাই বিবেচ্য।

সুইসাইড করার ক্ষেত্রে এর যেকোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন। বা একসাথে দুই তিনটি পদ্ধতি ফলো করতে পারেন। যেমন- শিরা কেটে সাথে সাথে বিষ খেয়ে নিয়ে তারপর আগেই প্রস্তুত করে রাখা মজবুত দড়িতে ঝুলে পরা। সেক্ষেত্রে আপনার সফলতার নিশ্চয়তা শতভাগ। কেউ আপনাকে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

সাসপেন্স সুইসাইড:
আপনি সুইসাইড করতে চান, কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের জানাতে চাননা আপনি সুইসাইড করেছেন, সেক্ষেত্রে সাসপেন্স সুইসাইড আপনার জন্য বেশ কার্যকর। বিশেষত বাংলাদেশ সাসপেন্স সুইসাইডের উর্বর ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে আপনাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ কোনো হাইওয়েতে নিয়মিত যাতায়াত করতে হবে। গণপরিবহণে যাতায়াত করলে করতে হবে এমন পরিবহণে যারা রাফ এন্ড টাফ গাড়ি চালায়, প্রচুর ওভারটেক করে। এবং এসব পরিবহণে আপনাকে বসতে হবে সামনের দিকে। কারণ সামনের দিকেই এক্সিডেন্টের ঝুঁকি প্রবল। এক্সিডেন্ট ঠিকঠাক মতো হলে আপনার মৃত্যুর গ্যারান্টি শতভাগ। এক্সিডেন্টের পরপর আপনার ফোন এবং মানিব্যাগ চুরি যাবে। সুতরাং আপনার বাসায় জানতেও পারবেনা যে আপনি সফলভাবে মারা যেতে পেরেছেন। সকালে আপনি মারা গেলে তারা জানবে বিকালবেলা বা পরদিন সকালবেলা। আপনি ঠিকঠাকভাবে মারা গেলেন অথচ কেউ বুঝতেও পারলোনা আপনি সুইসাইড করেছেন। এটাই সাসপেন্স সুইসাইড।

বিভিন্ন রকম সুইসাইড:
মানুষের ইতিহাসে বিভিন্ন রকম সুইসাইডের নজির আছে। অনেক সময় যুগলরা একসাথে সুইসাইড করতে চান। ইতিহাসে গণসুইসাইডের ঘটনাও আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাচীন ঐতিহাসিক গণসুইসাইডের ঘটনাটি ঘটেছিলো বর্তমান ইসরাইলের মাসাদা এলাকায়। ৭৪ যিশুসনে রোমান সৈন্যদল মাসাদা এলাকাটি দখল করতে গিয়ে দেখে সেখানকার ৯৬০ জন অধিবাসী সবাই সুইসাইড করে বসে আছে। রোমানদের দাস হওয়ার চেয়ে আত্মহত্যা করাকেই মাসাদার অধিবাসীরা শ্রেয় মনে করেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশেও রাজপুত রমনীরা 'জওহরব্রত' পালন করতেন। জওহরব্রত হলো অগ্নিকুণ্ডে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা। এছাড়া আছে ধর্মীয় কারনে সুইসাইড। রাশিয়া, গ্রীস, তুরস্কের অনেক শহরে খ্রিস্টধর্ম প্রসারের সময় জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের কারনে অনেকে পুরাতন ধর্ম ত্যাগ করতে রাজি না হয়ে গণসুইসাইড করে। ইদানীংকালে ইসলামিক স্টেটের জিহাদীরা নিজেকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে, এগুলোও সুইসাইড। ইন্দোনেশিয়ার কিছু জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে খাদ্যাভাব দেখা দিলে বয়োবৃদ্ধরা নিজের গলা কেটে সুইসাইড করতো। সেই বৃদ্ধদের বীরপূর্বপুরুষ হিসেবে পূজা করা হতো।

সুইসাইডের বাধাসমূহ:
সুইসাইড করার আগে আপনাকে প্রথমেই সুইসাইডের বাধাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। নতুবা সুইসাইডটি নিখুঁত হবে না। আবার আপনি সুইসাইড না করে এই দুর্গন্ধময় জীবনে ফেরতও আসতে পারেন। এইজন্য এই প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা অতি জরুরি।

১ম বাধা: সুইসাইড করার সময় আপনার সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে আপনার পিতা-মাতা। সুইসাইডের ঠিক পূর্বমুহূর্তে আপনার বাবামার চেহারা আপনার মনে পরতে পারে, যা আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। বাবামার চেহারা মনে পরে গেলে তাদের সাথে আপনার দুঃসহ স্মৃতিগুলো মনে করুন। আপনার অপূর্ণতাগুলো মনে করুন। ছোটোবেলা থেকে আপনার বাবামা কতোবার আপনার মনে কষ্ট দিয়েছেন তা মনে করুন। আপনি চাওয়ার পরও আপনাকে দেয়া হয়নি, আপনাকে বকা দেয়া হয়েছে, কখনো কখনো গায়ে হাত তোলা হয়েছে, এসব মনে করুন। ভুলেও কখনো বাবামার সাথে কোনো সুখস্মৃতি মনে করবেন না। ভুলেও মনে করবেন না, আপনার জ্বর এলে আপনার মা সারারাত জেগে বসে থাকতেন। আপনার বাবা প্রথমে মানা করলেও পরে মাসের বেতন তোলার পরই আপনার চাওয়া বিষয়টি নিয়ে আসতেন। আপনার খাওয়া না হলে আপনার বাবা বা মা কেউ খেতে বসতেন না। মাছের মাথা, মুরগির রান আর কলিজা, মাংসের ভালো পিসগুলো আপনাকেই খাওয়াতেন, আর বাবামা সেই দৃশ্য দেখেই সুখি হতেন। আপনার ছোটোবেলায় আপনার বাবা নিজেকে ঘোড়া-গাধা সেজে আপনাকে পিঠে নিতেন। এইসব ভেবে আপনি পিছিয়ে যেতে পারেন, ভুলেও এসব ভাববেন না। এছাড়াও আপনার মনে আসতে পারে, আপনি মারা গেলে আপনার বাবামা কতোটা কষ্ট পাবেন? তারা আপনাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখতেন, কতো আশা করতেন, কতো গর্ব করতেন। আপনি সুইসাইড করার পর আপনার বাবামাকে আপনার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। কিন্তু আপনি সুইসাইড করতে যাচ্ছেন, জনসেবা করতে নয়। এসব ভাবনা আপনাকে সুইসাইড করা থেকে পিছিয়ে নিয়ে আসবে।

২য় বাধা: সুইসাইড করার সময় আপনার সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা আসতে পারে। আর তা হলো আপনার ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব, প্রেমিক বা প্রেমিকার চেহারা ও স্মৃতি। এদের চেহারা মনে এলে সাথে সাথে মনে করুন আপনার ভাই বা বোন আপনার সাথে কতো খারাপ ব্যবহার করেছে, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছে, আপনার সাথে বেয়াদবি করেছে। আপনার বন্ধুবান্ধব আপনার সাথে বেইমানি করেছে। কতো ভালোভালো জায়গায় তারা আপনাকে রেখে ঘুরতে গিয়েছে। আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা আপনাকে ধোঁকা দিয়েছে। আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসছে, ঘর করছে। এসব ভাবলেই আপনার সুইসাইড করাটা সহজ হবে। মোটেই এমন কোনো ভাবনা ভাববেন না, যে ভাবনা ভাবলে আপনার সুইসাইড করাটা আর হয়ে উঠবে না। যেমন, আপনার ভাই বা বোনের সাথে আপনার কোনো সুখস্মৃতি। আপনার ছোটোবেলার একসাথে খেলার স্মৃতি। আপনার চোখের সামনে আপনার ভাই বা বোনের বড় হয়ে ওঠার স্মৃতি। আপনাকে ছাড়া আপনার ভাই বা বোনের একলা টয়লেটে না যেতে চাওয়ার কোনো ঘটনা। আপনার সাথে একসাথে খাবে বলে জমিয়ে রাখতে রাখতে আইসক্রিম গলিয়ে ফেলার কোনো ঘটনা। বা আপনার বন্ধুবান্ধবের সাথে কোনো সুখস্মৃতি। আপনাদের লুকিয়ে পাশের এলাকায় গিয়ে প্রথম সিগারেট খাওয়ার ঘটনা। বা একসাথে পাশের বাসায় কোন মেয়ে বা ছেলে আসলো তার খোঁজখবর নেয়ার স্মৃতি। খেলাধুলার স্মৃতি, ঝগড়ার স্মৃতি, মারামারির স্মৃতি, স্কুলের বা কলেজের হাজারো সুখস্মৃতি। বা প্রেমিক বা প্রেমিকার চেহারা। লুকিয়ে দেখা করতে যাওয়া, চিঠি দেয়া বা ফোন নাম্বার দেয়ানেয়ার স্মৃতি, ধরা খেতে খেতে না খাওয়ার স্মৃতি ইত্যাদি। আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা আপনাকে ধোঁকা দিয়েছে এর মানে এই না যে আপনি জীবনে আরো প্রেমে পরবেন বা আরো প্রেমিক বা প্রেমিকা আপনার জীবনে আসবে। আপনাকে মনে করতে হবে এই প্রেমই আপনার জীবনের শেষ প্রেম। এই প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ছাড়া আপনি বাঁঁচবেন না। তবেই আপনার সুইসাইড করার পেছনে একটি শক্তিশালী কারন তৈরি হবে। আপনি যদি মনে করেন এই প্রেমের পরও আপনাকে ভালোবাসার কেউ আছে বা এরপর আবার আপনার নতুন কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকা হবে যে আপনাকে আরো বেশি ভালবাসবে বা আপনার স্বামী বা স্ত্রী হওয়ার জন্য অনেকে অপেক্ষা করে আছে, আপনি সুইসাইড করা থেকে পিছিয়ে যেতে পারেন।

৩য় বাধা: আপনার সুইসাইড না করার পেছনে আরেকটি বড় বাধা হতে পারে প্রকৃতি নিজে। প্রকৃতির জঞ্জালপূর্ণ বিষয়গুলো মনে করুন। কতো বড় বড় প্রতিবন্ধকতা আপনার জন্য করে রেখেছে প্রকৃতি তা মনে করুন। আবহাওয়ার তারতম্য, গরম বা শীত সহ্য না হওয়া, বন্যা, ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, দাবদাহ ইত্যাদি কতো রকম কুব্যবস্থা প্রকৃতি করে রেখেছে। এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর আগেই সুইসাইড করা উত্তম মনে করুন। তবে সাবধান থাকুন। যেমন আপনি গাছে ঝুলতে যাচ্ছেন, দেখলেন কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার আর সুইসাইড করা হলো না। বা চাঁদের ছায়ায় আপনি আপনাকে বা গাছটাকে দেখলেন। বা ভয়াবহ জোছনা আপনার ভালো লেগে গেলো। যে নদীতে আপনি ঝাপ দিতে গেলেন সেই নদীকে আপনার ভালো লেগে গেলো, বা নদীর পাড় ভালো লাগলো, বা নদীর পানির বয়ে চলার কুলকুল শব্দ আপনার কানে গেঁথে গেলো। আপনার আর সুইসাইড করা হবে না। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাবেন না। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আপনার প্রত্যাশিত সুইসাইড থেকে আপনাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

শেষকথা:
আপনি সুইসাইড করতে চান, তার মানে আপনার আবেগ আছে। আপনার মস্তিষ্কের যে অংশে আবেগ আছে, ঠিক তার পাশের অংশেই আছে কল্পনা। সুইসাইড করার আবেগ আসলে চোখ বন্ধ করে পাশের কল্পনা অংশে চলে যান। কল্পনা করুন আপনি মারা গেছেন। আপনার লাশ দড়িতে ঝুলছে। বা পানি থেকে আপনার ফুলে ওঠা গলা লাশ তোলা হচ্ছে। বা বিষ খেয়ে আপনার মুখের আশপাশে ফেনা জমেছে, সারা মুখমণ্ডল কালো হয়ে গেছে। তারপর কল্পনা করুন আপনার মৃত্যুর পর আপনার মায়ের মুখ, বাবার মুখ, ভাইয়ের মুখ, বোনের মুখ, বন্ধুদের মুখ, প্রেমিক বা প্রমিকার মুখ, স্বামী বা স্ত্রীর মুখ, পাশের বাসার যে আন্টির সাথে আপনার মাত্র একবার চোখাচোখি হয়েছে তার মুখ। আপনার জীবন আপনার কাছে কমদামী মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার জীবন কেবলমাত্র আপনার নয়। আপনার পরিবারের, আপনার সমাজের, আপনার আত্মীয়দের, আপনার স্বজনদের। আপনার মৃত্যুর জন্য যেনো আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রীকে জবাবদিহি না করতে হয়। আপনার মৃত্যুর পর যেনো আপনার মৃত্যুর গ্লানি আপনার পরিবারকে না বয়ে বেড়াতে হয়।

12 July 2017

উপজাতি, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গে



উপজাতি কি জিনিস?

উপজাতি তুচ্ছার্থে বা হীনার্থে ব্যবহৃত একটি কলোনিয়াল টার্ম একটি জাতিকে জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্যসংস্কৃতিএকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান (সংস্কৃতি আবার বিভিন্ন উপ-উপাদানে বিভক্ত যেমন- ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাকআশাক, আচার-আচরণ, বিভিন্ন রকম কলা, যেমন- চিত্রকলা, নৃত্যকলা, সংগীত, সাহিত্য ইত্যাদি) অর্থাৎ প্রত্যেকটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে বা সংস্কৃতির কারনেই এক জাতি অপর জাতি থেকে আলাদা অর্থাৎ আলাদা সংস্কৃতির কারণে হয় সে আলাদা জাতি অথবা নিজস্ব সংস্কৃতি না থাকার কারণে সে কোনো আলাদা জাতি নয় এর মাঝামাঝি কোনো জায়গা আদতে নেই, যেমন- উপজাতি বা অর্ধেক জাতি

কলোনিয়াল যুগে নিজের জাতি কতো মহান আর অপর জাতি কতোটা নীচ তা বোঝানোর জন্য উপজাতি শব্দটা প্রয়োগ করা হতো যেমন বৃটিশরা নিজেদের বলতো কালচারড বা সভ্য, আর ভারতীয় জাতিগুলোকে বলতো নেটিভ বা লোকাল-আনকালচারড বা অসভ্য অর্থাৎ তখনকার বৃটিশ চোখে বৃটিশরা ছিলো পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তা আর ভারতীয় বিভিন্ন জাতিগুলো, যেমন- তামিল, তেলুগু, মারাঠি, পাঞ্জাবি বা বাঙালীরা ছিলো উপজাতি এখন আমরা বুঝি যে তাদের কালচার তাদের আর বাঙালীদের কালচার বাঙালীদের দুইটা আলাদা সভ্যতা দুইজন নিজেদের মতো সভ্য, কেউ অসভ্য নয় 

সম্প্রতি রাষ্ট্রের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃগোষ্ঠীর জনগণ বা ক্ষমতাবান নৃগোষ্ঠীর জনগণ নিজেদের দাবী করে জাতি হিসেবে আর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাদবাকী নৃগোষ্ঠীদের অধিকারবঞ্চিত রাখতে চায় উপজাতি বলে মূলত এধরণের আচরণ পুরোপুরি কলোনিয়াল, পর্যাপ্ত শিক্ষা সুশাসনের অভাবই এর জন্য দায়ী

নৃগোষ্ঠী বিষয়ক আলোচনা

নৃগোষ্ঠী বলতে জাতিই বোঝানো হয় যাদের আলাদা সংস্কৃতি আছে, যাদের নিজস্ব ভাষা আছে, নিজস্ব পোশাকের ঐতিহ্য আছে, আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাসে যারা অন্যদের তুলনায় ভিন্ন; তারাই ভিন্ন নৃগোষ্ঠী এখন যদি পৃথিবীতে দুই জন মানুষও আলাদা ভাষায় কথা বলে এবং অন্য জাতিগুলোর তুলনায় আলাদা পরিচয় বহন করে, তবে তারা আলাদা নৃগোষ্ঠী তবে তারা আলাদা জাতি যেমন বাংলাদেশে বাঙালী, চাকমা, মারমা, ম্রো, খাসিয়া, গারো, সাওতাল, রাখাইন, তঞ্চঙ্গা, পাংখোয়া বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর বাস

এখানে বৃহৎ নৃগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলা প্রকারান্তরে অন্যায় তবে শিক্ষাদীক্ষায় অনগ্রসর রাষ্ট্রসমূহ, যেমন বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিচয়ের প্রয়োজন আছে এই প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য তবে সরকার সুশাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম হলে এই পরিচয়ের আর দরকার হবে না রাষ্ট্রের ভিতরে নৃগোষ্ঠী বিষয়ক আলোচনার আর দরকার হবে না, যদি রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পরিবার নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে নৃগোষ্ঠী বিষয়ক আলোচনা তখন কেবল পরিসংখ্যানে পরিণত হবে

আদিবাসী কারা?

পৃথিবীতে যতো বিবাদ তার বেশিরভাগই জমিজিরাত সম্পর্কিত, তা ভাইয়ে ভাইয়ে হোক বা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যেহেতু বর্তমান রাষ্ট্রগুলো সীমানা ছাড়া আর কিছু নয় তাই সীমানার অভ্যন্তরের সকল নাগরিকের দেখভাল করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল অধিবাসীর অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র এবং যেহেতু রাষ্ট্র বিষয়টা অতি-আধুনিক তাই রাষ্ট্রের ভেতরে কে আদিবাসী বা কে আদিবাসী না এটা নির্ণয় করা অসম্ভবপ্রায় আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা কিছুদিন আগেও ছিলো না তখন ছিলো রাজ্য, আর রাজ্যগুলোর সীমানা আধুনিক রাষ্ট্রের মতো এতো সুগঠিত ছিলো না

সাধারণ হিসাবে রাজ্যগুলোতে যারা প্রথম আবাদ করতো, তারাই রাজ্যের আদিবাসী তারা সংখ্যায় বেশি হলেও আদিবাসী, কম হলেও আদিবাসী তারা ক্ষমতায় থাকলেও আদিবাসী, না থাকলেও আদিবাসী তবে রাজ্য এবং রাষ্ট্রগুলোতে একটাই জাতি বাস করেছে, এই উদাহরণ খুব বিরল সাধারণত বিভিন্ন জাতির অবস্থান সব রাজ্যেই ছিলো রাষ্ট্র যতো আধুনিক হতে থাকলো, নাগরিক অধিকার যতো বঞ্চিত হতে থাকলো, বিভিন্ন রকম অবান্তর টার্ম সমাজে আসতে থাকলো আদিবাসী বলে এখন সমাজে কিছু মানুষকে আলাদা করা হয়, তাদের অধিকার আরো বেশি করে কমিয়ে রাখা হয় তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলা হয়, তোমরা আলাদা

বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আদিবাসী কারা?  

বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আদিবাসী কারা এটা একটা জটিল প্রশ্ন অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে এখানে বাঙালীরাই আদিবাসী বাঙালীরা আসলে মিশ্র জাতি এখানে তিনটি মহানৃগোষ্ঠীরই মিশ্রণ ঘটেছে অস্ট্রালয়েড, মঙ্গোলয়েড নিগ্রোয়েড এই তিন মহাজাতির মিশ্রণে বাঙালী জাতির উদ্ভব ৬০০ যিশুসনের আগে বাঙালী বলে কোনো জাতি আছে এটা বাঙালীরাও জানতো না তখন বাঙালীদের আসামিয়, বিহারী, ভোজপুরী এবং নেপালী সমতলিদের থেকে আলাদা করা যেতো না তিন মহাজাতির মধ্যে বাংলা অঞ্চলে সবার আগে আসে নিগ্রোয়েডরা এমনকি আর্যদের আগে তো বটেই, দ্রাবিড়দেরও আগে সম্প্রতি গবেষনায় দেখা গেছে, কিছু নিগ্রোয়েড জনগোষ্ঠী দ্রাবিড়রা আসার আগেই এই অঞ্চলে ছিলো তাদের বংশধররা আজো বাংলা অঞ্চলে আছে তাদের বলা হয়- সাঁওতাল এরপর এখানকার আদিম আদিবাসী হয়- কোল, মুন্ডা, ওরাও, সদরি মাহালিরা আদিবাসের ভিত্তিতে অধিকার নিশ্চিত হতে হলে আধুনিক বাংলাদেশ ভারত রাষ্ট্রে সবার আগে অধিকার নিশ্চিত হওয়া উচিত সাঁওতালদের তারাই এই অঞ্চলের প্রথম ভূমিপুত্র

আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা, মূল সমতল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন বাঙালীরা জাতিগতভাবে সমতলের জাতি তারা সাধারণত বসবাসের জন্য পাহাড় এড়িয়ে চলতো পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোর ভূমিরূপ জলবায়ুর সাথে বর্তমান ভারত রাষ্ট্রের মিজোরাম রাজ্য মায়ানমার রাষ্ট্রের চিন রাখাইন রাজ্যের কোনো পার্থক্য নেই একসময় এলাকাগুলো এক বা একাধিক রাজা দ্বারা শাসিত হয়েছে এখানকার বিভিন্ন মঙ্গোলয়েড জাতিসমূহ এখানকার আদিবাসী প্রথমে তারা যাযাবরভাবে এই পাহাড় থেকে সেই পাহাড় ঘুরে ঘুরে আবাদ করতো এক পাহাড়ে খাবারের যোগান শেষ হলে আরেক পাহাড়ে যেতো যাযাবর হলেও তারাই পাহাড়ে প্রথম বসতি স্থাপনকারী, তারাই পাহাড়ের ভূমিপুত্র বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের ভূমিপুত্ররা হলো- চাকমা, মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গা, বম, লুসাই, পাংখোয়া, চাক, খুমি, খিয়াং এবং ত্রিপুরা

বাঙালীরা প্রায় ১৭০০ যিশুসনের পর অল্পমাত্রায় পাহাড়ে বসতি স্থাপন শুরু করলেও পুরোপুরি শুরু করে পাকিস্থান রাষ্ট্রের আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) ১৯৭১ যিশুসনে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হলেও এই প্রক্রিয়া চালু থাকে বিশেষত পাহাড়ে বসতি স্থাপন সবচেয়ে বেশি হয়েছে পাকিস্থান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সামরিক সরকারগুলোর আমলে পাকিস্থানের সময়ে আইয়ুব খান আর ইয়াহিয়া খান এবং বাংলাদেশ আমলে জিয়াউর রহমান আর হুমো এরশাদের সময়ে

আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ব্যার্থতা, সে তার ভূমিপুত্রদের অধিকার রক্ষা করতে পারছে না বরং ভূমিপুত্ররাই হয়ে পরছে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষে তখনই উন্নতি করা সম্ভব যখন সমতল-পাহাড় নির্বিশেষে সুশাসন, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে তখনি সমস্ত বাংলাদেশী নিজেকে বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করবে