যা
আমরা জানি বা জানতে চাই, বুঝি বা বুঝতে চাই; জানা এবং বোঝার আগে সেই বিষয়ের উপর একটা প্রাথমিক ধারণা আমরা নিই।
এই প্রাথমিক ধারণাটিই সংজ্ঞায়ন। তাই যে কোনো জানা বা বোঝার বিষয় স্বাভাবিকভাবেই
শুরু হয় সংজ্ঞায়ন থেকে এবং এর পরেই আমরা ধারণাটির গভীরে যেতে পারি। যদিও
সংজ্ঞায়নের কিছু স্বাভাবিক ত্রুটি বর্তমান। যেমন- একটি বস্তু হিসেবে মোম।
মোম
বিষয়ে আমাদের প্রথম প্রশ্ন হবে- মোম কি? মোমকে আমরা সংজ্ঞায়িত করবো এভাবে যে, মোম
কাঁচামোম থেকে তৈরী একটি বস্তু যার প্রধান কাজ আলোক প্রদান। এই ত্রুটিপূর্ন সংজ্ঞা
আমাদের মনে মোমের কোনো প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে ব্যর্থ হবে যদিনা পূর্বেই আমাদের
মধ্যে মোমের কোনো মানসিক কাঠামো তৈরী না হয়ে থাকে।
তারপর
মোমের মানসিক কাঠামো নির্মানের জন্য আমাদের প্রশ্ন- মোমের রং? উত্তর হবে, সাধারণত
সাদা; তবে লাল, নীল বা অন্যান্য বিভিন্ন রঙে রঙিনও হতে পারে। এর আকৃতি?-
লম্বাকৃতি; তবে লম্বাকৃতিই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, যেকোনো আকৃতিরই হতে পারে। এর
আকার?- যেহেতু বস্তু তাই নির্দিষ্ট আকার আছে। তবে সেই নির্দিষ্ট আকারের বাহিরে আরো
বহু নির্দিষ্ট আকারের মোম হওয়া খুবসম্ভব। এর কাজ?- আলোক প্রদান। এছাড়া শোভাবর্ধন ও
আনুষ্ঠানিকতা পালনও হতে পারে। এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে থাকলে আমরা দেখতে
পাই, মোমের ব্যাপারে আমরা নির্দিষ্ট কোনো ধারণাতেই মূলত পৌছাই না।
তারপরো
যেহেতু আমাদের অবশ্যই জানতে হবে মোম কি, সেহেতু আমরা মোমের ব্যাপারে সাদামাটা
সিদ্ধান্তে পৌছাই। এবং সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই একক ব্যক্তিতে অবস্থিত। মোম বললে আমার
মানসিক কাঠামোতে যে প্রতিচ্ছবি আমি দেখি, অন্যে তা না ও দেখতে পারে। মোম বলতে আমি
কেমন মোমকে জানবো, এটা নির্ভর করে আমার মানসিক কাঠামোতে মোমের নির্মানের উপর।
অর্থাৎ
জানা বা বোঝার ব্যাপারটি পুরোপুরি ব্যক্তির মানসিক কাঠামোতে নির্দিষ্ট নির্মানের
উপর নির্ভরশীল এবং সেই নির্মান অন্য কোনো নির্মান হতে প্রভাবিত হয়ে থাকলেও তারা
আলাদা। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিতে নির্মানের পরিকাঠামো স্বতন্ত্র। তাই বলা
বাহুল্য, সংজ্ঞায়ন কখনোই সামাজিক নয়। নির্দিষ্ট বস্তুকে আমরা সেভাবেই চিনে থাকি, যেভাবে
নির্দিষ্ট ধারণাকারী ব্যক্তি আমাদের চিনিয়ে থাকেন। আর তাই গভীর ধারণায় পৌঁছানোর
পূর্বে সংজ্ঞায়নের দিকে মনোযোগ দেয়া ব্যক্তির একান্ত আবশ্যক।
২৫.০৭.২০১২
গেরুয়া, সাভার, ঢাকা
No comments:
Post a Comment