15 May 2019

মালয়েশিয়ার ডায়েরি : পর্ব- ১


আমি আর জুসি যখন মালয়েশিয়া পৌছাই তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমরা থাকবো তরিকুল মামার বাসায়। উনি প্রায় ২০ বছর সেখানে থাকেন। উনি বিয়ে করেছেন এক ইন্দোনেশিয়ানকে। সেখানে তাদের ৩ বাচ্চাও হয়েছে। ১ ছেলে, ২ মেয়ে। প্লেনে উঠার আগে তরিকুল মামার সাথে কয়েকবার কথা হয়েছিলো।
তিনি বেশ কিছু ডিরেকশন তখন দিয়েছিলেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ছিলো মালয় ভাষা সম্পর্কে। মালয়রা লেখায় রোমান লিপি ব্যবহার করে, তাই ভাষা পড়তে কোনো অসুবিধা নাই।
দুইটা মালয় শব্দ প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিলেন মামা। এক Keluar মানে বাহির বা এক্সিট, আরেকটা Tandas বা টয়লেট। বলেছিলেন, এই দুইটা শব্দ বিমানে উঠার পর থেকে কাজে লাগবে। তখন শব্দদুইটা মুখস্ত করতে পারি নাই।
মামা বলেছিলেন, সমস্যা নাই, দুইএকবার কাজে লাগলেই মুখস্ত হয়ে যাবে। এরপর অনেক মালয় শব্দ শিখেছি, তান্দাস এর মত জরুরি কোনোটাই ছিলোনা।
আমাদের কাছে যেমন মালয় ভাষা অবাক করা ছিলো, কাজিনদের কাছে আবার বাংলা ভাষা তেমন ছিলো। আমরা মামাকে ডাকতাম মামা, মামার বউ মামি। ওরা মামা বা মামি ডাকতো ওদের মাকে।
ইজুল (তরিকুল মামার ছেলে) ২য় দিনেই ওদের বাবাকে প্রশ্ন করেছিলো- আইয়া (বাবা), ভাইয়া তোমাকে মা ডাকে কেন? মামার বোঝাতে বেশ কিছুক্ষণ লেগেছিলো যে বাহাসা (ভাষা) বাংলায় পাচি (Pakcik-চাচা/মামা/খালু/ফুফা) কে মামা বা কাকা ডাকে।
ইজুল জিজ্ঞাসা করে কিন্তু কাকা মানে তো বোন। মামা আবার বোঝায় আরে মালয় ভাষায় কাকা মানে বোন আর বাংলায় পাচি।
ইজুলকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিলো ভাইয়া-আপু বলে। ও মনে করেছিলো আমাদের নামই ভাইয়া আর আপু। জুসিকে ও ডাকতো আপু বলে। পরে ও যখন জানতে পারে আমাদের আলাদা নাম আছে তখন খুব অবাক হয়।
ও জানতে পারে জুসির নাম জুসি, আর ও কাকা মানে বড়বোন। আর আমি আসলে আবাং মানে বড় ভাই। কিন্তু পুরা সময়ই ও আমাদের ভাইয়া আর আপু বলেই ডাকে। ওর ২ বোনই ওর ছোটো ছিলো। একজনের নাম মেমে আরেকজন ফেলা। ওরা ওর আডে মানে ছোটো।
মালয় ভাষায় ছোটো বোঝাতে আডে বলে, তা সে ভাই হোক বা বোন।
মামার বাসা যে জায়গায় ছিলো তার নাম কাম্পুং পাসির, কাম্পুং মানে গ্রাম, পাসির মানে বালু। অর্থাৎ বালুর গ্রাম। গ্রামের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ট্রেন লাইন। ট্রেনলাইনের এপাশে পাসির পুতেহ, মানে সাদা বালু। ওপাশে পাসির মেরাহ, মানে লাল বালু।
এভাবে আমাদের মালয় ভাষা শিক্ষা শুরু হয়। অন্তত কাজিনদের কথা বোঝার জন্য হলেও মালয় জানা দরকার ছিলো। আর রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য। এছাড়া মালয় তেমন দরকার পরে না।
মালয়েশিয়া বহুভাষাভাষীর দেশ। এখানে মালয়দের পরেই চাইনিজ আর তামিল। এরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ইংরেজিতে।
ইংরেজিও মালয়রা নিজেদের মতো উচ্চারন করতো এবং লিখতো। যেমন- স্তেসান-Stesan (Station), সেকোলাহ-Sekolah (School), কম্পুতার-Komputer (Computer), সাইন্স-Sains (Science) ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment