বাংলাদেশ আজ অতিক্রম করছে এক বিপর্যস্ত সময়। বাংলাদেশের অসৎ রাজনীতিবিদরা এখন সীমাহীন লোভে জর্জরিত, একমাত্র টাকা কামানোই যাদের ধ্যানজ্ঞানে পরিনত হয়েছে। তারা বুঝতে পারছেনা তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আসলে বিষ রেখে যাচ্ছে। তারা মনে করছে প্রচুর সম্পত্তি রেখে গেলে আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে ভালো থাকবে। তারা এটা বুঝতে পারছেনা, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের ছেলেমেয়েদের জবাবদিহি করা লাগতে পারে।
সরকারি অফিসগুলো পরিনত হয়েছে ডাস্টবিনে। সেখানে যারা কাজ করছে তাদের মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলাই যায়, উপরন্তু তারা দুর্নীতিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। যে যার মতো দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে। মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত, একটা স্ট্রাকচারের সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এবং তারা এইখানে এগুলাই চলে বলে দুর্নীতিকে নিয়মও বানিয়ে ফেলেছে। বরং যারা দুর্নীতি না করে বেতনের পয়সায় চলতে চাইছে তাদের ব্যাকডেটেড বলে গালাগাল করছে। এভাবে সট্রাকচার চলতে পারেনা। যেকোনো সময় এই স্ট্রাকচার তার মন্ত্রী থেকে পিয়ন সবাইকে নিয়ে কলাপ্স করবে।
কোন জায়গায় দুর্নীতি নাই? রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, ফরিদপুর মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, সবগুলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সবগুলো সরকারী দপ্তর-অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন থেকে পৌরসভা, সব জায়গায়। যে দেশের রাজনীতিবিদরা দুর্জন আর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্থ, সেখানে জিডিপির গল্প কয়দিন টিকে, দেখা যাক।
যে দেশে বিচারব্যবস্থা বলতে কিচ্ছু বাকি নাই, যে দেশে একের পর এক খুন-ধর্ষন হতে থাকে, যে দেশে একটা খুনিকে ধরতে হলেও প্রধানমন্ত্রীকে কনসার্ন হওয়া লাগে, সে দেশ চ্যাম্পিয়ন অব দা আর্থ হলেই কি, গ্যালাক্সি হলেই কি? একটা বিচার দেখান যেটা বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে করেছে। একটা খুন বা ধর্ষণ বা যে কোনো ফৌজদারী অপরাধের বিচার। আছে? তনু, নুসরাত, বিশ্বজিৎ, একটা বিচার দেখান... স্বাধীন বিচার বিভাগের চেয়ে একটা সার্কাসের দল বেশি স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
পুলিশ-র্যাব পরিনত হয়েছে রক্ষীবাহিনীতে। আগে রক্ষীবাহিনী সরকারের স্বার্থ দেখে রাখতো, এখন এরা রাখে। এরা ২ টা ইয়াবা সাথে পেলে মাদকের মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা খায়। আর ২ কোটি ইয়াবা পেলে তাকে প্রটোকল দেয়, স্যার বলে। এরা আল-জাজিরাকে সাক্ষাতকার দিলে আইসিটি আইনে জেলে নিয়ে অত্যাচার করে। আর যুবলীগ-ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভাই বলে, সালাম দেয়, আগেপিছে দৌড়ায়।
একটা খুনের বিচার না হলে আরেকটা খুন হয়। বিশ্বজিৎ এর খুনিরা সাজা পেলে কয়টা খুন কম হতো আল্লাহই জানে। যেহেতু বিশ্বজিৎ এর খুনিরা সাজা পায়নি, তাই আরো কতো খুনি গজিয়ে গিয়েছে... তনুর ধর্ষক সাজা পেলে আজ কতোগুলো নারী ধর্ষনের হাত থেকে বেচে যেতো। কয়েকদিন পর যখন নুসরাতের খুনিরা ঘুরে বেড়াবে, তখন বেশ কয়েকজন ধর্ষক-খুনি খুন করতে উৎসাহ পাবে। এই উৎসাহের জন্মদাতা কে- এই রাষ্ট্র, এই সরকার আর এই বিচারব্যাবস্থা।
চুপ থাকা কোনো সমাধান নয়। চুপ থাকলে অন্যায় আমাদের ঘাড়ে চেপে বসবে। অন্যায় দেখে আপনি মুখ লুকাতে পারবেন, কিন্তু আরো খারাপ সময় আসছে। আপনার ছেলে লাশ হয়ে বাড়িতে আসবে, আপনার মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে কাদতে কাদতে দড়িতে ঝুলে পরবে, আপনার বৌয়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দেবে ক্ষমতাসীনদের বাচ্চা শাখা। সময় থাকতে থাকতে প্রতিবাদ করতে শিখুন। নিজের দাবীর কথা নিজে বলতে শিখুন। নিজের স্বচ্ছ আওয়াজ পৌছে দিন দুর্নীতিবাজদের কানের গোড়ায়।
মনে রাখেন তাদের সংখ্যা এবং শক্তি আপনাদের চেয়ে কম। কিন্তু তারা সংঘবদ্ধ। সংঘবদ্ধ চক্রের মোকাবিলা করতে হবে সংঘবদ্ধ হয়েই। আপনার পাশের ভাইটির পাশে কাধে কাধ মিলিয়ে দাড়ান, আপনার বোনটিকে সাহস দিন আপনি আছেন। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। প্রয়োজন শুধু ভালো হাতগুলোর একতা।
এই কথা গুলো সবাই জানে, তবু কেন বলতেছি? নিজেরে হালকা করার জন্য। মাঝেমাঝে নিজেকে খুব ভারী মনে হয়। চিৎকার গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকে। মনে হয় সব কিছু লাথি দিয়ে ভেঙে ধ্বংস করে দেই।
No comments:
Post a Comment