2 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২০

বাংলাদেশে কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নাই, যা আছে সব এনজিও হয়ে গেছে; এরকম একটা লাইন ছিলো। কেনো বললাম সব এনজিও হয়ে গেছে? 

কমিউনিস্ট পার্টি বলতে এখানে কেবল কমিউনিস্ট পার্টি বোঝানো হয় নি। যাবতীয় সোশালিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, লেবার পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি সহ বাম ঘরানার সকল পার্টিকে বোঝানো হয়েছে। যারা দুই লাইন মার্ক্স পড়েছেন, কিন্তু হয় বোঝেন নাই অথবা বাস্তবে প্রয়োগ করতে সাহস পান নাই। এখানে মার্ক্সবাদী, লেনিনবাদী, মাওবাদী সকল টাইপের সমাজতান্ত্রিককে এক পাল্লায় মাপা হয়েছে। 

উক্ত লাইনের পর, অনেকে যারা এখনো সমাজতান্ত্রিক লাইনে ভরসা রাখেন তারা বক্তব্যটিকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন একটি কমিউনিস্ট পার্টির কাজ কি? একজন মার্ক্সবাদীর করনীয় কি? 

কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানতম কাজ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, হকের লড়াই লড়া, ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য শ্রেণীসংগ্রাম করা। অন্যায়-অবিচার-অনাচার দেখলে একজন কমিউনিস্টের মাথা ঠিক থাকার কথা না। সামান্য মার্ক্স পড়া যে কেউ জানেন যে মার্ক্স এবং তার লাইনের কেউ অন্যায়কে কোনোদিন প্রশ্রয় দেয়নি। যে অন্যায় করবে বা অন্যায় সহ্য করবে সে মার্ক্সএর লাইনেরই না। 

বাংলাদেশে এখন যে পরিমান অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, যে পরিমান ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে, সাধারণ মানুষই অতিষ্ট। একটু সুযোগ পেলেই তারা সরকারের সমালোচনা করছে। অথচ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর এই বিষয়ে কোনোরকম মাথাব্যথা নাই। তারা বুড়াদের দিয়ে পলিটব্যুরো চালায়, ব্যবসা করে, মেননতো কেসিনোই চালায়। 

এনজিও বললাম কি কারনে? এনজিওরা সামাজিক কাজ করে, খুব সীমিত পরিসরে। যে পরিমান কাজ করলে নিজের মনকে বুঝ দেওয়া যায় যে, না সামাজিক কাজ করতেছি, সমাজের ভালো করার জন্য মেধা-সময় ব্যয় করছি, সমাজের মঙ্গলের জন্য পরিশ্রম করছি। কিন্তু এনজিওরা জানে ওই স্কেলে কাজ করলে আগামী ১০০০ বছরেও দেশ আগাবে না। দেশ আগানোর জন্য এনজিওরা কাজ করেনা, এরা কাজ করে মানসিক শান্তির জন্য। 

কমিউনিস্ট পার্টিগুলোও এইরকম মানসিক শান্তির জন্য দুইএকটা বিবৃতি দেয়, ব্যাস। দেশে এতো ইস্যু, কাজ করার এতো জায়গা, এরা বিবৃতি দিয়েই শেষ। একটা কমিউনিস্ট পার্টির ন্যাচারই হবে বিপ্লবী। তারা ছাত্রদের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, কৃষকের অধিকার, নারীদের অধিকার, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে। সরকারে যেই থাকুক তাকে চাপে রাখবে যতোদিন নিজেরা সরকার গঠন করতে না পারে ততোদিন। 

আফসোস, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লোকেদের শুনতে হয়, ছবি তোলাতো শেষ, এখন বাড়িত যান। ফুটেজ খাওয়ার জন্য এখন ইন্সটাগ্রাম আছে, কমিউনিস্ট পার্টি করা লাগে না। মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি আর ইনুর জাসদ তো মানইজ্জত আরো রাখে নাই। 

যাই হোক, কমিউনিস্ট পার্টি হবে গরিব মানুষের যাওয়ার মতো একটা জায়গা। যেখানে গরিবের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলবে না, সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি গরিবের অধিকার রক্ষায় রাস্তায় থাকবে। বাংলাদেশে আছে এমন একটা কমিউনিস্ট পার্টি দেখান। কমিউনিস্ট বলতে আমরা মার্ক্স-এঙ্গেলস বুঝি, লেনিন-স্তালিন বুঝি, মাও-ক্যাস্ত্রো-চে বুঝি, সুভাষ-ভাসানী-মুজাফফর বুঝি। মেনন-ইনু-জাসদ-বাসদ-সিপিবি-ইত্যাদি এদের কমিউনিস্ট বলে, কমিউনিস্টদের এতো বছরের লিগাসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। 

No comments:

Post a Comment