17 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২৫

আমাদের সমাজের বুঝতে সমস্যা কোনটা সুন্নত... 

একটা কাজে পটুয়াখালী গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ারও উপায় নাই, এমন প্রত্যন্ত। আমরা অবস্থান করছিলাম একটা বাজারে। বাজারে কিছু টয়লেট আছে যেগুলোর অবস্থা খুব খারাপের চেয়েও একটু বেশি খারাপ। আমরা দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, আর কোথাও টয়লেট আছে কিনা? তারা জানালো, বাজারের পাশেই একটা মাদ্রাসা আছে, সেখানকার টয়লেট মোটামুটি ভালো, সেখানে যান। 

মাদ্রাসার টয়লেটে গেলাম। প্রক্ষালন কক্ষের দরজা আটকানোর পর দেখলাম সেখানে মাটি দিয়ে বানানো কিছু ঢিলা-কুলুখ স্তুপ করে রাখা। বুঝতে পারলাম কুলুখগুলোকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে রাখা হয়েছে। আফসোসের বিষয় তখন ঘোর বর্ষাকাল। চারপাশ থেকে পানি পরে কুলুখগুলো কাদা কাদা হয়ে গেছে। তার উপর শুকিয়ে যাওয়া মল আবার ভিজে উঠে, কেমন যেনো এক পরাবাস্তব চিত্রকর্মের রূপধারণ করেছে। 

আমাদের যে জায়গাটা বোঝার অসুবিধা, সেটা হলো মহানবীর দেশে পানি অপ্রতুল ছিলো। সেখানে তাই পরিচ্ছন্নতার কাজে পানি ব্যবহার করা ছিলো বিলাসিতা। আর সেকারণেই সেখানে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আমাদের দেশ পানির দেশ, বছরে ৩ মাস আমরা পানির নিচেই থাকি। এমনকি আগে পুরো ১ খাল পানি দিয়েও আমরা পরিচ্ছন্নতার কাজ সারতাম। আমাদের এখানে মাটির দলা, পাথরের টুকরার কি তাৎপর্য? 

এখানে 'প্রাকৃতিক কাজের পর পরিচ্ছন্নতা' হবে রাসুলের সুন্নত, ঢিলা-কুলুখ না। 

আরেকটা বিষয় নিয়ে আমার ছোটোভায়ের সাথে কথা বলছিলাম। ওকে বললাম- মেসওয়াক ব্যবহার করা বা না করা রাসুলের সুন্নত না, রাসুলের সুন্নত দাঁত পরিষ্কার রাখা। 

আমাদের এখানেও আগে নিমের ডাল, আমের ডাল, লবন ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা হতো। দাঁত পরিষ্কার করা হতো যেনো দাঁত দীর্ঘদিন টিকে, দুর্গন্ধে যেনো আরেকজনের কষ্ট না হয়। যুগ বদলাচ্ছে, ডাল-লবনের জায়গা নিচ্ছে বিভিন্ন রকম পেস্ট-ব্রাশ, ওরাল কেয়ার। আমাদের বোঝার গাফেলতির কারনে আমরা পরে আছি মেসওয়াকে। 

এখানে 'দাঁত পরিষ্কার রাখা' হবে রাসুলের সুন্নত, মেসওয়াক বা ডাল ব্যবহার না। 

এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যা কেবল আমাদের ভুল বোঝাবুঝির শিকার। 

No comments:

Post a Comment