13 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২৩

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। তো একবার সায়েদুর রহমান স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। স্যার আমাদের রাষ্ট্র বিষয়ক বিভিন্ন বাদ-বিবাদ পড়াচ্ছিলেন ক্লাসে; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি। সম্ভবত তখন ২০১১ সাল, আমরা স্যারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, স্যার বাংলাদেশ কোন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চলে? এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় কিনা? স্যার সমস্ত দল-মতের উর্ধ্বে উঠে, সেদিন ক্লাসরুমে জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- 'বাংলাদেশে যেটা চলে, সেটাকে পরিবারতন্ত্র বলা যায় বা গোষ্ঠীতন্ত্র বলা যায় বা কতিপয়তন্ত্র বলা যায়। ঠিক গণতন্ত্র বলা যায় কি না...' 

যদিও বাংলাদেশের সরকারি নামের সাথে পিপলস রিপাবলিক আছে; সংবিধান, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ভারী ভারী টার্মে বোঝাই; নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্র আছে ভান করার জন্য, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে; কিন্তু আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন? 

বাংলাদেশে আসলে কখনো গণতন্ত্র ছিলো কিনা এটা নিয়ে আরো ৫০-১০০ বছর পর গবেষকেরা তাত্ত্বিক আলোচনা করবেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়টা নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করেছে? মাঝখানে সামরিক শাসনে থেকেছে কয়বছর? কয়টা পার্টি সংসদে বসে মানুষের কথা বলেছে? এগুলো আমরা জানি। 

এখন কি চলছে সেটা নিয়ে কথা বলি।

এখন বাংলাদেশে চলছে একনায়কতান্ত্রিক কতিপয়তন্ত্র। কতিপয়তন্ত্র কেন? কারন এখানে বেশ কয়েকজন লোকের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। বেশ কয়েকটা পরিবারের হাতে ক্ষমতা আর অর্থ। এখানে কেবল আওয়ামী লীগের কথা বলা হচ্ছে না, এখানে বিএনপির কথাও বলা হচ্ছে। আসলে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি একই টাইপের পার্টি, একই মুদ্রার ওপিঠ এবং এপিঠ। আওয়ামী লীগে মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হয়, এম্পির ছেলে এম্পি, বিএনপিতেও তাই। রাজনীতি আর দেশ হয়ে গেছে পারিবারিক সম্পত্তি। সংসদ হয়ে গেছে মামা বাড়ি, আইনকানুন হয়ে গেছে মামা বাড়ির আবদার, আইনজীবী আর বিচারকরা হয়ে গেছে তাদের খালু। 

বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোক, ১৬ কোটি মত। কয়জন বুঝে ভোট দেন? কার কই বাড়ি, আগে কে এম্পি ছিলো, ক্ষমতায় কে যেতে পারে, কার বেশি টাকা আছে, কে ভোটের আগে চা খাওয়ালো, এগুলো দেখে ভোট দেন তারা। নিজের ভালো বোঝেন কয়জন ভোটার? কে আসলে কাজ করবে, ইশতেহার কয়জনের মনে থাকবে, কে রাজনীতি ব্যবহার করে ব্যবসা  করবেনা, সন্ত্রাস করবেনা, এগুলো তারা বুঝলেও, ভোটের সময় খাটান না। এতো কথার দরকার কি, এখন তো ভোট ও দেয়া লাগে না। জায়গায় দাড়াবেন, ভোট হয়ে যাবে... 

যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ৫ বছরে ১ বার ১ টা ছাপ্পা দিয়েই মনে করে গণতন্ত্র এসে গেলো। ভোটাররা মনে করে তাদের কথা রাজনীতিবিদরা মনে রাখবে, নিজের গরজে এলাকার কাজ করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সব দায়িত্বে তারা এলাকার এম্পিকে দেখতে চায়। মানুষ চায় গণপ্রতিনিধিরা তাদের কথা বলবে। মানুষের মুক্তি আসবে, দেশে উন্নয়নের চাকা লাইনেই থাকবে। চাকা কি লাইনে থাকে? লাইন হয়ে যায় আঁকাবাকা, ভালো না হাতের লেখা... 

তারা একবার আওয়ামী লীগকে সুযোগ দেয়, আরেকবার বিএনপিকে সুযোগ দেয়। দুইটাই খারাপ অপশন। বিষয়টা এমন যে আমি আপনাকে চড় মারবো নাকি লাত্থি মারবো, দুইটাই অপশন আর কোনো অপশন নাই, এবং এরমধ্যে একটা আপনাকে নেয়াই লাগবে। মজা না? এই বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উদাহরণ দিয়েছিলেন, ফেনীর সাংবাদিক টিপু। তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে ঠিক করে, এই ৫ বছর কে তার পু*কি মারবে!! এই বক্তব্যের কারনে সাংবাদিক টিপুকে মেরে তার পা ভেঙে দেয়া হয়েছিলো। কে মেরেছিলো? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি, নাকি আওয়ামী লীগ? কি আসে যায়? টিপু তার পা হারিয়েছিলেন, আমরা চুপ হয়েছিলাম। 

কথা বলতে গিয়ে আবরার ফাহাদ খুন হলেন। সারা দেশ সমব্যথী হলো। নতুন প্রসঙ্গ মানুষের সামনে আসবে, নতুন ইস্যু মানুষের জীবনে আসতেই থাকবে। কিন্তু মৌলিক আলাপ ভুলে গেলে চলবে না। আবরার কি কারণে খুন হয়েছেন? ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন... আবরার খুন হয়েছেন দেশের স্বার্থে দুইটা কথা বলতে গিয়ে। 

কথাগুলো যখন আপনি একলা বলবেন তখন আপনার খুন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু যখন সকলে বলবে তখন? তখন সরকারে যেই থাকুক না কেন, দাবী মানতে বাধ্য হবে, মানুষের কথা ভাবতে বাধ্য হবে, জনতার পালস বুঝতে বাধ্য হবেই হবে। সরকার চাইবেই কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, এটাই সরকারের রাজনীতি, এটাই রাজনীতিবিদদের রুটিরুজি। আপনি দুই একজনকে সাথে নিয়ে মোদ্দাকথায় মাটি কামড় দিয়ে পরে থাকলে এদের পেটে লাত্থি পরে, রুটিরুজি নষ্ট হয়। বিশ্বাস করেন, এরা সংখ্যায় খুব কম; মানুষের সম্মিলিত শক্তির কাছে এরা পালকের মতোই হালকা। 

এখন আমরা একটু প্রশ্নোত্তর খেলবো। বাইনারী পদ্ধতিতে তার উত্তর দিবো। 

১. তিস্তা পানি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কি ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিবো? 
উত্তরঃ না। 

২. আমরা কি আমাদের বন্দর এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় ভারতকে নজরদারি চালাতে দিবো? 
উত্তরঃ না। 

৩. আমরা কি দেশের চাহিদা না মিটিয়ে ভারত বা অন্য যে কোনো দেশে গ্যাস রপ্তানি করতে দিবো?
উত্তরঃ না। 

৪. আমরা কি যে কোনো সরকারের যে কোনো দেশবিরোধী চুক্তি মেনে নিবো? 
উত্তরঃ না। 

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।
জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী... 

এই প্রসঙ্গে দ্বিমত থাকলে আলাপ চলতে পারে, আর একমত থাকলে দৃঢ়কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন- 

দল বড় না দেশ বড়, 
দেশ বড়, দেশ বড়।

দেশ কার? দেশ কার? 
জনতার... জনতার... 

জয় জনতা স্লোগান তুলুন... 
বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন... 

No comments:

Post a Comment