24 March 2020

দৈনন্দিন আলাপ ২৮

আমাদের এক ছোটভাই কোভিড-১৯ (করোনা) ভাইরাসের সাস্পেক্ট। সে বিদেশফেরত কারো সংস্পর্ষে আসে নাই। কেবল করোনা যখন ছড়াচ্ছিলো তখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কারো সাথে মিটিং করে এসেছিলো। মিটিংএর পর থেকেই করোনার লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে। তো সে বেশ কয়েকদিন বাসায় কোয়ারেন্টাইন্ড ছিলো। কুর্মিটোলায় করোনার জন্য আলাদা করে রাখা হাসপাতালে ভর্তি হয় অবশেষে গতকাল। এই পাচ-ছয়দিনের মধ্যে এখনো ওর টেস্ট করা হয় নি। ও কি পজিটিভ নাকি নেগেটিভ জানে না। ও কি হাসপাতালেই ভর্তি থাকবে না কি বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকবে তাও জানে না।

রোগী প্যানিকে আছে তার করোনা আছে কিনা? রোগীর আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব প্যানিকে আছে তার করোনা আছে কিনা? করোনা করোনা করে প্যানিক অ্যাটাকে কতো জন আছে তার তো কোনো হিসাবই নেই। কারণ সরকারের প্রস্তুতি তারা জানে। সরকার কতোদূর কি করতে পারে সেটাও তারা জানে। কেউ মারা গেলে ক্ষতি যে কেবল ব্যক্তি আর তার পরিবারের সেটাও তারা জানা। তার উপর সরকার সব খবরাখবর জনতার সামনে সঠিক সময়ে আনছেনা। যেখানে দেখি সরকার শুধু পিছলে পিছলে যায়।

ডাক্তারের কি দোষ দিবো? মাস্ক নাই, প্রোটেকশন নাই; বাংলাদেশের ডাক্তার। এরা ভয়েই কাছে আসে না। দূর থেকে রোগীর আলামত জিজ্ঞাসা করে। তো টেস্ট কেন করানো হয় নাই জিজ্ঞাসা করলে বলা হয়- টেস্টের কিট এসে পৌছাতে দেরী আছে। এখনি সব কিট ইউজ করতে চাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। কোনো কিট যেন অযথা নষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের কর্তৃপক্ষের কড়া নজর।

এরই মধ্যে দুইজন নবজাতক শ্বাসকষ্ট আর নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে কুর্মিটোলা আসে। কিন্তু কোনো টেস্ট নাই, কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা নাই, কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই জন মারা যায়। এখন যেহেতু টেস্ট করা হয়নি তাই করোনা ছিলো বলা যাচ্ছে না। বলতে হবে নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্ট। কুর্মিটোলার ভেতরেই এই অবস্থা; সারা দেশ জুড়ে এরকম কতোটা হবে? ভাবতে থাকেন...

সরকার যথাসম্ভব চেষ্টা করবে মৃতের পরিসংখ্যান হাতের নাগালে রাখতে। এটাতে দুইটা ফজিলত। এক, করোনায় মৃত্যু কম হচ্ছে বলে আমরা একপ্রকার আত্মতুষ্টিতে ভুগবো, এতো কম মৃত্যু, আমরা মৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের সরকার আগেই জানতো করোনা এখানে এসে হালে পানি পাবে না ইত্যাদি। বয়স্ক আর বাচ্চারা; যাদের ইম্যুন সিস্টেম দুর্বল বা অন্য রোগ আছে তারা মারা যাবে শ্বাসকষ্টে বা নিউমোনিয়ায় বা হার্ট অ্যাটাকে। দ্বিতীয় ফজিলত বাংলাদেশ করোনা সফলভাবে মোকাবিলা করেছে বলে বাইরে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল থাকবে। পরনে কাপড় নাই, ভাবমুর্তি টনটনা।

যেখানে সারা দেশ লকডাউন করে দেয়ার কথা সেখানে সরকার অবিবেচকের মতো দিয়েছে ছুটি। ছুটি শব্দটাই তো কেমন আরাম আরাম! লোকজন তো গাট্টিবোচকা গোল করবে, বাচ্চাকাচ্চা সাথে নিয়ে গ্রামে যাবে। যাদের ভাইরাস আছে দিয়ে আসবে, যাদের নাই নিয়ে আসবে। বাংলাদেশের সামনের বিপর্যয়ের দায় কেবলমাত্র সরকারের। এর জন্য বর্তমান সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।

লকডাউন করলেও আরেক বিপদ। বাংলাদেশের লক্ষ-লক্ষ লোক দিনমজুর, যারা প্রত্যেকদিন কামাই করে, প্রত্যেকদিন খরচ করে। দুই দিন বাসায় থাকলে তিন দিন না খেয়ে থাকা লাগবে। সাধারণ বাংলাদেশীদের এই গরিবির দায় কার? আমার আগে ধারণা ছিলো একই লোক দুই দফায় মানে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই সরকার ১০০ বছর থাকলেও দেশ এরকমই থাকবে।

সাধারণ জনতা, দীর্ঘ সংগ্রামের প্রস্তুতি নেন। বিপদ এতো সহজে আমাদের পিছু ছাড়তেছে না। যতো বেশি প্রস্তুতি থাকবে ততো বেশি আমাদের জন্য টিকে থাকা সহজ হবে। কেবল খাদ্য মজুত এই সংকটের সমাধান নয়। এই সংকটের জন্য আমাদের যুথবদ্ধ হতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবার কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেগুলো আরো বাড়ানো লাগবে। নিজে সচেতন হতে হবে, আরেকজনকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করতে হবে।

তরুন-যুবক যারা আছে তারা স্বেচ্ছাসেবা আর সচেতনতার এই কার্যক্রমে অংশগ্রহনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করেন। শিক্ষার কি বেহাল দশা তো দেখাই যাচ্ছে! কেবল পত্রিকা পড়তে পারা আর নাম স্বাক্ষর করতে পারাই শিক্ষা নয়। অশিক্ষা-কুশিক্ষা এমনভাবে ছেয়ে আছে যে গুজব সামাল দেয়া যাচ্ছে না, পানিপরা খাওয়া সামাল দেয়া যাচ্ছে না, ওয়াজপার্টির বর্বর-ব্যবসায়ীরাই এখানে শিক্ষক।

প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। দেশের প্রয়োজনে আমরা এখন ঘরে আছি। দেশের যখন প্রয়োজন হবে আমরা রাস্তায় নামবো, গ্রামে যাবো, শহরে আস্তানা গাড়বো। ছাড় দেয়ার সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখন সময় জবাব চাওয়ার। এখন সময় নতুন বাংলাদেশ গড়ার।

No comments:

Post a Comment