রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ
দুইটি সেক্টর পুরোপুরি ভেঙে পরেছে এটা টের পেতে আমাদের আর কয়েকদিন অপেক্ষা করা
লাগবে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, সামনে আরো প্রকটভাবে এই
সংকট টের পাওয়া যাবে।
প্রথমে আসি স্বাস্থ্যসেবা সেক্টর। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। যে কয়েকটা বিষয়কে
সামনে রেখে আমরা স্বাধীন দেশ করার জন্য যুদ্ধ করেছি তার একটা, এই চিকিৎসা নিশ্চিত
করবে সরকার। কিন্তু সরকার এই পথে হাঁটে নি। এর ফল এখন সামনে পাবো আমরা।
আমাদের কতোজনের বিপরীতে একজন ডাক্তার? কতোজনের বিপরীতে ১ জন হওয়া উচিত? স্বাস্থ্য
মন্ত্রনালয় আর তার বিভিন্ন অধিদপ্তর সারা বছর কি কাজ করে আমরা জানিনা। এখন একটা
ইমার্জেন্সি চলে। কিছুদিনের মধ্যেই করোনা মহামারী রূপে প্রকাশিত হবে। সারা
বাংলাদেশে এটা খুব ভালোভাবেই ছড়িয়ে গেছে। এখন লক্ষণ প্রকাশিত হতে যে কয়দিন লাগে।
দেখেন, এর মধ্যেও
লুকোচুরি। সরকার হয়তো জানেই না মোট কতোজন করোনা আক্রান্ত আছে দেশে! কি একটা দপ্তর
আছে না, মহামারী কন্ট্রোল করার জন্য, ফ্লোরা আপা বসেন, তাদের ন্যুনতম প্রস্তুতিও
নেই। কিট বা পিপিই বাদ দিলাম। তারা জানেই না কি করতে হবে।
গণস্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক
পলিসি না থাকলে আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় অযোগ্য লোক বসিয়ে রাখলে এমন হবেই।
বাংলাদেশ এমন একটা সিস্টেম ডেভেলপ করেছে যে এখানে কারও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার
অধিকার নেই, আপা যে সিদ্ধান্ত নেন তাই। সারা বাংলাদেশে এমন ৪০ জন যোগ্য ব্যক্তি
নাই, যাদের মন্ত্রী বানানো যায়? আপা কি বেছে বেছে এমন লোকদেরই কাছে আনেন, যারা
তাকে ভুল বোঝাবে?
শুধু শ্বাসকষ্টে ভুগে
কতোজন এবার মারা যায় সে পরিসংখ্যানটা রাখবেন, তাহলেই হিসাব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
করোনার সংখ্যা নিয়ে সরকার নিজেই গুজব উৎপাদন করছে। বিভিন্ন চ্যানেল আর মিডিয়াহাউজে
গুজব নিয়ন্ত্রণে সরকার যতোটা সোচ্চার, তার ১০ ভাগ সোচ্চার আর সচেতন যদি করোনা
মোকাবিলায় থাকতো, তাহলেও দেশের চেহারা অন্যরকম হতে পারতো।
সীমাহীন দুর্নীতি আর
লুটপাট আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে খাদের একদম কিনারায়। এখানকার ২য় সেক্টর যেটা
নিয়ে আমরা কখনো ভাবিনি তা হলো শিক্ষা। শিক্ষা নিয়ে সরকারের তেমন কোনো পলিসিই নেই।
২০ বছর পর আমরা কেমন জেনারেশন চাই, ১০০ বছর পর বাংলাদেশীদের পৃথিবী কিভাবে চিনবে,
তার পরিকল্পনা করা ছাড়াই কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আর ২-৪টা
ল্যাপটপ ধরিয়ে দিয়ে দেশকে ডিজিটাল করে ফেলার এক অসম্ভব স্বপ্নরাজ্যে বাস করেছেন
তারা।
বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা কি
বস্তু এটা তারা কখনো ভাবেনও নাই। যে যার যা মনে চায়, করছে। একটা দেশে তিন-চার
প্রকার শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম, ইংলিশ ভার্সন, কওমি
মাদ্রাসা, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, ক্যাডেট মাদ্রাসা ইত্যাদি নানান ভাগে তারা দেশের
আগামী প্রজন্মকে শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে ভালো আমলা-কামলা প্রসব করা যায়! তার উপর
সৃজনশীল নাহিদ কাক্কু, সর্বস্তরের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভর্তির সময় তদবির,
নিয়োগের সময় পরিবারের আওয়ামীসম্পৃক্ততার প্রত্যয়ন সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে নিহত একটা
সেক্টরকে কবর থেকে উঠিয়ে আবার গলার দড়ি পরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে হবে দেশের উন্নয়ন?
শিক্ষাব্যবস্থার এই বেহাল দশার মধ্যে তাই সুযোগ খুঁজবে ধর্মব্যবসায়ী ওয়াজপার্টির
লোকেরা। যতো লোক অশিক্ষিত থাকবে তাদের রুটিরুজি সংস্থানের তত বেশি সুবিধা হবে।
তারা ১০ জনের সামনে আবোলতাবোল বকবে, লোকজন সেটা নিয়া আলোচনা করবে, মনোযোগ সেদিকে
থাকবে আর সরকার সুযোগ পাবে বড় বড় চুরিগুলো করার।
শিক্ষা মানুষের
চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটাবে। যখন কোনো পড়াশোনা চিন্তার বিকাশ ঘটাবে না, তখন তা আর
শিক্ষা না, তথ্য স্থানান্তর। বাংলাদেশের মানুষদের চিন্তাভাবনা দেখলেই বুঝা যায়
শিক্ষা বলতে এখানে বুঝানো হয় সার্টিফিকেটের সংখ্যা। যেমন উন্নয়ন বলতে বুঝানো হয়
কয়েকটা বিল্ডিং বা কয়েকটা পিলার।
যাই হোক, করোনা হোক বা
দুর্ভিক্ষ, বাংলাদেশের গরিব মানুষের উপর দিয়ে যাবে এই দুর্যোগ। গরিব, খেটেখাওয়া
দিনমজুর, কৃষক-শ্রমিক; যারা বাংলাদেশী সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক তারা বের না হয়ে
থাকতে পারবেনা। বাঁচার জন্য কাজ করতে হবে, কাজ করতে গেলে রোগাক্রান্ত হবে; আবার
কাজ না করলে না খেয়ে থাকবে। যে কোনো দুর্যোগের ধাক্কাটা এদের উপর দিয়েই যাবে।
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখবেন, কিছু লোক আবার কোন প্রকল্পের কতো পার্সেন্ট
সরিয়েছে সেটা বেরুতে থাকবে।
এ এক অসম্ভব দুষ্টচক্র।
বাংলাদেশী সমাজ অনেক আগে থেকেই এই দুষ্টচক্রে পরে আছে। কিভাবে এই দুষ্টচক্র ভেঙে
আধুনিক বাংলাদেশী সমাজ গড়বে আমরা জানি না।
No comments:
Post a Comment