23 March 2020

দৈনন্দিন আলাপ ২৭


কোভিড-১৯ (করোনা) ভাইরাসকে অনেকে মনে করছেন আমাদের দুর্যোগের শেষ পর্যায়। আমার তা মনে হয় না। অনেকেই এখন সচেতনভাবে অনেককিছু খেয়াল করছেন। তারা দেখতে পাচ্ছেন এই ভাইরাস ও মহামারী আসলে শেষের শুরু। আগামী এপ্রিল-মে মহামারীর পাশাপাশি চলবে ডেঙ্গু। একই সাথে থাকবে পঙ্গপালের আক্রমণ। সাথে থাকবে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, মজুতদারি, কালোবাজারি। যার হাতে টাকা আছে সে বাজার থেকে কিনে ফ্রিজ ভরবে, যার নাই সে রাস্তায় না খেয়ে মরে পড়ে থাকবে, চুরি বা ডাকাতির সাথে যুক্ত হবে।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতি একদম ভেঙে পরবে, এখন যে আছে তা বলা যায় না। কিন্তু এখনো দেখে মনে হচ্ছে প্রশাসনের কিছুটা নিয়ন্ত্রন আছে। আর মাত্র কয়েকদিন, তারপরই তা পুরোপুরি ভেঙে পরবে। বাংলাদেশের সরকার ও বর্তমান মন্ত্রীপরিষদ যে একদম অথর্ব তা ইতিহাসে জ্বলজ্বল করবে, আর তার সাক্ষী হয়ে রবে যারা এই মহামারী ও দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করে বেঁচে যেতে পারবে।

আমাদের জেনারেশন দুর্ভিক্ষ দেখে নাই। শেষ দুর্ভিক্ষের গল্প শুনেছি আব্বা-আম্মার মুখে। লঙ্গরখানায় একবেলা খিচুড়ি খাওয়ার জন্য ৩ মাইল হেঁটে যাওয়া, ভাতের মাড়গালা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা, মারামারি করা; বাচ্চাদের খেতে দিয়ে নিজেরা খালি প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করে খাওয়ার অভিনয় করা; কাঁচামরিচের সাথে চার গ্লাস পানি খাওয়া, কারণ ঝাল লাগলে বেশি পানি খাওয়া যায়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন আর মাত্র কয়েকদিন। চোখের সামনে দেখতে পাবেন এগুলো।

বাংলাদেশের প্রশাসন আর সরকার অনেক আগেই ভেতর থেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে গিয়েছে। এখন তা হাতেনাতে টের পাওয়ার বিষয়। সরকারে বসে আছে মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ চাটুকারের দল, ভালোমন্দের বিবেক অনেক আগেই বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে এরা যে কোনো কিছু করতে পারে। একারণেই মহামারীর এমন সময়েও এরা বলতে থাকে সব প্রস্তুতি নেয়া আছে, আমরা অনেক আগেই এই হয়েছি সেই হয়েছি, তিনি আছেন বলেই এগুলো সম্ভব হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। লোকজন আর এগুলো বিশ্বাস করেনা, আমার মনে হয় তারা নিজেরাও আর এগুলো বিশ্বাস করে না। আফসোস এই আপদকালে এরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ থেকে ভাগতে পারছেনা।

এখন ভয় পাওয়ার সময় নয়। এখন আমাদের সাহস আরো বাড়ানোর সময়। আলাদা থেকে আমরা মহামারী মোকাবিলা করবো। একসাথে হয়ে আমরা দেশ গড়বো। এটা সবাই টের পাচ্ছেন যে, যখন সবার এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করা দরকার ছিলো, তখন আমরা আলাদা ছিলাম, আমাদের মাথার উপর তাই চেপে বসেছে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা। আমরা প্রশ্ন করা ভুলে গিয়েছিলাম, তাই তারা যা মন চায় তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা জবাব চাইতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই তারা যা মন চায় বলে গিয়েছে।

আপনি জানেন যে বর্তমান সরকার কিছুই করবেনা, কিছুই করার স্বামর্থ তাদের নেই। তাই যার যা স্বামর্থ আছে সে অনুযায়ী কাজ করেন। যার পক্ষে ঘরে থাকা সম্ভব, তিনি ঘরে থাকবেন। যার ঘরে থাকা সম্ভব না, তিনি সাবধান থাকবেন। যে কোনো প্রকার জনসংযোগ এড়িয়ে চলবেন। তা রাজনৈতিক হোক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক হোক। মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। মসজিদে আপদকালীন সময়ে নামাজ পড়ার বিষয়ে নিজের বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগান।

আপনি জানেন না আপনি ভাইরাসের বাহক কিনা? আপনি এ কারণে মসজিদ বা অন্য যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় বা কম্যুনিটি সেন্টার বা চায়ের দোকান বা খেলার গ্যালারি বা অনেক লোক সমাগম হয় এমন যে কোনো জায়গায় যাবেন না; কারণ সেখানে আপনার নিজের ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার আপনি নিজে ভাইরাসের বাহক হলে আপনার মাধ্যমে সেটা ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে। মহামারীকালীন সময়ে যে যে জায়গায় আছে সেখানেই থাকার বিষয়ে মহানবীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।

আরেকটা বিষয় খেয়াল করলাম, ওয়াজপার্টির লোকেরা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে, মুসলমানের করোনা হবে না। তার মানে কি যারা করোনায় আক্রান্ত হবে, তারা আর মুসলমান থাকছে না। মুসলমানিত্ব তাদের বাপদাদার সম্পত্তি, তারা সেটা দেখে রাখছে! এদের পড়াশোনা কম নাকি লোকজন সামনে থাকলে মাথা ঠিক থাকেনা, বুঝিনা। বাংলাদেশের অশিক্ষিত আর কুশিক্ষিত জনগণ এদের কথাই শুনছে আর মানছে। শিক্ষার এতো বেহাল দশা!

রসূলের (স.) সাহাবীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন, আশয়ারে মুবাশশারা আবু উবাইদাহ (র.) মারা গিয়েছিলেন এমন এক মহামারীতে। যারা অসভ্যের মতো মনে করছে, মুসলমানের মৃত্যু ভাইরাসে হবে না, তারা কি আবু উবাইদাহের চেয়েও বড় মুসলমান? আল্লাহর উপর ভরসা করেন, কিন্তু উটটাও বেঁধে রাখেন।

জাতি এখন এক করোনা ভাইরাসেই দিশেহারা অবস্থা, এরপর ডেঙ্গু, এরপর পঙ্গপাল, এরপর মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারধ্বস; সবশেষে মহামারী ও দুর্ভিক্ষ; কিভাবে সামাল দিবে জানিনা এখনো। অসহায় মনে হয় খুব। কিছুক্ষণ পরেই আবার মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে। পতনের পরেই তো উত্থান। ধ্বংসস্তুপ থেকেই শুরু হবে নতুন বাংলাদেশের। সেই বাংলাদেশ দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। আমাদের বন্ধু-শত্রু কতোজনের সাথে শেষমেশ দেখা হবে তাও জানি না। এ এক অনিশ্চিত যাত্রা।

সবাই এক না থাকলে এই বিপদ আমাদের আরো জাপটে ধরবে। আমাদের এখন আর আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ নেই। পুরুষ-মহিলা-তৃতীয় লিঙ্গ, বাঙালী-আদিবাসী, বাংলাদেশী-প্রবাসী-বিদেশী, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, ছোট-বড়, চাকুরিজীবি-ব্যবসায়ী সবাইকে একসাথে এই বিপদের মোকাবিলা করতে হবে।

সামনেই দেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। শেয়ার বাজারে ইতিমধ্যে ধ্বস। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি। যাদের স্বামর্থ আছে তারা মজুত করছে। কিন্তু যারা মজুত করছে তারা কখনো ক্ষুধা দেখে নাই। ক্ষুধায় পরলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান শূন্যের ঘরে নেমে আসবে। তখন এই পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য যথেষ্ট হবে না। চুরি এবং ডাকাতি বেড়ে যাবে। আর এই ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার চুরির দায়ভার নিতে হবে এখনকার সীমাহীন লুটপাটকারীদের।

এমন কোনো সেক্টর নেই, যেটা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন। এখন দুর্যোগকালে তা একটু একটু করে খুলতে থাকবে আপনার সামনে। আর আপনি চলে যাবে হতাশার শেষ সীমায়। এমন এক জায়গায় আমরা আছি, এমনো হতে পারে, আজ থেকে ৬ মাস পর প্রত্যেক পরিবারেই থাকবে স্বজন হারানোর শোক। সেই সাথে ক্ষুধা। আমরা এরই মধ্যে টের পেয়েছি এই সরকার এই বিপদ সামাল দিতে সম্পূর্ণ অপারগ। এরা যেকোনো মুহুর্তে প্রথম সুযোগটা পাওয়া মাত্র এই দেশ ছাড়বে। জনতার ভাগ্য ভালো যে পৃথিবি জুড়েই মহামারী, তাই আপাতত পালাচ্ছে না। কিন্তু মহামারীটা সামাল যে দেশ দিবে তারা সেখানেই সপরিবারে চলে যাবে। আমি-আপনি যাদের স্বামর্থ নেই, তাদের বাচ্চাকাচ্চা সহ এই দেশেই থাকতে হবে। মহামারী আসুক আর চলে যাক, দুর্ভিক্ষ থাকুক আর থামুক। ব্যাংকে টাকা থাক আর না থাক।

জবাব চাওয়ার সময় এসেছে। আপনার ট্যাক্সের টাকায় কেনো হাসপাতাল হলো না, জবাব চান; কেনো ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো সরঞ্জাম কেনা হলো না, জবাব চান; আপনার ট্যাক্সের টাকা কেনো লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হলো; জবাব চান; আপনার মেহনতের টাকায় কেনো তার ছেলেমেয়েরা বিলাসী জীবন যাপন করবে, জবাব চান। এখনি চিন্তা করেন আপনি আপনার বাচ্চাদের জন্য কেমন বাংলাদেশ রেখে যেতে চান?

লেখা আর চিন্তাভাবনা কেমন অগোছালো লাগছে। সময়টা ঠিক হোক আবার, গুছিয়ে চিন্তা করা যাবে তখন। ততক্ষণ সবাই সুস্থ থাকেন, নিরাপদ থাকেন।

জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

No comments:

Post a Comment