আজটেক প্রবেশিকা ১ঃ উপক্রমণিকা

নিজেই গর্বিত

মেহিকো-তেনোশতিতলান শহর।

এখানে কেউ যুদ্ধে মরার ভয় করে না।

এই আমাদের গৌরব।

এটাই তোমার আদেশ,

হে জীবনদানকারী।

এটা মনে রেখো, হে রাজন্য,

ভুলে যেওনা।

তেনোশতিতলান অধিকার কে করেছিলো?

স্বর্গের ভিত্তি কে নাড়িয়ে দিয়েছিলো?

-আজটেক কবিতা

-অজ্ঞাত কবি, প্রায় ষষ্ঠদশ যিশুশতক।

১ উপক্রমণিকা

কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগে আমেরিকা মহাদেশে সমৃদ্ধ তিনটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। এর একটি দক্ষিণ আমেরিকায়। বর্তমান চিলি, পেরু, ইকুয়েডর এবং বলিভিয়া জুড়ে গড়ে উঠেছিলো- ইনকা সভ্যতা। আর দুইটি মধ্য আমেরিকায়। মায়া সভ্যতা ও আজটেক সভ্যতা। মায়া সভ্যতা গড়ে উঠে বর্তমান মেহিকোর (ম্যাক্সিকো) ইউকাতান উপত্যকা, বেলিজ ও গুয়েতেমালায়। আর আজটেক সভ্যতা গড়ে উঠে পুরো মধ্য মেহিকো জুড়ে।

সভ্যতা হিসেবে আজটেক সভ্যতা ছিলো খুবই সমৃদ্ধ। জীবনের যেকোনো শাখায় তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো। এমনকি বর্তমান মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার স্প্যানিশ সংস্কৃতির উপর আজটেক, মায়া ও ইনকা সভ্যতার ব্যপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সভ্যতাগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু পাখি চলে যায়, তার পালক রয়ে যায়। সভ্যতাগুলোর নিদর্শন এখনো মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে রয়ে গেছে।

১.১ অবস্থান

বর্তমান মেহিকো (ম্যাক্সিকো) ছিলো আজটেক সভ্যতার সূতিকাগার। মধ্য মেহিকোর পার্বত্যঞ্চল এবং মেহিকো উপত্যকায় ছিলো আজটেকদের বাস। বর্তমান মেহিকোর রাজধানী মেহিকো সিটি (ম্যাক্সিকো সিটি) ছিলো আজটেক সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র, আজটেক সাম্রাজ্যের রাজধানী ‘তেনোশতিতলান’।

আজটেক সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো পূর্বে মেহিকো উপসাগর এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। দক্ষিণ-পূর্বে আজটেক সাম্রাজ্যের সীমানায় ছিলো মায়া সভ্যতার বিভিন্ন শহর, উত্তর-পশ্চিমে ছিলো হুয়াস্তেক, চিকিমেক প্রভৃত জাতিসমূহের বসবাস। অন্যান্য সভ্যতার মতো এখানেও প্রথমে গড়ে উঠে নগর রাষ্ট্র। পরবর্তীতে নগররাষ্ট্রগুলো একটি শক্তিশালী নগরকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত হয়। নিজেদের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য বেড়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন হয় নিরাপত্তার। এভাবেই নগররাষ্ট্রগুলো একীভূত হয়ে গড়ে তোলে সাম্রাজ্য।

১.২ নামকরণ

আজটেক নামটি স্প্যানিশদের দেয়া। আজটেকদের আদি আবাস ছিলো ‘আজত্‌লান’ উপত্যকা। আজত্‌লান উপত্যকার লোক বোঝাতে আজটেক ব্যবহৃত হতো। স্প্যানিশরা পরবর্তীতে পুরো সাম্রাজ্য এবং সভ্যতারই নামকরণ করে ‘আজটেক’। তাদের হাত ধরে নামটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।

আজটেকরা নিজেদের ডাকতো ‘মেহিকো’। তাদের মেহিকো থেকেই এসেছে বর্তমান ‘ম্যাক্সিকো’ নামটি। মেহিকোকে ম্যাক্সিকো উচ্চারন করে ইংরেজরা। মেহিকোদের ভাষার নাম ‘নাহুয়াত্‌ল’। নাহুয়াত্‌ল এখনো মেহিকো দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা।