৭
শিল্প
ও
স্থাপত্যকলা
অন্যসব প্রাচীন সভ্যতার মতো
আজটেক সভ্যতারও শিল্প ও স্থাপত্যকলা গড়ে উঠেছিলো ধর্মকে কেন্দ্র করে। আজটেক শিল্প তাই নিজস্বতায়
অনন্য। এখন পর্যন্ত মধ্য
আমেরিকান শিল্প আজটেকদের শিল্প দিয়ে প্রভাবিত। আজটেকরা শিল্পের প্রায়
প্রত্যেকটি শাখায় অবদান রেখেছিলো। স্থাপত্যবিদ্যায় আজটেকদের নিজস্ব প্রযুক্তি এবং
দক্ষতা স্প্যানিশদের বিস্মিত করেছিলো। আজটেকরা মনে করতো শিল্পী তার প্রতিভা নিয়ে আসেন
পরিবার থেকে। তাই শিল্পীরা ছিলেন বংশানুক্রমিক।
পাথর কেটে তৈরী করা আজটেকদের ভাস্কর্য |
৭.১ বিবিধ শিল্প
আজটেকরা সবচেয়ে বেশি দক্ষ ছিলো
পাথর খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরীতে। ভাস্কর্য তৈরী সেসময় ছিলো সম্মানজনক পেশা।
আজটেকরা মূলত খোদাই করতো দেবতাদের প্রতিমা। পাথর খোদাই করে তৈরী আজটেকদের বিভিন্ন
প্রতিমা এখন পর্যন্ত টিকে আছে। এছাড়া তারা আজটেক পঞ্জিকা, আজটেকদের বিভিন্ন লোককথা, সম্রাটদের প্রতিমা, মন্দিরের দরজা, নিত্যব্যবহার্য
তৈজসপত্র খোদাই করে তৈরী করতো।
আজটেকরা অনন্য ছিলো পালক
শিল্পে। বিভিন্ন রকম পাখির রঙ্গিন পালক দিয়ে তারা তৈরী করতো শিরস্ত্রাণ এবং পোশাক।
এই শিল্পে শিল্পীদের হাতের দক্ষতা দেখানো লাগতো, রং সম্পর্কেও ভালো ধারণা থাকতে
হতো। এছাড়া সিরামিক শিল্পের কদর ছিলো আজটেক সমাজে। সিরামিকের প্রয়োজন ছিলো মূলত
তৈজসপত্র তৈরীতে। তবে মন্দিরের ভেতর বিভিন্ন কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে সিরামিকের টুকরা
ব্যবহৃত হতো। এছাড়া আজটেকরা কাঠ খোদাই শিল্পে দক্ষ ছিলো। কাঠের শিল্পীদের মর্যাদা
ছিলো পাথর খোদাই শিল্পীদের মতোই।
এছাড়া মাটির কাজ করতো আজটেক
শিল্পীরা। আজটেক সমাজে স্বর্নকার, রৌপ্যকাররাও শিল্পীর মর্যাদা পেতো। এছাড়া বিভিন্ন
রকম রঙ্গিন পাথরের কাজ করা শিল্পীদের কদর ছিলো। আজটেক সমাজে রঙ্গিন পাথরের কাজ
করতে পারতো এমন শিল্পীর সংখ্যা কম থাকায় আশাপাশের রাজ্যগুলো থেকেও শিল্পীরা আসতো।
৭.২ স্থাপত্যকলা কৌশল
স্থাপত্য বিদ্যায় আজটেকদের
নিজস্বতা অনস্বীকার্য। আজটেকদের স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন তেনোশতিতলান শহর।
পুরো শহরই আজটেকদের পরিকল্পনাকৃত বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর। তেনোশতিতলান শহরের সবচেয়ে
বড় আকর্ষন আজটেকদের প্রধান মন্দির। প্রধান মন্দিরের স্থাপত্য কৌশল আজটেকদের নিজস্ব।
এছাড়া প্রায় সবগুলো মন্দির, আজটেক নির্মিত খেলার জায়গা, বাগান, রাস্তা, প্রাসাদ এমনকি
বাজারে পর্যন্ত আজটেকদের নিজস্ব স্থাপত্য কলাকৌশলের ছাপ বিদ্যমান। স্থাপত্যবিদ্যায়
আজটেকদের অবদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গোল পিরামিড, দুই সিড়িযুক্ত পিরামিড, দেবতাদের মন্দির এবং
সেচের কলাকৌশল। সেচের কলাকৌশল আজটেকদের আগে এবং পরে আর কেউ ব্যবহার করেনি।
স্থাপত্যের কাজ করার জন্য আজটেক
সমাজে আলাদা কারিগর ছিলো। নির্মানের কাজ করার জন্য আজটেকরা মূলত ‘তেযোন্তলে’ নামক
একধরনের বিশেষ পাথর ব্যবহার করতো। এই পাথর খুবই শক্ত এবং টেকসই, কিন্তু বহন করার
জন্য সাধারণ পাথরের চেয়ে হালকা। এই পাথরকে খুব সহজেই কেটে বিভিন্ন আকার দেয়া যেতো।
এই পাথরটি মূলত আগ্নেয়গিরির লাভা জমে তৈরী হওয়া পাথর। পাথর কাটার জন্য ব্যবহার করা
হতো- কাচের মতো দেখতে একধরনের আগ্নেয়শিলা (অবসিডিয়ান)। এছাড়া নির্মানে লোহার ব্যবহার
ছিলো।
৭.৩ প্রতীক বিদ্যা
আজটেকদের শিল্প এবং স্থাপত্যে ছিলো প্রতীকবিদ্যার
প্রভাব। আজটেকদের প্রতীক ছিলো ধর্ম দ্বারা নির্ধারিত। আজটেকরা দিক মাথায় রেখে
নিজেদের স্থাপত্য নির্মান করতো। নির্মানের সময়ও দিকসংক্রান্ত প্রতীকগুলো ব্যবহার
করা হতো। আজটেকদের দিকগুলোতে ছিলো নির্দিষ্ট রং,
দেবতা, পশু বা পাখি ইত্যাদি। এছাড়া আজটেকরা দেবতাদের বিভিন্ন রকম প্রতীক শিল্পে
ব্যবহার করতো; যেমন- দেবতা তেযকাতলিপোকার
প্রতীক ছিলো জাগুয়ার, দেবতা
কুয়াতজালকোয়াত্লের প্রতীক ছিলো সাপ ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment