২
আজটেক
সভ্যতার ক্রমবিকাশ
আমেরিকা মহাদেশে মানবজাতি প্রবেশ
করে
প্রায়
১০,০০০ যিশুপূর্বসনে। সেসময়ে কানাডা-রাশিয়ার সীমান্তবর্তী
বেরিং
প্রণালী বরফে
ঢাকা
পরেছিল। ধারণা করা
হয়
সাইবেরিয়া থেকে
আলাস্কা গিয়েছিলো এই
মহাদেশের প্রথম
মানুষেরা। ক্রমেই এই
মানুষেরা ছড়িয়ে
পরতে
শুরু
করেছিলো পুরো
মহাদেশ
জুড়ে। উত্তর থেকে
দক্ষিণে ধীরে
ধীরে
পরতে
থাকে
মানুষের পায়ের
ছাপ। প্রায় ৬,০০০ যিশুপূর্বসনে
মানুষ
পৌছে
যায়
দক্ষিণ
আমেরিকার সর্বশেষ বিন্দুতে।
২.১ উৎপত্তি
প্রায় ৩,২০০ যিশুপূর্বসনে বর্তমান মেহিকো উপত্যকার লোকেরা শিকারী সমাজ থেকে
কৃষিজীবী সমাজে প্রবেশ করে। সেসময় থেকেই তাদের মধ্যে প্রথমে গ্রাম এবং ক্রমে নগরের
ধারণা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। মেহিকো উপত্যকা অঞ্চলে সর্বপ্রথম সাম্রাজ্য গড়ে উঠে প্রায়
১,৫০০ যিশুপূর্বসনে। এই
সাম্রাজ্যকে চিহ্নিত করা হয়- ‘ওলমেক সাম্রাজ্য’ নামে। প্রায় ৮০০ যিশুপূর্বসনে
দক্ষিণ মেহিকোতে গড়ে উঠে ‘মায়া সাম্রাজ্য’।
ওলমেক সাম্রাজ্যের পতন হলে সেখানে গড়ে উঠে
‘জাপোতেক সাম্রাজ্য’। জাপোতেক সাম্রাজ্যের পতনের সময় মেহিকো উপত্যকা এবং প্রশান্ত
মহাসাগর ও মেহিকো উপসাগরের কূলে গড়ে উঠতে থাকে নতুন নতুন নগর। নগরগুলো স্বাধীনভাবে
পরিচালিত হতে থাকে। নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে নগররাষ্ট্র। কিন্তু
সমাজ-সংস্কৃতি-ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তারা একই পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য বহন করতে থাকে।
নগররাষ্ট্রগুলো অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়। গড়ে উঠে-
‘আজটেক সাম্রাজ্য’।
২.২ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আজটেকদের বিভিন্ন লোককথা এবং
তৎকালীন স্প্যানিশ ভাষ্যকারদের কাছ থেকে আজটেকদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। আজটেক
লোককথা অনুসারে, ‘আজত্লান’ উপত্যকা ছিলো আজটেকদের প্রথম আবাসস্থল। লোককথায় আজত্লানকে
স্বর্গ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। স্প্যানিশ ভাষ্যকাররা আজত্লানের অবস্থান
সম্পর্কে অনিশ্চিত ধারণা পোষণ করেন।
এরপর আজটেকরা ‘চিকিমেক অঞ্চলে’
বাস করতে শুরু করে। চিকিমেক অঞ্চলকে আজটেকরা নিজস্ব ভাষায় ডাকতো- ‘চিকোমজতক’
অর্থাৎ সাতটি গুহার ঘর। সাতটি গুহা এখানে সাতটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে
কেবল মেহিকোরাই ভাগ্যান্বাষণে দক্ষিণের উপত্যকায় পাড়ি জমায়। বাকী ছয় জাতি চিকিমেক
অঞ্চলে রয়ে যায়।
দক্ষিণের উপত্যকায় আগে থেকেই
কিছু জাতির বসবাস ছিলো। মেহিকোরা ‘তেহকোকো হ্রদের’ মাঝখানে কেবল একটুকরো জমি পায়
আবাদ করার মতো। সে জমির উপরেই ১৩১৮ যিশুসনে তারা গড়ে তোলে ‘তেনোশতিতলান শহর’। তেনোশতিতলান শহর তাই অনেকটা ভেনিস
শহরের মতো, পানির উপরেই বাড়িঘর, খেতখামার। আজটেকরা কচুরিপানার উপরে কাদামাটি দিয়ে
তেহকোকো হ্রদে নতুন নতুন দ্বীপ তৈরী করতে থাকে। বাড়তে থাকে তেনোশতিতলান শহরের
আয়তন। ১৩৭৫ যিশুসনে তেনোশতিতলান শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আজটেকদের নগর রাষ্ট্র।
আজটেক নগররাষ্ট্রটি প্রথম ৫০ বছর প্বার্শবর্তী
শক্তিশালী নগররাষ্ট্র ‘আজকাপোত্যালকো’ এর করদ থাকে। ক্রমেই সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন
করতে থাকে তেনোশতিতলান। সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রভাব পরে কৃষি এবং
ব্যবসাবাণিজ্যে। ফলে আজটেক নগররাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। ১৪২৭
যিশুসনে তেনোশতিতলান তার পাশের বন্ধুপ্রতিম আরো দুই নগররাষ্ট্র ‘তেহকোকো’ এবং ‘ত্লাকোপান’
কে সাথে নিয়ে গড়ে তোলে আজটেক সাম্রাজ্যের বীজ,
‘এহকান ত্লাহতোলোয়ান’ বা তিনের জোট। এই তিনটি
রাষ্ট্র নিজেদের প্রশাসনের কেন্দ্র হিসেবে তেনোশতিতলানকে মেনে নিলে আজটেকরা আরো
শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
১৪২৭ যিশুসন থেকে পরবর্তী ১০০ বছর, স্প্যানিশরা আসার আগ পর্যন্ত আজটেক সাম্রাজ্যের
সীমানা বাড়তে থাকে। একসময় আজটেক সাম্রাজ্যের সীমানা একপাশে প্রশান্ত মহাসাগর
অপরপাশে মেহিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। সর্বোচ্চ শিখরে আজটেক
সাম্রাজ্যের সীমানা প্রায় ৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অতিক্রম করে। সেসময় সাম্রাজ্যের
জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৫০ লক্ষ। তেনোশতিতলান শহরের জনসংখ্যাও সেসময় ৩ লক্ষ অতিক্রম
করে। ইউরোপীয় শহরগুলোর সাথে তুলনা করলে তখনকার তেনোশতিতলান আয়তনে ছিলো, তখনকার
লন্ডনের চারগুন। পুরো পৃথিবীতে তখন তেনোশতিতলানের চেয়ে বড় শহর ছিলো তিনটি, রোম, ইস্তাম্বুল আর প্যারিস। স্প্যানিশরা যখন প্রথম তেনোশতিতলান শহরে প্রবেশ করে
তারা সাম্রাজ্যের বিত্ত-বৈভব দেখে অবাক হয়ে যায়।
১৩৭৫ যিশুসনে আজটেক নগররাষ্ট্রের প্রথম ত্লাতোয়ানি
(শাসক) হিসেবে নির্বাচিত হন- আকামাপিশ্তলি। তিনি তার ২০
বছরের
শাসনামলে আশপাশের নগররাষ্ট্রগুলোর সাথে
সুসম্পর্ক বজায়
রাখেন। তেনোশতিতলান শহরকে
তিনি
পূর্বপাশে বিস্তৃত করেন। আবাদী জমির
স্বল্পতার কারনে
তিনি
‘চিনাম্পা’ পদ্ধতিতে (কচুরিপানার উপরে
কাদামাটি দিয়ে
তৈরী
ভাসমান
জমি;
আক্ষরিক অর্থ-
ভাসমান
বাগান)
হ্রদের
মধ্যে
জমি
তৈরী
করেন। আজটেকদের জন্য
তিনি
প্রথম
লিখিত
আইন
প্রনয়ন
করেন। তার মৃত্যুর পর
তার
সন্তান
হুইটযিলিহুইত্ল
আজটেক
নগররাষ্ট্রের ত্লাতোয়ানি
হন।
হুইটযিলিহুইত্ল
আজটেক
নগররাষ্ট্রের ত্লাতোয়ানি
হন
১৩৯৫
যিশুসনে। তার সময়ে
রাষ্ট্র বাণিজ্য ও
শিল্পে
উন্নতি
লাভ
করে। সেসময় তুলা
ও
ম্যাগুই (একজাতীয় ঘৃতকুমারী) এর
আঁশ
থেকে
তৈরী
সুতার
কাপড়ের
জন্য
তেনোশতিতলান বিখ্যাত হয়। ১৪১৬ যিশুসনে প্রতিবেশী নগররাষ্ট্র তেহকোকো, আজকাপোত্যালকোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহে তিনি
আজকাপোত্যালকোর
পক্ষ
নেন। তিনি ১৪১৭
যিশুসনে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর
তার
সন্তান
চিমালপোপোকা ত্লাতোয়ানি
হন।
চিমালপোপোকা পিতার
মতো
আজকাপোত্যালকোর
প্রতি
সমর্থন
বজায়
রাখেন। কিন্তু তার
চাচা
এবং
আজটেক
সিংহাসনের দাবীদার ইজকোয়াত্ল
তেহকোকোকে সাহায্য করতে
বদ্ধপরিকর ছিলেন। ১৪২৬ যিশুসনে ইজকোয়াত্ল
এবং
পাহাড়ে
পলাতক
তেহকোকো যুবরাজ
একসাথে
তেনোশতিতলানে এক
বিদ্রোহের সূচনা
করেন। বিদ্রোহের ফলে
তেনোশতিতলানে এবং
সমগ্র
উপত্যকা অঞ্চলে
অশান্তি দেখা
দেয়। বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে
১৪২৭
যিশুসনে চিমালপোপোকা মৃত্যুবরণ করেন
এবং
ইজকোয়াত্ল
আজটেক
রাষ্ট্রের ত্লাতোয়ানি
হন। এসময় তিনি
পাশের
দুই
নগররাষ্ট্রের সাথে
জোট
বাধেন। এই জোটকেই
বলা
হয়
‘তিনের
জোট’
বা
‘আজটেক
সাম্রাজ্যের বীজ’। তিনি আজকাপোত্যালকোর বিরুদ্ধে সরাসরি
অস্ত্রধারণ করেন
এবং
জয়ী
হন। এরপর তিনি
তেহকোকোর যুবরাজকে সিংহাসনে বসান। তিনি পরপর
অনেকগুলো অভিযান
পরিচালনা করেন। হোশিমিল্কো, মিহকুইক, সুইটলাহুয়াক, তেযোম্পা, চুলহুয়াকান এবং
চোয়োয়াকান নগররাষ্ট্র তিনি
দখল
করে
নেন। দখলকৃত রাষ্ট্রের বাটোয়ারা ছিলো
এইরকরম-
তেনোশতিতলান ৪০%,
তেহকোকো ৪০%
এবং
ত্লাকোপান ২০%। তিনি তার পূর্ববর্তী সমস্ত
আজটেক চিত্রলিপি পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। তার সময় আজটেক চিত্রলিপি আবার নতুন করে
লেখা হয়। এসময় তিনি হুয়েহুয়েত্লাতোয়ানি (সম্রাট)
উপাধি
নেন। তিনি ১৪৪০
যিশুসনে মৃত্যুবরণ করেন।
১৪৪০
যিশুসনে হুইটযিলিহুইত্লের
পুত্র
১ম
মকতেজুমা আজটেক
সিংহাসনে বসেন। তিনি তার
চাচার
অগ্রযাত্রা অব্যহত
রাখেন। আজটেক সাম্রাজ্যকে তিনি মেহিকো উপসাগর পর্যন্ত
বিস্তৃত করেন। অতিগুরুত্বপূর্ন নগররাষ্ট্রগুলো তার সময়েই আজটেক সাম্রাজ্যের সাথে
একীভূত করা হয়। ১৪৬৯ যিশুসনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ের ঘরের
নাতী আশায়াকাত্ল আজটেক সিংহাসনে বসেন।
সম্রাট আশায়াকাত্লের নানা ছিলেন সম্রাট ১ম
মকতেজুমা আর তার দাদা ছিলেন সম্রাট ইজকোয়াত্ল। তিনি কৌশলগতভাবে আজটেক সাম্রাজ্যকে
গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন। তিনি আজটেকদের প্রতিবেশী তিন শক্তিশালী জাতির বিরুদ্ধে
একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আজটেক সাম্রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্য এই প্রতিরোধ প্রয়োজন
ছিলো। তিনি উত্তরে হুয়াস্তেক জাতি, উত্তর-পশ্চিমে
চিকিমেক জাতি এবং দক্ষিণ-পূর্বে মায়া জাতির বিভিন্ন শহর দখল করে নেন। ১৪৮১ যিশুসনে
তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার ভাই তিযোসিকাতসিন আজটেক সিংহাসনে বসেন।
তিযোসিকাতসিন মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। তিনি হুয়াস্তেকাদের বিরুদ্ধে কয়েকটা অভিযান
প্রেরণ করেন। তার পর তার আরেক ভাই আহুইটযোত্ল ১৪৮৬ যিশুসনে আজটেক সাম্রাজ্যের
সিংহাসনে বসেন।
আহুইটযোত্ল হুয়াস্তেক নগররাষ্ট্রগুলো আজটেক
সাম্রাজ্যে একীভূত করেন। তিনি দক্ষিণের মিহতেক জাতির শহরগুলোতে নিজের সৈন্য প্রেরণ
করেন। এমনকি তার সৈন্যরা মায়া সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে পর্যন্ত প্রবেশ করে। তিনি
আজটেক সাম্রাজ্যকে প্রশান্ত মহাসাগরের কূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। ১৫০২ যিশুসনে
তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র এবং সম্রাট আশায়াকাত্লের
পুত্র ২য় মকতেজুমা আজটেক সিংহাসনে বসেন।
সম্রাট ২য় মকতেজুমার সময়েও আজটেকদের অগ্রযাত্রা
অব্যহত থাকে। তিনি মিহতেক জাতির বিভিন্ন শহরকে আজটেক সাম্রাজ্যের সাথে যোগ করেন।
তার সময়েই আজটেক সাম্রাজ্য তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। তার শাসনামলেই স্প্যানিশরা
আজটেক সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে। ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। কে জানতো, স্প্যানিশদের প্রবেশই আজটেক সাম্রাজ্যের পতনের
কারন।
স্প্যানিশরা প্রথম মায়া সাম্রাজ্যের সীমানায়
মেহিকো উপসাগরের কূলে অবতরন করে। স্প্যানিশ বাহিনীর সেনানায়ক তখন হার্নান কর্তেজ।
কর্তেজের সাথে মাত্র ১১টি জাহাজ, ১৩টি
ঘোড়া এবং ৫০০ সৈন্য। ছোট্ট একটি বাহিনী নিয়ে কর্তেজ মায়া সাম্রাজ্যের সীমানা থেকে
ত্লাহকালা রাজ্য হয়ে আজটেক সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে ১৫১৯ যিশুসনে। এর আগে মায়াদের
সাথে কর্তেজের কিছু সংঘর্ষ হয়। সেখানে তিনি স্প্যানিশ সম্রাটের জন্য কিছু জমি দাবী
করেন। মায়ারা সে দাবী মোতাবেক তাকে কিছু জমি,
কয়েকজন দাস এবং ২০ জন মহিলা প্রদান করে। কর্তেজ ২০
জন মহিলাকে খ্রিস্টিয়ান ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন এবং সেখান থেকে একজনকে বিয়ে করেন।
কর্তেজ তেনোশতিতলান প্রবেশ করলে তাকে সাদরে
আমন্ত্রণ জানানো হয়। আজটেকদের কাছে ভবিষ্যৎবাণী ছিলো,
দেবতা কুয়েতজালকোয়াত্ল সাদা বাহনে করে সমুদ্র
থেকে উঠে আসবেন, তিনি নিজেও সাধারন আজটেকদের
চেয়ে সাদা হবেন। আজটেকরা কর্তেজকে দেবতা ভেবে তেনোশতিতলান শহরে প্রবেশ করতে দেয়।
কর্তেজও সৈন্যস্বল্পতার কারনে প্রথমেই তেনোশতিতলান আক্রমন করতে চান নি। কিউবা থেকে
আরো কিছু সৈন্য চেয়ে তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। কর্তেজকে সম্রাট ২য় মকতেজুমার প্রাসাদেই
থাকতে দেয়া হয়েছিলো।
কর্তেজ সুযোগমতো আজটেক সম্রাটকে গৃহবন্দী করেন।
আজটেক অভিজাতরা এতে ক্ষিপ্ত হয়। আজটেক সাম্রাজ্য প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে
দুর্বল হতে থাকে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়,
কর্তেজের বাহিনীর একজন পাদ্রী আজটেকদের প্রধান
মন্দির ভাংচুর করলে। এতে সাধারন আজটেকরাও ক্ষিপ্ত হয়ে সম্রাটের প্রাসাদ আক্রমন
করে। প্রাসাদ আক্রমনের পর
১৫২০
যিশুসনের ১
জুলাই,
সম্রাট
২য়
মকতেজুমা মৃত্যুবরণ করেন। স্প্যানিশ বাহিনী
সহ
কর্তেজ
তেনোশতিতলান থেকে
পলায়ন
করে। সম্রাটের মৃত্যু
নিয়ে
ঐতিহাসিকদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। স্প্যানিশ ভাষ্যকারদের মতে,
উত্তেজিত আজটেক
জনতার
হাতে
তিনি
মারা
যান। কারো কারো
মতে
স্প্যানিশরাই তাকে
অপ্রয়োজনীয় মনে
করে
মেরে
ফেলে।
কর্তেজরা আজটেক
সাম্রাজ্য ছেড়ে
গেলেও আজটেকদের দুর্ভাগ্য ছাড়েনি। পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে তখন দেখা দেয় গুটিবসন্ত।
গুটিবসন্ত মহামারী হিসেবে পুরো সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পরে। সিংহভাগ আজটেক জনসংখ্যা
মাত্র তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। অপরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারে
স্প্যানিশদের সুনাম ছিলো। ধারণা করা হয় গুটিবসন্তের জীবাণু স্প্যানিশরা বহন করে
নিয়ে এসেছিলো। এই রোগের সাথে আজটেকরা একদমই অপরিচিত ছিলো। কেউ কেউ ধারণা করেন, স্প্যানিশরা তেনোশতিতলান ত্যাগ করার আগে এই রোগের
বীজাণু পানির প্রবাহে ছেড়ে দিয়ে যায়। এর আগে সাম্রাজ্যে গুটিবসন্ত কখনো হয় নি।
সম্রাট ২য় মকতেজুমার মৃত্যুর পর ১৫২০ যিশুসনে
আজটেকদের সম্রাট হন সুইটলাহুয়াক। তার সময়ে আজটেকদের প্রতিবেশী রাজ্য ত্লাহকালা
স্প্যানিশদের সাথে মৈত্রী করে। আজটেকদের তিনের জোটের এক রাজ্য তেহকোকোর রাজাও
স্প্যানিশদের পক্ষে যোগ দেন এবং খ্রিস্টিয়ান ধর্মে দিক্ষীত হন। সুইটলাহুয়াক
সাম্রাজ্যের বন্ধন দৃঢ় রাখতে যথাসম্ভব চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার মাত্র ৮০
দিন পর তিনি গুটিবসন্তে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর সম্রাট হন- সুয়াউহতেমোক।
তিনি স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে পূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
কর্তেজ ১৫২১ যিশুসনে ফিরে আসেন, রাজধানী তেনোশতিতলান চারদিক থেকে ঘিরে রাখেন।
রাজধানীতে যেনো খাবার এবং পানির অভাব হয় সেজন্য তিনি রাজধানীতে ঢোকার সবগুলো পথ
বন্ধ করে দেন। সাম্রাজ্যের জনসংখ্যাও তখন ৫০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষে নেমে গিয়েছিলো।
কর্তেজ দূত পাঠিয়ে আজটেক সম্রাটকে আত্মসমর্পন করতে বলেন। কিন্তু আজটেক সম্রাট
প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন। তিনি তার পুরোহিত,
অভিজাত এবং যোদ্ধাদের নিয়ে রাজধানীতে বৈঠক করেন।
তারা তাকে এই পরামর্শই দেন।
![]() |
আজটেক সম্রাট ২য় মকতেজুমা |
প্রায়
তিন মাস প্রতিরোধের পর রসদ ফুরিয়ে এলে, রাজধানীতে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরী হয়।
গণঅসন্তোষের মুখে সম্রাট বাধ্য হন আত্মসমর্পন করতে। কর্তেজ তাকে আমৃত্যু স্বপদে
বহাল রাখার নিশ্চয়তা দেন। স্পেনের রাজার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আজটেক সম্রাটের কাছ
থেকে কিছু পরিমান কর চেয়ে নেন। ১৫২৫ যিশুসনে শেষ আজটেক সম্রাট সুয়াউহতেমোকের
মৃত্যু হলে কর্তেজ আজটেক সাম্রাজ্য ও তার আশপাশের অধিকৃত অঞ্চলের নামকরণ করেন-
‘নতুন স্পেন’। আজটেকদের ইতিহাস এখানেই শেষ হয়।
No comments:
Post a Comment