30 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৮

কিছু কিছু রাজনীতিবিদ একটা খুন বা ধর্ষণ হওয়ার পর ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। তারা দেখেন খুনের সাথে কোনো মেয়ের সম্পর্ক আছে কিনা। এই সমাজে মেয়ে একটা সেন্সেটিভ বিষয়। যাই হোক না কেন মেয়েটার চরিত্র ভালো না। মেয়েদের চরিত্র এতো কোমল বিষয় যে পাতা নড়লেও তাদের স্বভাব খারাপ হয়। 

সাগর-রুনি মারা যাওয়ার পর এরা বলেছে রুনির চরিত্র খারাপ ছিলো। তনু মারা যাওয়ার পর বললো- তনুর চরিত্র খারাপ ছিলো। এখন রিফাত মারা যাওয়ার পর তার বৌ এর ও চরিত্র খারাপ ছিলো। এই বিষয়ে গ্রামবাংলার একটা প্রবচন আছে- নিজের পুটকিতে গু রাইখা আরেকজনের পাছায় কাপড় নাই দেখতে যাওয়া। 

আফসোস বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা অপরের পশ্চাতদেশ নিয়ে যতটা সোচ্চার, নিজের বর্জ্য পদার্থ নিয়ে এতোটা সোচ্চার নয়। তারা নিজেরা বিভিন্ন রকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত থেকে, আরেকজনের চরিত্র নিয়ে কথা বলেন। 

দুইএকজনকে বলতে শুনলাম- মেয়েটা বেশ্যা ছিলো। এককথায় মেয়েদের বেশ্যা বলে ফেলা পুরুষদের চিনে রাখুন। এরা হলো সেই মাদারচোদ প্রকৃতির পুরুষ, যারা আরেকজনের চরিত্র হননকে নিজের অস্ত্র মনে করে। এই ঘটনার মাধ্যমে তারা কাউকে কাউকে বাচানোর চেষ্টা করে৷ 

প্রথমত তারা খুনি আর ধর্ষককে বাচানোর চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ত তারা দেশের বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করে। মানে দেশে বিচার নাই এইজন্য খুন হয়েছে এই দিক থেকে জনতার নজর সরায়া তারা তাকে নিয়ে যায় মেয়েটার চরিত্রের দিকে। এতে খুনি-ধর্ষকদের নৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু মেয়েটার চরিত্র খারাপ ছিলো, ধর্ষনটা হওয়া স্বাভাবিক।

খুন ও ধর্ষন নিজেই একটা অপরাধ। এমনকি যদি কেউ বেশ্যা হয় তাকেও ধর্ষন করা অপরাধ। আবার খুনের পর অতি উৎসাহী জনতা অপরাধীর ক্রসফায়ার চায়। ক্রসফায়ার নিজেই একটা বিচারহীন প্রক্রিয়া। মানে এক বিচার নাই ঠেকাইতে আমরা চাচ্ছি আরেকটা বিচার নাই। 

যদি তনু হত্যার বিচার হতো তাইলে নুসরাত হত্যা হতো না। নুসরাত হত্যার বিচার যেহেতু হচ্ছে না তাই এইরকম আরো ঘটনা সামনে আসছে আশা করা যায়। বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হলে রিফাত হত্যা হতো না। এইভাবে একটা অপরাধের সাথে আরেকটা অপরাধ সম্পর্কিত। 

দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচারহীনতার এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনতার ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে কথা হতে পারে৷ 

25 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৭

গ্রামের নাম রতনখালি। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের একটা ছোটো গ্রাম। শরাফপুর বাজার থেকে ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তা ভ্যানে যাওয়া যায়। তারপর পায়ে হাটা রাস্তা আরো ৩ কিলোমিটার প্রায়। অন্তত ৩ কিলোমিটার পায়ে হেটে পৌঁছাতে হয় রতনখালি গ্রামে।

বাইরে থেকে দেখে খুব ভালো লাগলো। বাংলাদেশের আর ৫ টা গ্রামের মতোই সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা। গ্রামের ভেতরে গেলাম কথা বলতে। গ্রামে ৪০-৫০ ঘর হিন্দু পরিবারের বসবাস।

কথা বলতে বলতে জানলাম পাশের বয়ে যাওয়া খালটা নোনা পানির। টিউবওয়েল থেকেও নোনা পানি উঠে। গ্রামের লোক এই পানি খেয়েই অভ্যস্ত। টিউবওয়েল ডিপ হলে নোনা কিছুটা কম থাকে। অবশ্য উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক উপজেলাতেই এই অবস্থা।

পুরো গ্রামে কোনো স্যানিটারি মানসম্পন্ন টয়লেট নাই। গ্রামে কোনো স্কুল নাই, হাসপাতাল নাই, দোকান নাই। বাজার করতে যাওয়া লাগে ৪ কিলোমিটার দূরে বানিয়াখালি বাজারে। পড়তে যাওয়া লাগে বানিয়াখালি, জ্বর, ডায়রিয়া হলেও বানিয়াখালি। জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ গর্ভবতী থাকলে? লোকজন বললো- পরিস্থিতি খারাপ থাকলে ভ্যান খবর দিয়া রাখি।

পুরো গ্রামে একজনের মাত্র একটা যানবাহন আছে। একটা নছিমন। সেটায় প্রায় ১৫ জন মানুষ আটে। নসিমন চালক বেলা ৩ টার দিকে ১৫ জনকে নিয়ে বানিয়াখালি বাজারে যান বাজার করতে৷

পুরো গ্রামে মাত্র একজন নারী স্বাবলম্বী। তার স্বামী পরের জমি চাষ করেন, পুরো গ্রামের আর বাকি সবার মতো। তিনি নিজে টাকা বাচিয়ে গরু পালেন ৫ টা, ভেড়া পালেন ১৮ টা, ছাগল পালেন ৪ টা, হাস ১০৮ টা, মুরগি ২৬ টা। দুইটা পুকুরে মাছ। পুকুরে উনি তেলাপিয়া চাষ করেন।

সুমিত্রা দিদির বাড়িতে তখন কালি পুজার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, উনি সারা দিন উপোস। এর মধ্যে আমাকে উনার ছোটো খামারটা দেখালেন। দেবরকে দিয়ে আম পারিয়ে খাওয়ালেন। গ্রামের সুখদুঃখ নিয়ে আলাপ করার জন্য মেম্বারকে ডেকে আনলেন। উনি উপোস রেখেই অতিথি সামলাচ্ছেন, অতিথি নারায়ন।

মেম্বার আমার খোজখবর নিলেন। ঢাকা থেকে সাহায্য করতে আসছি কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন- সাহায্য যদি করেন সরাসরি এদের হাতে দিয়েন। এরা কাম কইরা খায়। সরকারি দান সব ইউনিয়ন পরিষদ আইসা আটকায়া যায়। এদের হাত পর্যন্ত আসে না। আর বেসরকারি দান বছর বছর করে কিছু। লাভ হইতেছেনা। এঞ্জিওগুলা থাকে ঋণের ধান্ধায়।

গ্রামে ৮০-৯০ জন পড়াশোনা করার মতো বাচ্চাকাচ্চার মন্দিরভিত্তিক একটা শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে, সেখানে ক খ গ শেখানো হয়। ১৩-১৪ বছরে মেয়েদের আর ১৭-১৮ বছরে ছেলেদের বিয়ে হয়ে যায়। বংশপরম্পরায় এরা অন্যের ক্ষেতে মজুর দেয়। পুরুষ নারী নির্বিশেষে এরা অন্যের জমিতে মজুর দেয়। প্রত্যেক দিন কামাই করা লাগে। একদিন কামাই নাই তো খাবার নাই।

শহরগুলো যেখানে ডাস্টবিন হয়ে পরে আছে; উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে থাকা, এক সবপেয়েছির বাংলাদেশের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে আমরা আর কি আশা করি!

13 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৬

অনাচার মানে মূলত যে আচরনটা করার কথা সেটা না করা। আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে, সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে আচরন করাকেই অনাচার বলে। অনাচারের আবার বিভিন্ন মাত্রা আছে। বড়, ছোটো অনাচার। যেমন বাইক চালানোর সময় হেলমেট না পরা ছোটো অনাচার। বাইক চালানোর কিছু আদবকায়দা আছে। এরমধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরা। এতে নিজের মঙ্গল। হেলমেটের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় চালকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমে আসে। 

বড় অনাচার কোনটা? যে অনাচার বৃহৎ সমাজ বা রাষ্ট্র বা জনগণের বিরুদ্ধে। যেমন দুর্নীতি। এসপি হারুনের ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে রাষ্ট্র এবং জনগণের বিরুদ্ধে অনাচার। একজন এসপির বেতন কতো? তার পরিবারের কতোজন চাকরি বা ব্যবসা করে? কতোজনের কতো বছরের কামাই এই ৪ হাজার কোটি টাকা। জনগণের কষ্টের টাকা নিজের আমেরিকায় বাড়ি কিনার পেছনে ব্যয় করার যে মানসিকতা তাই বড় অনাচার। 

ছোটো অনাচার দুই-একবার বললে বন্ধ হয়। কেউ একজন হেলমেট পরছেনা, কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করলে, ১-২ বার জরিমানা করলেই পরা শুরু করবে। নিজে পরবে, আরেকজনকে বলবে- ব্যাটা হেলমেট পর। কিন্তু বড় অনাচার এইভাবে বন্ধ হয় না। আমেরিকায় যে বাড়ি কিনতে গেছে সেকি আর দেশে আসবে? সে কি জানেনা দেশে আসলে তার কি হতে পারে? বড় অনাচার বন্ধ করার একটাই উপায়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। তাতে যতো কষ্টই আসুক না কেন! অনাচার প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধ শক্ত হবে। কারণ যে খারাপ লোকটা আমেরিকা বাড়ি কিনতে যাচ্ছে তারে আপনি গিয়া বললেন- ভাই, বাড়িটা কিন্নেন না। আর সে শুনলো!? 

সে কখনো শুনবে না। কারণ আপনার কথা শুনলে, জনগণের কথা ভাবলে তার ব্যক্তিগত সুখশান্তি ব্যহত হবে। জনগণের দুইবেলা খাবারের চে, তার কাছে তার বাচ্চার আমেরিকার বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে কি করতে হবে? তাকে প্রথমে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হব। সে যদি আমেরিকা থাকে আমেরিকার বাংলাদেশী কম্যুনিটি তাকে বয়কট করবে। এবং বাকী কম্যুনিটিগুলোতে তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তাকে দেখিয়ে দিয়ে বলতে হবে- এই লোক বাংলাদেশের জনগণের হক মেরে খেয়ে আমেরিকা এসে আমোদফুর্তি করছে। এবং এর পাশাপাশি তাকে আইন ও বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করতে হবে। দেশীয় আইনে তার বিচার হতে হবে। সরকার গরিমসি করলে জনতাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণশুনানি করবে। কারণ জনতাই সরকার। 

বিচার বা গণশুনানির রায় আমেরিকা বা যে দেশে সে থাকবে সেখানে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা দেশে এম্বাসি ঘেরাও করে হোক বা বিদেশে মিশন পাঠিয়ে হোক। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সে থাকুক না কেন, তার সাথে থাকা অর্থসম্পদ বাংলাদেশের জনগণের কষ্টের কামাই। 

এসপি হারুন বা আমেরিকায় বাড়ি উদাহরণ মাত্র। কতো শত দুর্নীতির মধ্য দিয়ে জাতি এক অস্থির সময় পার করছে, তার ইয়ত্তা নাই। বাংলাদেশের দুর্নীতি বাইরে থেকে এসে কেউ বন্ধ করবে না। এটা বন্ধ করতে হবে বাংলাদেশীদেরই। আজ করলেও করবেন, কাল করলেও করবেন। তাহলে আজ কেন নয়? কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন। 

সাম্প্রতিক খবর, ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির পরিমান ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকে চাকরি করেন মাত্রই জানেন, ব্যাংকগুলোতে টাকা নাই, আছে কেবল কাগজ আর হিসাব। এই ঘাটতি সরকার আর ব্যাংকগুলো কোত্থেকে পূরন করবে কে জানে? মুদ্রাস্ফিতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, ক্রয়ক্ষমতা কমছে। সাধারণ মানুষ এইসব টার্ম বোঝেনা। তারা বোঝে ৩৫ টাকার চাল ৫০ টাকা হইছে। আগে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতো, এখন আধা কেজি কিনা সেখানে আলু বাড়ায়া দিয়া রানতে হবে। তাদের কণ্ঠ হয়ে কথা বলুন। 

কেন কথা বলবেন? দেশ দুর্নীতিমুক্ত হইয়ে আগায়া গেলে আপনারই লাভ। আপনার বাচ্চার লাভ, সে বড় হয়ে নিজেকে সভ্য বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতে পারবে। আপনার ভাস্তির লাভ, যার বয়স এখন ৩ বছর। সে রাতে কাজ শেষ করে নির্ভয়ে বাসায় আসতে পারবে। রাতে আপনার নাতিকে গল্প শোনাবে, আগে বাংলাদেশে দুর্নীতি ছিলো, কোনো কাজ ঠিকমতো হতো না, এখন দেখো এগুলো নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু মুক্তি আসে নাই। যে অনাচারে আগের বৃটিশরা, পাকিস্তানিরা আমাদের ফেলে রেখেছিলো; আফসোস, এখন নিজের জাতির লোকেরাই সেই আচরন করে। এই কারণে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরেও আমাদের ইনায়া বিনায়া বলতে হয়- সুশাসন আনেন, দুর্নীতি কমান, স্বচ্ছতা বাড়ান, জবাবদিহিতা বাড়ান। মনে রাখবেন, সরকার সবসময় তোষামোদকারীদের দখলে থাকে। তারা সরকারের সামনে মধু ঢালে, আর পেছনে পুকুর কাটতে কাটতে সমুদ্র বানায়া ফেলে। কিন্তু সরকার কে? 

১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্টব্যাটেন, ভারতবর্ষের শেষ ভাইসরয়, বৃটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার তেজস্বী পোষাকগুলো রাষ্ট্রপতির ব্যান্ডবাদকদের দিয়ে দেয়া হলো। তাই বেশি অহংকার করতে নেই। কিসের অহংকার? আজকে যেটা মাউন্টব্যাটেনের পোষাক, কালকে সেটা ব্যান্ডবাদকের পোষাক। সরকার আসে, থাকে, চলে যায়। দেশ জনতার, দেশ চলবেও জনতার ইচ্ছা অনুযায়ী। জনতাই সরকার। 

জনতা যদি খারাপ থাকে, জনতা যদি কষ্টে থাকে, জনতা যদি না খায়া থাকে, তারা যদি দেশ থেকে চলে গিয়ে সুখী হতে চায়, সরকার দিয়া আমরা কি করবো? জনতার স্বার্থই জাতীয় স্বার্থ। 

তাই, জয় জনতা শ্লোগান তুলুন, জনগণের পক্ষে থাকুন। 

9 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৫

পৃথিবীর ইতিহাসে সৌদি রাজপরিবার একটা অভিশাপের নাম। পৃথিবীর একমাত্র দেশ সৌদি আরব যেদেশের নাম একটা পরিবারের নামে। সৌদি আরব কেবল তেল আর টাকার জোরে এমন এমন আচরণ করে, অন্যান্য দেশ এরকম করলে অনেক আগেই তাদের বোমা মেরে প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেয়া হতো। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ন্যুনতম প্রতিবাদ বা সমালোচনাও সহ্য করেনা সৌদি সরকার। যেনতেন ভাবে তাদের দমন করাই সৌদি সরকারের কৌশল।

স্বাধীনচেতা খাশোগিকে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের লোকেরা। আরব বসন্তের সময়কালের এক বিদ্রোহী কিশোরকেও হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি সরকার৷ আরব বসন্তের সময়ে তার বয়স ছিলো ১০ বছর। বিরোধী মতামত দমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমেরিকা উত্তর কোরিয়া বা চীনের বিষয়ে যতটুকু সোচ্চার তার ৫% ও যদি সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে করতো, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

এগুলোতো ব্যক্তি দমন। পুরো একটা জাতির ঘাড়ে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে বসে আছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এই গরিব ভুক্তভোগীর নাম ইয়েমেন। ইয়েমেনে আরব বসন্ত চলাকালীন সময়ে সরকার পদত্যাগের পর গৃহযুদ্ধের উপক্রম হয়। দেশ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। রাজধানী সানা আর উত্তর ইয়েমেনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর বন্দরনগরী এডেন, দক্ষিন ও পূর্ব ইয়েমেন সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ। গৃহযুদ্ধের আগুনে আলুপোড়া দিতে আসে সৌদি আরব। সুন্নি বিদ্রোহীদের অর্থ আর অস্ত্র সাহায্য দেয় তারা। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে হাজির হয় ইরান। তারাও শিয়াদের অস্ত্র আর অর্থ সাহায্য দেয়। প্রক্সি-ওয়ার খেলা চলার প্রাক্কালে সৌদি সরাসরি আক্রমণ করে বসে ইয়েমেন।

যুদ্ধ করার কিছু আদবকায়দা আছে। বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ করা যাবে না। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টারে বোমা মারা যাবে না। বিয়ের অনুষ্ঠান, মৃতের সৎকার অনুষ্ঠানে আক্রমণ করা যাবে না। বর্বর রাষ্ট্র সৌদি আরব এই প্রত্যেকটাই অমান্য করেছে। তারা স্কুলে, হাসপাতালে, মসজিদে বোমা ফেলেছে। এমনকি জানাজার নামাজেও বোমা ফেলেছে। ঐদিন ইয়েমেনের এক এতিম বাচ্চা সাক্ষাতকারে বলছে- 'আমরা এখন ৬ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা আর জানাজা।' এইরকম হাজার হাজার ইয়েমেনি বাচ্চাকে এতিম করছে সৌদি আরব সরকার। ইয়েমেনে আজকে যে দুর্ভিক্ষ, লোকেরা ঘাস আর পাতা খেয়ে রোজা রাখলো আর ইফতার করলো এর পুরো দায়ভার সৌদি আরবের৷

ইরানের সাথে সৌদির পুরান ঝামেলা। ইরানের বিপ্লবী সরকারকে সৌদি আরব সহ্যই করতে পারেনা। কিছুদিন আগে ইসরায়েলের এক মন্ত্রীকে সৌদির আরেক মন্ত্রী গিয়া বুঝায়া আসছে, ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করলে সৌদি আরব ইসরায়েলের পাশে থাকবে। অন্য মুসলিম দেশের কেউ ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ইহুদি হয়ে যায়, আর সৌদি আরবের মন্ত্রীরা ইসরায়েল ঘুইরা আসলেও তারা মুসলিম জাতির অভিভাবক হিসাবে বহাল থাকে। তাদের মুসলমানিত্ব কি বাকিদের চেয়ে বেশি?

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের অভ্যুদয় না হওয়ার পেছনে আমেরিকা-ইসরায়েলের যতটুকু দায়, সৌদি আরবেরও ততটুকু দায়। সৌদি সরকার চায়না ফিলিস্তিন স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। এই ঝামেলা তারা জিইয়ে রাখতে চায়। ঝামেলা জিইয়ে রেখে যতটুকু লাভ আর ব্যবসা হবে, স্বাধীন দেশ হয়ে গেলে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে সৌদির। ফিলিস্তিন ইস্যুতে টুকটাক মাতব্বরি করে সৌদি আরব, সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক বিষফোড়া আইএসের অর্থ ও অস্ত্রের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সৌদি আরব। আইএস যে মতাদর্শ পোষন করে, সৌদি আরব সেই মতাদর্শের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। সারা পৃথিবীতে ইসলামের উগ্রবাদী রূপ- সালাফিবাদ ছড়ায়া দেয়ার পেছনে সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ মদদ বিদ্যমান। সৌদি আরব এতো টাকা কোথা থেকে পায়?

সৌদি আরবের টাকার উৎস- তেলবিক্রি আর হজ্জ-ওমরাহ থেকে আয়। তেলবিক্রির টাকায় তারা উগ্রবাদ প্রচার করে, নিরিহ জাতিগুলোর উপর যুদ্ধ চাপায়া দেয়। আর হজ্জ-ওমরাহের টাকায় করে ভোগবিলাস। কেমন ভোগবিলাস? বিল ক্লিনটন তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, তিনি একবার সৌদি আরবে এক যুবরাজের সাথে বসে মদ্যপান করছিলেন। একসময় যুবরাজের এক সহকারী এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর যুবরাজ আসলে ক্লিনটন জিজ্ঞাসা করলেন- যুবরাজ কি কোনো কাজে গিয়েছিলেন কিনা? যুবরাজ জবাব দেয়, তেমন কিছুনা, এক লোক মদ পান করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে, তাকে দোররা মারার শাস্তি দিয়ে আসলাম। ক্লিনটন এই ঘটনায় অবাক হন। যুবরাজ নিজেই বিচারকার্য এর আগে এবং পরে মদ খেলেন। কিন্তু শাস্তি তো কেবল সাধারণ মুসলমানদের জন্য।

পরকালে আল্লাহ বিচার করার সময় সৌদি যুবরাজদের ডেকে বলবেন, রাজপরিবারের সদস্যদের সব গুনাহ মাফ। কেবল সাধারন সৌদিয়ানরা লাইনে দাঁড়াও। মদ, নারী, দামী গাড়ি আর প্রাসাদ এই হলো সৌদি যুবরাজদের ভোগবিলাস। সৌদি যুবরাজের সংখ্যা কম হইলেও হইত। সৌদি আরবে যুবরাজের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০০। একদিকে তারা নিজেদের দাবী করে মক্কা-মদিনা পবিত্র দুই নগরের রক্ষক অপরদিকে আচার-আচরন দেখলে মনে হয় তারা দুনিয়ায় শাদ্দাদের বেহেশতে আছে।

সৌদি আরবকে মদদ দেয় আমেরিকা, আমেরিকার স্বার্থও সৌদি দেইখা রাখে। ডলারের দাম একবার কমতির দিকে ছিলো। সবদেশ নিজের মুদ্রার বিপরীতে স্বর্ণকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে, স্বর্ণ মজুদ রাখে৷ ডলার পতনের সেই সময় সৌদি ডলার মজুদ করে, ডলারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে। মুসলমানরা সৌদি আরব নিয়া কথাই বলতে চাননা।

সৌদি আরব নিয়া কথা বলতে চাননা কারন তারা কাবা শরীফ দেইখা রাখেন। আসলে সৌদিরা কাবা শরীফ দেইখা রাখে না, কাবা থেকে আয়ের টাকা দিয়া মৌজমাস্তি করে। আর আপনিতো কাবা শরীফ দেইখা রাখার বিরোধীতা করতেছেন না। বিরোধীতা করতেছেন তাদের অন্যায় কাজের। অন্যায় কাজ যে কেউ করতে পারে। আপনি সেটা বিরোধিতা করার অধিকার রাখেন।

আপনার হজ্জের টাকায় সৌদিরা অস্ত্র কিনা সেটা দিয়া ইয়েমেনে যুদ্ধ বাধায়া, ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ লাগায়া, ইয়েমেনি বাচ্চাদের এতিম কইরা, কেমন ইসলামের উদাহরন তৈরি করতেছে এই প্রশ্ন মুসলমান হিসাবে আপনি করতেই পারেন। বরং অন্যায়ের সাথে আপোষ করা, অন্যায়ের সমালোচনা না করাটাই দুর্বল ঈমানের লক্ষন। এই কারনেই হজরত আলী বলেন- 'যারা অনাচার করে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাটাও অনাচার।'

বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষ মুক্তি পাক।
রাজতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হোক।

8 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৪

বাংলাদেশের সাথে নিউজিল্যান্ডের পুরা খেলা দেখলাম। বাংলাদেশ টিম আর আগের মতো ছাইড়া দিয়া খেলতেছেনা। হারছে, কিন্তু জিতার মতো কইরা হারছে। বাংলাদেশের খেলাই এখন একমাত্র বস্তু যেটা পুরো জাতিকে একসাথে রাখতে পারে। একমাত্র খেলাতেই বাংলাদেশ তার আবেগ দেখানোর জায়গা পায়। 

আর সব জায়গায় মতের অনৈক্য। রাজনীতি এখনো তার শেপে আসে নাই। অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে কোনো সুদুরপ্রসারী নীতি এবং লক্ষ্য নাই। যা কিছু আছে সব জোড়াতালি। আর যা কিছু উন্নয়ন চোখে দেখা যাইতাছে সব ঋণের টাকায়। মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, সেতু আর বাধ। ঋণ নিয়া একটা জাতি কতোদূর আগাইতে পারে। 

চীনের দিকে তাকান। আমাদের বেশিরভাগ ঋণই আসে চীন থেকে। চীন শুধু আমাদের ঋণ দেয় না, অধিকাংশ গরিব আর মধ্যবিত্ত দেশ চলে চীনের টাকায়। ঋণ আসলে তারসাথে আসে সুদ আর শর্ত। বিশ্বব্যাংকের একটা ঋণের শর্ত ছিলো কৃষিখাতে এই টাকা ব্যয় করা যাবে না। মানে যে খাত থেকে আপনি দ্রুত টাকাটা তুইলা ফেলতে পারবেন, ঋণ ফেরত দিতে পারবেন সেই খাতে টাকা খরচ করা যাবে না। খরচ করতে হবে বিল্ডিং বানানোর খাতে। যাতে টাকাটা আটকা পরে, সুদ বাড়ে। সুদ মিটাইতে গিয়া আরো ঋণ নেন, ঋণের দুষ্টচক্রে পরেন। মানে কেউ আপনেরে টাকা দিয়া কইলো, এইটা দিয়া বাজার কইরা খাইতে পারবেন না, দোকান দিয়া বসতে পারবেন না। এইটা দিয়া জামাকাপড় কিনতে পারবেন আর গায়ে সেন্ট লাগায়া ঘুরতে পারবেন। 

চীন আজকের যে সক্ষমতা অর্জন করছে সেটা ঋণের টাকা নিয়া করে নাই। তারা নিজেরা কাজ করে সেটা অর্জন করছে৷ তার জন্য চীনে দুর্ভিক্ষ হইছে, সেখানে প্রচুর লোক না খায়া মারা গেছে, কিন্তু চীন কাজ করা থামায় নাই। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ২ বছর বন্ধ ছিলো। সেখানকার ছাত্রদের কাজ ছিলো গ্রামে গ্রামে গিয়া কৃষকদের ট্রেনিং দেয়া। দুইচাইর কলম পইড়া আমলা হওয়ার চে চীন গুরুত্ব দিছে জাতীয় ট্রেনিং আর প্রকৃত শিক্ষারে। 

চীনও আমাদের মতো কৃষিজীবী সমাজ ছিলো। তাহলে কি করতে হবে? প্রথমে কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত কৃষিফসল বাইরে বিক্রি করতে হবে। সেই টাকা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি দিতে হবে৷ এক স্টেপ, তারপর আরেকটা। টাকাটা চক্রাকারে ঘুরবে, বাড়বে। এখন চীন কই? পৃথিবীর জাতিসমূহের মহাজন, পরাশক্তি হওয়ার পথে। 

চীন আর বাংলাদেশের ক্রিকেট একদিনে এই জায়গায় পৌছায় নাই৷ এরজন্য দরকার পরিকল্পনা, শিক্ষা ও ট্রেনিং, ধৈর্য ও প্রচেষ্টা, কাজ করে যাওয়ার মানসিকতা এবং সঠিক জায়গায় সঠিক পরিশ্রমটা করা। কতো বছর এমন হইছে বাংলাদেশ টাকার অভাবে ভালো কোচ নিতে পারে নাই। খেলোয়াড়দের মনোবল ভাঙ্গে নাই। বিদেশ খেলতে গিয়া সব ম্যাচ হাইরা আসছে, তাও খেলা ছাড়ে নাই। ভুল থেকে শিখছে, পরের ম্যাচে সেটার প্রয়োগ করছে। জাতীয় জীবনেও আমাদের এই মনোভাব থাকা দরকার। নিজের যতটুকু আছে তা দিয়ে শুরু করা। 

কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবেনা। যার যখন প্রয়োজন কেবল সেই আপনার কাছে আসবে, তার প্রয়োজন শেষ হলে আবার চলে যাবে। আপনার নিজেকে সাহায্য করা লাগবে আপনার নিজের। আপনি সবচেয়ে ভালো জানেন আপনার প্রয়োজন-চাহিদা। আপনার সমস্যা আপনার নিজেকে খুজে বের করতে হবে, সমাধানও আপনার খুজে বের করা লাগবে৷ 

4 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৩

আড়ংয়ের ঘটনাটায় অবাক হওয়ার কিছু নাই। সমাজে অসৎ লোকের সংখ্যা বেশি। সমাজে ৭০০ টাকার সুতি পাঞ্জাবি ১৫০০ টাকায় বেচার লোক বেশি। রোজা আসলে দাম বাড়ানোর লোক বেশি, ভাড়া বাড়ানোর লোক বেশি। কিছু লোক থাকে সৎ। তাদের বিভিন্নভাবে আটকানো হয়। হুমকি ধামকি, জেল-জরিমানা। সরকারের ভেতরে থাকলেও আপনি সংখ্যালঘু। বদলি করা হবে, ওএসডি করা হবে। উপর থেকে স্যারেরা প্রেসার দিবেন, কি দরকার বড় লোকজনের সাথে দাঙ্গাহাঙ্গামায় যাওয়ার। 

বাংলাদেশ আজ বড় দুইটা দলে বিভক্ত। একদিকে খেটে খাওয়া লোকেরা। যারা দিনের খরচ তুলতে সূর্য উদয় থেকে অস্ত পরিশ্রম করেন। সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খান। বাচ্চাদের ভালো খাওয়ানোর স্বপ্ন দেখতে দেখতে রাত পার করেন। লিচু খেতে চাইলে বাচ্চাদের নিজের হাতে গলা টিপে মেরে টয়লেটে রেখে আসেন।  

আরেকদিকে সহজে বড়লোক হওয়ার ধান্ধায় ঘোরা লোকেরা। এরা এস্পি হারুন। মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে এরা, আম্রিকায় বাড়ি কিনতে গিয়ে ধরা খায়। এদিকে সব বড় ব্যবসায়ীরা, মজুদদাররা, সিন্ডিকেটের লোকেরা আর অসৎ রাজনীতিবিদরা। এরাই রোজায় খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, দাম বাড়িয়ে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত লোকদের কষ্ট দেয়। এরা বেশি দামে জিনিশ বিক্রি করে, ভেজাল জিনিশ বিক্রি করে রাতারাতি ধনী হওয়ার চেষ্টা করে। 

আজকে বাংলাদেশে এই দুই দল মুখোমুখি অবস্থানে। বাংলাদেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষ আর এগুলো সহ্য করতে পারছেনা। যারা কিছুটা সংবেদনশীল তারা তাদের মতামত বিভিন্ন সময় বলে চলেছেন। একদিকে উন্নয়ন এর গল্প আরেকদিকে হাহাকার। 

হজরত আলীর একটা কথা মনে পরলো। তিনি বলেছিলেন, 'যারা অনাচার করে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাও এক ধরনের অনাচার।' 

অনাচার এইখানে বৃহদার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অনাচার বলতে এইখানে জুলুম-অন্যায় থেকে শুরু করে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, খাদ্য মজুদ এবং খাদ্যে বিষ দেয়া সবই বোঝানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায় সবক্ষেত্রে এই অনাচার সংগঠিত হতে পারে। 

লোকেরা ইতিমধ্যে অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করছে। দেশকে আগায়া নিয়া যাইতে হইলে এই কথা বলার বিকল্প নাই। বাংলাদেশকে জাপান-সিঙ্গাপুর বানানোর দরকার নাই। বাংলাদেশকে বাংলাদেশই বানান। সিঙ্গাপুর কি কখনো ব্রাজিল হইতে চাইছে, ফ্রান্স হইতে চাইছে? বাংলাদেশকে যারা সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলে তারা একে মূর্খ, জানেনা কখন একটা দেশের উন্নয়ন হয়, দ্বিতীয়ত এরা মিথ্যুক, এরা জানে বাংলাদেশ কখনো সিঙ্গাপুর হবেনা। এরমধ্যে যতটুক লুটপাট করা যায়। 

বাংলাদেশকে বাংলাদেশই বানান। এটা বানানো খুব বেশি কষ্ট না। যার যা কাজ তা ঠিক মতো করলেই দেশ আগাবে। বাংলাদেশের মানুষদের অনেকে অলস বলেন, অকর্মঠ বলেন, আসলেই কি তাই? যে দেশের মেয়েরা-মায়েরা ভোর ৫ টায় উঠে বান্নাবান্না করে ৭ টায় গার্মেন্টসে যায়, আবার রাত ৮ টায় বের হয়ে এসে বাসার কাজ করে রাত ১২ টায় ঘুমাতে যায়, তাদের আপনি অলস বলেন? অকর্মঠ বলেন? কাজ তারা ঠিকই করতেছে,পরিশ্রম ও করতেছে, দাম পাইতেছে না। 

হজরত আলীর কথায় আসি। যারা এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে থাকবেন, যারা তাদের সাথে এমনকি ভালো ব্যবহার করবেন তারা অনাচারী। খারাপ রাজনীতিবিদদের সাথে যারা ভালো ব্যবহার করবেন তারাও অনাচার করবেন। অসৎ ব্যবসায়ীদের সাথে যারা ভালো ব্যবহার করবেন তারাও অনাচার করবেন। অন্যায়ের সহযোগী হিসেবে আপনারাও ইতিহাসের ডাস্টবিন এ নিক্ষিপ্ত হবেন।

গুটিকয়েক লোকের জন্য বাংলাদেশ আগাইতাছে না। তাদের ভয় দেখাইতে হবে, ভূতের ভয়, গরিব মানুষের ভূতের ভয়।