বাংলাদেশের সাথে নিউজিল্যান্ডের পুরা খেলা দেখলাম। বাংলাদেশ টিম আর আগের মতো ছাইড়া দিয়া খেলতেছেনা। হারছে, কিন্তু জিতার মতো কইরা হারছে। বাংলাদেশের খেলাই এখন একমাত্র বস্তু যেটা পুরো জাতিকে একসাথে রাখতে পারে। একমাত্র খেলাতেই বাংলাদেশ তার আবেগ দেখানোর জায়গা পায়।
আর সব জায়গায় মতের অনৈক্য। রাজনীতি এখনো তার শেপে আসে নাই। অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে কোনো সুদুরপ্রসারী নীতি এবং লক্ষ্য নাই। যা কিছু আছে সব জোড়াতালি। আর যা কিছু উন্নয়ন চোখে দেখা যাইতাছে সব ঋণের টাকায়। মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, সেতু আর বাধ। ঋণ নিয়া একটা জাতি কতোদূর আগাইতে পারে।
চীনের দিকে তাকান। আমাদের বেশিরভাগ ঋণই আসে চীন থেকে। চীন শুধু আমাদের ঋণ দেয় না, অধিকাংশ গরিব আর মধ্যবিত্ত দেশ চলে চীনের টাকায়। ঋণ আসলে তারসাথে আসে সুদ আর শর্ত। বিশ্বব্যাংকের একটা ঋণের শর্ত ছিলো কৃষিখাতে এই টাকা ব্যয় করা যাবে না। মানে যে খাত থেকে আপনি দ্রুত টাকাটা তুইলা ফেলতে পারবেন, ঋণ ফেরত দিতে পারবেন সেই খাতে টাকা খরচ করা যাবে না। খরচ করতে হবে বিল্ডিং বানানোর খাতে। যাতে টাকাটা আটকা পরে, সুদ বাড়ে। সুদ মিটাইতে গিয়া আরো ঋণ নেন, ঋণের দুষ্টচক্রে পরেন। মানে কেউ আপনেরে টাকা দিয়া কইলো, এইটা দিয়া বাজার কইরা খাইতে পারবেন না, দোকান দিয়া বসতে পারবেন না। এইটা দিয়া জামাকাপড় কিনতে পারবেন আর গায়ে সেন্ট লাগায়া ঘুরতে পারবেন।
চীন আজকের যে সক্ষমতা অর্জন করছে সেটা ঋণের টাকা নিয়া করে নাই। তারা নিজেরা কাজ করে সেটা অর্জন করছে৷ তার জন্য চীনে দুর্ভিক্ষ হইছে, সেখানে প্রচুর লোক না খায়া মারা গেছে, কিন্তু চীন কাজ করা থামায় নাই। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ২ বছর বন্ধ ছিলো। সেখানকার ছাত্রদের কাজ ছিলো গ্রামে গ্রামে গিয়া কৃষকদের ট্রেনিং দেয়া। দুইচাইর কলম পইড়া আমলা হওয়ার চে চীন গুরুত্ব দিছে জাতীয় ট্রেনিং আর প্রকৃত শিক্ষারে।
চীনও আমাদের মতো কৃষিজীবী সমাজ ছিলো। তাহলে কি করতে হবে? প্রথমে কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত কৃষিফসল বাইরে বিক্রি করতে হবে। সেই টাকা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি দিতে হবে৷ এক স্টেপ, তারপর আরেকটা। টাকাটা চক্রাকারে ঘুরবে, বাড়বে। এখন চীন কই? পৃথিবীর জাতিসমূহের মহাজন, পরাশক্তি হওয়ার পথে।
চীন আর বাংলাদেশের ক্রিকেট একদিনে এই জায়গায় পৌছায় নাই৷ এরজন্য দরকার পরিকল্পনা, শিক্ষা ও ট্রেনিং, ধৈর্য ও প্রচেষ্টা, কাজ করে যাওয়ার মানসিকতা এবং সঠিক জায়গায় সঠিক পরিশ্রমটা করা। কতো বছর এমন হইছে বাংলাদেশ টাকার অভাবে ভালো কোচ নিতে পারে নাই। খেলোয়াড়দের মনোবল ভাঙ্গে নাই। বিদেশ খেলতে গিয়া সব ম্যাচ হাইরা আসছে, তাও খেলা ছাড়ে নাই। ভুল থেকে শিখছে, পরের ম্যাচে সেটার প্রয়োগ করছে। জাতীয় জীবনেও আমাদের এই মনোভাব থাকা দরকার। নিজের যতটুকু আছে তা দিয়ে শুরু করা।
কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবেনা। যার যখন প্রয়োজন কেবল সেই আপনার কাছে আসবে, তার প্রয়োজন শেষ হলে আবার চলে যাবে। আপনার নিজেকে সাহায্য করা লাগবে আপনার নিজের। আপনি সবচেয়ে ভালো জানেন আপনার প্রয়োজন-চাহিদা। আপনার সমস্যা আপনার নিজেকে খুজে বের করতে হবে, সমাধানও আপনার খুজে বের করা লাগবে৷
No comments:
Post a Comment