4 June 2019

দৈনন্দিন আলাপ ১৩

আড়ংয়ের ঘটনাটায় অবাক হওয়ার কিছু নাই। সমাজে অসৎ লোকের সংখ্যা বেশি। সমাজে ৭০০ টাকার সুতি পাঞ্জাবি ১৫০০ টাকায় বেচার লোক বেশি। রোজা আসলে দাম বাড়ানোর লোক বেশি, ভাড়া বাড়ানোর লোক বেশি। কিছু লোক থাকে সৎ। তাদের বিভিন্নভাবে আটকানো হয়। হুমকি ধামকি, জেল-জরিমানা। সরকারের ভেতরে থাকলেও আপনি সংখ্যালঘু। বদলি করা হবে, ওএসডি করা হবে। উপর থেকে স্যারেরা প্রেসার দিবেন, কি দরকার বড় লোকজনের সাথে দাঙ্গাহাঙ্গামায় যাওয়ার। 

বাংলাদেশ আজ বড় দুইটা দলে বিভক্ত। একদিকে খেটে খাওয়া লোকেরা। যারা দিনের খরচ তুলতে সূর্য উদয় থেকে অস্ত পরিশ্রম করেন। সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খান। বাচ্চাদের ভালো খাওয়ানোর স্বপ্ন দেখতে দেখতে রাত পার করেন। লিচু খেতে চাইলে বাচ্চাদের নিজের হাতে গলা টিপে মেরে টয়লেটে রেখে আসেন।  

আরেকদিকে সহজে বড়লোক হওয়ার ধান্ধায় ঘোরা লোকেরা। এরা এস্পি হারুন। মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে এরা, আম্রিকায় বাড়ি কিনতে গিয়ে ধরা খায়। এদিকে সব বড় ব্যবসায়ীরা, মজুদদাররা, সিন্ডিকেটের লোকেরা আর অসৎ রাজনীতিবিদরা। এরাই রোজায় খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, দাম বাড়িয়ে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত লোকদের কষ্ট দেয়। এরা বেশি দামে জিনিশ বিক্রি করে, ভেজাল জিনিশ বিক্রি করে রাতারাতি ধনী হওয়ার চেষ্টা করে। 

আজকে বাংলাদেশে এই দুই দল মুখোমুখি অবস্থানে। বাংলাদেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষ আর এগুলো সহ্য করতে পারছেনা। যারা কিছুটা সংবেদনশীল তারা তাদের মতামত বিভিন্ন সময় বলে চলেছেন। একদিকে উন্নয়ন এর গল্প আরেকদিকে হাহাকার। 

হজরত আলীর একটা কথা মনে পরলো। তিনি বলেছিলেন, 'যারা অনাচার করে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাও এক ধরনের অনাচার।' 

অনাচার এইখানে বৃহদার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অনাচার বলতে এইখানে জুলুম-অন্যায় থেকে শুরু করে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, খাদ্য মজুদ এবং খাদ্যে বিষ দেয়া সবই বোঝানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায় সবক্ষেত্রে এই অনাচার সংগঠিত হতে পারে। 

লোকেরা ইতিমধ্যে অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করছে। দেশকে আগায়া নিয়া যাইতে হইলে এই কথা বলার বিকল্প নাই। বাংলাদেশকে জাপান-সিঙ্গাপুর বানানোর দরকার নাই। বাংলাদেশকে বাংলাদেশই বানান। সিঙ্গাপুর কি কখনো ব্রাজিল হইতে চাইছে, ফ্রান্স হইতে চাইছে? বাংলাদেশকে যারা সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলে তারা একে মূর্খ, জানেনা কখন একটা দেশের উন্নয়ন হয়, দ্বিতীয়ত এরা মিথ্যুক, এরা জানে বাংলাদেশ কখনো সিঙ্গাপুর হবেনা। এরমধ্যে যতটুক লুটপাট করা যায়। 

বাংলাদেশকে বাংলাদেশই বানান। এটা বানানো খুব বেশি কষ্ট না। যার যা কাজ তা ঠিক মতো করলেই দেশ আগাবে। বাংলাদেশের মানুষদের অনেকে অলস বলেন, অকর্মঠ বলেন, আসলেই কি তাই? যে দেশের মেয়েরা-মায়েরা ভোর ৫ টায় উঠে বান্নাবান্না করে ৭ টায় গার্মেন্টসে যায়, আবার রাত ৮ টায় বের হয়ে এসে বাসার কাজ করে রাত ১২ টায় ঘুমাতে যায়, তাদের আপনি অলস বলেন? অকর্মঠ বলেন? কাজ তারা ঠিকই করতেছে,পরিশ্রম ও করতেছে, দাম পাইতেছে না। 

হজরত আলীর কথায় আসি। যারা এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে থাকবেন, যারা তাদের সাথে এমনকি ভালো ব্যবহার করবেন তারা অনাচারী। খারাপ রাজনীতিবিদদের সাথে যারা ভালো ব্যবহার করবেন তারাও অনাচার করবেন। অসৎ ব্যবসায়ীদের সাথে যারা ভালো ব্যবহার করবেন তারাও অনাচার করবেন। অন্যায়ের সহযোগী হিসেবে আপনারাও ইতিহাসের ডাস্টবিন এ নিক্ষিপ্ত হবেন।

গুটিকয়েক লোকের জন্য বাংলাদেশ আগাইতাছে না। তাদের ভয় দেখাইতে হবে, ভূতের ভয়, গরিব মানুষের ভূতের ভয়। 

No comments:

Post a Comment