অনাচার মানে মূলত যে আচরনটা করার কথা সেটা না করা। আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে, সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে আচরন করাকেই অনাচার বলে। অনাচারের আবার বিভিন্ন মাত্রা আছে। বড়, ছোটো অনাচার। যেমন বাইক চালানোর সময় হেলমেট না পরা ছোটো অনাচার। বাইক চালানোর কিছু আদবকায়দা আছে। এরমধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরা। এতে নিজের মঙ্গল। হেলমেটের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় চালকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমে আসে।
বড় অনাচার কোনটা? যে অনাচার বৃহৎ সমাজ বা রাষ্ট্র বা জনগণের বিরুদ্ধে। যেমন দুর্নীতি। এসপি হারুনের ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে রাষ্ট্র এবং জনগণের বিরুদ্ধে অনাচার। একজন এসপির বেতন কতো? তার পরিবারের কতোজন চাকরি বা ব্যবসা করে? কতোজনের কতো বছরের কামাই এই ৪ হাজার কোটি টাকা। জনগণের কষ্টের টাকা নিজের আমেরিকায় বাড়ি কিনার পেছনে ব্যয় করার যে মানসিকতা তাই বড় অনাচার।
ছোটো অনাচার দুই-একবার বললে বন্ধ হয়। কেউ একজন হেলমেট পরছেনা, কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করলে, ১-২ বার জরিমানা করলেই পরা শুরু করবে। নিজে পরবে, আরেকজনকে বলবে- ব্যাটা হেলমেট পর। কিন্তু বড় অনাচার এইভাবে বন্ধ হয় না। আমেরিকায় যে বাড়ি কিনতে গেছে সেকি আর দেশে আসবে? সে কি জানেনা দেশে আসলে তার কি হতে পারে? বড় অনাচার বন্ধ করার একটাই উপায়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। তাতে যতো কষ্টই আসুক না কেন! অনাচার প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধ শক্ত হবে। কারণ যে খারাপ লোকটা আমেরিকা বাড়ি কিনতে যাচ্ছে তারে আপনি গিয়া বললেন- ভাই, বাড়িটা কিন্নেন না। আর সে শুনলো!?
সে কখনো শুনবে না। কারণ আপনার কথা শুনলে, জনগণের কথা ভাবলে তার ব্যক্তিগত সুখশান্তি ব্যহত হবে। জনগণের দুইবেলা খাবারের চে, তার কাছে তার বাচ্চার আমেরিকার বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে কি করতে হবে? তাকে প্রথমে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হব। সে যদি আমেরিকা থাকে আমেরিকার বাংলাদেশী কম্যুনিটি তাকে বয়কট করবে। এবং বাকী কম্যুনিটিগুলোতে তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তাকে দেখিয়ে দিয়ে বলতে হবে- এই লোক বাংলাদেশের জনগণের হক মেরে খেয়ে আমেরিকা এসে আমোদফুর্তি করছে। এবং এর পাশাপাশি তাকে আইন ও বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করতে হবে। দেশীয় আইনে তার বিচার হতে হবে। সরকার গরিমসি করলে জনতাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণশুনানি করবে। কারণ জনতাই সরকার।
বিচার বা গণশুনানির রায় আমেরিকা বা যে দেশে সে থাকবে সেখানে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা দেশে এম্বাসি ঘেরাও করে হোক বা বিদেশে মিশন পাঠিয়ে হোক। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সে থাকুক না কেন, তার সাথে থাকা অর্থসম্পদ বাংলাদেশের জনগণের কষ্টের কামাই।
এসপি হারুন বা আমেরিকায় বাড়ি উদাহরণ মাত্র। কতো শত দুর্নীতির মধ্য দিয়ে জাতি এক অস্থির সময় পার করছে, তার ইয়ত্তা নাই। বাংলাদেশের দুর্নীতি বাইরে থেকে এসে কেউ বন্ধ করবে না। এটা বন্ধ করতে হবে বাংলাদেশীদেরই। আজ করলেও করবেন, কাল করলেও করবেন। তাহলে আজ কেন নয়? কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন।
সাম্প্রতিক খবর, ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির পরিমান ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকে চাকরি করেন মাত্রই জানেন, ব্যাংকগুলোতে টাকা নাই, আছে কেবল কাগজ আর হিসাব। এই ঘাটতি সরকার আর ব্যাংকগুলো কোত্থেকে পূরন করবে কে জানে? মুদ্রাস্ফিতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, ক্রয়ক্ষমতা কমছে। সাধারণ মানুষ এইসব টার্ম বোঝেনা। তারা বোঝে ৩৫ টাকার চাল ৫০ টাকা হইছে। আগে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতো, এখন আধা কেজি কিনা সেখানে আলু বাড়ায়া দিয়া রানতে হবে। তাদের কণ্ঠ হয়ে কথা বলুন।
কেন কথা বলবেন? দেশ দুর্নীতিমুক্ত হইয়ে আগায়া গেলে আপনারই লাভ। আপনার বাচ্চার লাভ, সে বড় হয়ে নিজেকে সভ্য বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতে পারবে। আপনার ভাস্তির লাভ, যার বয়স এখন ৩ বছর। সে রাতে কাজ শেষ করে নির্ভয়ে বাসায় আসতে পারবে। রাতে আপনার নাতিকে গল্প শোনাবে, আগে বাংলাদেশে দুর্নীতি ছিলো, কোনো কাজ ঠিকমতো হতো না, এখন দেখো এগুলো নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু মুক্তি আসে নাই। যে অনাচারে আগের বৃটিশরা, পাকিস্তানিরা আমাদের ফেলে রেখেছিলো; আফসোস, এখন নিজের জাতির লোকেরাই সেই আচরন করে। এই কারণে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরেও আমাদের ইনায়া বিনায়া বলতে হয়- সুশাসন আনেন, দুর্নীতি কমান, স্বচ্ছতা বাড়ান, জবাবদিহিতা বাড়ান। মনে রাখবেন, সরকার সবসময় তোষামোদকারীদের দখলে থাকে। তারা সরকারের সামনে মধু ঢালে, আর পেছনে পুকুর কাটতে কাটতে সমুদ্র বানায়া ফেলে। কিন্তু সরকার কে?
১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্টব্যাটেন, ভারতবর্ষের শেষ ভাইসরয়, বৃটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার তেজস্বী পোষাকগুলো রাষ্ট্রপতির ব্যান্ডবাদকদের দিয়ে দেয়া হলো। তাই বেশি অহংকার করতে নেই। কিসের অহংকার? আজকে যেটা মাউন্টব্যাটেনের পোষাক, কালকে সেটা ব্যান্ডবাদকের পোষাক। সরকার আসে, থাকে, চলে যায়। দেশ জনতার, দেশ চলবেও জনতার ইচ্ছা অনুযায়ী। জনতাই সরকার।
জনতা যদি খারাপ থাকে, জনতা যদি কষ্টে থাকে, জনতা যদি না খায়া থাকে, তারা যদি দেশ থেকে চলে গিয়ে সুখী হতে চায়, সরকার দিয়া আমরা কি করবো? জনতার স্বার্থই জাতীয় স্বার্থ।
তাই, জয় জনতা শ্লোগান তুলুন, জনগণের পক্ষে থাকুন।
No comments:
Post a Comment