পৃথিবীর ইতিহাসে সৌদি রাজপরিবার একটা অভিশাপের নাম। পৃথিবীর একমাত্র দেশ সৌদি আরব যেদেশের নাম একটা পরিবারের নামে। সৌদি আরব কেবল তেল আর টাকার জোরে এমন এমন আচরণ করে, অন্যান্য দেশ এরকম করলে অনেক আগেই তাদের বোমা মেরে প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেয়া হতো। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ন্যুনতম প্রতিবাদ বা সমালোচনাও সহ্য করেনা সৌদি সরকার। যেনতেন ভাবে তাদের দমন করাই সৌদি সরকারের কৌশল।
স্বাধীনচেতা খাশোগিকে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের লোকেরা। আরব বসন্তের সময়কালের এক বিদ্রোহী কিশোরকেও হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি সরকার৷ আরব বসন্তের সময়ে তার বয়স ছিলো ১০ বছর। বিরোধী মতামত দমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমেরিকা উত্তর কোরিয়া বা চীনের বিষয়ে যতটুকু সোচ্চার তার ৫% ও যদি সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে করতো, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
এগুলোতো ব্যক্তি দমন। পুরো একটা জাতির ঘাড়ে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে বসে আছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এই গরিব ভুক্তভোগীর নাম ইয়েমেন। ইয়েমেনে আরব বসন্ত চলাকালীন সময়ে সরকার পদত্যাগের পর গৃহযুদ্ধের উপক্রম হয়। দেশ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। রাজধানী সানা আর উত্তর ইয়েমেনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর বন্দরনগরী এডেন, দক্ষিন ও পূর্ব ইয়েমেন সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ। গৃহযুদ্ধের আগুনে আলুপোড়া দিতে আসে সৌদি আরব। সুন্নি বিদ্রোহীদের অর্থ আর অস্ত্র সাহায্য দেয় তারা। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে হাজির হয় ইরান। তারাও শিয়াদের অস্ত্র আর অর্থ সাহায্য দেয়। প্রক্সি-ওয়ার খেলা চলার প্রাক্কালে সৌদি সরাসরি আক্রমণ করে বসে ইয়েমেন।
যুদ্ধ করার কিছু আদবকায়দা আছে। বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ করা যাবে না। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টারে বোমা মারা যাবে না। বিয়ের অনুষ্ঠান, মৃতের সৎকার অনুষ্ঠানে আক্রমণ করা যাবে না। বর্বর রাষ্ট্র সৌদি আরব এই প্রত্যেকটাই অমান্য করেছে। তারা স্কুলে, হাসপাতালে, মসজিদে বোমা ফেলেছে। এমনকি জানাজার নামাজেও বোমা ফেলেছে। ঐদিন ইয়েমেনের এক এতিম বাচ্চা সাক্ষাতকারে বলছে- 'আমরা এখন ৬ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা আর জানাজা।' এইরকম হাজার হাজার ইয়েমেনি বাচ্চাকে এতিম করছে সৌদি আরব সরকার। ইয়েমেনে আজকে যে দুর্ভিক্ষ, লোকেরা ঘাস আর পাতা খেয়ে রোজা রাখলো আর ইফতার করলো এর পুরো দায়ভার সৌদি আরবের৷
ইরানের সাথে সৌদির পুরান ঝামেলা। ইরানের বিপ্লবী সরকারকে সৌদি আরব সহ্যই করতে পারেনা। কিছুদিন আগে ইসরায়েলের এক মন্ত্রীকে সৌদির আরেক মন্ত্রী গিয়া বুঝায়া আসছে, ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করলে সৌদি আরব ইসরায়েলের পাশে থাকবে। অন্য মুসলিম দেশের কেউ ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ইহুদি হয়ে যায়, আর সৌদি আরবের মন্ত্রীরা ইসরায়েল ঘুইরা আসলেও তারা মুসলিম জাতির অভিভাবক হিসাবে বহাল থাকে। তাদের মুসলমানিত্ব কি বাকিদের চেয়ে বেশি?
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের অভ্যুদয় না হওয়ার পেছনে আমেরিকা-ইসরায়েলের যতটুকু দায়, সৌদি আরবেরও ততটুকু দায়। সৌদি সরকার চায়না ফিলিস্তিন স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। এই ঝামেলা তারা জিইয়ে রাখতে চায়। ঝামেলা জিইয়ে রেখে যতটুকু লাভ আর ব্যবসা হবে, স্বাধীন দেশ হয়ে গেলে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে সৌদির। ফিলিস্তিন ইস্যুতে টুকটাক মাতব্বরি করে সৌদি আরব, সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক বিষফোড়া আইএসের অর্থ ও অস্ত্রের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সৌদি আরব। আইএস যে মতাদর্শ পোষন করে, সৌদি আরব সেই মতাদর্শের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। সারা পৃথিবীতে ইসলামের উগ্রবাদী রূপ- সালাফিবাদ ছড়ায়া দেয়ার পেছনে সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ মদদ বিদ্যমান। সৌদি আরব এতো টাকা কোথা থেকে পায়?
সৌদি আরবের টাকার উৎস- তেলবিক্রি আর হজ্জ-ওমরাহ থেকে আয়। তেলবিক্রির টাকায় তারা উগ্রবাদ প্রচার করে, নিরিহ জাতিগুলোর উপর যুদ্ধ চাপায়া দেয়। আর হজ্জ-ওমরাহের টাকায় করে ভোগবিলাস। কেমন ভোগবিলাস? বিল ক্লিনটন তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, তিনি একবার সৌদি আরবে এক যুবরাজের সাথে বসে মদ্যপান করছিলেন। একসময় যুবরাজের এক সহকারী এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর যুবরাজ আসলে ক্লিনটন জিজ্ঞাসা করলেন- যুবরাজ কি কোনো কাজে গিয়েছিলেন কিনা? যুবরাজ জবাব দেয়, তেমন কিছুনা, এক লোক মদ পান করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে, তাকে দোররা মারার শাস্তি দিয়ে আসলাম। ক্লিনটন এই ঘটনায় অবাক হন। যুবরাজ নিজেই বিচারকার্য এর আগে এবং পরে মদ খেলেন। কিন্তু শাস্তি তো কেবল সাধারণ মুসলমানদের জন্য।
পরকালে আল্লাহ বিচার করার সময় সৌদি যুবরাজদের ডেকে বলবেন, রাজপরিবারের সদস্যদের সব গুনাহ মাফ। কেবল সাধারন সৌদিয়ানরা লাইনে দাঁড়াও। মদ, নারী, দামী গাড়ি আর প্রাসাদ এই হলো সৌদি যুবরাজদের ভোগবিলাস। সৌদি যুবরাজের সংখ্যা কম হইলেও হইত। সৌদি আরবে যুবরাজের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০০। একদিকে তারা নিজেদের দাবী করে মক্কা-মদিনা পবিত্র দুই নগরের রক্ষক অপরদিকে আচার-আচরন দেখলে মনে হয় তারা দুনিয়ায় শাদ্দাদের বেহেশতে আছে।
সৌদি আরবকে মদদ দেয় আমেরিকা, আমেরিকার স্বার্থও সৌদি দেইখা রাখে। ডলারের দাম একবার কমতির দিকে ছিলো। সবদেশ নিজের মুদ্রার বিপরীতে স্বর্ণকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে, স্বর্ণ মজুদ রাখে৷ ডলার পতনের সেই সময় সৌদি ডলার মজুদ করে, ডলারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে। মুসলমানরা সৌদি আরব নিয়া কথাই বলতে চাননা।
সৌদি আরব নিয়া কথা বলতে চাননা কারন তারা কাবা শরীফ দেইখা রাখেন। আসলে সৌদিরা কাবা শরীফ দেইখা রাখে না, কাবা থেকে আয়ের টাকা দিয়া মৌজমাস্তি করে। আর আপনিতো কাবা শরীফ দেইখা রাখার বিরোধীতা করতেছেন না। বিরোধীতা করতেছেন তাদের অন্যায় কাজের। অন্যায় কাজ যে কেউ করতে পারে। আপনি সেটা বিরোধিতা করার অধিকার রাখেন।
আপনার হজ্জের টাকায় সৌদিরা অস্ত্র কিনা সেটা দিয়া ইয়েমেনে যুদ্ধ বাধায়া, ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ লাগায়া, ইয়েমেনি বাচ্চাদের এতিম কইরা, কেমন ইসলামের উদাহরন তৈরি করতেছে এই প্রশ্ন মুসলমান হিসাবে আপনি করতেই পারেন। বরং অন্যায়ের সাথে আপোষ করা, অন্যায়ের সমালোচনা না করাটাই দুর্বল ঈমানের লক্ষন। এই কারনেই হজরত আলী বলেন- 'যারা অনাচার করে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাটাও অনাচার।'
বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষ মুক্তি পাক।
রাজতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হোক।
No comments:
Post a Comment