23 October 2019

সহীহ মুসলমান ও ধর্মীয় অনুভূতি


আমরা চারিদিকে কেবল শুনি এ সহীহ না, ও সহীহ না। সহীহ মুসলমান আসলে কে? কালকে বিল্লাল মামার চায়ের দোকানে বসেছিলাম। বাংলাদেশের আর দশটা চায়ের দোকানের মতো এখানেও সুই থেকে মহাকাশযান সব বিষয়ে আলোচনা চলে। আমি সাধারণত চা খেয়ে চলে আসি, এইসব আলোচনায় অংশগ্রহণ করি না। কালকের আলোচনা ঘুরছিলো, মহানবীকে কটুক্তি করা, হিন্দুদের বেশি বাড় বেড়ে যাওয়া, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, পুলিশ কর্তৃক তৌহিদি জনতার উপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ, সহীহ মুসলমান কে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

আমি মুরুব্বিদের জিজ্ঞাসা করলাম, যে আইডি থেকে মহানবীকে কটুক্তি করা হয়েছে, সেটা হ্যাক হয়েছিলো, ঐ হিন্দু জানেই না কে কাকে কি মেসেজ পাঠাচ্ছে, ২ জন মুসলমান মহানবীকে গালি দিয়ে মেসেজ দিয়েছে, এইগুলো তারা জানেন কিনা? কয়েকজন জানে আর কয়েকজন জানেনা। আমি বললাম, তো ঐ মুসলমানদের বাড়িঘরে তো আক্রমণ করলোনা, তৌহিদি জনতা। নাকি মুসলমান হলে তার আর অপরাধ থাকেনা।

বললাম, গলা উচায়া বলেন ৯০% মুসলমানের দেশ। ৯০% মুসলমানের দেশের এই অবস্থা কেন? যে দেশে রোজা আসলে জিনিশপত্রের দাম বাড়ে, যে দেশে দুই ঈদে সব টাকা রাস্তায় ভাড়া দিতে দিতে চলে যায়, এইটা মুসলমানের দেশ? বিল্লাল মামার দোকানের সামনের রাস্তাটা দেখায়া বললাম, এইটা কোনো ৯০% মুসলমানের দেশের রাস্তা হইতে পারে? ধুলাবালি, নোংরা, ময়লা। তারা রাস্তার দিকে বললেন- না এইটা মুসলমানের রাস্তা না। মুসলমানের রাস্তাঘাট হবে পরিচ্ছন্ন। একজন মুসলমান জায়গামতো ময়লা ফেলবে।

হিন্দুদের নিয়ে এতো মাথাব্যথা, হিন্দু কয়জন দেশে? কয়জন হিন্দু দেশে জোরগলায় কথা বলে? একজন হিন্দুরে ডাইকা আইনা তার দেবদেবতা, মন্দির, ধর্ম নিয়া কথা বলেন, দেখেন কোনো এন্সার দেয় কিনা? মাথা নিচু করে সব শুনবে, তারপর হেটে চলে যাবে। হিন্দুরা জানে তারা এইদেশে সংখ্যালঘু। তারা মহানবী বা ইসলাম ধর্মের কটুক্তি কোনোদিন করবেনা। কটুক্তি কে করবে বলেন? কটুক্তি করবে মুসলমানরাই। দেশে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ বাঁধানো, সেখান থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য রাজনীতি করা, এগুলো মুসলমানরাই করবে।

এরআগেও এরকম হয়েছে। নাসিরনগর, রামু ইত্যাদি জায়গায় মুসলমানরাই দাঙ্গা-ফ্যাসাদ করেছে। অভিযুক্ত মুসলমানদের বলা হয়েছে পাগল। কাবা শরীফের উপর শিবের ছবি বসানোর জন্য কতোটুকু মানসিক সুস্থতা জরুরি, বলেন? সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে এই কাজ করে, পরে ধরা খেলে বলে পাগল। এর মধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধদের বাড়িঘর ভেঙ্গে, মন্দির-মঠ ভেঙ্গে শেষ।

যাই হোক, সহীহ মুসলমানের কাজ গুজবে কান দিয়ে মন্দির ধ্বংস করা না। সহীহ মুসলমান সে, যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে চলবে। মহানবী মুসলমানদের প্রধানতম শত্রু ইহুদীদের সাথেও বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলতেন, তাদের বাড়িতে দাওয়াত খেতেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা রাজনৈতিকভাবে ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা না করে। আমরা  মহানবীর চেয়েও বড় মুসলমান, হিন্দুদের পূজার লাড্ডু খেলেও আমাদের ধর্ম থাকে না।

ধর্মীয় অনুভূতি আরেক বায়বীয় অনুভূতি! ইসলাম ঠিক মতো বুঝি না, কিন্তু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি টনটনা। ইসলাম ধর্ম, কোরআন আর মহানবীর সম্মানের গ্যারান্টি নিয়েছে আল্লাহ স্বয়ং। এরপর আর আমাদের কোনো কাজ বাকি থাকে?

আমাদের যে কাজ করার কথা সেগুলো করলেই ধর্মের সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। মুরুব্বিদের জিজ্ঞাসা করলাম- এইযে দেশে দুর্নীতি এইটা নিয়া কাউকে কিছু বলছেন? কাউকে বলছেন- দুর্নীতি ইসলাম ধর্মে হারাম? ৯০% মুসলমানের দেশ দুর্নীতিতে ছাইয়া গেছে কেন? একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সামনে দাড়ায়া হককথা বলতে ভয় পান, আল্লাহর সামনে কেমনে দাড়াবেন? কি জবাব দিবেন আল্লাহর কাছে?

সহীহ মুসলমান সে, যে হককথা বলতে ভয় পায় না। হককথা যতো কঠিনই হোক না কেন, যার সামনেই হোক না কেন, সে সেটা বলবেই। সহীহ মুসলমান সে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, অনাচার রুখে দাঁড়াবে। সহীহ মুসলমান নিজে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির সাথে যুক্ত হবে না, কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ছেড়ে কথা বলবেনা।

সহীহ মুসলমানের অনুভূতি এতো কোমল হবে না যে, যে কেউ আল্লাহ বা মহানবীকে গালি দিলে তার উপর ঝাপিয়ে পরবে। সহীহ মুসলমান হবে পরমতসহিষ্ণু, অন্যের মতে প্রতি সহানুভূতিশীল। সহীহ মুসলমান হবে প্রগতিশীল, জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকবে তার। ফেসবুকের একটা বেনামী মেসেজ বা মসজিদের মাইকের ২ লাইনের আহবানকে সে যাচাই করবে। সে বাছাই করবে কোনটা গুজব আর কোনটা খবর।

সহীহ মুসলমান কখনই সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করবে না, বরং তাদের নিরাপত্তা দিবে, প্রয়োজনে তাদের বাড়িকে-মন্দিরকে নিজের বাড়ি, মসজিদের মতোই নিরাপত্তা দিবে।

17 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২৬

গত কয়েকদিন ধরে মন খারাপ, স্বপ্ন দেখলাম আব্বা মারা গেছেন। তারপর থেকেই মন খারাপ। আব্বাকে ফোন দিয়া বললাম স্বপ্নের কথা, উনি হাসেন। বলে- ‘কাছের লোক মারা যাইতে দেখলে অন্য কেউ মারা যাবে। অপরিচিত লোক মারা যাইতে দেখলে নিকটস্থ লোক মারা যাবে।’ এর কয়েকদিন আগেও একবার স্বপ্নে দেখছিলাম আব্বাকে। আমি ছোটোবেলায় আব্বার বুকের উপর শুয়ে থাকতাম। স্বপ্নে সেইরকম ছোটবেলা, আমি আব্বার বুকের উপর শুয়ে আছে। আব্বা কি কি যেনো বলতেছেন, পরে আর মনে নাই। আব্বার সাথে আমার অনেক স্মৃতি।
আব্বাকে একবার বলেছিলাম- ‘আব্বা, আপনার চেহারা তো আমার মতো…’ আব্বা হেসে শেষ। বললো- ‘হ। তর মতোই চেহারা আমার। পুতের মতো বাপ।’ আব্বা একবার ঘুরতে গেলেন চট্টগ্রাম। ফোন দিয়ে আব্বাকে বললাম- ‘আব্বা, দুষ্টামি কইরেন না, পানিতে নাইমেন না...’ আব্বা সাঁতার পারেন, তারপরো বলছিলাম, কোথাও গেলে আব্বা আমাকে এইটাই বলতেন। আমি একবার বাসায় না বলে কুষ্টিয়া দিয়েছিলাম লালনের মেলায়। রাতে আব্বা ফোন দিলে, আমি বললাম- ‘আব্বা আমিতো কুষ্টিয়া।’ আব্বা শুনে বললেন- ‘ঠিক আছে। দুষ্টামি কইরোনা... পানিতে নাইমোনা...’
আব্বা কবিতা লেখেন। আব্বারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- ‘আপনার সবচেয়ে পছন্দের কবিতা কোনটা?’ আব্বা বলেন- ‘মাদারচোদ কবিতাটা...’ মাদারচোদ নামে আব্বার একটা কবিতা আছে। কবিতা শুরু হয়েছে এভাবে- ‘দেশ ভরে গেছে মাদারচোদে...’ আব্বা প্রত্যেকদিন অফিস থেকে আসেন আর ব্যাপক গালিগালাজ করেন। একবার জ্যামকে গালি দেন, আরেকবার রাজনীতিবিদদের গালি দেন। একবার প্রটোকলকে গালি দেন, আরেকবার সরকারকে। ইদানিং বয়স বাড়তেছে, আগের মতো আর গালিগালাজ করতে পারেন না।
আব্বাকে নিয়ে একটা বড় লেখা লেখার ইচ্ছে। জানিনা আব্বা বেচে থাকতে থাকতে এই লেখা লেখতে পারবো কিনা? লেখতে পারলে আব্বাকে দেখাতাম। আব্বাকে কখনো বলা হয় নাই, আব্বা আপনাকে ভালোবাসি। লেখাটা লেখতে পারলে সেখানে লেখা থাকতো, আব্বা দেখতেন।

দৈনন্দিন আলাপ ২৫

আমাদের সমাজের বুঝতে সমস্যা কোনটা সুন্নত... 

একটা কাজে পটুয়াখালী গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ারও উপায় নাই, এমন প্রত্যন্ত। আমরা অবস্থান করছিলাম একটা বাজারে। বাজারে কিছু টয়লেট আছে যেগুলোর অবস্থা খুব খারাপের চেয়েও একটু বেশি খারাপ। আমরা দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, আর কোথাও টয়লেট আছে কিনা? তারা জানালো, বাজারের পাশেই একটা মাদ্রাসা আছে, সেখানকার টয়লেট মোটামুটি ভালো, সেখানে যান। 

মাদ্রাসার টয়লেটে গেলাম। প্রক্ষালন কক্ষের দরজা আটকানোর পর দেখলাম সেখানে মাটি দিয়ে বানানো কিছু ঢিলা-কুলুখ স্তুপ করে রাখা। বুঝতে পারলাম কুলুখগুলোকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে রাখা হয়েছে। আফসোসের বিষয় তখন ঘোর বর্ষাকাল। চারপাশ থেকে পানি পরে কুলুখগুলো কাদা কাদা হয়ে গেছে। তার উপর শুকিয়ে যাওয়া মল আবার ভিজে উঠে, কেমন যেনো এক পরাবাস্তব চিত্রকর্মের রূপধারণ করেছে। 

আমাদের যে জায়গাটা বোঝার অসুবিধা, সেটা হলো মহানবীর দেশে পানি অপ্রতুল ছিলো। সেখানে তাই পরিচ্ছন্নতার কাজে পানি ব্যবহার করা ছিলো বিলাসিতা। আর সেকারণেই সেখানে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আমাদের দেশ পানির দেশ, বছরে ৩ মাস আমরা পানির নিচেই থাকি। এমনকি আগে পুরো ১ খাল পানি দিয়েও আমরা পরিচ্ছন্নতার কাজ সারতাম। আমাদের এখানে মাটির দলা, পাথরের টুকরার কি তাৎপর্য? 

এখানে 'প্রাকৃতিক কাজের পর পরিচ্ছন্নতা' হবে রাসুলের সুন্নত, ঢিলা-কুলুখ না। 

আরেকটা বিষয় নিয়ে আমার ছোটোভায়ের সাথে কথা বলছিলাম। ওকে বললাম- মেসওয়াক ব্যবহার করা বা না করা রাসুলের সুন্নত না, রাসুলের সুন্নত দাঁত পরিষ্কার রাখা। 

আমাদের এখানেও আগে নিমের ডাল, আমের ডাল, লবন ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা হতো। দাঁত পরিষ্কার করা হতো যেনো দাঁত দীর্ঘদিন টিকে, দুর্গন্ধে যেনো আরেকজনের কষ্ট না হয়। যুগ বদলাচ্ছে, ডাল-লবনের জায়গা নিচ্ছে বিভিন্ন রকম পেস্ট-ব্রাশ, ওরাল কেয়ার। আমাদের বোঝার গাফেলতির কারনে আমরা পরে আছি মেসওয়াকে। 

এখানে 'দাঁত পরিষ্কার রাখা' হবে রাসুলের সুন্নত, মেসওয়াক বা ডাল ব্যবহার না। 

এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যা কেবল আমাদের ভুল বোঝাবুঝির শিকার। 

16 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২৪

১৯৪৭ এর আগে আমাদের শত্রু কারা এটা চিহ্নিত করতে আমাদের সমস্যা হতো না। আমরা সাদা চামড়ার বৃটিশদের খুব সহজেই আলাদা করতে পারতাম। বৃটিশরা আমাদের লুটপাট করে নিজেদের দেশকে শিল্পোন্নত করেছে, আর আমাদের বলেছে ব্লাডি ব্ল্যাক।  আমরা দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের শত্রুদের তাড়িয়েছি। 

১৯৪৭-৭১ আমরা শত্রু চিহ্নিত করতাম মুখের ভাষা দিয়ে। ৫২ তে ভাষার লড়াই থেকে শুরু করে ৭১ এ মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত আমরা আমাদের আত্মসম্মান বিসর্জন দেইনি। পাকিস্তানের পশ্চিম অংশও বৃটিশদের উত্তরাধিকার হিসাবে আমাদের উপর চালিয়েছে লুটপাট। আমাদের টাকা তারা পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গেছে। আমরা থেকেছি ব্লাডি বাঙ্গাল হয়ে। 

১৯৭১ এ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, যে দেশের নাম বাংলাদেশ, যে দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু আমাদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। আমাদের দেশের ক্ষমতায় এখন আমাদের নিজেদের দেশের লোক। অথচ লুটপাট কমেনি। পরাধীন থাকলে আমরা বৃটিশ বা পাকিস্তানিদের দোষ দিতে পারতাম। এখন এই স্বাধীন দেশে আমাদের শত্রু কারা? 

বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করা এখন খুব কঠিন। তাদের গায়ের রঙ আমাদের মতো, মুখের ভাষা আমাদের মতো, কেবল কয়েকটি আচরন বাদ দিয়ে। কিভাবে সাধারণ জনগণ থেকে জনগণের শত্রু আলাদা করবেন? 

এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই প্রায় ৫০ বছর পর, বাংলাদেশের শত্রু তারাই যারা বিভিন্নরকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত। আগে অন্যরা লুটপাট করে দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করেছে। এখন দুর্নীতিবাজরা বাংলাদেশের সম্পদ বাইরে পাচার করছে। এই দুর্নীতিবাজদের কাছে বাংলাদেশের জনগণ, ব্লাডি গরিব... যাদের রক্ত পানি করা টাকা তারা বিদেশ পাচার করছে, তাদের কোনো দাম নাই। তাদের কাছে তার বৌয়ের দামী হীরার আংটি জরুরি, ছেলে-মেয়েদের জন্য বিদেশের ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট জরুরি। 

বাংলাদেশের শত্রু এখন এই দুর্নীতিবাজরাই। এদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। অবশ্য দেশ থেকে কি তাড়াবেন? এরাতো বাইরে সব টাকা নিয়েই গেছে, ফ্যামিলির সবাইকে বাইরে পাঠিয়েও দিয়েছে, এখন শুধু নিজের যাওয়া বাকি। এদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ধরে এনে বিচার করতে হবে। 

দুর্নীতিবাজ কারা?

১. সরকারি দায়িত্ব যারা অবহেলা করে, সরকারি দায়িত্বকে কাজে লাগিয়ে যারা অবৈধ অর্থ কামাই করে, সরকারি কাজ করে দেয়ার জন্য যারা অতিরিক্ত অর্থ- ঘুষ বা উপহার দাবী করে এবং গ্রহণ করে। যে কোনো সরকারি পদ এর আওতায় পরবে- মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে সরকারি অফিসের পিয়ন পর্যন্ত। 

২. সে সমস্ত ব্যবসায়ী যারা পণ্য মজুত করার মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়ায়। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে, অবৈধ অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করে। 

৩. সে সমস্ত রাজনীতিবিদ যারা রাজনীতিকে টাকা কামাইয়ের পথ হিসেবে দেখে। বিদেশে অর্থ পাচার করে এবং বিনিয়োগ করে। 

তবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দুর্নীতি করা সহজ। একটা বালিশ ১ লাখ টাকা দিয়ে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা কোনো রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী কিনলে তাকে চড়ায়া কানাপট্টি লাল করে ফেলা হতো। কিন্তু সরকারি কাজে জবাবদিহিতা নাই, বিচার নাই, দেখার কেউ নাই। শাস্তি কি হবে? ওএসডি, অব্যহতি... কিন্তু সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকা দুর্নীতি করার জন্য কেনো তাদের দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করা হবে না? 

বাংলাদেশের শত্রু এখন এই দুর্নীতিবাজরাই। এদের না ঠেকানো গেলে দেশ আগাবে না। 

13 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২৩

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। তো একবার সায়েদুর রহমান স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। স্যার আমাদের রাষ্ট্র বিষয়ক বিভিন্ন বাদ-বিবাদ পড়াচ্ছিলেন ক্লাসে; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি। সম্ভবত তখন ২০১১ সাল, আমরা স্যারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, স্যার বাংলাদেশ কোন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চলে? এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় কিনা? স্যার সমস্ত দল-মতের উর্ধ্বে উঠে, সেদিন ক্লাসরুমে জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- 'বাংলাদেশে যেটা চলে, সেটাকে পরিবারতন্ত্র বলা যায় বা গোষ্ঠীতন্ত্র বলা যায় বা কতিপয়তন্ত্র বলা যায়। ঠিক গণতন্ত্র বলা যায় কি না...' 

যদিও বাংলাদেশের সরকারি নামের সাথে পিপলস রিপাবলিক আছে; সংবিধান, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ভারী ভারী টার্মে বোঝাই; নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্র আছে ভান করার জন্য, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে; কিন্তু আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন? 

বাংলাদেশে আসলে কখনো গণতন্ত্র ছিলো কিনা এটা নিয়ে আরো ৫০-১০০ বছর পর গবেষকেরা তাত্ত্বিক আলোচনা করবেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়টা নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করেছে? মাঝখানে সামরিক শাসনে থেকেছে কয়বছর? কয়টা পার্টি সংসদে বসে মানুষের কথা বলেছে? এগুলো আমরা জানি। 

এখন কি চলছে সেটা নিয়ে কথা বলি।

এখন বাংলাদেশে চলছে একনায়কতান্ত্রিক কতিপয়তন্ত্র। কতিপয়তন্ত্র কেন? কারন এখানে বেশ কয়েকজন লোকের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। বেশ কয়েকটা পরিবারের হাতে ক্ষমতা আর অর্থ। এখানে কেবল আওয়ামী লীগের কথা বলা হচ্ছে না, এখানে বিএনপির কথাও বলা হচ্ছে। আসলে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি একই টাইপের পার্টি, একই মুদ্রার ওপিঠ এবং এপিঠ। আওয়ামী লীগে মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হয়, এম্পির ছেলে এম্পি, বিএনপিতেও তাই। রাজনীতি আর দেশ হয়ে গেছে পারিবারিক সম্পত্তি। সংসদ হয়ে গেছে মামা বাড়ি, আইনকানুন হয়ে গেছে মামা বাড়ির আবদার, আইনজীবী আর বিচারকরা হয়ে গেছে তাদের খালু। 

বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোক, ১৬ কোটি মত। কয়জন বুঝে ভোট দেন? কার কই বাড়ি, আগে কে এম্পি ছিলো, ক্ষমতায় কে যেতে পারে, কার বেশি টাকা আছে, কে ভোটের আগে চা খাওয়ালো, এগুলো দেখে ভোট দেন তারা। নিজের ভালো বোঝেন কয়জন ভোটার? কে আসলে কাজ করবে, ইশতেহার কয়জনের মনে থাকবে, কে রাজনীতি ব্যবহার করে ব্যবসা  করবেনা, সন্ত্রাস করবেনা, এগুলো তারা বুঝলেও, ভোটের সময় খাটান না। এতো কথার দরকার কি, এখন তো ভোট ও দেয়া লাগে না। জায়গায় দাড়াবেন, ভোট হয়ে যাবে... 

যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ৫ বছরে ১ বার ১ টা ছাপ্পা দিয়েই মনে করে গণতন্ত্র এসে গেলো। ভোটাররা মনে করে তাদের কথা রাজনীতিবিদরা মনে রাখবে, নিজের গরজে এলাকার কাজ করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সব দায়িত্বে তারা এলাকার এম্পিকে দেখতে চায়। মানুষ চায় গণপ্রতিনিধিরা তাদের কথা বলবে। মানুষের মুক্তি আসবে, দেশে উন্নয়নের চাকা লাইনেই থাকবে। চাকা কি লাইনে থাকে? লাইন হয়ে যায় আঁকাবাকা, ভালো না হাতের লেখা... 

তারা একবার আওয়ামী লীগকে সুযোগ দেয়, আরেকবার বিএনপিকে সুযোগ দেয়। দুইটাই খারাপ অপশন। বিষয়টা এমন যে আমি আপনাকে চড় মারবো নাকি লাত্থি মারবো, দুইটাই অপশন আর কোনো অপশন নাই, এবং এরমধ্যে একটা আপনাকে নেয়াই লাগবে। মজা না? এই বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উদাহরণ দিয়েছিলেন, ফেনীর সাংবাদিক টিপু। তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে ঠিক করে, এই ৫ বছর কে তার পু*কি মারবে!! এই বক্তব্যের কারনে সাংবাদিক টিপুকে মেরে তার পা ভেঙে দেয়া হয়েছিলো। কে মেরেছিলো? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি, নাকি আওয়ামী লীগ? কি আসে যায়? টিপু তার পা হারিয়েছিলেন, আমরা চুপ হয়েছিলাম। 

কথা বলতে গিয়ে আবরার ফাহাদ খুন হলেন। সারা দেশ সমব্যথী হলো। নতুন প্রসঙ্গ মানুষের সামনে আসবে, নতুন ইস্যু মানুষের জীবনে আসতেই থাকবে। কিন্তু মৌলিক আলাপ ভুলে গেলে চলবে না। আবরার কি কারণে খুন হয়েছেন? ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন... আবরার খুন হয়েছেন দেশের স্বার্থে দুইটা কথা বলতে গিয়ে। 

কথাগুলো যখন আপনি একলা বলবেন তখন আপনার খুন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু যখন সকলে বলবে তখন? তখন সরকারে যেই থাকুক না কেন, দাবী মানতে বাধ্য হবে, মানুষের কথা ভাবতে বাধ্য হবে, জনতার পালস বুঝতে বাধ্য হবেই হবে। সরকার চাইবেই কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, এটাই সরকারের রাজনীতি, এটাই রাজনীতিবিদদের রুটিরুজি। আপনি দুই একজনকে সাথে নিয়ে মোদ্দাকথায় মাটি কামড় দিয়ে পরে থাকলে এদের পেটে লাত্থি পরে, রুটিরুজি নষ্ট হয়। বিশ্বাস করেন, এরা সংখ্যায় খুব কম; মানুষের সম্মিলিত শক্তির কাছে এরা পালকের মতোই হালকা। 

এখন আমরা একটু প্রশ্নোত্তর খেলবো। বাইনারী পদ্ধতিতে তার উত্তর দিবো। 

১. তিস্তা পানি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কি ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিবো? 
উত্তরঃ না। 

২. আমরা কি আমাদের বন্দর এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় ভারতকে নজরদারি চালাতে দিবো? 
উত্তরঃ না। 

৩. আমরা কি দেশের চাহিদা না মিটিয়ে ভারত বা অন্য যে কোনো দেশে গ্যাস রপ্তানি করতে দিবো?
উত্তরঃ না। 

৪. আমরা কি যে কোনো সরকারের যে কোনো দেশবিরোধী চুক্তি মেনে নিবো? 
উত্তরঃ না। 

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।
জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী... 

এই প্রসঙ্গে দ্বিমত থাকলে আলাপ চলতে পারে, আর একমত থাকলে দৃঢ়কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন- 

দল বড় না দেশ বড়, 
দেশ বড়, দেশ বড়।

দেশ কার? দেশ কার? 
জনতার... জনতার... 

জয় জনতা স্লোগান তুলুন... 
বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন... 

10 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২২

বাংলাদেশ আজ অতিক্রম করছে এক বিপর্যস্ত সময়। বাংলাদেশের অসৎ রাজনীতিবিদরা এখন সীমাহীন লোভে জর্জরিত, একমাত্র টাকা কামানোই যাদের ধ্যানজ্ঞানে পরিনত হয়েছে। তারা বুঝতে পারছেনা তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আসলে বিষ রেখে যাচ্ছে। তারা মনে করছে প্রচুর সম্পত্তি রেখে গেলে আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে ভালো থাকবে। তারা এটা বুঝতে পারছেনা, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের ছেলেমেয়েদের জবাবদিহি করা লাগতে পারে। 

সরকারি অফিসগুলো পরিনত হয়েছে ডাস্টবিনে। সেখানে যারা কাজ করছে তাদের মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলাই যায়, উপরন্তু তারা দুর্নীতিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। যে যার মতো দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে। মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত, একটা স্ট্রাকচারের সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এবং তারা এইখানে এগুলাই চলে বলে দুর্নীতিকে নিয়মও বানিয়ে ফেলেছে। বরং যারা দুর্নীতি না করে বেতনের পয়সায় চলতে চাইছে তাদের ব্যাকডেটেড বলে গালাগাল করছে। এভাবে সট্রাকচার চলতে পারেনা। যেকোনো সময় এই স্ট্রাকচার তার মন্ত্রী থেকে পিয়ন সবাইকে নিয়ে কলাপ্স করবে। 

কোন জায়গায় দুর্নীতি নাই? রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, ফরিদপুর মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, সবগুলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সবগুলো সরকারী দপ্তর-অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন থেকে পৌরসভা, সব জায়গায়। যে দেশের রাজনীতিবিদরা দুর্জন আর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্থ,  সেখানে জিডিপির গল্প কয়দিন টিকে, দেখা যাক। 

যে দেশে বিচারব্যবস্থা বলতে কিচ্ছু বাকি নাই, যে দেশে একের পর এক খুন-ধর্ষন হতে থাকে, যে দেশে একটা খুনিকে ধরতে হলেও প্রধানমন্ত্রীকে কনসার্ন হওয়া লাগে, সে দেশ চ্যাম্পিয়ন অব দা আর্থ হলেই কি, গ্যালাক্সি হলেই কি? একটা বিচার দেখান যেটা বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে করেছে। একটা খুন বা ধর্ষণ বা যে কোনো ফৌজদারী অপরাধের বিচার। আছে? তনু, নুসরাত, বিশ্বজিৎ, একটা বিচার দেখান... স্বাধীন বিচার বিভাগের চেয়ে একটা সার্কাসের দল বেশি স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

পুলিশ-র‍্যাব পরিনত হয়েছে রক্ষীবাহিনীতে। আগে রক্ষীবাহিনী সরকারের স্বার্থ দেখে রাখতো, এখন এরা রাখে। এরা ২ টা ইয়াবা সাথে পেলে মাদকের মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা খায়। আর ২ কোটি ইয়াবা পেলে তাকে প্রটোকল দেয়, স্যার বলে। এরা আল-জাজিরাকে সাক্ষাতকার দিলে আইসিটি আইনে জেলে নিয়ে অত্যাচার করে। আর যুবলীগ-ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভাই বলে, সালাম দেয়, আগেপিছে দৌড়ায়। 

একটা খুনের বিচার না হলে আরেকটা খুন হয়। বিশ্বজিৎ এর খুনিরা সাজা পেলে কয়টা খুন কম হতো আল্লাহই জানে। যেহেতু বিশ্বজিৎ এর খুনিরা সাজা পায়নি, তাই আরো কতো খুনি গজিয়ে গিয়েছে... তনুর ধর্ষক সাজা পেলে আজ কতোগুলো নারী ধর্ষনের হাত থেকে বেচে যেতো। কয়েকদিন পর যখন নুসরাতের খুনিরা ঘুরে বেড়াবে, তখন বেশ কয়েকজন ধর্ষক-খুনি খুন করতে উৎসাহ পাবে। এই উৎসাহের জন্মদাতা কে- এই রাষ্ট্র, এই সরকার আর এই বিচারব্যাবস্থা। 

চুপ থাকা কোনো সমাধান নয়। চুপ থাকলে অন্যায় আমাদের ঘাড়ে চেপে বসবে। অন্যায় দেখে আপনি মুখ লুকাতে পারবেন, কিন্তু আরো খারাপ সময় আসছে। আপনার ছেলে লাশ হয়ে বাড়িতে আসবে, আপনার মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে কাদতে কাদতে দড়িতে ঝুলে পরবে, আপনার বৌয়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দেবে ক্ষমতাসীনদের বাচ্চা শাখা। সময় থাকতে থাকতে প্রতিবাদ করতে শিখুন। নিজের দাবীর কথা নিজে বলতে শিখুন। নিজের স্বচ্ছ আওয়াজ পৌছে দিন দুর্নীতিবাজদের কানের গোড়ায়। 

মনে রাখেন তাদের সংখ্যা এবং শক্তি আপনাদের চেয়ে কম। কিন্তু তারা সংঘবদ্ধ। সংঘবদ্ধ চক্রের মোকাবিলা করতে হবে সংঘবদ্ধ হয়েই। আপনার পাশের ভাইটির পাশে কাধে কাধ মিলিয়ে দাড়ান, আপনার বোনটিকে সাহস দিন আপনি আছেন। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। প্রয়োজন শুধু ভালো হাতগুলোর একতা। 

এই কথা গুলো সবাই জানে, তবু কেন বলতেছি? নিজেরে হালকা করার জন্য। মাঝেমাঝে নিজেকে খুব ভারী মনে হয়। চিৎকার গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকে। মনে হয় সব কিছু লাথি দিয়ে ভেঙে ধ্বংস করে দেই।   

7 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২১

কি বলবো বলেন? কতো কথা গিলে ফেলি...
সীমাহীন লোভ মানুষকে নিয়ে গেছে ধ্বংসের কিনারায়। মানুষ আজকে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, সৎ থেকে ভুল করছিনাতো!

ভেবেছিলাম দুর্নীতি নিয়ে কয়েকটা কথা বলবো। দুর্নীতি আজকে ফাসের মতো গলায় আটকে আছে। সব জায়গায় দুর্নীতি। মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করাকেই নিয়ম মনে করছে। এই প্রত্যেকটা কাজের জবাব দেয়া লাগবে। আল্লাহর বিচার আল্লাহ করবেন, মানুষের দুনিয়ায় মানুষই বিচার করবে।

তারপর ক্যাসিনো, যুবলীগ ইত্যাদি ইস্যু। সাধারণ মানুষ সারাদিন কাজ করে দিনের খাবার দিনে জোগায়। সারাটা দিন খাটে। আর কেবল যুবলীগ করার কারনে এরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। বিশেষ সুবিধার ভার বাংলার মানুষ আর বহন করতে পারছে না। জনতার নাভিশ্বাস উঠে গেছে। যেকোনো দিন তারা এইসব চেতনাধারী, বঙ্গবন্ধুকে বাজারে বিক্রিকারী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ বা অন্যান্য আর সকল লীগকে রাস্তায় ফেলে পায়ের গোড়ালি দিয়ে পিষে ফেলবে।

গুটিকয়েক লোকের জন্য বাংলাদেশ আজকে আগাতে পারছেনা। এদের ছাড়াই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। লোভী রাজনীতিবিদদের হাত থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আর বেশি দূরে না। বাংলাদেশে এখন জনগণের বিপ্লবের সকল প্রতিবেশ বিদ্যমান। 

এরমধ্যেই শেখ হাসিনা ভারতের সাথে চুক্তি করলেন। চুক্তির বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত না করেই চুক্তি করলেন। জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী চুক্তি তিনি আগেও করতে পারেন নাই, এখনো পারেন না। বাংলাদেশ পরিণত হচ্ছে ভারতের স্যাটেলাইট স্টেইটে। বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি হলে, এর দায় বর্তমান সরকারপ্রধানকে নিতে হবে।

আবার এটা নিয়ে কথা বলার কারনে বুয়েটের এক ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পেটানোর আগে তার ফোন, ফেসবুক, মেসেঞ্জার চেক করা হয়েছে। যাই ঘটুক পক্ষেই থাকতে হবে কেন? সমালোচনার অধিকার, কথা বলার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করি নাই।

কথা না বলে থাকতে চাইতেছিলাম। আর সবার মতো চুপ থেকে পরিবার-সংসার নিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করতে চাইছিলাম। কিন্তু ঐ যে- অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে... 

2 October 2019

দৈনন্দিন আলাপ ২০

বাংলাদেশে কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নাই, যা আছে সব এনজিও হয়ে গেছে; এরকম একটা লাইন ছিলো। কেনো বললাম সব এনজিও হয়ে গেছে? 

কমিউনিস্ট পার্টি বলতে এখানে কেবল কমিউনিস্ট পার্টি বোঝানো হয় নি। যাবতীয় সোশালিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, লেবার পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি সহ বাম ঘরানার সকল পার্টিকে বোঝানো হয়েছে। যারা দুই লাইন মার্ক্স পড়েছেন, কিন্তু হয় বোঝেন নাই অথবা বাস্তবে প্রয়োগ করতে সাহস পান নাই। এখানে মার্ক্সবাদী, লেনিনবাদী, মাওবাদী সকল টাইপের সমাজতান্ত্রিককে এক পাল্লায় মাপা হয়েছে। 

উক্ত লাইনের পর, অনেকে যারা এখনো সমাজতান্ত্রিক লাইনে ভরসা রাখেন তারা বক্তব্যটিকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন একটি কমিউনিস্ট পার্টির কাজ কি? একজন মার্ক্সবাদীর করনীয় কি? 

কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানতম কাজ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, হকের লড়াই লড়া, ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য শ্রেণীসংগ্রাম করা। অন্যায়-অবিচার-অনাচার দেখলে একজন কমিউনিস্টের মাথা ঠিক থাকার কথা না। সামান্য মার্ক্স পড়া যে কেউ জানেন যে মার্ক্স এবং তার লাইনের কেউ অন্যায়কে কোনোদিন প্রশ্রয় দেয়নি। যে অন্যায় করবে বা অন্যায় সহ্য করবে সে মার্ক্সএর লাইনেরই না। 

বাংলাদেশে এখন যে পরিমান অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, যে পরিমান ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে, সাধারণ মানুষই অতিষ্ট। একটু সুযোগ পেলেই তারা সরকারের সমালোচনা করছে। অথচ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর এই বিষয়ে কোনোরকম মাথাব্যথা নাই। তারা বুড়াদের দিয়ে পলিটব্যুরো চালায়, ব্যবসা করে, মেননতো কেসিনোই চালায়। 

এনজিও বললাম কি কারনে? এনজিওরা সামাজিক কাজ করে, খুব সীমিত পরিসরে। যে পরিমান কাজ করলে নিজের মনকে বুঝ দেওয়া যায় যে, না সামাজিক কাজ করতেছি, সমাজের ভালো করার জন্য মেধা-সময় ব্যয় করছি, সমাজের মঙ্গলের জন্য পরিশ্রম করছি। কিন্তু এনজিওরা জানে ওই স্কেলে কাজ করলে আগামী ১০০০ বছরেও দেশ আগাবে না। দেশ আগানোর জন্য এনজিওরা কাজ করেনা, এরা কাজ করে মানসিক শান্তির জন্য। 

কমিউনিস্ট পার্টিগুলোও এইরকম মানসিক শান্তির জন্য দুইএকটা বিবৃতি দেয়, ব্যাস। দেশে এতো ইস্যু, কাজ করার এতো জায়গা, এরা বিবৃতি দিয়েই শেষ। একটা কমিউনিস্ট পার্টির ন্যাচারই হবে বিপ্লবী। তারা ছাত্রদের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, কৃষকের অধিকার, নারীদের অধিকার, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে। সরকারে যেই থাকুক তাকে চাপে রাখবে যতোদিন নিজেরা সরকার গঠন করতে না পারে ততোদিন। 

আফসোস, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লোকেদের শুনতে হয়, ছবি তোলাতো শেষ, এখন বাড়িত যান। ফুটেজ খাওয়ার জন্য এখন ইন্সটাগ্রাম আছে, কমিউনিস্ট পার্টি করা লাগে না। মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি আর ইনুর জাসদ তো মানইজ্জত আরো রাখে নাই। 

যাই হোক, কমিউনিস্ট পার্টি হবে গরিব মানুষের যাওয়ার মতো একটা জায়গা। যেখানে গরিবের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলবে না, সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি গরিবের অধিকার রক্ষায় রাস্তায় থাকবে। বাংলাদেশে আছে এমন একটা কমিউনিস্ট পার্টি দেখান। কমিউনিস্ট বলতে আমরা মার্ক্স-এঙ্গেলস বুঝি, লেনিন-স্তালিন বুঝি, মাও-ক্যাস্ত্রো-চে বুঝি, সুভাষ-ভাসানী-মুজাফফর বুঝি। মেনন-ইনু-জাসদ-বাসদ-সিপিবি-ইত্যাদি এদের কমিউনিস্ট বলে, কমিউনিস্টদের এতো বছরের লিগাসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।