ওয়ান্স আপন এ টাইম দেয়ার ওয়াজ এ কান্ট্রি নেমড বৃটিশ
ইন্ডিয়া। তো সেই কান্ট্রি না ছিলো বৃটিশ, না ছিলো ইন্ডিয়া। সেখানে ছিলো না কোনো
রাজনৈতিক দল। বৃটিশ ভারতে প্রথম প্রথাগত রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালের ২৮
ডিসেম্বর, সভার মতো করে। তার নাম দেয়া হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ভারতীয় জাতীয়
কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা একজন অবসরপ্রাপ্ত বৃটিশ আমলা 'এলান অক্টাভিয়ান
হিউম'। তার সাথে যুক্ত হন- উইলিয়াম উইডারবার্ন, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, মনমোহন
ঘোষ, লালমোহন ঘোষ, বদরুদ্দিন তৈয়বজি, দাদাভাই নওরোজি, দিন'শ ওয়াচা, ফিরুজশাহ
মেহতা, উমেশচন্দ্র ব্যানার্জি, মহাদেব গোবিন্দ রানাড়ে প্রভৃতি সামাজিক-রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব।
কংগ্রেসের
গঠনের উদ্দেশ্য ছিলো ভারতে বৃটিশদের স্বার্থরক্ষা করা। কিন্তু ক্রমেই সেখানে
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ঢেউ লাগে। কংগ্রেস পরিণত হয় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের
মুখপাত্র একটি প্লাটফর্ম হিসেবে। এর মধ্যে ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে অতিবিপ্লবী
প্রোটো-রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব দেখা যায়। বিশেষত বাংলা অঞ্চলে অনুশীলন সমিতি এবং
যুগান্তর দল ছিলো এরকম অতিবিপ্লবী রাজনৈতিক দল। প্রথমে এরা সাংস্কৃতিক সংগঠন
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীতে বিপ্লবী ধ্যানধারণায় সশস্ত্র স্বাধীনতা
সংগ্রামীতে পরিণত হয়।
তারপর
আসে মার্ক্স-এঙ্গেলস এর শোষণ মুক্তির জন্য গণমানুষের রাজনীতির তত্ত্ব। ভারতের
রাজনীতিবিদরা এই তত্ত্বে আকৃষ্ট হন। ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর গড়ে উঠে ভারতের প্রথম
কমিউনিস্ট পার্টি। এর উদ্যোক্তারা হলেন- মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনি মুখার্জি, আহমেদ
হাসান, হাসরাত মোহানি, রফিক আহমেদ, সুলতান আহমেদ খান প্রভৃতি। কমিউনিস্ট পার্টি না
করলেও এমনকি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মতো রাজনীতিবিদ-স্বাধীনতা সংগ্রামীরা
মার্ক্সের তত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন।
কংগ্রেসের
রাজনৈতিক লাইনে একমত থাকতে না পেরে বিভিন্ন সময় কংগ্রেস ভেঙে গেছে। এর মধ্যে
স্বরাজ্য পার্টি, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসময় মুসলমানদের
রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার ধুয়া তুলে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মুসলিম রাজনৈতিক
নেতারা। মুসলিম নেতারা সৈয়দ আহমদ খান এবং সৈয়দ আমীর আলীর চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত
ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার আহসান মঞ্জিলে তারা প্রতিষ্ঠা
করে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-
নবাব সলিমুল্লাহ খান, প্রিন্স আগা খান ৩য়, নবাব ভিকরুল মুলক, মাওলানা মোহাম্মদ আলী
জওহর প্রভৃতি।
১৯৩৯
সালে কংগ্রেস থেকে বের হয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠা করেন সর্বভারতীয়
ফরোয়ার্ড ব্লক। ভারতের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের লক্ষই ছিলো তখন বৃটিশদের শাসন
থেকে ভারতকে আলাদা করে, ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করা। ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা
স্বাধীনতা দিয়ে যায়, কিন্তু রেখে যায় একটু গুড়। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করা হয়,
ভারত আর পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুই ভাগ আবার ভারতের দুই পাশে পরে, পূর্ব আর
পশ্চিম।
বাংলা
অঞ্চলের সাধারণ প্রজাদের স্বার্থ রক্ষায় ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজা পার্টি।
পরে প্রজা পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কৃষক প্রজা পার্টি। কৃষক প্রজা
পার্টির নেতা ছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।
কমিউনিস্ট
পার্টি ভারত-পাকিস্তান উভয় অংশে কাজ শুরু করে। পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টি
নিষিদ্ধ থাকে। প্রায় পুরো পাকিস্তান আমলেই কমিউনিস্ট ঘরানার সমস্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ
থাকে। কাউকে ফাসিয়ে দিতে হলে তখন বলা হতো- ও তো কম্যুনিস্ট...
আরজ আলী
মাতুব্বর যখন সত্যের সন্ধানের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করছিলেন, তখন পাণ্ডুলিপির ধর্ম
বিষয়ক প্রশ্নগুলো দেখে জনৈক ষড়যন্ত্রকারী তাকে কমিউনিস্ট বলে পুলিশের কাছে ধরিয়ে
দেয়।
এদিকে
তখন অতি ডানপন্থী রাজনীতিও শুরু হয়ে গেছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের
হারের পর খেলাফত থাকবে কিনা এই বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। খেলাফত সমুন্নত রাখার
লক্ষ্যে ভারতীয় মুসলমানরা শুরু করে খেলাফত আন্দোলন। খেলাফত আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ
নেতারা হলেন- মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান, শওকত আলী, মাওলানা
মোহাম্মদ আলী জওহর, সৈয়দ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী প্রমুখ।
ভারতের
দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমরা একত্রিত হয়ে ১৯১৯ সালের ১৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা
করেন 'জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ'। ১৯২৭ সালের ১২ নভেম্বর হায়দ্রাবাদের নিজামের
পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় 'মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন'। লাহোরে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় 'জামায়াতে ইসলামী হিন্দ'। জামায়াত
নেতারা অখণ্ড ভারতের পক্ষে প্রথমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে। পরে
পাকিস্তান হয়ে গেলে মওদুদী সেখানে চলে যান। এবং জামায়াত পরবর্তীতে অখণ্ড
পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতারও বিরোধীতা করে।
ভারতের
প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয় কংগ্রেস আর পাকিস্তানে মুসলিম লীগ। মতাদর্শকে
কেন্দ্র করে ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগে ভাঙন ধরে। মুসলিম লীগের একাংশ গঠন করে আওয়ামী
মুসলিম লীগ। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষক প্রজা পার্টি, জামায়াত,
জমিয়তে উলামা ভারত-পাকিস্তানে ভাগ হয়ে রাজনীতি করতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার
পর এসব দলই উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করতে থাকে।
No comments:
Post a Comment