আজ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ বাংলাদেশের ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে ফলাফল আসা শুরু করেছে। কিছুদিন পর লোকদের মধ্যে যখন উত্তেজনা কমে যাবে তখন পরিসংখ্যান আর ইতিহাস কথা বলা শুরু করবে।
পরিসংখ্যান ভোটের দিনের পরিস্থিতি মনে রাখবে না। পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা গুনবে। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২৯০ টায়, ওমুক ভোট পেয়েছে ৩ লাখ ইত্যাদি। কে কেনো ভোট দিতে পারলো না, কেনো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখলো ভোট দেয়া হয়ে গেছে, ভোটের দিন লেঙ্গুর পার্টির ভূমিকা কি ছিলো, প্রশাসন কিভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লেভেলে রেখেছে এইসব হিসাব তখন থাকবে না।
কিন্তু ইতিহাস কথা বলবে। ইতিহাস কেবল সংখ্যা মনে রাখবে না। তার পেছনের ঘটনাও সে হিসাবে রাখবে ঠিক। এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আওয়ামী লীগকে কোথায় নিয়ে যাবে এটা এখন কল্পনা করা যাচ্ছে না। আপনারা এর অংশ হবেন। আপনারা যারা এখন চোখমুখ বন্ধ করে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিগত স্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছেন, যারা ইতিমধ্যে নিজেদের মস্তিষ্ক বন্ধক রেখেছেন, তাদের জন্য সমবেদনা।
একবার কল্পনা করে দেখেন আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকলে এরকম একটা নির্বাচন হতে দিতো কিনা? বেশিদিন আগে না, ১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারিতে এরকম একটা নির্বাচন করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ আর বাকীদের চাপ এতো প্রবল ছিলো যে জুনেই আবার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় বিএনপি। ক্ষমতা দিতে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। বিরোধীদল হিসেবে আওয়ামী লীগ যতোটা চমৎকার, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে ততোটাই স্বৈরাচার।
দেশে যে সীমাহীন দুর্নীতি, বিচারহীনতা আর স্বজনপ্রীতি চলছে তাকে প্রশ্রয় দেয়ার কিছু নাই। আমরা মনে করি যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন এই কথা বলার অধিকার তাদের আরো বেশি। নিজেরা সমালোচনা করুন। দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করুন, সেগুলো মোকাবিলা করুন। দেশে এখন কোনো বিরোধীদল নাই। যে দেশে বিরোধীদল নাই, সে দেশে জনগণই সরকারের প্রধান বিরোধী। সুতরাং জনতার কথা শুনুন।
যেগুলোকে উন্নয়ন হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে সেগুলো কি আসলে উন্নয়ন? ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, পদ্মাসেতু এরকম বিষয়গুলোকে জনতার চোখের সামনে রাখা হচ্ছে বারবার। কিন্তু এগুলো ত সরকারের করার মতোই কাজ, তাদের পবিত্র দায়িত্বই এগুলা। তাদের আর কাজ কি? এমনভাবে বলা হয় যেন আওয়ামী লীগ না থাকলে পদ্মাসেতু হতো না। আসলে এই সময়ে এসে যেই ক্ষমতায় থাকতো সেই পদ্মাসেতুর কাজে হাত দিতো, সেটা কংগ্রেস হোক বা বিজেপি, বা কখগঘ।
কথা হচ্ছে যে পরিমান কাজ করার কথা, সে পরিমান কাজ করতে পারছে না। এর মূল কারন একটাই, দুর্নীতি। যেখানে মালয়েশিয়ার মতো দেশ ১৯৯০ সালে ফ্লাইওভার করে শেষ, সেখানে ২০১৮ তে এসে ফ্লাইওভার করে, সেটা দেখিয়া বলা লাগে, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রের চাক্কা লাইনেই আছে।
দেশের কোনটায় মঙ্গল আর দেশের কোনটায় অমঙ্গল সেটা যদি এখনো বুঝতে না পারেন, আর কবে পারবেন? আমার লেখা থেকে আবার অনেকে মনে করতে পারেন, বিএনপি জিতে নাই তাই শোকে কষ্টে পাথর হয়ে লিখতে বসেছি। আমার লেখার কারন আজ ভিন্ন।
আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, দেশে আর কোনো দুর্নীতি চলবে না। কোনো অনিয়ম আর বিচারহীনতা চলবে না। দেশ জনতার, ক্ষমতাও জনতার। জনতার টাকার হিসাব কেবল আখেরাতের জন্য তোলা থাকবে না, দুনিয়াতেও কিছু দেয়া লাগবে। সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত হন। দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাক, বিএনপি আসুক বা জাতীয় পার্টি থাক, কথা পরিষ্কার। শীঘ্রই জনতারা ঐক্যবদ্ধ হবে, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
No comments:
Post a Comment