সম্রাট কন্সট্যান্টিন দ্যা গ্রেট পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র শাসক হওয়ার
সময় থেকে আনাতোলিয়ার বাইজেন্টাইন কাল গণনা করা হয়। যদিও এর বহু আগে থেকেই গ্রীকরা
এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। আরো বিশদভাবে বলতে গেলে ৩৩০ সালে ‘কন্সট্যান্টিনোপোল’ শহরের গোড়াপত্তনের সালকে ধরা হয় বাইজেন্টাইন যুগের
শুরু।
![]() |
সম্রাট কন্সট্যান্টিন দ্যা গ্রেট |
সম্রাট কন্সট্যান্টিনের বংশধররা খুব বেশিদিন আনাতোলিয়া শাসন করতে পারেনি। ৩৬৩
সালে সম্রাট কন্সট্যান্টিনের বংশের পতন ঘটে। এরপর ভ্যালেনটিনিয়ানিক বংশ পূর্ব
রোমান সাম্রাজ্যের শাসনে আসে ৩৬৩ সালে। ৩৭৯ সালে ভ্যালেনটিনিয়ানিক বংশের পতন ঘটে,
ক্ষমতায় আসে থিওডোসিয়ান বংশ। ৪৫৭ সালে থিওডোসিয়ান বংশেরও পতন ঘটে, দৃশ্যপটে আসে
লিওনিড বংশ। ৫১৮ সালে লিওনিডদের হটিয়ে ক্ষমতায় বসে জাস্টিনিয়ান বংশ।
জাস্টিনিয়ান বংশের সময়কালে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য তাদের সর্বোচ্চ সীমায়
পৌঁছায়। ৫৫৫ সালে জাস্টিনিয়ান দ্যা গ্রেটের রাজত্বকালে পুর্ব রোমান সাম্রাজ্য আনাতোলিয়া
থেকে এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিস্তির্ন এলাকা শাসন করতো। ৬১০ সালে হেরাক্লিয়ান
বংশ সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় আসে। ৭১১ সালে হেরাক্লিয়ানদের পতনের আগেই সাম্রাজ্যের
আয়তন সংকুচিত হতে শুরু করে। দক্ষিণ দিক থেকে আসা মুসলিম সেনাপতিদের হাতে একের পর
এক শহর হাতছাড়া হতে থাকে।
![]() |
৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য |
৭০০ সালের পর পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে দেখা দেয় অস্থিরতা, অনিরাপত্তা।
যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের প্রভাব পরতে থাকে সামাজিক জীবনে, অর্থনীতিতে, বাণিজ্যে,
সর্বক্ষেত্রে। প্রতিবেশী রাজ্যগুলো বুঝতে পারে সাম্রাজ্য এখন দুর্বল অবস্থায় আছে।
দূরের প্রদেশগুলোতে দেখা দেয় বিদ্রোহ, প্রাদেশিক শাসনকর্তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করে
সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হয়ে যান।
বাইজেন্টাইন ধারা তখনো প্রবাহিত ছিলো। আনাতোলিয়া অঞ্চলে অল্প আয়তন ও জনসংখ্যা
নিয়ে এরপরো কয়েক বছর বেশ কিছু বংশ শাসন করে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইসাউরিয়ান
বংশ (৭১৭-৮০২), নিকেফোরিয়ান বংশ (৮০২-৮১৩), আমোরিয়ান বংশ (৮২০-৮৬৭), মেসিদনিয় বংশ
(৮৬৭-১০৫৭), দৌকা বংশ (১০৫৯-১০৮১), কোমনেনোস বংশ (১০৮১-১১৮৫), এঙ্গেলোস বংশ
(১১৮৫-১২০৪), নিকেয়া সাম্রাজ্য (১২০৪-১২৬১), ল্যাটিন সাম্রাজ্য (১২০৪-১২৬১),
ত্রেবিজোন্দ সাম্রাজ্য (১২০৪-১৪৬১) ইত্যাদি।
![]() |
বাইজেন্টাইন পতাকা |
পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ব প্রতিযোগী
ছিলো পারস্য সাম্রাজ্য। পারস্যের সাথে সীমানা বিরোধ লেগেই থাকতো। সীমান্ত এলাকার
করদ রাজ্যগুলোকে নিজেদের প্রভাবে রাখতে বেশ কয়েকবার সম্মুখযুদ্ধেও অবতীর্ন হয়েছে
দুই প্রতিবেশী সাম্রাজ্য। কিন্তু দক্ষিণের নতুন খুলাফায়ে রাশেদিন আরবের উপদ্বীপ
থেকে বের হয়ে রাজ্যবিস্তার শুরু করে। খুলাফায়ে রাশেদিনের মুসলিম সৈনিকরা
আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করা শুরু করে ৬৩৭ সালেই।
মুসলিম বিশ্বেও ক্ষমতার পালাবদল চলতে থাকে। সাথে বদলাতে থাকে মুসলিম অধিকৃত
অঞ্চলগুলোর শাসনও। খুলাফায়ে রাশেদিনের পর উমাইয়া খেলাফত, তারপর আব্বাসিয় খেলাফত,
ফাতিমিয় খেলাফত। ১০৭১ সালে মাঞ্জিকার্তের যুদ্ধের মাধ্যমে আনাতোলিয়ার মঞ্চে প্রবেশ
করে সেলজুকরা। বদলাতে শুরু করে আনাতোলিয়ার ইতিহাসের প্রকৃতি।
No comments:
Post a Comment