14 April 2020

দৈনন্দিন আলাপ ৩৩


আমাদের তরুণদের সামনে রাজনীতি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প খোলা নেই। আমাদের রাজনীতি করতে হবে, রাজনীতির কালচার পরিবর্তন করার জন্য। বর্তমানে যে লুটপাটবাদী রাজনীতির কবলে বাংলাদেশ পরে আছে তা বাংলাদেশের জন্য কাম্য হতে পারে না, বাংলাদেশের জনতা এটার কবলে সারাজীবন পরে থাকতে পারে না। অথচ এটাই যেনো এখন বাংলাদেশের জনতার ভাগ্য। সময় এসেছে ভাগ্যকে ভদলানোর, সময় এসেছে বাংলাদেশের জনতার মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে সত্যিতে রূপান্তরিত করার। একটি দেশ সারাজীবন নিজের ভাদ্যের হাতে বন্দী হয়ে লুটপাটের কবলে পরে থাকতে পারে না।

নিজের দিকে নয়, তাকান আপনার অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, তাকান আপনার সন্তানের দিকে। আপনি যেমন দেশে সারাজীবন বসবাস করে গেলেন, আপনার বাচ্চার জন্যও কি এমন দেশ রেখে যেতে চান? যদি না চান, তবে কেমন দেশ রেখে যেতে চান? সেই দেশটা পেতে হলে আপনার দায়িত্ব কি? আপনার করণীয় কি? আপনি কি কি অধিকার থেকে বঞ্চিত, তালিকা করতে গেলে খাতা ফুরিয়ে যাবে, কলমের কালি শুকিয়ে যাবে, অভিযোগ ফুরাবে না।

এমন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র গঠনের পেছনে আমাদের দায় আছে। আমাদের দায়টা কোথায়? আমাদের দায়, আমরা জনতা চুপ করে থাকি। চোখের সামনে অন্যায় ঘটতে দেখলেও আমরা চুপ থাকি। এতে আমাদের মনে হয় আমরা বিপদ থেকে বাঁচতে পারবো। কিন্তু বিশ্বাস করেন এতে বিপদ কমে না। চুপ থাকার ফলে যারা অন্যায়কারী তারা সাহস পায়, শক্তি সঞ্চয় করে এবং পরবর্তী প্রজন্ম আরো বড় বিপদে পরে। এখন চুপ থাকার সময় শেষ। আপনার সন্তানের জন্য একটি বাসযোগ্য, দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

আপনি স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছেন! আপনার মনে হতে পারে, চাইলেই কি হয়ে যাবে? আমি বলছি, আগে স্বপ্ন, পরে স্বপ্ন পূরণ। আগে চিন্তা, পরে চিন্তার বাস্তবায়ন।

৯০ এর দশকে মালয়েশিয়া আর বাংলাদেশের অবস্থা কাছাকাছি ছিলো। তখন মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় আসলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, মাহাথির মুহাম্মদ। তিনি মালয়েশিয়ার জনগণকে স্বপ্ন দেখালেন- একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিল্ডিং মালয়েশিয়াতে হবে। মালয়েশিয়ার জনগণ এমনকি মাহাথিরের মন্ত্রীরা পর্যন্ত এমন স্বপ্ন দেখাকে অসম্ভব মনে করলো। মাহাথির সবাইকে স্বপ্ন দেখে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকলেন। যতোদিন জনগণ মনে করেছে- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিল্ডিং করা অসম্ভব, ততোদিন পর্যন্ত তা অসম্ভব ছিলো। কিন্তু যখনি তারা মনে করেছে- না, এটা সম্ভব। তখনি এটা বাস্তব হতে শুরু করেছিলো। ফলাফল- মালয়েশিয়া তখনকার দিনে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিল্ডিংটা তৈরী করেছিলো- পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার।

তাই আগে স্বপ্ন, পরে স্বপ্ন পূরণ। আগে বিশ্বাস করতে শুরু করেন- একটি দুর্নীতিমুক্ত, শোষনমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভব, যে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সবার সামনে উদাহরন তৈরী করবে। যে বাংলাদেশে সবাই কাজ করবে, সবাই শিক্ষিত হবে, সবাই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে। একজন লোকও না খেয়ে থাকবে না। একজন লোকও কাজের জন্য বেকার ৫-৭ বছর ঘুরে বেড়াবে না। একজন লোকও চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না।

স্বপ্ন দেখা শুরু করুন এবং সেটা প্রকাশ করুন। আপনার পাশের জনকে জানান, আপনি একটা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। যে বাংলাদেশের মুক্ত বাতাসে হেসে-খেলে বেড়াবে আপনার সন্তানাদি।

বিশ্বাস করুন, এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনার উপর। আপনি যতো চুপ থাকবেন, দুর্নীতিবাজরা ততো শক্তিসঞ্চয় করবে। আপনার এখনকার চিন্তার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ এর বাংলাদেশ। ভালো হোক বা খারাপ হোক, বাংলাদেশে আপনাকে থাকতে হবে, আপনার ছেলেমেয়েকে থাকতে হবে, তাদের ছেলেমেয়েকেও থাকতে হবে। সুতরাং প্রজন্মের কথা চিন্তা করে হলেও ভাবা শুরু করুন কেমন বাংলাদেশ চাই।

আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই? আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে শতভাগ শিক্ষার হার নিশ্চিত হবে, যেখানে সবাই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিনামূল্যে হবে। খাদ্যের নিরাপত্তা, বাসস্থানের নিরাপত্তা, কর্মের নিরাপত্তা, বস্ত্রের নিরাপত্তা রাষ্ট্র যোগান দিবে। রাষ্ট্রের কাজ হবে দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন। একদল দক্ষ এবং যোগ্য কর্মীবাহিনী রাষ্ট্রের দেখভাল করবে। সারা দেশে সারা বছর কোনো দুর্নীতি হবে না। যেকোনো ধরনের মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। কৃষক, শ্রমিক ও মজুর তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য দাম পাবে। নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে নিরাপদ বোধ করবে।

বিশ্বাস করা শুরু করেন-  এরকম একটা বাংলাদেশ নির্মান সম্ভব। সম্ভব তবে প্রথমে এমন একটা বাংলাদেশ আমাদের চাইতে হবে। আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে একটি সুন্দর নির্মল আগামীর বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে গল্প করতে পারবো, গর্ব করতে পারবো।

সেদিন আর বেশি দূরে নয়। আগামীর বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশ, লুটপাটমুক্ত বাংলাদেশ।

একটি সার্কাসে একটি হাতি ছিলো। হাতিটিকে ছোটোবেলায় ট্রেনিং দেয়ার জন্য সার্কাসে আনা হয়। ট্রেনিংএর সময় তাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়। বাচ্চা হাতি শিকল ভাঙার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। একসময় তার ঐ শিকল দেয়া ঘেরকেই সে তার নিয়তি বলে মেনে নেয়, ঘেরেই সে অভ্যস্ত  হয়ে যায়।

হাতি একসময় বড় হয়, তাকে আর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় না, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেই হয়। কারণ সে জানে ঐ ঘেরটাই তার নিয়তি। বড় হওয়ার পর যে তার শক্তি বেড়েছে এসম্পর্কেও সে জানে না।

একদিন সার্কাসের মঞ্চে আগুন লাগে, সবাই নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়। কিন্তু হাতিটা বাঁধা পরে ঐ ঘেরে, তার অভ্যস্ততার কাছে, তার নিয়তির কাছে। অথচ সামান্য একটু চেষ্টা করলেই সে ঐ আগুন থেকে মুক্ত হতে পারতো, বেঁচে যেতে পারতো।

আমাদের অবস্থা চিন্তা করুন। আমরাও আমাদের শক্তি সম্পর্কে অসচেতন। আমরাও কেমন বাঁধা পরে আছি নিয়তির কাছে, অভ্যস্ততার কাছে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই আমরা এই ঘের থেকে বের হতে পারি। এই অগ্নিকাণ্ড থেকে বের হয়ে নিজেদের মুক্ত করতে পারি।

জনতারা এভাবেই তার শক্তি সম্পর্কে অনবগত। অথচ একটু চেষ্টা, একটু সাহস নিয়তির এই দুষ্টচক্র থেকে আমাদের মুক্তি দিবে। সব কিছু মেনে নেয়া বন্ধ করা হবে এটার প্রথম পদক্ষেপ। চুপ না থাকা হবে দ্বিতীয় পদক্ষেপ। আর আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা হবে তৃতীয় পদক্ষেপ। যারা দুর্নীতিবাজ-লুটপাটকারী তারা সংখ্যায় খুবই সামান্য। একদমই সামান্য। ৩ হাজার জনের একটি গার্মেন্টসের লাভের ভোগকারী ২-৩ জন। ৩ হাজার কৃষকের প্রাপ্য ন্যায্যমূল্যের শত্রু ২-৩ জন মজুতদার, ২-৩ জন আড়তদার। ২০ হাজার লোকের একটি ইউনিয়নে লুটপাটকারী-দুর্নীতিবাজ সাকুল্যে ১শ’ জন।

ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পথ কঠিন হতে পারে, অসম্ভব নয়।

আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখুন, পাশের জনকেও সেই স্বপ্ন দেখান। স্বপ্ন পূরনের পথে আমরা আর বেশি দূরে নেই।  

No comments:

Post a Comment