7 April 2020

দৈনন্দিন আলাপ ৩১

আল্লাহ আপনার মনের কথা বোঝেন। আপনি যা যা বলেন, করেন, বলতে চান সবই তিনি জানেন। এই বিশ্বাস যাদের আছে তারা ঘরে নামাজ পরলে কি অসুবিধা? মহামারীকালীন সময়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পরলে দুইটা ঘটনা ঘটবে।
১. আপনি যদি করোনা আক্রান্ত না হন, মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হলে, সেটা আত্মহত্যা হবে, আত্মহত্যা ইসলামে হারাম।
২. আপনি যদি করোনা আক্রান্ত হন, মসজিদে গিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করেন, সে যদি মারা যায়, আপনি খুনের দায়ে দায়ী হবেন, খুন করাও ইসলামে হারাম।

একথা কেবল মসজিদ নয়, মন্দির, চার্চ বা যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় বা বাজার, কম্যুনিটি সেন্টার, বেশি লোক জমায়েত হয় এমন যে কোনো জায়গার জন্য প্রযোজ্য।
দেশের বেশিরভাগ লোক যে ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞ এবং কোরান-হাদীসের সাথে ন্যুনতম সম্পর্ক নাই, এটা একদম পরিষ্কার। এটার ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসে কিছু আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ইত্যাদি। কিন্তু এরা এতো বেশি ধর্মব্যবসায়ী, অসাধু, মিথ্যাবাদী, অজ্ঞ আর বোকা*দা যে অশিক্ষিত লোকেদের আরো অন্ধকারে রাখতে পারলে এদের জন্য ভালো।
এরা কোরান-হাদীস পড়ে নাই এমন না, কিন্তু কোনটা কোথায় ব্যবহার করলে, লোকজন ঠিক-ঠিক করবে, বেশি টাকা দিবে আর হেলিকপ্টারে করে পরের বার দাওয়াতে নিয়ে যাবে, এরা খুব ভালো করেই জানে। ইসলাম এবং সাধারণ মুসলমানের মন এই দুইটাই এদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ। এর দোষ ২ টা পক্ষের। এক যারা এই অজ্ঞানতাকে টুল হিসেবে ব্যবহার করছে, অর্থাৎ ওয়াজপার্টি। আর দুই- সরকার, যারা এই অজ্ঞানতার প্রচার বন্ধ করতে অক্ষম।
যাই হোক এতক্ষণ প্রতিক্রিয়া ঝাড়লাম, এখন কাজের কথায় আসি। আমাদের দেশের মুসলমানরা আল্লাহকে যেভাবে দেখে বা ভাবে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এক সত্ত্বা, তিনি সব দেখেন, সব জানেন, সব শোনেন। তাহলে এই সময়ে ঘরে নামাজ পরলে আল্লাহ বুঝবেন না! আল্লাহ কি এতো অবুঝ!
এখন সবাই, সারা পৃথিবী একটা বিপদের মধ্যে আছে। এই বিপদে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখনো বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আর কিছুদিনের মধ্যেই এই ভাব কেটে যাবে। লাশ রাস্তায় পরে থাকতে দেখা যাবে। রাষ্ট্র এতোদিন যে লুটপাট করেছে তা চোখের সামনে দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় অভিশাপ তো তারা যারা এই সময়ে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি চুরি করার ধান্ধা করে। তাদের আসলে ওয়ার্নিং দেয়ার কিছু নাই, যে সব কিছু মনে রাখা হবে। তাদের একটা লাইনে দাঁড়া করিয়ে গুলি করে দিতে হবে।
ও আচ্ছা, তাদের তো আবার গুলি করা যাবে না, মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়ে লুটিয়ে পরবে। গুলি তো করতে হবে অন্যদের, ক্রসফায়ারের নাম করে। প্রচুর লোক বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। যারা হয়তো অন্য সময়ে হলে বেঁচে থাকতে পারতো। অনেক লোক মারা যাবে প্যানিক এটাকে। কিছু লোক মরবে, না কিছু না, অনেক লোক মরবে না খেতে পেয়ে। ত্রানের সময় পদপিষ্ট হয়ে। এই যেমন আজ নাকি কাল, শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে না পারায় ছাটাই হয়, ছাটাইয়ের পর তারা বেতন চায়, বেতন নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে মারামারি-ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়, সেখানে হুরাহুরি করে রাস্তা পার হতে গিয়ে ২ জন শ্রমিক মারা যায়।
মাত্র ২ জন শ্রমিক ট্রাকের নিচে পরে মারা গেছে! মাত্র ২ জন। শ্রমিক মারা গেলে সংখ্যা হয়ে যায়, আর এই রাষ্ট্রে দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জোরে কথা বলা যায় না, প্রতিবাদ করা যায় না। বালিশ কাণ্ড, পর্দা কাণ্ডের ঐ **** গুলা কই এখন? দেশেই আছে নাকি গেছেগা? অধিকার কেউ বাড়িতে এসে দিয়ে যাবে না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।
তাদের ঐ টাকা দিয়ে কয়জন লোকের কয় দিনের খাবার হইতো? কোথা থেকে কই আসলাম, যাই হোক না কেন, যে কোনো মূল্যে আর ১৫ দিন ঘরে থাকেন। কারণ গায়েবানা জানাজা পরাতে লোক লাগবে, মানুষকে কবর দিতে গেলেও মানুষ লাগবে।
মৃত্যুকে ভয় পেয়ে লাভ নাই, মৃত্যু তো হবেই। জন্মের পরপর আর কোনো সত্য থাক বা না থাক, মৃত্যু সত্য। কিন্তু এটা কি এখনি? এই মহামারীতে, নাকি না, এটা আপনি ঠিক করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment