১. মিথ্রাবাদ ও খ্রিস্টিয়ান ধর্ম
মিথ্রা পারসিক ধর্মের খুবই গুরুত্বপুর্ণ একজন দেবী। পারসিকরা
সূর্যের অধিষ্টাত্রি দেবী হিসেবে মিথ্রার উপাসনা শুরু করে। মানুষের মিথে সূর্য একটি
বিশেষ উপাদান। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই সূর্যকে উপাসনাযোগ্য হিসেবে কল্পনা করা
হয়। সূর্যের সাথে জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক, আবহাওয়ার তারতম্য, ফসলের চাষবাস, ঋতুবদল, সময়ের
হিসাব, দিনরাত্রি-সপ্তাহ-মাসের হিসাব ইত্যাদি জ্ঞান মানুষ অনেক প্রাচীনকালেই আয়ত্ত্ব
করে। সূর্যযে প্রাণ-প্রাচুর্যের আধার এটা বুঝতো প্রাচীনকালের মানুষেরা। আর তাই সূর্যের
বিভিন্ন রূপ কল্পিত-পূজিত হয়ে এসেছে নানান যুগে, নানান ভাবে।
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাবশালী দেবতা মিথ্রা
মিথ্রার উৎপত্তি নিয়ে তেমন বিষদ কিছু জানা যায় না। কেবল এটুকু
জানা যায় যে জরথুস্ত্র পারসিক ধর্ম প্রচারের আগ থেকেই মিথ্রার উপসনার অস্তিত্ব ছিলো।
এবং মিথ্রার অপভ্রংশ মিত্রা বা মিত্র দেবতা হিসেবে ভারতেও পূজিত। অবশ্য বেদের বেশিরভাগ
স্থানে মিত্রার সাথে বরুণের নাম এসেছে। ধারণা করা হয় ইরানের আহুর মাজদাই ভারতে বরুণ
দেবতা। অর্থাৎ সময়ের বিচারে মিথ্রার বৈদিক হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। হিন্দু ধর্মে অবশ্য
মিত্রা বন্ধুত্ব, শপথ এবং সকালবেলার সূর্যের আলোর দেবতা।
They
call him Indra, Mitra, Varuna, Agni
and
he is heavenly nobly-winged Garutman.
To
what is One, sages give many a title
মিত্রা ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে ইন্দো-ইরানিয় শব্দ। এর আক্ষরিক
মানে মি (বন্ধন) এবং ত্রা (যে কারণে) অর্থাৎ যে কারণে বন্ধন, ব্যবহারিকভাবে শপথ বা
চুক্তি বা অঙ্গীকারকে বোঝানো হয়। ভারতে এখনো মিত্র বলতে বন্ধু-বন্ধুত্ব বোঝানো হয়।
ইতিহাসে মিত্রার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতকে বর্তমান তুরস্কে, তখনকার
এক ইন্দো-আর্য ‘মিত্তানি’ রাজার অঙ্গীকারনামায়, যেখানে সেই রাজা ইন্দ্র-মিত্রা-বরুণ-নাসাত্যা
(অশ্ব বা অশ্বিনী) কে সাক্ষী রেখে অঙ্গীকার করছেন। বিভিন্ন ইরানিয় এবং আর্মেনিয় ভাষায়
মিথ্রা এবং তার আধুনিক অপভ্রংশ মিহির বা মেহের মানে ভালোবাসা, স্নেহ এবং সূর্য।
ধর্ম হিসেবে পারসিক ধর্ম ইরানের রাজধর্ম হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭ম
শতকে। বেদ লেখার সময়কালও মোটামোটি কাছাকাছি। কিন্তু আধ্মাত্যিক শক্তি হিসেবে মিথ্রা
ও আহুর মাজদার (বরুণ) অস্তিত্ব তারও প্রায় ১-১.৫ হাজার বছর আগের। পারসিক ধর্মে মিথ্রা
একজন ইয়াজাদ (উপাসনার যোগ্য সত্ত্বা)।
ইরানের রাজধর্ম হওয়ার সুবাদে পারসিক মত সারা ইরান ও তার আশপাশের
অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। তখনকার ইরান ছিলো আজকের ইরান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান,
ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক ও আরবঅঞ্চলের কিছু অংশ। পারসিক ধর্মের সাথে ছড়িয়ে পরে মিথ্রাবাদও।
তবে আলাদা মতবাদ হিসেবে ‘মিথ্রাবাদ’ কিভাবে ছড়িয়ে যায় তা অজানা। গ্রীস-ইতালিতে (রোমান
সাম্রাজ্যে) এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পুরো জরথুস্ত্রবাদ না ছড়ালেও মিথ্রাবাদ ছড়িয়ে
পরে।
জার্মানির হাইডেলবার্গের নিকটে প্রাপ্ত
মিথ্রা
মিথ্রাবাদ ছড়িয়ে পরার আরেকটি বড় প্রভাবক ‘মানিবাদ’। মানি (২১৬-২৭৭
খ্রিস্টাব্দ) ইরান অঞ্চলের আরেকজন নবী বা ধর্মপ্রচারক। মানি জরথুস্ত্র, গৌতম বুদ্ধ
এবং যিশুখ্রিস্ট দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এই তিনজনের শিক্ষাকে একত্রিত করে তিনি প্রচার
করেন মানিবাদ। মানিবাদের হাত ধরে মিথ্রা পৌঁছে যায় চীন থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের
দূরতম প্রান্তে। রোমান সাম্রাজ্য দাপ্তরিকভাবে খ্রিস্টিয়ান ধর্মকে স্বীকৃতি দিলে বাকী
ধর্মগুলোর প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসে। কিন্তু পাখি উড়ে যায়, তার পালক ফেলে যায়।
ইরানে মিথ্রা দেবী হিসেবে উপাসিত হলেও রোমান সাম্রাজ্যে মিথ্রা
পরিণত হন দেবতায়। পারসিকদের ইয়াজাদ ও বিভিন্ন ফেরেশতাদের মধ্যে ৬ টি লিঙ্গের দেব-দেবতা
লক্ষ্য করা যায়। পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, উভলিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ, মেয়েলি-পুংলিঙ্গ এবং
পুরুষালী-স্ত্রীলিঙ্গ। তৎকালীন ইরান সাম্রাজ্যের সীমানা রোমান সাম্রাজ্যের সাথে লাগোয়া
ছিলো, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিলো স্বতঃসিদ্ধ।
সূর্যের দেবতা হিসেবে মিথ্রা রোমানদের সূর্যদের দেবতা হেলিয়াসের
সাথে একীভূত হয়ে যান। সৌরশক্তির উপাসকরা মিথ্রা-হেলিয়াসকে এক শক্তি হিসেবে আরাধনা করতো।
রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশের পর মিথ্রা ছড়িয়ে যায় বর্তমান ইংল্যান্ডে, তিউনিসিয়ায়। মিথ্রাবাদ
সম্পর্কিত কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ না থাকায় এ মতবাদ সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। কেবল
গ্রীক-রোমান ভাষ্যকারদের কাছ থেকে যতোটুকু জানা যায় আর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে
যাতোটুকু পাওয়া যায়, তাই এখন ভরসা। মিথ্রা রোমান সাম্রাজ্যের সৈন্যদের মধ্যে জনপ্রিয়
দেবতায় পরিণত হন। তার উপাসনার জায়গা হতো মাটির নিচে নির্দিষ্ট জায়গায়, রোমান ভাষায়
বলা হতো- মিথ্রেয়াম (বহুবচন- মিথ্রেয়া)। রোমান সাম্রাজ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে
এরকম প্রায় ৬৮০টি মিথ্রেয়া সম্পর্কে জানা যায়।
ইতালিতে ওস্তিয়ায় প্রাপ্ত একটি মিথ্রেয়ামের
অভ্যন্তর
১ম থেকে ৫ম শতক মিথ্রাবাদ রোমান সাম্রাজ্যে জনপ্রিয় মতবাদ হিসেবে
জারী থাকে। তৎকালীন ঐতিহাসিক বয়ান থেকে তাদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে কিছু জানা যায়।
মিথ্রানুসারীরা পরষ্পরের সাথে দেখা হলে হাত মেলাতো। মিথ্রা এবং হেলিয়াসের হাত মেলানো
একটা ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। জোতির্বিদ্যার সাথে মিথ্রার গভীর সম্পর্ক ছিলো। রোমান সাম্রাজ্যে
মিথ্রা ৭ টি রূপে পূজিত হতেন। ৭টি রূপ ৭টি গ্রহের প্রতিনিধিত্ব করতো। তৎকালীন দার্শনিক
পোরফাইরি (৩য়-৪র্থ শতক) এর বয়ান থেকে মিথ্রাবাদ সম্পর্কে জানা যায়-
"confirms ... that astral conceptions played an important role in Mithraism.""Hence, a place near to the equinoctial circle was assigned to Mithra as an appropriate seat. And on this account he bears the sword of Aries, which is a martial sign. He is likewise carried in the Bull, which is the sign of Venus. For Mithra. as well as the Bull, is the Demiurgus and lord of generation." (De antro nympharum 11- Porphyry)
রোমান ঐতিহাসিক প্লুটার্কের
(৪৬-১২৭ খ্রিস্টাব্দ) ভাষ্যেও উঠে আসেন মিথ্রা। “They also offered
strange sacrifices of their own at Olympus, and celebrated there certain secret rites, among which
those of Mithras continue to the present time, having been first instituted by
them.” (The Life of Pompey 26, Parallel Lives of the Noble Grecks and Romans)
রোমান সাম্রাজ্যে মিথ্রাদেবের ৭টি প্রকাশ হলো-
প্রকাশ
|
বাংলা
|
প্রতীক
|
গ্রহ
|
কোরাক্স
|
দাঁড়কাক
|
সিরামিক
বা মেটালের পানপাত্র
|
বুধ
|
নিমফাস
|
বর
|
বাতি,
হাতের ঘণ্টা
|
শুক্র
|
মাইলস
|
সৈনিক
|
থলি,
হেলমেট, ড্রাম, বেল্ট, ব্রেসলেট
|
মঙ্গল
|
লিও
|
সিংহ
|
বজ্রপাত
|
বৃহস্পতি
|
পার্সি
|
ইরানি
ব্যক্তি
|
চাঁদ,
তারা, ফ্রিজিয়ান ক্যাপ
|
চাঁদ/সোম
|
হেলিওড্রোমাস
|
সূর্যসারথি
|
রোমান
সূর্যদেব হেলিয়াস, চাবুক
|
সূর্য/রবি
|
পাটের
(ফাদার)
|
বাবা/পিতা
|
রাখালদের
ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বড় পোষাক, রুবির আংটি
|
শনি
|
সূত্র- M.Clauss, The Roman cult of Mithras, p.133-138
বর্তমান ইংল্যান্ডে প্রাপ্ত মিথ্রার মন্দির
মিথ্রেয়াম
মিথ্রাবাদের সাথে ষাঁড়/বৃষ বধের গভীর সম্পর্ক। মিথ্রার আরাধনায়
বৃষের বধ অবশ্য করণীয় ছিলো। মিথ্রার বৃষবধের সাথে জোতির্বিদ্যার সম্পর্ক ছিলো। রোমান
বিভিন্ন বৃষবধের ভাস্কর্য (টাউরকটোনি) থেকে জোতির্বিদ্যার বিভিন্ন আঙ্গিকের পাঠোদ্ধার
করা হচ্ছে। টাউরকটোনি থেকে প্রাপ্ত মানেগুলো আকাশের বিভিন্ন রাশিমণ্ডলী ও নিহারিকাপুঞ্জের
সাথে সম্পর্কিত।
এরকম একটি তালিকা হলো-
ষাঁড়
|
বৃষ
রাশি
|
সূর্য
|
সূর্য
|
চাঁদ
|
চাঁদ
|
কুকুর
|
ক্যানিস
মেজর, ক্যানিস মাইনর
|
সাপ
|
হাইড্রা
নক্ষত্রপুঞ্জ
|
কাক
|
করভাস
নক্ষত্রপুঞ্জ
|
বিচ্ছু
|
বৃশ্চিক
রাশি
|
গমের
কান
|
স্পিসা
নক্ষত্রপুঞ্জ
|
জমজ
মশালধারক
|
মিথুন
রাশি
|
সিংহ
|
সিংহ
রাশি
|
গর্ত
|
ক্র্যাটার
নক্ষত্রপুঞ্জ
|
গুহা
|
মহাবিশ্ব
|
সূত্র- Beck, Roger, "Astral Symbolism in the Tauroctony: A statistical demonstration of the Extreme Improbability of Unintended Coincidence in the Selection of Elements in the Composition" in Beck on Mithraism: collected works with new essays (2004), p. 257.
যাই হোক, রোমান সাম্রাজ্যে মিথ্রাবাদ শক্তিশালী মতাদর্শ হিসেবে
হাজির ছিলো। কিন্তু ক্রমে খ্রিস্টিয়ানরা রোমান সাম্রাজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে।
ক্রমে মিথ্রাবাদ এবং তার সাথে সম্পর্কিত আর্যদের সূর্যমিথ হয়ে যায় খ্রিস্টিয়ান ধর্মের
অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সেই অনুষঙ্গগুলো হলো-
ইতালিতে প্রাপ্ত মিথ্রার টাউরকটোনি
ক. কুমারী মাতা এবং অবিশ্বাস্য জন্ম
পারসিক লোককথা অনুসারে মিথ্রার জন্ম কুমারী মাতা দেবী অনাহিতার
গর্ভে। তবে রোমান মিথে গিয়ে, মিথ্রার জন্ম হয় পাথর থেকে। পাথর থেকে আবির্ভূত হন মিথ্রা।
খ্রিস্টিয়ান মিথেও এরকম যিশুর জন্ম দেখানো হয় কুমারী মাতা মেরীর গর্ভে। কিন্তু আমরা
এখন জানি একজন মানুষের জন্ম হতে গেলে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু দুইটি অণুই প্রয়োজন।
পাথর থেকে জন্ম নিচ্ছেন মিথ্রা
যিশুর পিতৃপরিচয় বিষয়টি বাইবেলে লুকিয়ে রাখা যায় নি। মাতা মারীকে
জন্মের পরপরই জেরুজালেমের মন্দিরের সেবাদাসী হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়। মন্দিরের তত্ত্বাবধানে
তখন ছিলেন প্রধান পুরোহিত শখরিয়া (আরবিতে জাকারিয়া, মাতা মেরীর খালু, জন দ্যা ব্যাপ্টাইস্ট
[ইয়াহিয়া] এর পিতা)। মাতা মেরী কিশোর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হলে এর জন্য তৎকালীন সমাজ শখরিয়াকে
দায়ী করে। ইহুদি আইনে বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ককে ঘৃণার চোখে দেখা হয়, এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
শখরিয়াকে ঈশ্বরের ঘর মন্দিরের বাইরের বারান্দায় পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। (বাইবেল
২ বংশাবলি ২৪:২১, মথি ২৩:৩৫, লূক ১১:৫১)
যাই হোক, যিশুর অলৌকিক জন্মের ঘটনা মিথ্রার অলৌকিক ঘটনা থেকে
প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে।
খ. জীবনের জন্য রুটি ও মদ
মিথ্রাবাদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি আচার
হচ্ছে জীবনের জন্য রুটি ও মদ গ্রহণ করা। মদ ক্ষেত্রবিশেষে ফলের রস বা রক্তও হতো। মিথ্রার
অনুসারীরা মিথ্রেয়ামে একত্রিত হয়ে যে কয়েকটি আচার পালন করতো, যা সম্পর্কে পরবর্তীতে
মানুষ জানতে পারে, তার মধ্যে এটি একটি। খ্রিস্টিয়ানরা পরবর্তীকালে এই আচারটিকে গ্রহণ
করে। মিথ্রাবাদে এটি ছিলো প্রার্থনার অংশ।
গ. তিন ব্যক্তির শিশুদর্শন ও উপহার প্রদান
মিথ্রার জন্মের পর পারস্য থেকে তিন জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে দর্শন
করার জন্য আসে। তারা তাকে আশীর্বাদ করে। মিথ্রার জন্মের সময় আকাশের কিছু নির্দিষ্ট
তারকা জায়গা পরিবর্তন করে, যেটা দেখে জ্ঞানী লোকেরা বুঝতে পারে, মিথ্রার জন্ম হয়েছে।
যিশুর জন্ম নিয়েও একই রকম লোককথা প্রচলিত আছে।
ঘ. ১২ জন শিষ্য
মিথ্রার ১২ জন শিষ্য, যারা তাকে বছরের ১২ মাসে সঙ্গ প্রদান
করে। ১২ জন শিষ্য ১২ মাসের প্রতীক। মিথ্রার বিভিন্ন উপকথা তখনকার জ্ঞানকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য
শাখা জোতির্বিদ্যার সাথে সম্পর্কিত ছিলো। পরবর্তীতে ১২ জন শিষ্যের এই ধারণা খ্রিস্টিয়ানরা
নিজেদের মধ্যে অঙ্গীভূত করে। যিশুর ১২ জন শিষ্য ছিলো, যা নিতান্ত কাকতালীয়।
ঙ. পানির উপরে হাঁটা
মিথ্রার মোজেজাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মোজেজা ছিলো তিনি যেকোনো প্রকার পানির উপর দিয়ে
হেঁটে যেতে পারতেন। যিশুর ব্যাপারেও একই রকম লোককথা প্রচলিত।
ইরানে প্রাপ্ত পাথরে উৎকীর্ন দেবী মিথ্রা
চ. মাথায় কাটার মুকুট
সূর্যের প্রকাশ হিসেবে মিথ্রার মাথায় থাকতো কাটার মুকুট। সূর্যের
রশ্মিও তার মাথার চারপাশে শোভা পেতো। মিথ্রার এই রূপ বিভিন্ন খ্রিস্টিয়ান সমাজ এখনো
ব্যবহার করছে। ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটা দেশ খ্রিস্টিয়ানির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে
এমন চিহ্ন, যা রোমান সাম্রাজ্যে মিথ্রার চিহ্ন হিসেবে বহুল প্রচলিত ছিলো।
মিথ্রার চারপাশে সূর্যের রশ্মি
ছ. ক্রুশবিদ্ধ হওয়া এবং পুনর্জীবিত হওয়া
মিথ্রা ক্রুশবিদ্ধ হন। মিথ্রার লোককথা অনুসারে তিনি ক্রুশবিদ্ধ
হন ২২ ডিসেম্বর। তিনদিন পর তিনি পুনরায় জীবিত হন ২৫ ডিসেম্বর। তারপর তিনি উর্দ্ধে স্বর্গ
গমন করেন। যিশুও ক্রুশবিদ্ধ হন, তিনদিন পর পুনর্জীবিত হন এবং স্বর্গে আরোহন করেন।
জ. ক্রিসমাসে পাইন গাছ
পাইন গাছ প্রাচীন ইরানে ছিলো না। কিন্তু প্রথম বাইরে থেকে ইরানে
পাইন গাছ প্রবেশ করে মিথ্রার সম্মানে। বাইরের কোনো এক রাজা দেবী মিথ্রার অনুষ্ঠানে
তার মন্দিরে পাইন গাছ উপহার দেন। তারপর থেকেই পাইন হয়ে যায় মিথ্রার গাছ। সারা ইরান
জুড়ে মিথ্রার মন্দিরের চারপাশে লাগানো থাকতো পাইন গাছ। প্রাচীন ইরানিরা পাইনকে পবিত্র
বৃক্ষ জ্ঞান করতো। মিথ্রা রোমান সাম্রাজ্যে যে কয়েকটা বিষয় নিয়ে প্রবেশ করেন তার মধ্যে
পাইন গাছ একটা।
দেবী মিথ্রা ও তার পাইন গাছ, প্রাচীন
ইরানের রাজধানী পার্সেপোলিসে খোদাইকৃত
খ্রিস্টিয়ানরা ক্রিসমাসের সময় পাইন গাছকেই অলঙ্কৃত করে। পাইনগাছকে
বলা হয় ক্রিসমাস ট্রি। কিন্তু কেনো পাইন ক্রিসমাস ট্রি এই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া
যায় না। ধারণা করা হয়, মিথ্রার পবিত্র গাছ পাইন, বাকি আর সমস্ত বিষয়ের মতো খ্রিস্টিয়ান
মতবাদে অঙ্গীভূত হয়েছে।
ঝ. ২৫ ডিসেম্বরের জন্মদিন
২৫ ডিসেম্বর মিথ্রার জন্ম ও একই সাথে পুনর্জীবনপ্রাপ্তির দিন।
খ্রিস্টিয়ান ধর্ম প্রচলিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই মিথ্রাবাদে ২৫ ডিসেম্বরকে সবচেয়ে বড়
উৎসব হিসেবে পালন করার দলিল পাওয়া যায়। রোমান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব হতো ২৫ ডিসেম্বর।
সেসময় সৌরউপাসনার মাধ্যমে মিথ্রা-হেলিয়াসকে স্মরণ করা হতো। পুরো সাম্রাজ্যে সবার সুস্বাস্থ্য
ও মঙ্গল কামনা করা হতো।
“One of the best-known festivals of ancient Rome was “the Saturnalia”, a winter festival celebrated on December 17–24. Because it was a time of wild merrymaking and domestic celebrations, businesses, schools, and law courts were closed so that the public could feast, dance, gamble, and generally enjoy itself to the fullest. December 25—the birthday of Mithra, the Iranian god of light, and a day devoted to the invincible sun, as well as the day after the Saturnalia—was adopted by the church as Christmas, the nativity of Christ, to counteract the effects of these festivals”.[2]
Most Christians know that Yeshua (Jesus’ true name) was not born on December 25th, and that this date was instituted by the early Roman Catholic Church. The Biblical account of Christ’s birth, points out that Shepherds kept their flock out grazing in the fields on that night (Luk 2:8). Most scholars believe that He could not have even been born in the Month of December as Shepherds could and would not have taken flocks out into the fields in the cold rainy climate of winter time in the Middle East.[3]
যিশুর জন্ম ঠিক কবে তা নিয়ে বেশ কয়েকটা মতবাদ প্রচলিত ছিলো।
এরমধ্যে গবেষকরা যে সালটাকে সবচেয়ে কাছাকাছি
বলে ধারণা করেন, সেটাও খ্রিস্টপূর্ব ৪ সালে। সরকারীভাবে খ্রিস্টিয়ান ধর্ম রোমান সাম্রাজ্যের
ধর্ম হলেও রোমানরা তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবটিকে বাদ দিতে চাননি। যার ফলশ্রুতিতে সারা পৃথিবী
জুড়ে ক্রিসমাসে আসলে পালন করা হয় মিথ্রার জন্মদিন।
কোনো অজানা স্থানে ঘুরে বেড়ানো অখ্যাত যাযাবর জাতি আর্যদের
প্রাচীন দেবতা মিথ্রা, ইরান হয়ে, রোমান সাম্রাজ্য হয়ে, খ্রিস্টিয়ান ধর্ম হয়ে এখনো পালিত
হয়ে যাচ্ছেন। তার নাম কেউ স্মরণে রাখুক বা না রাখুক, আচার-অনুষ্ঠান এখনো ঠিক পালিত
হয়ে যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment