18 April 2020

কথকের দিনলিপি


হানি সিস্টার্স

হানিরা তিন বোন। তাদের মধ্যে খুব মিল। তারা তিন বোন একসাথে থাকে। কোথাও বেড়াতে গেলে একসাথে বেড়াতে যায়। বেড়াতে যাওয়ার সময় তারা মুখ বেজার করে যায়। চলে আসার সময় হাসিমুখে ফেরত আসে। তারা তিন বোন সারপ্রাইজ পছন্দ করে। কোথাও বেড়াতে গেলে তারা না জানিয়েই চলে যায়। সারপ্রাইজ!

এদের মধ্যে প্রথমে ঘরে ঢোকে, বড়বোন স্বাস্থ্যহানি। সে মাথায় হাত বোলায়। ওমা, এক বছর ধরে জ্বর আসে না! জ্বর আসে। শুধু জ্বর! জ্বরতো ছোটো অসুখ! লিভারটা ফুলে যাক, কিডনীতে পাথর জমে যাক। হার্টে ব্যাথা নাই? এটা কেমন কথা?! হার্টে একটু ব্যথা হোক। ডায়াবেটিসটাও বেড়ে যাক। তবেই না বড়বোনের আপ্যায়ন।

বড়বোনের আবদার মেটাতে, যখন আপনার স্বাস্থ্য ব্যস্ত, তখন বেড়াতে আসে মেঝোবোন অর্থহানি। এসে প্রথমে মাথায় হাত বুলায়। ক্যাশ কতো আছে? ব্যাংকে জমানো কতো আছে? এফডি থাকলে ভেঙে ফেলো। তারপর আস্তে আস্তে মেজোবোন গলায় পারা দেয়। আত্মীয়দের কাছে চা, প্রতিবেশিদের কাছে চা, বন্ধুদের কাছে চা।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন বেড়াতে আসে ছোটোবোন সম্মানহানি। বড়বোন আর মেজোবোনের চাপে শেষ সম্বল আত্মসম্মানটুকু বাক্সবন্দী করে ফেলতে হয়। একসময় তিন বোন খুশি হয়ে ফেরত যায়। তখন দাওয়াতাক্রান্ত ব্যক্তির আর কিছু বাকী থাকে না। বাকী থাকে কেবল ক্রোধ আর হতাশা। আর থাকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।

তিন বোন এ ঘর থেকে ও ঘর, ও ঘর থেকে এ ঘর, ঘুরে বেড়াতে থাকে। জীবন ব্যস্ত থাকে; তার হিসাব মেলাতে।
২৮.০৯.২০১৬ 

বুল্লেহ শাহের কালামঃ না কার বান্দেয়া মেরি মেরি

বান্দা আমার আমার করিস না
বান্দা আমার আমার করিস না
দমের মালিক কেউ না, মালিক কেউ না
দয়াবান আল্লাহ যায় আর আসে
সাধকের কলবের ভেতর...
...
...
[মূল পাঞ্জাবী:
না কার বান্দেয়া মেরি মেরি
না কার বান্দেয়া মেরি মেরি
দামদা ভাছা কোই না, ভাছা কোই না
আল্লাহু দায়াভা যা আভে
কুল্লি নি ফাকির দি ভিচ্চু...
- সূফী বুল্লেহ শাহ (১৬৮০-১৭৫৭)]
০৩.১০.২০১৬ 

রামপাল ও উন্নয়নঃ ঘুরায়া প্যাচায়া মিছা কথা

ঘুরায়া প্যাচায়া মিছা কথা কইলেই কি সেটা সত্য হইয়া যায়? যায় না। সত্য সবসময়ই সত্য। আপনি স্বীকার না করলেও সত্য। ইদানীংকালে সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার চলতেছে, রামপাল প্রকল্পের ব্যাপারে। বলা হচ্ছে, সেখানে উৎপাদিত ছাই উড়ে বেড়াবে না। তার আগেই তাদের ধরে ফেলা হবে। পানিতে ভিজিয়ে তাদের বশে আনা হবে। তারপর প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করা হবে। এর চেয়ে আরো হাস্যকর মিথ্যা কথাও আছে। বাতাস নাকি সুন্দরবনের দিকে যাবে না। বাতাস সবসময় সুন্দরবনের বিপরীতে প্রবাহিত হবে। জনাব মসনদে আ'লা, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, বাতাস ও কি সরকারী লোক?! নাকি আপনি বাতাস বশের যাদু জানেন?

এইরকম অনেক হাস্যকর কথা বলে বিষয়টা শেষ করা যেতো। তা না। তার সাথে যুক্ত হয়েছে দোষারোপ। আন্দোলনকারীরা টাকা কোথায় পায়? তাদের পেছনে কে আছে? তারা কার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? দেশধ্বংসকারী প্রকল্প নিয়ে আন্দোলন করার জন্য পেছনে ব্যাকাপ লাগে না জনাব। জনতা যখন আন্দোলন করে, নিজের খাইয়া, নিজের পইরাই আন্দোলন করে। তাদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা আসা লাগে না। জনতার বুঝতে একটু সময় লাগে। টেকনিকাল টার্ম বোঝা জনতার জন্য কষ্ট। কিন্তু একবার বুইঝা গেলে, জনতার অংশগ্রহণ বাড়তেই থাকে। যেমনটা আপনারা নিজে থাইকা দেখছেন, ফুলবাড়িতে। লোকজন গুলি খাইয়া মরতে রাজি, দেশবিরোধী উন্নয়নে রাজি না। রামপালের ক্ষেত্রেও লোকজন হারিকেন জ্বালাইয়া রাত কাটাইতে রাজি জনাব। আর জনতারে হুমকি দিয়া লাভ নাই। জনতার অংশগ্রহণ যদি মবে পরিনত হয়, তখন কথা উইড্র করারও সময় পাবেন না।

আর সামনে কিছু ননসেন্স সাংবাদিক বসাইয়া রাইখা যদি মনে করেন সবাই এদের মতো বশীভূত হইয়া গেছে, সবাই ক্ষমতার মধু খাইয়া ফেলছে, তাইলে মারাত্মক ভুল করবেন। ঐসব ননসেন্স সাংবাদিক আর তাদের স্টেটমেন্ট নিয়া হাসাহাসি করা যাইতে পারে, কিন্তু তাদের কেউ বিশ্বাস করে নাই।

বলা হইতেছে পিডিবি কোম্পানি হইয়া গেছে। কিন্তু এই কোম্পানিতে টাকা কাদের? টাকা তো জনগণের। জনগণের টাকারে নিজের টাকা মনে করার মতো ভুল করা ঠিক হবে না। জনতা সবসময় হিসাব নেয়ার মুডে থাকে না। তবে যদি হিসাব চাওয়া শুরু করে, হিসাব দিতে দিতে গদি নইরা যায়। জনতার কষ্টের টাকার সঠিক হিসাব করেন, সঠিক খাতে ব্যয় করেন। সব খরচরে উন্নয়ন বইলেন না। [জনতার কষ্টের টাকার হিসাব করা নিয়ে আরো কথা আছে। পরে বলবো।]
৩১.০৮.২০১৬ 
  
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল

বিষয়টা হচ্ছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনোদিন হল হয়, আর যদি বাংলাদেশের মসনদে আওয়ামী সরকার বাহাদুর থাকে, সবার আগে হলে উঠবে ছাত্রলীগ। হলের যাবতীয় আরাম-আয়েশ ভোগ করবে ছাত্রলীগ। হলের ক্যান্টিনে ফাঁফর দিয়ে বাকি খাবে কতিপয় ছাত্রলীগ। এমনকি হলের সিট ও বন্টন করবে ছাত্রলীগ। তখন হলের জন্য আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা হলে উঠতে পারবে না। তারা থাকবে হলের বাইরে, বা ছাত্রলীগের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে কেউ কেউ হলে উঠতে পারবে।
এতক্ষণ ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ করলেও এই একই কথা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তারাও সরকারের আনঅফিসিয়াল লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে। তাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেই দেশ এর চে ভালো চলবে বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা হল পাবে, এই চিন্তা অসার।
এবং ছাত্রলীগের উচিত এই আন্দোলনের বিরোধীতা না করে বরঞ্চ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হল পেলে, সবচেয়ে বেশি লাভ ছাত্রলীগেরই। ছাত্রলীগের লাভের কথা তাদের বিবেচনা করা উচিত।
সরকারেরও উচিত অতিশীঘ্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হল বরাদ্দ দেয়া। ঘনবসতি কোনো যুক্তি না। ক্যান্টনমেন্টের জন্য বরাদ্দ দেয়া যায়, বাহিনীগুলার সদরদপ্তরের জন্য বরাদ্দ দেয়া যায়, সরকারী অফিসের জন্য বরাদ্দ দেয়া যায়; শুধু হলের বেলায় ঘনবসতি!
৩০.০৮.২০১৬

লাশের দাম


লাশের একটা দাম থাকে। যে লাশ নিয়ে রাজনীতি করা যায়, সে লাশের দাম থাকে। যেমন- আসাদ, বঙ্গবন্ধু, নুর হোসেন। যে লাশ নিয়ে রাজনীতি করা যায় না, সে লাশের দাম থাকে না। যেমন- তনু, রাজন, রানা প্লাজার মৃতরা প্রমুখ।
২৮.০৭.২০১৬ 

সুন্দরবনে রামপাল

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ না করা গেলে বা না সরানো গেলে, আমরা সুন্দরবনটারে ধইরা এক দিকে সরাই নেই। বাংলাদেশের জন্য সুন্দরবনও দরকার।
সরকার বাহাদুর এবং জনতা উভয়ের নিকট আবেদন, হয় রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করেন আর নয়তো সুন্দরবন অন্য জায়গায় সরায়া নেন।
২৩.০৭.২০১৬

আমি কারো কাছে বিচার চাইবো না

দেশে অব্যাহত চলমান খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন, শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভিন্নমত দমন-পীড়ন, সরকারী চুরি ও দুর্নীতি বিষয়ে আমি কারো কাছে বিচার চাইবো না।

দেশে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। আর যেটুকু বিচার আছে, সেটা প্রকারান্তরে মোড়কীকৃত অবিচার। তাই, আমি কারো কাছে বিচার চাইবো না।

অবিচার ও বিচারহীনতার এই সময়ে, আমি শুধু নিজে নিজে কথা বলবো-
'বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা?
এই জনতা। এই জনতা।'
২৭.০৭.২০১৬ 

রহস্যগল্প: আম গাছ

গল্পটা আমার নিজের। সামান্য একটু ধানি-জমি সহ আমার একটা বাড়ি আছে, ঢাকার অদূরে মদনপুরে। আমার পাশেই আমার বন্ধু জামালের বাড়ি। অর বাড়িটা আমার বাড়ির চেয়ে বড়। অর জমিও আমার জমির চেয়ে বেশি। আমাদের দুইজনের জমিসহ বাড়ির মাঝখানে একটা পুরানা ইটের প্রাচীর। প্রাচীর পুরানা হইলেও সীমানা বোঝা যায়।

আমার পরিবারের লোকেদের আম পছন্দ। প্রতিবছর সিজনে আম কিনা আনা লাগে। দুই এক বার আনা যায়। এর বেশি হইলেই সংসারের টাকায় টান পরে। এইটা নিয়াই ঐদিন কথা বলতাছিলাম জামালের সাথে।

- আম আম কইরাতো মাথা খারাপ কইরা ফালাইলো পোলাপান। এতো আম কি কিনা যায়?!
- আমারোতো একি কন্ডিশন। এতো আম কিনার চে একটা আম গাছ লাগায় লাওন ভালা।
- তুই একটা আম গাছ লাগায়া ফালা।
- তুই কি মনে করসস, চাই নাই। তর ভাবী কইছে, বাড়ির ত্রিসীমানায় জানি কোনো আম গাছ না থাহে। আম গাছ লাগাইলে আমারে সুদ্ধা কুইট্টা ফালাইবো। কয় যে- যে ফল-ফ্রুট আছে তাই খাইয়া কুলান যায় না।
- অ...
- তুই একটা কাম কর। তর সীমানার ভিত্তে একটা আম গাছ লাগা। আমিও টেকা দিবোনে যা লাগে। তর পরিবার সারা বছর আম খাইতে পারবো। তর আর আম কিনন লাগবো না। আম কিনার লাইগ্যা ঋনও করন লাগবো না।

বুদ্ধিটা আমার মনে ধরলো। তাইতো! আমি আমার বাড়ির ভিতরেই যদি একটা আম গাছ লাগাই, কতো লাভ। পোলাপান আর আম আম বইলা চিৎকার করবে না। সারাবছর আম। কত্তো আম!

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আম গাছ লাগাবো। তারপর, আমি হিসাব নিয়া বসলাম। কতো খরচ হয় একটা আম গাছ লাগাইতে? হিসাবে বলে ১০,০০০ টাকা। কিন্তু ১০,০০০ টাকাতো আমার কাছে নাই। আমার কাছে আছে খরচের মাত্র ১৫% মানে ১,৫০০ টাকা। জামাল কইলো, ও আমারে আরো ১,৫০০ টাকা দিবো। বাস হইয়া গেলো সমান সমান। কিন্তু তাওতো আরো ৭,০০০ টাকা লাগে। সে রাস্তাও জামাল দেখায়া দিলো। বাড়ির পাশের বাজারেই সহজ শর্তে ঋন দেয় এমন ব্যাংক আছে। ওরা আমারে দিবো বাকী ৭০% টাকা মানে ৭,০০০ টাকা। তবে আমারে সেইটার কিস্তি টানা লাগবে মাসে মাসে। সে আর এমন কি?! নিজের ঘরের আম খামু, কিস্তি দিতে সমস্যা কি। ৭,০০০ টাকা সুদ সহ গিয়া পরবো ১০,০০০ টাকা।

হিসাব করা শেষ হইলে জামালরে সিদ্ধান্ত জানাইলাম। ও বললো,
- আম কিন্তু আধা-আধা হইবো। কারন আমি আর তুই আধা আধা টেকা দিছি। দেড় হাজার, দেড় হাজার।
- হ। তাই তো। আইচ্ছা নিস, আধা আধা।
- আর যেহেতু এইটা আমার বুদ্ধি, তাই তুই এই গাছের মালিক হইতে পারবি না।
- মালিক হইতে পারুম না কেন? গাছ ত আমার জমিতে।
- জমি তরই থাকবো। গাছ আমার। এই গাছের লাকড়ি আমি দিনে দিনে আইসা নিয়া যামু। আর গাছ যখন বেচুম, তখন কাঠের দাম ও আমিই নিমু। রাজি থাকলে, ল বীজ আইনা দেই তরে।

আমি ভাবতেছিলাম। জামাল কয়- ভাবার টাইম নাই। এখনি ক। নাইলে বাজার থিককা আম কিন্না আইন্যা খা। আমি আমার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলাম। কইলাম- ল, বীজ নিয়া আসিগা। জামাল কইতে থাকলো, আর যেহেতু গাছটা তর জমিতে, ঐটারে কিন্তু তরই দেইখা রাখা লাগবো। পাশের বাড়ি থেইকা রোজ রোজ গাছে পানি দিতে আসন আর ছাগল খেদানি আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কইলাম- তা দেইখা রাখবোনি। ও যাইতে যাইতে আবার কইলো- আম কিন্তু আধা আধা। আমি কইলাম- হ, হ। আম আধা আধা।
জামাল কইলো- ও, আর তর ছোটো পোলাডারে সামলাইছ। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে, মাথায় নাকি একটু ডিস্টাপ ও আছে। আমি কই না, লোকে কয়।

- ও আমি সামলামুনে। অয় জানবোইনা।
- হ। সামলাইস। তার মধ্যে টেকাপয়সার হিসাব দেখলেতো অর মাথা আরো আউলাইয়া যাইবো।
- না। অয় জানবোইনা। টেকাপয়সার হিসাব বাদ দে, গাছ বড় হওয়ার আগে অয় জানবোইনা, এইটা আম গাছ। অর কাম আম খাওয়া। আম পাইলো, মিট্টা গেলো।
- সেই টাই।

(দুই দিন পর...)
আমি আম গাছের বীজ নিয়া আসছি। ব্যাংকে কথা কইছি। জামালও রাজি। এখন যেকোনো সময় খালি বীজটা লাগামু। কিন্তু আমার ছোটো পোলা টের পাইয়া গেছে। অয় আমারে কয় গাছ লাগাইতে দিবো না। কয় হিসাবে ভেজাল আছে। আরে তুই হিসাবের কি বুঝস?! বাড়িতে কি ময়-মুরুব্বি নাই?! হিসাব করবো ময়-মুরুব্বিরা। তুই খাবি আম। তুই আম পাইলি, মিট্টা গেলো। জামাল একটা মুরুব্বি। অয় কি তর চে হিসাব কম বুঝে?! আমার মাথা খারাপ পোলা কয়- খালি জামাল দিয়া হবে না। আপনে দশ জনরে জিগান।

আমি তাই দশ জনরে জিগাইতে চাই, আমি কি আম গাছটা লাগাবো?
[রহস্য উদ্ধার না করতে পারলে আবার পড়ুন।
*সহায়িকা:
আমগাছ- সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প,
আমি- বাংলাদেশ,
বন্ধু জামাল- ভারত,
ছোটো পোলা- মুষ্ঠিমেয় উন্নয়নবিরোধী(!) জনগণ।]
১৭.০৭.২০১৬ 

আমাদের দেশে

আমাদের দেশে সব কিছু হওয়া সহজ। এখানে দর্শন বিভাগে পড়লেই, আমরা ভাবি সে দার্শনিক হয়ে গেলো। এখানে কেউ দুই পাতা পড়লেই আমরা ভেবে নেই, পড়তে পড়তে ছেলেটা পাগল হয়ে গেলো। ফেসবুকে কেউ দুইটা উত্তম স্ট্যাটাস দিলেই ভাবি, সে বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলো। কেউ দুই পাতা লিখলেই আমরা ভাবি, সে রবীন্দ্রনাথ হয়ে গেলো। কেউ দুইটা ভালো পরামর্শ দিলেই আমরা ভাবি সে বুদ্ধিজীবী হয়ে গেলো।

যে দেশে এতো সহজে এতো কিছু হওয়া যায়, সেখানে কিছু হওয়াটা আসলে কঠিন।
১৫.০৭.২০১৬ 

বাংলাদেশ কেনো সিকিম হবে না?

বৃটিশরা যখন ভারত ছেড়ে যায়, তখন দুইটা রাষ্ট্র- ভারত আর পাকিস্তান এবং ৫৬৫ টা দেশিয় স্বাধীন রাজ্য (প্রিন্সলি স্টেট) রেখে যায়। দেশিয় রাজ্যগুলোর জন্য বৃটিশদের শর্ত ছিলো, হয় তারা ভারত যোগ দেবে, নয় তারা পাকিস্তান যোগ দেবে, অথবা তারা স্বাধীন থাকবে। বৃটিশ আমলে দেশিয় রাজ্য গুলোর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ছিলো বৃটিশদের। ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর দেশিয় রাজ্য গুলো হয় ভারত নয় পাকিস্তানে যোগ দেয়। [দেশিয় রাজ্যগুলোর ভারত-পাকিস্তানে যোগদানের গল্প তোলা থাকলো] বাকি থাকে কেবল নেপাল, ভুটান আর সিকিম। এই তিন রাজ্যের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় ভারত। তিনটা রাজ্যেই রাজা ছিলো, সংসদ ছিলো, প্রধানমন্ত্রী ছিলো। তিন রাজ্যের সাথেই ভারতের যোগাযোগ ভালো ছিলো।

১৯৬৭ সালে চীন সিকিমকে তার অংশ দাবী করে, সীমান্তে সৈন্য পাঠায়। ভারতের সহযোগীতায় সিকিমের স্বাধীনতা টিকে গেলেও, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণ-অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজতন্ত্রবিরোধী পার্টি 'সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস' শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ভারত, সিকিমের রাজনীতিবিদদের বোঝাতে সক্ষম হয়, সিকিমের স্বাধীনতা টিকাতে হলে, ভারতে যোগ দিতে হবে, নতুবা চীন সিকিম দখল করে নেবে। ১৯৭২ সালে সিকিমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে, রাজতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষে দাঙ্গা হয়। সে দাঙ্গায় ভারতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ ছিলো। সবশেষ, ১৯৭৫ সালের ১৪ এপ্রিল, ক্ষমতাসীন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস, সিকিমের সংসদে ভারতে যোগদান বিষয়ক একটি প্রস্তাব আনে। এবং সে প্রস্তাব পাশ ও হয়। তার ১২ দিন পর, ২৬ এপ্রিল ভারতের সেনাবাহিনী সিকিমে প্রবেশ করে, এবং সিকিমকে তার ২২ তম প্রদেশ ঘোষনা করে।

অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিচয়, বৃটিশরা ছেড়ে যাবার পর, বাংলাদেশ পাকিস্তানের পূর্ব অংশ হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক মুসলিম হওয়ায় এবং ১৯৪৭ এর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করায়, এই অঞ্চল অনেক আগে থেকেই ভারত-বিদ্বেষী। এখন স্বাধীন বাংলাদেশের লোকেরা সমান ভাবে, পাকিস্তান এবং ভারত বিদ্বেষী। রাজনীতিবিদগন খুব সাবধানে একে অপরকে ভারতবাদী বা পাকিস্তানবাদী বলে দোষারোপ করেন। কারন সমর্থন জানানো বা গুজব এর অতিরিক্ত যোগাযোগ যদি জনগণ টের পায়, তাহলে ঐ রাজনৈতিক দলের ক্যারিয়ার বিপন্ন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে সিকিমের রাজনৈতিক দলের মতো দল নাই, সিকিমের জনগণের মতো জনগণও নাই। এমনকি যদি ৩০০ সাংসদের সম্মতিতেও সংসদে বিল পাশ করা হয়, যে বাংলাদেশ ভারতে যোগদান করবে, তাহলেও ঐ রাজনৈতিক দল, ঐ সাংসদ এবং ভারতের খবর আছে, এটা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও জানে, ভারত ও জানে।

আর কি দরকার, প্রদেশ বানানোর?! বিশ্বায়নের যুগে বাজারটাই মূল কথা। বাংলাদেশ এমনিতেই ভারতের বাজার হয়ে বসে আছে। ভারত চাইবেনা, তার বাজার অস্থিতিশীল হোক, তার মার্কেট খারাপ হোক।
১১.০৭.২০১৬ 

আই হেইট পলিটিক্স

দেশ পরিবর্তনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের, 'আই হেইট পলিটিক্স' এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। 'আই হেইট পলিটিক্স, আই হেইট পলিটিক্স' কইরা তো পানি অনেক দূর গড়াইলো। আমাদের প্রজন্মের কাছে আহবান, আপনারা 'আই হেইট পলিটিক্স' এই বিষয়টারে হেইট করেন।
যারা মনে করেন, রাজনীতি নোংরা বিষয়, তাদের জন্যই রাজনীতি আরো নোংরা হইতেছে। কারন আপনি নিজেই এর ভুক্তভোগী, অথচ এইটার কোনো খবর আপনার কাছে নাই। এইটা একধরনের দ্বিচারিতা। যখন আপনি রাজনীতিতে মঙ্গল চাইবেন, আপনাকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। আপনি কোনো দায়িত্ব নিবেন না, আবার সকাল বিকাল চিক্কুর পাইরা দোষারোপ করবেন, তা হবে না।
সুতরাং, রাজনীতির নোংরা নিজেদেরই পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিতে হবে। আপনি যখন রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন না, তখন প্রবল সম্ভাবনা থাকে, আপনি আপনার নিচু বুদ্ধির কারো দ্বারা শাসিত হবেন।
০৫.০৭,২০১৬

তোমাদের হাতে দেশ

'...হাজার হাজার মাইলের যে যাত্রা, সেটাও ছোটো একটা পদক্ষেপ থেকে শুরু হয়...'

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এতোদিন মায়ানমার আর ভারত থেকে নেশাদ্রব্য ইয়াবা আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু না, বাংলাদেশ তো এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার সেই ছোট্ট পদক্ষেপ হিসেবে এখন দেশেই তৈরী করা হয়েছে তিনটি ইয়াবা কারখানা। দেশীয় ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় রেখে, কম খরচে আসল পন্যটি ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে, এখন দেশেই পাওয়া যাবে, 'মেইড ইন বাংলাদেশ ইয়াবা'। 'মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী পুত্র রনি চৌধুরী' কে এই অসাধারন উদ্যোগ এর জন্য এখনো কোনো পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করা হয়নি।

অবিলম্বে 'রনি চৌধুরী' কে উঠতি তরুন উদ্যোক্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, ব্যাঙ্ক থেকে সহজশর্তে ঋনপ্রদানের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করা হোক।

'যতোদিন তোমাদের হাতে দেশ
পথ হারাবে না বাংলাদেশ।'
৩০.০৬.২০১৬ 

আপনে কোনহানকার কুতুব?

দেশের বেশিরভাগ মানুষের আসলে সরকার, বিরোধীদল, জঙ্গী, বিদেশী শক্তি, বাম-ডান, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দরবন, ট্রানজিট, তিন বিঘা করিডোর, সাহারা খাতুন, মাল মুহিত ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে কোনো চিন্তা নাই। তাদের একমাত্র চিন্তা, কালকে কি খাবো?! খাবারের চিন্তা করতে করতেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কাইটা যায়। তারা চায় দুই বেলা খাবার, একটা নিশ্চিত কাজ আর নিজের জীবনের নিরাপত্তা।

সকালে তারা কাজ করতে বের হয়, নিজের জান হাতে নিয়ে। সন্ধ্যায় ফিরা আসে, তাও জান হাতে নিয়ে। রাস্তা ঠিক নাই, রাস্তায় জ্যাম, রাস্তা ভাঙ্গা, নারীদের জন্য প্রচণ্ড অনিরাপদ রাস্তা, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও কেউ নিরাপদ না। তারপরো সরকারের কানে কোনো অভিযোগ যাবে না, যদি জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকে। যদি দ্রব্যমূল্যের দাম লোকজনের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চইলা যায়, তখন তারা পেটে লাথি অনুভব করে। পেট ভরা থাকলে, পিঠে দুই চার ঘা সওয়া যায়। পেট খালি রাইখা এতো নক্তা সওয়া যায় না। তখনই লোকজনের মাথাটা খারাপ হইয়া যায়। তারা কাজের জন্য রাস্তায় নামে, খাবারের জন্য রাস্তায় নামে, নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নামে। চেয়ারে কার বাপ, কার ভাই বইসা আছে, লোকজনের এইটা দেখার তখন টাইম নাই।

এর আগেও বড় বড় কুতুব এই আলো বাতাসে গুজরায়া গেছে। কুতুবউদ্দিন আইবক থেইকা গাদ্দাফি-সাদ্দাম-মোবারক। আপনে কোনহানকার কুতুব?
২৮.০৬.২০১৬ 

বিপদে পরার আগে

বিপদে পরার আগে কিভাবে বোঝা যাবে যে আপনি বিপদে পরতে যাচ্ছেন? বিপদ কি কখনো বইলা আসে যে আমি আগামীকাল সকাল সাতটায় আসবো? অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে কি কোনো পূর্বপ্রস্তুতি সম্ভব?
এতোগুলা প্রশ্নের একটাই উত্তর। না।
প্রত্যেকটা বিপদ ই নতুন। আর তাকে আলাদা আলাদা ভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
২৪.০৬.২০১৬ 

তনুর দুর্ভাগ্য

তনুর দুর্ভাগ্য, তার পরিবার একটা মধ্যবিত্ত পরিবার। তার পরিবারের কেউ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী না, এমপি না, সরকারী আমলা না, সেনাবাহিনীর অফিসার না, এমনকি নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি বা আনসার বাহিনীর অফিসার ও না। তার পরিবার এ কেউ হেভিওয়েট পলিটিশিয়ান না, যুবলীগ না, স্বেচ্ছাসেবক লীগ না, ছাত্র-তরুন-শিশু-পেশাজীবি কোনো ধরনের লীগ না। অথবা পরিবারে যদি কেউ এমন থাকেও তারা সাহায্য করতে সক্ষম না। কারন ঘটনা ঘটছে আরো উপর তলায়। একদম দশ তলায়। আমরা মধ্যবিত্তরা মাথা বাইরায়া উঠতে পারি তিন তলা পর্যন্ত। তারপরো তনুর পরিবার বিচার চায়! বিচার কেমনে চায়?! লোকেদের নিজেদের তাগদ সম্পর্কে ধারনা থাকতে হয়। আপনে মাখন মাখার ছুরি নিয়া গেলেন জলহস্তীর সাথে লড়াই করতে। আপনি খামছি খাবেন না কে খাবে??

তার উপর মানুষ প্রজাতি হিসাবে ভুলোমনা। এক ইস্যু কয় দিন মনে রাখা যায়?! আশ্চর্য মানুষের কি আর খায়াদায়া কাজ নাই? তার উপর খুন কি আর একটা হইতাছে? অয় খুন হইলো। সে খুন হইলো। তারা খুন হইলো। এক বিচার নিয়া কয়দিন লাফামু? এদের খুনের ওতো বিচার চাওন লাগবো। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

'এক তনু লোকান্তরে
লক্ষ তনু রাস্তায় ঘোরে।'
২১.০৬.২০১৬  

২০১৬ সালের প্রতিক্রিয়াসমূহ



No comments:

Post a Comment